somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

বিএম বরকতউল্লাহ
পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

ভূত ফিকশন (শেষ পর্ব)

২৫ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভূতেরা যখন পাহারাদার
ডাকাতের ঝামেলা শেষ হলো কিন্তু সেরালির চিন্তা গেল বেড়ে। সে সারা রাত ঘুমোয়নি। সে ভাবছে তার অসম্ভবকে সম্ভবকারী গুণধর সন্তানদের নিয়ে। কীভাবে তাদের কাজে লাগিয়ে জীবনের সবচেয়ে বড় কামনার বস্তু অর্থ কামাই করা যায়!
সেরালি পেয়ে গেছি! পেয়ে গেছি! বলে বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠল।
সেরালি একটা বিরাট সাইনবোর্ড এনে টানিয়ে দিল বাইরের উঠোনে। তাতে লেখা আছে-
আপনি কি চোর-ডাকাত-সন্ত্রাসীদের ভয়ে ভীত? আপনি কি আপনার মূল্যবান মালছামানা রক্ষা করতে পারছেন না? আপনি কি বাসা-বাড়ি, খামার, কারখানার জন্য উপযুক্ত, বিশ্বাসী, সৎ, দক্ষ ও অব্যর্থ পাহারাদার খুঁজছেন? আজই যোগাযোগ করুন। ব্যর্থতায় ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তা।


সেরালির বাড়িতে টানানো এই অদ্ভুত সাইনবোর্ডের খবর রাতারাতি এলাকা ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে গেছে।
প্রচন্ড আগ্রহ আর কৌতূহল নিয়ে লোকজন আসতে শুরু করেছে তার বাড়িতে। প্রতিশ্র“তি মিলে কিন্তু দরে মিলে না। তার চাহিদা অনেক বেশি। এছাড়া সেরালি প্রতিশ্র“তি ছাড়া আর কিছুই দেখতে দিচ্ছে না। খালি বলে টাকা পরিশোধ করে যান। যথাসময়ে পৌঁছে যাবে পাহারাদার। এ কথায় কেউ ভরসাও করতে পারছে না। এমনই টানাপোড়নে পড়ে কয়েকজন শিল্পপতি ও খামার মালিক এসে ফিরেও গেছে।
কাস্টমারেরা বলে, আমার বাড়ি বা খামার পাহারা দিতে হলে ত্যাগড়া জওয়ান ও সাহসী পাহারাদার লাগবে। না দেখে বিশ্বাস করি ক্যামনে?
সেরালির সাফ জবাব, এখানে দেখাদেখির কিছু নেই। যাদের দেখার তারা দেখলেই হবে। বিশ্বাস হলে কাগজপত্র করেন, না হলে রাস্তা মাপেন।
শহর থেকে এক বাড়ির মালিক এসে তার নানা সমস্যার কথা বলল। তার বিশাল বাড়ি। প্রায়ই চুরি-ডাকাতি হয়। পাহারা বসিয়েও লাভ হয়নি।
আরেক জন পোলট্রি খামারি। তার সমস্যা, এলাকার ছিঁচকে চোর ছাড়াও বড় সমস্যা শিয়ালের বড় উপদ্রব। রাতে শিয়ালেরা দলবেধে এসে বেড়া ফাঁক করে মুরগী নিয়ে খেয়ে ফেলে। এরা এতই ভয়ংকর যে, কুকুরকেও এরা পাত্তা দেয় না।
সেরালি ওদের কথা শুনে বলল, হ্যা, কাগজপত্র করেন। বাসা-বাড়ির নাম-ঠিকানা দিন। আর আপনি দিন আপনার পোলট্রি ফার্ম এর ঠিকানা। আজ রাতেই যথাসময়ে যথাস্থানে পৌঁছে যাবে পাহারাদার।
দুই ভদ্রলোক টাকা-পয়সা দিয়ে কাগজপত্র করে চলে গেল।
সেরালি সন্ধ্যার পর ছেলেদের ডেকে বাড়ি ও পোলট্রি ফার্ম পাহারা দেওয়ার ব্যাপারে বিস্তারিত বলে যথাযথ দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়ে দিলেন।
পিতার নির্দেশ পাওয়ামাত্র ছেলেরা মুহূর্তে উধাও হয়ে গেল।
বাড়িওয়ালা ও খামারি অপেক্ষায় বসে আছে, কোন সময় কোনদিক দিয়ে ভাড়া করা পাহারাদার আসে তা দেখার জন্য।
বাড়িওয়ালা তার স্ত্রীসহ কৌতূহল নিয়ে বসে আছে বাড়ির ছাদে। হঠাৎ পনপন-ভনভন শব্দে ছাদটা কেঁপে উঠল। মনে হলো পুরো বাসাটা কাৎ হয়ে পড়ে যাচ্ছে। তারা দৌড়ে বাসায় গিয়ে ভয়ে কাঁপতে লাগল। বাড়িওয়ালার বুঝতে বাকি নেই, পাহারাদার এসে গেছে! তারা কয়েক গ্লাস পানি পান করে চুপ করে শুয়ে পড়ল। বাড়িওয়ালার স্ত্রী ভূত-পাহারাদারের কথা শুনে বারবার মাথায় পানি ঢালছে আর অস্থির ভাবে ঘরে পায়চারি করছে।

ভূতেরা প্রতিদিন জন্ম দিচ্ছে রহস্যময় আজব ঘটনার
কদিন বাদে ডাকাত পড়ল এই বাড়িতে। দুর্ধর্ষ ডাকাতদলটি গেট ও দরজা ভেঙেচুরে মূল ঘরে প্রবেশ করে মূল্যবান সবকিছু নিয়ে নিচ্ছে। বাড়িওয়ালা ভয়ে চিকন গলায় চিৎকার করে বলছে, হায় হায় দারোয়ান কই, দারোয়ান কই! আমার দারোয়ান কই!!!
ডাকাতেরা যা চায় তা দিয়ে দে। উপর থেকে কে যেন বলল।
বাড়িওয়ালা ডাকাতদের কথামত সব কিছু দিয়ে দিল।
ডাকাতেরা টাকা-গহনা আর মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে নির্বিঘেœ ঘর থেকে বেরিয়ে বাড়ির মূল ফটকের সামনে গিয়ে একত্র হচ্ছে।
বাড়িওয়ালা পাহারাদারের কোনো ভূমিকা না দেখে চিৎকার করে হায়মাতম করছে আর পাহারাদার ও বাটপার সেরালির চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করছে।
ডাকাতদল মালামাল নিয়ে গেট পেরোবার সময় থমকে দাঁড়াল। কে যেন পেছন দিক থেকে ওদের টেনে ধরেছে। তারা টর্চলাইটে কাউকে না দেখতে পেরে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে ছুঁড়তে দৌড়ে রাস্তায় নেমে পড়ল। বাড়িওয়ালা যখন দেখল যে, ডাকাতেরা রাস্তায় চলে গেছে, তখন সে ক্ষোভে-দঃুখে আর হতাশায় ভেঙে পড়ল।
কিন্তু না।
ডাকাতেরা মালামাল নিয়ে অপেক্ষমান একটি গাড়িতে তুলে দ্রুত পালিয়ে যাচ্ছে ঠিক এমন সময় বাসার ছাদ থেকে একটা চিকন হাত এঁকে বেঁকে লম্বা হয়ে ডাকাতের গাড়িটা পেঁচিয়ে ধরল। তারপর গাড়িটা সামনের দিকে না গিয়ে দ্রুত পেছনের দিকে আসতে শুরু করেছে। আসতে আসতে গাড়িটা সেই বাড়ির ভেতরে চলে এল এবং পটাপট গেট বন্ধ হয়ে গেল। ডাকাতেরা গাড়ি থেকে বের হয়ে গেলে ভূতের চিকন হাতটা তাদের সাপের মতো পেঁচিয়ে ধরে আছাড় মেরে বারান্দায় বসিয়ে রাখে।
ডাকাতেরা হাঁপাতে হাঁপাতে বাড়িওয়ালাকে ডেকে বলছে, চাচাজান, আপনার মালামাল সব নিয়ে যান, আমরা আর বাঁচিনে, মহাবিপদে পড়ে গেছি। উহ্ আহ্ মরে গেলাম রে।
বাড়িওয়ালা তার স্ত্রীকে নিয়ে জানালার ডালা খুলে ডাকাতদের দূরবস্থা দেখে আনন্দে খাটের ওপর ব্যঙের মত লাফালাফি করতে লাগল।
বাড়িওয়ালার ফোন পেয়ে পুলিশ এসে ডাকাতদের পাকড়াও করে থানায় নিয়ে গেল।
তিনি এক দৌড়ে ছাদে চলে গেলেন এবং আঁতিপাঁতি করে খুঁজছেন পাহাড়াদারকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য। কিন্তু ছাদে কাউকে দেখা গেল না। ছাদের কোনে একটা বিড়াল দেখতে পেলেন। তিনি বিড়ালটাকে খাবলে ধরে কী যেন বলতে চাইলেন। কিন্তু বিড়ালটা ফ্যাঁচ করে একটা ভেংচি মেরে চলে গেল নিচে। তিনি রাগ করলেন না, একটা হাসি দিয়ে বাসায় চলে গেলেন।
বাড়িওয়ালা পাহারাদারের রহস্যময় ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকায় এতই খুশি ও সন্তুষ্ট হয়েছেন যে, তিনি কীভাবে এর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবেন তার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না।
বাড়িওয়ালা খুশিতে টগবগিয়ে স্ত্রীসহ গাড়ি নিয়ে ছুটে গেলেন সেরালির কাছে। তিনি সেখানে গিয়ে দেখেন, পোলট্রি মালিক চাওয়ার চেয়ে বেশি পাওয়ার আনন্দে দশ বারোটা তাগড়া মোরগ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে সেরালির প্রশংসা করছে।
বাড়িওয়ালা ব্যাগ থেকে এক তোড়া টাকা বের করে দৌড়ে গিয়ে সেরালিকে ঝাপটে ধরে অন্ধভাবে কোলাকোলি করতে লাগলেন। তারপর পোলট্রি মালিকের মুখে ‘মুরগিচোর’ জব্দ করার আজব কাহিনী শুনে তারা হাসি-কাশিতে ধণুকের মত বাঁকা হয়ে গেলেন।
সেরালির সুনাম-সুখ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের ধনী ব্যক্তিরা এসে ভিড় করছে সেরালির বাড়িতে। এরা চড়া মূল্যে ভাড়া করে নিয়ে যাচ্ছে ভূত। এ ভূতেরা প্রতিদিন জন্ম দিয়ে চলেছে অসংখ্য রহস্যময় আজব ঘটনার।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:৩৪
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×