আমাদের ঘরে যেদিন অ্যালিয়েনটা এসেছিল সেদিন আমাদের আনন্দের সীমা ছিল না। বলা নেই কওয়া নেই হুট করে একটা অ্যালিয়েন এসে বসে পড়লো আমাদের ড্রইং রুমের সোফাতে। আমরা তো অবাক! আমি ভয়ে ভয়ে পা বাড়িয়ে তার কাছে গেলাম। আড়াই ফুটের মতো লম্বা, হালকাপাতলা শরীর। গায়ে কারূকাজ করা রঙ্গিন জামা। মনে হচ্ছে ওর শরীর থেকে আলো ঠিকরে পড়ছে। আমাদের আনন্দ দেখে কে! পাশের বাড়ির ছোট বড়ো সবাই ছুটে এসেছে অ্যালিয়েন দেখতে।
‘আমরা এত এত কথা বলছি আর তুমি তো কোন কথাই বলছ না। তোমার নামটাও তো জানা হলো না।’ অ্যালিয়েনকে বললাম আমি।
‘আমার নাম টিউট্রেলা। অট্রাপিক থ্রি নামক গ্রহ থেকে আমি পালিয়ে এসেছি এখানে। সাংঘাতিক রকমের একটা বিপদে পড়ে এখানে এসেছি। আমার মন মোটেও ভাল নেই। কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।’ বেজার মুখে পিনপিন করে বলল টিউট্রেলা।
আমি চোখ বড় করে বললাম, ‘বিপদ? কী বিপদ তোমার, বলো।’
আমাদের গ্রহে এখন তোলপাড় কা- চলছে। আমাকে খুঁজছে ওরা। আমি পড়ি ক্লাস এইট-এ। আমাকে বিয়ে দিয়ে দিতে চায় আমার মা-বাবা। বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে। বর আসবে। আমাদের বাড়ি ভর্তি মানুষ। বাড়ি ভর্তি আনন্দ। বিয়ে পড়ানোর আগে চাঁদের আলোতে বিয়ের পোশাক পরে গোসল করতে হয়। আমি গোসল করার কথা বলে সোজা চলে এসেছি এখানে। তোমরা আমাকে যদি আশ্রয় না দাও তাহলে আমি যে দিকে চোখ যায় সে দিকে চলে যাবোÑতবুও আমি আমাদের গ্রহে ফিরে যাব না। চোখের পানি ফেলে বলল টিউট্রেলা।
আমি মায়া করে বললাম, ‘কোন চিন্তা করো না। তুমি এখানেই থাকবে আর পড়াশোনা করবে। আমরা তোমাকে মোটেও তাড়িয়ে দেব না।’
তখন টিউট্রেলার মুখে হাসি ফুটে উঠল। মনে হলো ওর মুখে চাঁদ হাসছে। অনেক সুন্দর সেই হাসি।
ওম্মা, এক রাতে দেখি আমাদের বাড়িতে অনেক অ্যালিয়েন এসে ঘোরাফেরা করছে। তাদের দেখে টিউট্রেলা আমাকে ফিসফিস করে বলল, ‘এই দেখো, আমার মা-বাবা আর আতœীয়-স্বজনেরা চলে এসেছে। সঙ্গে নিয়ে এসেছে আমাদের অ্যালিয়েন রানিকেও। আমাকে নিয়ে যাবে ওরা। আমাকে বাঁচাও।’
আমি বললাম, ‘তুমি এত ছটফট করছো কেন? চুপ করে বসে থাকো তো, দেখি কী বলে তারা।’
টিউট্রেলার মা বলল, ‘আমরা মেয়েটাকে খুঁজছি কয়েকদিন ধরে। আমরা গবেষণা করে জানতে পারলাম টিউট্রেলা ছোট্ট একটা গ্রহের বাংলাদেশ নামক দেশের একটি বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। আমরা তাকে নিয়ে যেতে এসেছি। বিয়ের অনুষ্ঠান হতে সে পালিয়েছে। এটা অন্যায়। অনুমতি দাও, আমরা তাকে নিয়ে বিয়ে দিয়ে দেবো। আমাদের সঙ্গে আমাদের রাণিমাও এসেছেন।’
এ কথা শুনে টিউট্রেলা চিঁচিঁ করে কাঁদতে লাগল।
আমি বললাম, ‘এই বয়সে বিয়ে দিলে কী কী ক্ষতি হয় আপনারা জানেন কি?
অ্যালিয়েনরা চোখ বড় করে বলল, ‘ক্ষতি? বিয়ে দিলে ক্ষতি হবে কেন?’
আমি তখন সব বুঝিয়ে বললাম। ‘এখন তার লেখাপড়া করার সময়। সে অনেক বড় হবে। এ বয়সে বিয়ে দিলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে তার।’
অ্যালিয়েন রানি বললেন, ‘আমাদের এত ভয় দেখাচ্ছ কেন? তোমাদেরও তো বিয়ে হয় ছোট থাকতে, তখন?’
‘হয়, তবে আর হতে পারবে না,’ বললাম আমি। আমি তখন আমাদের শিশুদের অধিকার আর শিশু আইন দেখিয়ে বললাম, ‘এই দেখো কত সুন্দর আইন আমাদের। এখন শিশুদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করানো যাবে না। বড়রা যদি শিশুদের জোর করে কিছু করাতে চায় তহলে অনেক বড় শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। শিশুদের নির্যাতন করা যাবে না। এই দেখো কত বড় শাস্তির বিধান, পাঁচ বছরের জেল আর এক লাখ টাকা জরিমানা।’
অ্যালিয়েন রানি মন দিয়ে আইন-কানুন দেখল। তারপর বলল, ‘আমরা তো এত কিছু জানতাম না। এ-তো দেখছি অনেক সুন্দর ও উপকারী আইন!’
‘আমরা এমন আইন করি না কেন রাণীমা!’ অন্য অ্যালিয়েনরা রাণীর দিকে মুখ বাড়িয়ে বলল, ‘রাণীমা, আমাদের গ্রহে কি এমন কিছু আইন করে অ্যালিয়েনশিশুদের ভবিষ্যৎ আরও সুন্দর ও আনন্দময় করে দিতে পারি না!’
‘অবশ্যই পারি,’ বললেন রাণী, আমরা ভাবতাম আমরাই সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রানি। এখন দেখছি এই পৃথিবী নামক ছোট্ট গ্রহের বাসিন্দারা আমাদের থেকেও বুদ্ধিমান। না জানার কারণে আমরা শিশুদের অনেক ঠকিয়েছি, তাদের অনেক পেছনে ফেলে রেখেছি। আর নয়, শিশুঅ্যালিয়েনদের অধিকার আর কল্যাণের জন্য নিশ্চই নতুন আইন জারি করে দেব। কারণ ওরাই আমাদের ভবিষ্যৎ।’
তারপর হঠাৎ একটা উজ্জ্বল আলো গোল হয়ে আকাশ থেকে নেমে এলো আমাদের সাদা উঠোনে। ওরা টিউট্রেলাকে নিয়ে আলোর ভেতরে গিয়ে দাঁড়ালো এবং চোখের পলকে উধাও হয়ে গেল।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১১