somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাশ্মীর -অতীত , বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ

২৯ শে জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
কাশ্মীর -অতীত , বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ



মুঘল বাদশা জাহাঙ্গীর প্রথমবার কাশ্মীর ভ্রমণের পর লিখেছিলেন " অগর ফিরদস বা রয়- ই -জমিন অস্ত ,হামিন অস্ত -উ -হামিন অস্ত -উ -হামিন অস্ত। " অর্থাৎ " If there is paradise on earth , it is this , it is this, it is this."

প্রাচীন কালের পূণ্যভূমি "কাশ্যপমর " , যার নামকরণ ভারতীয় ঋষি কাশ্যপ থেকে , পরবর্তীকালের কাশ্মীর। মহাভারতে এই জায়গার উল্লেখ আছে। সম্রাট অশোক খৃ:পূ : তৃতীয় শতাব্দীতে এখানে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার করেন। গ্রীকরা জায়গাটিকে বলতো কাশপেরিয়া। চাইনিজ পরিব্রাজক হিউয়েন স্যাং ৭ই শ্বতাব্দীতে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন কালে এখানে পরিভ্রমন করেন এবং তাঁর গ্রন্থে এটিকে বর্ণনা করেন কাশীমিলো নামে।

অষ্টম এবং নবম শতকে হিন্দু ধর্মের একটি শাখা শৈবইজম এখানে প্রসার লাভ করে। সংস্কৃত ভাষার চর্চা শুরু হয় ব্যাপকভাবে। মূল অধিবাসী হলেন কাশ্মীরি পন্ডিতরা , যাদের মনে করা হয় ঋষি কাশ্যপের উত্তরসূরী। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নেহেরু ছিলেন কাশ্মীরি পন্ডিত , নিজের নামের আগেও পন্ডিত লাগাতেন -পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু। ভারতের বর্তমান ক্রিকেটার সুরেশ রাইনা, অভিনেতা অনুপম খের , গায়ক কৈলাশ খের -এরা সবাই কাশ্মীরি পণ্ডিত। ১৩৪৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন হিন্দু রাজা কাশ্মীর শাসন করে। এর পরে শুরু হয় একের পর এক বহিরাগত মুসলমানদের আক্রমণ। শুরু হয় ধর্মান্তকরণ। এরপর ১৫৮৭ থেকে ১৭৫২ পর্যন্ত কাশ্মীর থাকে মুঘল বাদশা দের দখলে। সবথেকে বেশী ধর্মান্তকরণ করা হয় ঔরঙ্গজেব এর শাসনকালে। বর্তমানকালের বেশীরভাগ কাশ্মীরি মুসলমান ধর্মান্তরিত কাশ্মীরি পন্ডিত।

ঔরঙ্গজেবএর পর মূঘল সাম্রাজ্যের সূর্য অস্ত গেলে কাশ্মীরে আসে আফগান লুঠেরা রা (১৭৫২-১৮১৯) । এরপর আফগানদের থেকে কাশ্মীর ছিনিয়ে নেয় শিখরা। শিখরা রাজ্য হারায় ব্রিটিশদের কাছে। ১৮৪৬ সালে ব্রিটিশদের থেকে কাশ্মীর কিনে নেয় হিন্দু ডোগরা রাজা গুলাব সিং , তৎকালীন ৭৫ লক্ষ নানকশাহী রুপী তে। কাশ্মীর অঞ্চল কে বর্ণনা করা হয় " to the eastward of the river Indus and westward of the river Ravi . কত হাজার বছর ধরে বইছে এই রিভার ইন্দাস বা সিন্ধু নদ তা কে জানে , কত ইতিহাসের স্বাক্ষী এই রিভার ইন্দাস , এর অববাহিকায় গড়ে ওঠে পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা ইন্দাস ভ্যালি বা সিন্ধু সভ্যতা ,সিন্ধু থেকে হিন্দু জনগোষ্ঠী যার উত্তরসূরী আজকের হিন্দুস্তান বা ভারত বা ইন্দাস থেকে ইন্ডিয়া । এখানে একটা কথা উল্লেখযোগ্য - সে সময় সিন্ধু অববাহিকায় বসবাসকারী বিশাল জনগোষ্ঠী কে হিন্দু বলা হত , হিন্দু বলতে ধর্ম কে বোঝাতো না।



ডোগরা রাজাদের বংশ পরম্পরা ছিল এই রকম : মহারাজা গুলাব সিং (রাজত্বকাল :১৮৪৬-১৮৫৭), মহারাজা রণবীর সিং (রাজত্বকাল:১৮৫৭-১৮৮৫) , মহারাজা প্রতাপ সিং (রাজত্বকাল :১৮৮৫-১৯২৫) , এবং মহারাজা হরি সিং (রাজত্বকাল :১৯২৫-১৯৫০) ।

কাশ্মীরের শেষ স্বাধীন রাজা হরি সিং কে মনে রাখুন , ১৯৪৭ সালের পর তাঁর ভুমিকা ছিলো ভীষণ গুরুত্বপুর্ণ। ১৯৪৭ পরবর্তী নাটকের প্রধান কুশীলবরা ছিলেন : মহারাজা হরি সিং , জওহরলাল নেহেরু , মো : আলি জিন্নাহ এবং শেখ আবদুল্লা (১৯০৫-১৯৮২) .

কে এই শেখ আবদুল্লাহ? এক সাধারণ গরীব কাশ্মীরি মুসলমান পরিবারে জন্ম। ১৭২২ সালে তাঁর পূর্বপুরুষ কাশ্মীরি পন্ডিত রঘুরাম কাউল ইসলামে ধর্মান্তরিত হন। ১৯৩০ সালে ভারতের আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিস্ট্রি তে M.Sc করেন। ছিল তাঁর অনেক রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খা। ১৯৩৭ সালে নেহরুর সাথে পরিচয় এবং তৈরি হয় বন্ধুত্ব। দুজনেই কাশ্মীরি -একজন কাশ্মীরি হিন্দু পন্ডিত অন্যজন কাশ্মীরি মুসলমান।দুজনের কেউই মহারাজা হরি সিং কে পছন্দ করেন না , তাঁর পতন চান। দুজনেই সেক্যুলার এবং মহাত্মা গান্ধিকে গুরু মানেন। আবদুল্লাহর আত্মজীবনী "অতীশ -এ -চিনার" থেকে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

১৯৩৮ সাল। শেখ আবদুল্লাহ কোন কারনে পাঙ্গা নিলেন হরি সিংহ এর সাথে। মহারাজএর মান সম্মান বলে কথা। হরি সিং তাঁকে জেলে ভরে দেন ৬ মাসের জন্য। এর আগে আবদুল্লাহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাজনৈতিক দল মুসলিম কনফারেন্স যা পরবর্তী কালে নাম পাল্টে হয় ন্যাশনাল কনফারেন্স। মহাত্মা গান্ধীর হস্তক্ষেপে হরি সিং তাঁকে তাড়াতাড়ি মুক্তি দিতে বাধ্য হন। শুরু হয় হরি সিং এর সাথে আবদুল্লার খুল্লাম খুল্লা দুশমনী। ততদিনে আবদুল্লা মোটামুটি কাশ্মীরের নেতৃস্থানীয় স্তরে পৌঁছে গেছেন।

১৯৪৭-১৫ই আগস্ট -ভারত ভাগ -স্বাধীন ভারত বর্ষ -মহারাজা হরি সিং কি করবেন ?

ব্রিটিশরা তাঁকে তিনটি অপশন দিলো ১) ভারতের সাথে সংযুক্তি ২) পাকিস্তানের সাথে সংযুক্তি অথবা ৩) স্বাধীন হওয়া। হরি সিং সময় চাইলেন। তিনি তাঁর প্রজাদের সাথে কথা বলতে চান। শেখ আব্দুল্লাহ ধুরন্ধর রাজনীতিবীদ , তিনি আঁচ করতে চাইছিলেন মহারাজা কি চান। শেখ আবদুল্লাহ বুঝতে পেরেছিলেন নতুন পরিস্তিতিতে স্বাধীন ভাবে কাশ্মীরের টিঁকে থাকা মুশকিল , মনে মনে ইচ্ছা শর্তসাপেক্ষে ভারতের সাথে যুক্ত হওয়ার। প্রতিরক্ষা ,বিদেশ, কারেন্সী মূদ্রণ ইত্যাদি কয়েকটি বিষয় ছাড়া বাকী সবকিছুর নিয়ন্ত্রন থাকবে কাশ্মীরের হাতে। মনে উচ্চাকাঙ্খা ছিলো যে মহারাজার বিদায় হলে তিনি হবেন কাশ্মীরের সর্বেসর্বা। এদিকে মহারাজা হরি সিংএর তরফ থেকে কোন উচ্চবাচ্য শোনা যাচ্ছে না। কিন্তু তিনি মনে মনে বিভিন্ন পার্মুটেশন -কম্বিনেশন ছকে যাচ্ছেন।

২০ অক্টোবর ১৯৪৭ , জিন্নাহর নবগঠিত পাকিস্তান করলো কাশ্মীর আক্রমণ। মহারাজের সিদ্ধান্ত নেওয়া পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করতে রাজি নয়। তাদের লক্ষ্য মহারাজ কে জোর করে অপসারিত করে কাশ্মীর পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করা। জিন্নাহর শ্লোগান -কাশ্মীর বনেগা পাকিস্তান। মহারাজ প্রমাদ গুনলেন। তাঁর রক্ষীরা পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর কাছে খড়কুটোর মত উড়ে গেলো। নৃশংস হত্যালীলা চালাতে চালাতে তারা পৌছে গেল শ্রীনগরের দোরগোড়ায়। কাশ্মীরের এক বিরাট অংশ চলে গেল তাদের দখলে।বিষম বিপদ বুঝে তিনি ছুটে গেলেন প্রধানমন্ত্রী নেহেরুর কাছে। তিনি ভারতের সাথে যুক্ত হতে চান। লর্ড মাউন্টব্যাটেন এর উপস্থিতিতে সাক্ষরিত হল "Instrument of Accession" . দিনটা ছিল ২৬ অক্টোবর ১৯৪৭। জম্মু -কাশ্মীর হল এক ভারতীয় রাজ্য।

প্রধানমন্ত্রী নেহেরু ভারতীয় সেনাবাহিনীকে আদেশ দিলেন পাকিস্তানীদের হটানোর। শুরুহোল স্বাধীনতার পর ভারত এবং পাকিস্তানের প্রথম যুদ্ধ। ভারতীয় বাহিনী কাশ্মীর ভ্যালীর প্রায় দুই -তৃতীয়াংশ পুনুরুদ্ধার করে এবং তাদের আশা ছিল বাকি এক-তৃতীয়াংশ এবং গিলগিট -বল্টিস্তান ও উদ্ধার করতে সমর্থ হবে। এমত অবস্থায় ব্রিটিশ রা নেহেরু কে বাধ্য করে যুদ্ধ থামাতে।
প্রসঙ্গতঃ , ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ ভারত স্বাধীন হলেও ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ভারতের গভর্ণর জেনারেল ছিলেন লর্ড মাউন্টব্যাটেন।

মাঝপথে যুদ্ধ থেমে গেলো। নেহেরুর এই অমার্জনীয় ভুলের প্রায়শ্চিত্ত ভারত করতে থাকবে চিরকাল।

যুদ্ধ বন্ধ হওয়া সময়ে পাকিস্তান যতটা জায়গা ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছিলো তা হল পাকিস্তানের কাছে "আজাদ কাশ্মীর" এবং ভারতের কাছে Pakistan Occoupied Kashmir বা POK . ভারতের নিজেদের অংশের কাশ্মীর হল জম্মু & কাশ্মীর বা J&K . পাকিস্তানীরা এটাকে বলে Indian Occupied Kashmir বা IOK .

এরপর সিন্ধু দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। পাকিস্তান তাদের অধিকৃত কাশ্মীরের একটা অংশ পেয়ারা দোস্ত চীন কে দান খয়রাতি করেছে, যেটাকে বলা হয় China-Occupied -Kashmir বা (COK).

ভারত এবং পাকিস্তান ১৯৬৫ , ১৯৭১ এবং ১৯৯৯ সালে কাশ্মীর নিয়ে যুদ্ধ করেছে। ১৯৭১ সালে যুদ্ধে পরাজয়ের পর পাকিস্তান ভারতের সাথে "সিমলা চুক্তি " করে , যেখানে সিদ্ধান্ত হয় কাশ্মীর নিয়ে শত্রুতা দু দেশ আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ভাবে মিটিয়ে নেবে।

১৯৯০ সাল পর্যন্ত ভারতীয় কাশ্মীর বেশ শান্ত ছিল। বিচ্ছিন্নতা বাদ বা আজাদী চাওয়া ইত্যাদি বিষয় সেখানে ছিল না। বিভিন্ন সময়ে সেখানে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন ন্যাশনাল কনফারেন্স (NC ) পার্টির শেখ আব্দুল্লাহ , তার পুত্র ফারুক আব্দুল্লাহ , পৌত্র ওমর আব্দুল্লাহ , কংগ্রেস পার্টির গুলাম নবী আজাদ এবং PDP পার্টির মুফতি মোহাম্মদ সাঈদ। মুফতি মোহাম্মদ সাঈদ ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীও ছিলেন।

১৯৯০ সালে কি হলো ??

১৯৯০ সালে ভারতের কাশ্মীরে কি হল বুঝতে হলে পিছিয়ে যেতে হবে আরো বেশ কয়েক বছর এবং দেখতে হবে ১৯৭৫-১৯৯০ এই সময়ে পাকিস্তানে কি হল। সত্তরের দশকের শেষ দিকে আফগানিস্তানে হানা দেয় তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়া। আমেরিকার সাথে সোভিয়েত রাশিয়ার ঠান্ডা যুদ্ধ তখন তুঙ্গে। আমেরিকার দোসর পাকিস্তান।সামরিক অভ্যুথান করে ক্ষমতায় এসেছেন জেঃ জিয়া-উল-হক। জুলফিকার আলি ভুট্টো কে ফাঁসি তে ঝুলিয়েছেন। তাঁর ওপর বর্ষিত হচ্ছে আমেরিকার আশীর্বাদ।মহাশক্তিশালী সোভিয়েত কে আফগানিস্তানে আটকাতে আমেরিকার বলির পাঁঠা হতে রাজী পাকিস্তান। বিনিময়ে চাই ডলার। আফগানিস্তানে গিয়ে লড়াই করার জন্য পাকিস্তান তৈরী করবে হাজার হাজার ঈমানী জোশে উদ্বুদ্ধ জিহাদী। তৈরী হল কয়েকশত জিহাদী ট্রেনিং ক্যাম্প। আর এই ক্যাম্প গুলো স্থাপনা করা হল পাকিস্তানের দখল করা 'আজাদ কাশ্মীর " অংশে। তৈরী হল পাকিস্তানী এবং আফগান তালিবান।এই জিহাদী যুবকদের হাতে অস্ত্র তুলেদিলো আমেরিকা। ঈমানী জোশ দিলো সৌদি আরব। ১৯৭৩ সালের আরব -ইস্রায়েল যুদ্ধের ফলে বিশ্ববাজারে পেট্রো-তেলের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে।পেট্রোডলারএ সৌদি রাজাদের তখন আঙুল ফুলে কলাগাছ। অশিক্ষিত ,বর্বর সৌদি রাজবংশের এখন শুধু তেল রপ্তানী করে মন ভরছে না , তারা বিশ্ব জুড়ে রপ্তানী করা শুরু করল ওয়াহাবী ইসলাম। সৌদি অর্থে বিভিন্ন দেশে তৈরী হল একের পর এক মসজিদ।এগুলিতে সৌদীরা তাদের ওয়াহাবী প্রপাগান্ডা ছড়াতে শুরু করল বিশ্ব জুড়ে। তৈরী হল ধর্মের ভাইরাস এবং অর্থের মিশ্রনে তৈরি এক ভয়ংকর টাইমবম্ব। পাকিস্তানে প্রশিক্ষিত জিহাদী /মুজাহীদ/আফগান/পাঠানরা আফগানিস্তানে গিয়ে সোভিয়েতের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।শহীদ হওয়ার পর তাদের জন্য আছে জান্নাত।

পাকিস্তান খুশীতে ডগমগিয়ে উঠল। একদিকে আফগান যুদ্ধে সাহায্য করার জন্য আমেরিকা দিচ্ছে বিলিয়নস অফ ডলার অন্যদিকে দেশের হাজার হাজার জিহাদী যুবক "শাহাদাত " বরণ করছে। সুতরাং তাদের শিক্ষা ,স্বাস্থ্য ,কর্মসংস্থান এবং ভবিষ্যতের কোন দায়-দায়িত্ব রাষ্ট্রের নেই। পাকিস্তানী আর্মি, ISI অফিসার এবং রাজনীতিবিদদের বিদেশী ব্যাংকে উপচে পড়ছে আমেরিকান ডলার।

১৯৮৮ সালে পাকিস্তানের মধ্যে এক বিমান দুর্ঘটনায় জেঃ জিয়া-উল-হক নিহত হন।দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। নিন্দুকেরা বলে আমেরিকানদের কাছে তাঁর প্রয়োজনীতা শেষ হয়ে যাওয়াতে তাঁকে "ডাম্প" করা হয়। তাঁর আমলে পাকিস্তানে হাজার হাজার শিয়া মুসলমানদের হত্যা করা হয়। অনেক নিন্দুক বলে বিমানের শিয়া পাইলট প্রতিশোধ নেবার জন্য বিমানটিতে দুর্ঘটনা ঘটায়।

৮০র দশকের শেষ দিকে আফগানিস্তান থেকে হটতে থাকে রুশ বাহিনী। পুল-আউট কমপ্লিট হয় ১৯৮৯ সালে। আফগানিস্থান থেকে আমেরিকাও হাত ধুয়ে ফেলে। পাকিস্তান সমস্যায় পরে এই জিহাদীদের নিয়ে -ধর্মের নামে মারা এবং মরা ছাড়া যারা আর কিছু শেখেনি।

পাকিস্তান চড়ে ছিল বাঘের পিঠে। থামার আর কোনো উপায় নেই। এই জিহাদী গুলোর কিছু অংশ কে পাকিস্তান ভিড়িয়ে দিল ভারতীয় কাশ্মীর অংশে। এরা স্থানীয় মুসলিম যুবকদের হাতে অস্ত্র তুলে দিলো এবং অনুপ্রাণিত করলো জিহাদে। কাশ্মীরে প্রবেশ করলো টক্সিক ওয়াহাবী মতবাদ। কাশ্মীরি মুসলমান এতকাল অনুসরণ করে এসেছে বুল্লেশা র সুফী ইসলাম। শত শত বছর ধরে তারা পাশাপাশি বাস করেছে কাশ্মীরি পন্ডিতদের সাথে। তৈরী হয়েছে এক অসাধারন অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যাকে বলা হয় "কাশ্মীরিয়াত"।

কিন্তু ধর্মের বিষ মেরে ফেললো প্রতিবেশী সুলভ ভালোবাসা কে। হত্যা এবং অপহরণ করা হল অনেককে ,মহিলাদের রেপ করা হল। ১৯৯০ সালের জানুয়ারী মাসের এক শীতল রাতে প্রায় দেড় লক্ষ কাশ্মীরি পন্ডিত হল কাশ্মীর ছাড়া। পরের মাস গুলোতে কাশ্মীর ছাড়ে আরো কয়েক লক্ষ। বেশির ভাগের আশ্রয় হল জম্মুতে তৈরী আশ্রয় শিবিরে বাকীরা ছড়িয়ে পড়ল ভারতের অন্যান্য শহরে। মুম্বাইয়ে যে হাউসিং কমপ্লেক্স এ আমি থাকি সেখানে আছেন কাশ্মীর থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়া ৪ টি পরিবার। তাদের মুখ থেকে শোনা যে তাদের বলা হয়েছিল হয় কনভার্ট হও এবং এখানেই থাক অথবা কাশ্মীর ছাড়ো। অন্যথায় মৃত্যু।মসজিদ গুলোর মাইক থেকে নাড়া দেওয়া হত "আয়ে জালীমও , আয়ে কাফিরও কাশ্মীর হামারা ছোর দো " । সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে রাতের অন্ধকারে তাঁরা কাশ্মীর থেকে পলায়ন করতে বাধ্য হয়েছিলেন। কাশ্মীর নিয়ে যখনই তাদের সাথে কথা হয় তখন তাদের বুকভরা দীর্ঘশ্বাসএ ড্রয়িং রুমের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। স্বাধীন ভারতে এটাই সবথেকে বড় "এথনিক ক্লেনসিং "। ভারত সরকার চূড়ান্ত ভাবে ব্যর্থ হয়েছিল পন্ডিতদের রক্ষা করতে।

ভারত সরকারের টনক নড়লো অনেক পরে। ততদিনে কাশ্মীরি পন্ডিতদের যা ক্ষতি হবার তা হয়ে গেছে। শুরু হলো জিহাদী/সন্ত্রাসী নিধন। কাশ্মীরের পুলিশের হাত থেকে ক্ষমতা নিয়ে দেওয়া হল সেনা বাহিনী এবং প্যারামিলিটারি কে। তাদের দেওয়া হল আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার আইন অনুযায়ী বিশেষ ক্ষমতা। কাশ্মীর পরিণত হল মিলিটারি গ্যারিসনে। কোন জায়গায় সেনা নামালে যা হয় - সন্ত্রাসবাদীদের সাথে নিহত হতে থাকলো সাধারণ নিরাপরাধ মানুষ। ১৯৯৯ সালে কাশ্মীরের কার্গিলে আবারো যুদ্ধ হয়েছে ভারত পাকিস্তানের। এই সবের মধ্যে ১৯৯০ থেকে সময় কেটে গেছে প্রায় সিকি শতাব্দী। মাঝখানের সময় গুলোতে কাশ্মীর ছিল কখনো শান্ত কখনো অশান্ত। এই ট্র্যাডিশন এখনো চলছে ।

কাশ্মীরের স্বাধীনতার দাবী এবং বাস্তবতা


এককথায় বলা যায় বাস্তবতার নিরীখে কাশ্মীরের স্বাধীনতা অসম্ভব। স্বাধীনতার দাবী মুসলিমপ্রধান কাশ্মীর ভ্যালির। কয়েকটি জেলা নিয়ে এই কাশ্মীর ভ্যালি। জম্মু হিন্দুপ্রধান এবং লাদাকিরা মূলত বৌদ্ধ ধর্মের। এরা ভারতের সাথে থাকতে চায়। কয়েকটি জেলা নিয়ে তৈরী কাশ্মীর ভ্যালি একটি ল্যান্ড লকড জায়গা। ভারতের মাথার ওপর একটি ল্যান্ড লকড দেশ না ভারতের পক্ষে ভাল হবে না দেশটির পক্ষে। ভারত যদি কখনো স্বাধীনতা দিয়েও দেয় পরেরদিন পাকিস্তান এটিকে দখল করে নেবে। ভ্যালিতে এখনো যে কয়েক লক্ষ হিন্দু ,বৌদ্ধ বা শিখ ধর্মাবলম্বী মানুষ আছে তাদের হত্যা করা হবে। পাকিস্তানের চিরদিনের স্বপ্ন -কাশ্মীর বনেগা পাকিস্তান।

হাওয়ালা রুটে কাশ্মীরি যুবকদের অর্থ পাঠায় পাকিস্তানের ISI . ঈমানী জোশ নিয়ে মুখে কাপড় বেঁধে কাফের ভারতীয় সৈন্যদের লক্ষ্য করে একঘণ্টা পাথর ছুড়লে ৫০০ রুপী এবং গ্রেনেড ছুড়লে ১০০০ রুপী। রেট ফিক্সড। ছোড়া পাথরে অথবা গ্রেনেডের স্প্লিন্টারে আহত মিলিটারী চালাবে গুলি। পরেরদিন পাকিস্তানের সংবাদপত্রগুলোর হেডলাইন- অত্যাচারী ভারতীয় মিলিটারীর হাতে নিরীহ কাশ্মীরি যুবকের মৃত্যু।

কাশ্মীরের যুবকরা কি করবে?

নিচের ছবিটি দেখুন :



যে কাশ্মীরি যুবকটিকে দেখতে পাচ্ছেন তার নাম শাহ ফয়সাল । নিম্নবিত্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান। কাশ্মীরের এক মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাশ করা ডাক্তার। সিভিল সার্ভিস( ICS ) পরীক্ষায় সারা ভারতের মধ্যে প্রথম স্থানাধিকারী। তার এই সাফল্যের জন্য ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। বর্তমানে সে শ্রীনগরে জম্মু -কাশ্মীর এডুকেশন বোর্ডের ডিরেক্টর।

জম্মু -কাশ্মীর ভারতের একমাত্র রাজ্য যেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শুধু স্কুল শিক্ষাই ফ্রী নয় , মেডিক্যাল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াও ফ্রী। সমস্ত খরচা ভারত সরকারের। এখানে আছে একাধিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ,বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি বিখ্যাত NIT এবং IIM . তারা যদি ভারতের অনান্য রাজ্যে পড়াশুনা করতে চায় তাহলে তারা পায় স্কলারশিপ।



নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর 4০০০ কোটি রুপী খরচ করে দক্ষিণ কাশ্মীরের অবন্তীপুরা এবং জম্মুর সাম্বায় তৈরি হচ্ছে দিল্লির আদলে বিখ্যাত মেডিক্যাল কলেজ AIIMS .

জম্মু-কাশ্মীর ভারতের একমাত্র রাজ্য যেখানে ষাট শতাংশেরও বেশী জনগণ ৮ রুপী কেজি দরে গম এবং ১০ রুপী কেজি দরে চাল পায় সরকারের রেশন দোকান গুলী থেকে। ভারত সরকার বিহার ,ঝাড়খণ্ডের মতো গরীব রাজ্যের মুখ থেকে অন্ন ছিনে জম্মু -কাশ্মীর কে সাবসিডি দেয়।

এবার নীচের ফটোগুলো দেখুন , বিব্রত হবেন।



প্রথম ছবিটিতে ভারতীয় সেনাদেরকে পাথর ছুঁড়ছে ১৮-১৯ বছরের কাশ্মীরি যুবকরা। শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর তাদের ঈমানী জোশ বেড়ে যায়। মসজিদের বাইরে এসে পাথর ছোড়া শুরু করে। এদের মজুরী আগেই উল্লেখ করেছি।





ওপরের ছবিটির মধ্যমণির নাম বুরহান ওয়ানি। সে সন্ত্রাসী সংগঠন হিজবুল মুজাহিদীনের নেতাগোছের ছিল। হাতে পাকিস্তানের দেওয়া বন্দুক। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাথে এনকাউন্টারে নিহত আরো তিন সঙ্গীর সাথে।



পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো একদা বলেছিলেন " হম হাজার সাল ঘাস খায়েঙ্গে লেকিন কাশ্মীর লেকে রহেঙ্গে।" তাঁর পিতা জুলফিকার আলি ভুট্টোর চিন্তা ভাবনাও একই ছিল। বেনজির ভুট্টোকে অবশ্য বেশীদিন ঘাস খেতে হয়নি ,২০০৭ সালে পাকিস্তানে এক জনসভায় ভাষণ দেওয়ার আগে তাঁকে হত্যা করে লস্কর -ই -ঝাংভির সন্ত্রাসীরা। জেঃ জিয়া -উল -হকের সময়ে তৈরী হওয়া কট্টর সুন্নী জিহাদী সংগঠন লস্কর -ই -ঝাংভি এখন কতল করে পাকিস্তানের শিয়া এবং আহমেদিয়াদের। অনেকদিন আগে ইউটিউবে এক পাকিস্তানী সাংবাদিকের নেওয়া এক লস্কর -ই -ঝাংভি সন্ত্রাসবাদীর ইন্টারভিউ দেখছিলাম। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে সে কাফের বলছিলো কারণ জিন্নাহ শিয়া মুসলমান ছিলেন।

কাশ্মীরি মুসলমান বাবা মায়েদের বেছে নিতে হবে তাঁরা কি চান। তাদের সন্তানরা শাহ ফয়সাল হবে না বুরহান ওয়ানি। তাদের ঠিক করতে হবে তাদের সন্তানেরা জিহাদী জোশে ভারতীয় সেনার দিকে পাথর ,গ্রেনেড অথবা বন্দুকের গুলি ছুড়বে না পড়াশুনা শিখে সমাজে প্রতিষ্টিত হবে। তাদের মনে রাখতে হবে শাহ ফয়সালদের মতো যুবকদের সারা ভারত মাথায় তুলে রাখবে , জিহাদীদের জায়গা হবে কবরে।

ভারত সরকারের কি করা উচিত ?

ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা যেটা শুধুমাত্র জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের জন্য প্রযোজ্য সেটি বাতিল করা। ৩৭০ ধারা অনুযায়ি কোন ভারতীয় ব্যক্তি বা সংস্থা সেখানে কোন জমি কিনতে বা লিজ নিতে পারে না। এই ধারার জন্য ভারতের কোন শিল্পসংস্থা সেখানে শিল্প স্থাপনা করতে পারে না। এটি বাতিল হলে ভারতের বিভিন্ন জায়গার লোক কাশ্মীরে এসে বসবাস করতে পারবে , শিল্পের প্রসার হবে ,সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট সেন্টার তৈরী হতে পারবে ,স্থানীয় লোকদের কর্মসংস্থান হবে সর্বপরি জনসংখ্যা ব্যালান্স হবে। ভারত সরকারের আরো উচিত যে সব কাশ্মীরি পন্ডিত ১৯৯০ থেকে সন্ত্রাসের কারণে ঘর ছাড়া তাদের ফিরিয়ে আনা ,তাদের নিরাপত্তা এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। ৩৭০ ধারার উদ্দেশ্য ছিল কাশ্মীরের সংস্কৃতি কে রক্ষা করা কিন্তু সেটি সম্পূর্ণ ব্যুমেরাং হয়ে গেছে।

সবশেষে এই ভিডিও টি দেখুন।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:০৫
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×