somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

বিএম বরকতউল্লাহ
পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

এক কামরার ঘর

২২ শে অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৩:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পিতামাতাহীন রমেলাকে চোখের জলে স্বামীর সংসার ছেড়ে ভাই ভাবীর সংসারে এসে আশ্রয় নিতে হয়েছে। তার সাথে রয়েছে তিনটি অবুঝ শিশু কন্যা। বড় মেয়ের বয়স পাঁচ বছর, মেঝোটার তিন বছর আর ছোটটার মাত্র ৪ মাস। রমেলার দোষ, সে বারবার কন্যাসন্তানের জন্ম দিচ্ছে। স্বামী ও তার পরিবারের সবাই যেখানে মনে প্রাণে পুত্র সন্তান চাইছে সেখানে সবার ইচ্ছাকে উপেক্ষা করে বারবার কন্যা সন্তান জন্ম দেয়াটা রমেলার ধৃষ্টতাই বটে। পুত্র সন্তান জন্মদানে অক্ষম অযোগ্য বউ দিয়ে আর কাজ কী? অতএব ওকে তাড়াও। শাশুড়ি, ননদের আড়াই ইঞ্চি লম্বা জিহ¦া আর সুযোগ্য স্বামীর সাড়ে তিন হাত লম্বা শক্ত লাঠির অকথ্য জ্বালা-যন্ত্রণা ও অত্যাচারে জর্জরিত রমেলা চরম অবজ্ঞা অবহেলায় দুর্বল শরীর নিয়ে অভাগা তিনটে কন্যা সন্তানসহ যখন ভাইয়ের সংসারে এসে উপস্থিত হলো তখন ওই পরিবারের ওপর যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।

বিবাহিতা কন্যা বা বোন স্বামীর বাড়ি থেকে দই মিষ্টি পান সুপারি নিয়ে আকর্ণ হাসির রেখা টেনে যখন ছেলে পুলে নিয়ে বাপ ভাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসে তখন আনন্দে ও গর্বের সীমা থাকে না। বাবা-ভাইয়ের বাড়িতে আনন্দ উৎসবে কেটে যায় সময়। তার সুখ শান্তির কথা ইনিয়ে বিনিয়ে বলে পরম তৃপ্তি লাভ করে সবাই। কিন্তু স্বামীর সংসার থেকে বিতাড়িত হয়ে যে কন্যা বা বোন বাপ ভাইয়ের সংসারে এসে হাজির হয়- সমাজ সংসারে তারচেয়ে ভারী বোজা আর হয় না।

রমেলার ভাগের পৈত্রিক সম্পত্তি ভোগ করছে যে ভাই সেই ভাই ভাবীর সাথে মাস দেড়েক থেকেই রমেলা বুঝতে পারছে সে উত্তপ্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনূনে পড়েছে। তার জমি আছে কিন্তু তাতে কোন অধিকার নেই। খেয়ে না খেয়ে, অন্যায়-অত্যাচারে, ভাই ভাবীর খোটা, গীবৎ, পাড়া পড়শীর ফিসফিসানী আর নানা কুসংস্কারের তান্ডবে দিশেহারা রমেলা বহুবার স্বামীর সংসারে ফিরে যাওয়ার আকুতি প্রকাশ করেছিল। কিন্তু পুত্রসন্তান জন্মদানের নিশ্চয়তা দিতে না পারায় তার স্বামীর সংসারে যাওয়াটাও অনিশ্চিত হয়ে গেল। তার স্বামী ও শাশুড়ি পরিষ্কার জানিয়ে দেয়- আমাদের বাড়িতে তোকে, এমনকি তোর তিন কন্যাকেও আর গ্রহণ করা হবে না। ভাগ্যবিড়ম্বিতা রমেলা শুধু নারীই নয়, সে মাও বটে। নিজের জীবন যায় কিন্তু সন্তান ছাড়ে না কোনো মা। রমেলাও ছাড়েনি।

দুই.
রমেলার স্বামী নেই, সংসার নেই, পায়ের নিচে মাটি নেই। চারদিকে অন্ধকার! উপায়হীন রমেলা এতে ভেঙ্গে না পড়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবার চেষ্টা করতে থাকে। েবসরকাির প্রিতষ্ঠােনের (এনিজও) এক মাঠকর্মীর সাথে আলাপ করে রমেলা সদস্য হয়ে যায়। সে এনজিও হতে ঋণ তুলে নতূন জীবনে প্রবেশ করে। প্রতিবেশী নূরীর সহযোগিতায় সে বাজার থেকে পান, সুপারি, তেল, শূঁটকি ও চকোলেট কিনে এনে এগুলো এলাকায় ফেরি করে বিক্রি করতে থাকে। অল্প পুজির এই ব্যবসায় যে আয় হয় তাতে তিন কন্যা নিয়ে সে কোনোমতে চলতে পারে। রমেলা দিনে দিনে আত্মপ্রত্যয়ী, অভিজ্ঞ ও সাহসী হয়ে ওঠে। অবলা নারীর সাথে বিপুলা পৃথিবীর কঠিন বাস্তবতার দূরত্ব যতই কমতে থাকে ততই সফল হতে থাকে সে।

এলাকার লোকজন বিশেষ করে গৃহিনীদের সাথে তার ব্যবসায়িক সখ্যতা গড়ে ওঠে। অর্বাচীন গৃহবধূ রমেলা এখন পাকা ফেরি ব্যবসায়ী। নিজের আয়ের টাকায় সে বাপের ভিটায় ছোট একটা দো-চালা ঘর করে আলাদা থাকতে শুরু করে। সে প্রথম দফার ঋণ পরিশোধ করে ২য় দফায় দ্বিগুণ ঋণ তুলে দ্বিগুণ উৎসাহে এগিয়ে চলতে থাকে। দুই বছরের মাথায় রমেলা পেল গৃহঋণ। নিজের ঘরটাকেই সে আয় উপার্জনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করে। সে সেলাই মেসিন কিনে রাতে দর্জির কাজ করতে থাকে। সে বড় মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে। রমেলাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিন কন্যার দুর্ভাগা মা রমেলা জীবন সংগ্রামে জয়ী হয়ে এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে আতœনির্ভরশীল নারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে তোলে। রমেলা এখন পরনির্ভরশীল নয়-আত্মপ্রত্যয়ী স্বনির্ভর নারী।

এখন তার স্বামী আদরের তিন কন্যা ও ভাগ্যবতী স্ত্রীকে সংসারে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য অনেক কাকুতি মিনতি করছে। রমেলা ক্ষোভে, অভিমানে স্বামীর ঘরে আর যাবে না বলে ওদের জানিয়ে দেয়। কিন্তু আপন ঘরের লক্ষ্মী পরের ঘরে থাকবে কেন? তারা রমেলাকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য এলাকার ময়মুরুব্বি ধরেছে। মুরুব্বিরা পষ্ট বলে দিয়েছে, রমেলা এখন স্বামীর ঘরে যাবে কি যাবে না এটা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের ব্যাপার।

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:০৩
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×