somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপনি কখন সত্যি কথা বলবেন ??

২৪ শে জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খ্রিষ্টের জন্মের কয়েকশো বছর আগের ঘটনা। এক চৈনিক পরিব্রাজক ভারত ভ্রমণে এসেছেন। উদ্দেশ্য বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় তক্ষশীলায় পড়াশুনা করা। তক্ষশীলার সুনাম ভারত ছেড়ে সুদুর চীনেও ছড়িয়ে পড়েছিল । পরিব্রাজক দেখা করবেন তৎকালীন বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম সাম্রাজ্যের রাজার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে।পাঁচ লক্ষ বর্গ কি.মি র বিশাল সাম্রাজ্যের রাজা অত্যন্ত অপরিণত অনভিজ্ঞ এক যুবক , ব-কলমে রাজ্য পরিচালনা করেন রাজার প্রাজ্ঞ প্রধানমন্ত্রী। তিনি তক্ষশীলার প্রধান অধ্যাপক এবং আচার্যও বটে।

রাজকীয় প্রাসাদে বিলাস-বৈভবে নয় , প্রধানমন্ত্রী বাস করেন প্রসাদ থেকে অনেক দূরে এক অত্যন্ত সাধারণ বাসস্থানে। তাঁর কোন ভৃত্য বা পরিচারক নেই , স্ব-পাক আহার করেন। সন্ধ্যা সমাগত ,পাখিরা বাসায় ফিরে গেছে অনেক আগে। ঘরে টিম টিম করে জ্বলছে একটি তেলের প্রদীপ। মুন্ডিত মস্তক ,সুঠামদেহী প্রৌঢ় নিবিড় মনে ব্যস্ত কিছু লেখালেখিতে। অতিথি অভ্যাগত কে সাদরে সম্ভাষণ করে অনুরোধ করলেন কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে। কথা দিলেন দ্রুত কাজ সমাপ্ত করে অতিথির প্রতি মনোযোগ দেবেন।

কাজ শেষ হলো। অপেক্ষা করানোর জন্য ক্ষমা চেয়ে অতিথির সামনে একটি কাজ করলেন। যে প্রদীপের আলোয় এতক্ষন লেখালেখি করছিলেন সেটি নিভিয়ে তিনি জ্বালালেন অন্য আরেকটি প্রদীপ।
চৈনিক পরিব্রাজক বিস্মিত হলেন।একটি প্রদীপ নিভিয়ে অন্য প্রদীপ জ্বালানো - তাঁর মনে হলো এটাই হয়তো প্রাচীন ভারতীয়দের অতিথি বরণের কোন প্রথা। যাইহোক মনের কৌতুহল চেপে রাখতে না পেরে সোজাসুজি জিজ্ঞাসাই করলেন এর কারণ।
-- না বন্ধু , এটা অতিথি বরণের কোন প্রথা নয়। আপনি যখন আমার ঘরে প্রবেশ করেন তখন আমি রাজ্য -পরিচালনা সংক্রান্ত কিছু কাজ করছিলাম। প্রদীপের তেল কেনা হয়েছিল সম্রাজ্যের কোষাগারের অর্থ থেকে। আপনি আমার ব্যক্তিগত অতিথি , আপনার সাথে আলোচনা কালে এই অন্ধকার ঘরকে আলোকিত করতে কোষাগারের অর্থে কেনা তেল অপচয় করতে পারি না। কোষাগারএর অর্থ প্রজাদের কল্যাণের জন্য । আগের প্রদীপ নিভিয়ে এই প্রদীপ জ্বালানোর কারণ এটার তেল আমার ব্যক্তিগত উপার্জিত অর্থে কেনা। সাম্রাজ্য প্রজাদের ,আমি এর অছি মাত্র।

ওই সাম্রাজ্যের রাজা ছিলেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য এবং ওই প্রাজ্ঞ প্রবীণ ব্যক্তি তক্ষশীলার আচার্য এবং চন্দ্রগুপ্তের প্রধানমন্ত্রী চাণক্য


আপনি কখন সত্যি কথা বলবেন ??

একদিন এক পরিচিত ব্যক্তি অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে চাণক্যের কাছে এসে বললেন -- "মহোদয় ,একটা সত্য কথা বলবো ? আপনার অতি প্রিয় মিত্রদের ব্যাপারে কিছু বলতে চাই । আপনার জানা প্রয়োজন। শুনতে চান?"
চাণক্য : বৎস , তিষ্ট ক্ষণকাল ! তোমার সত্য কথা শোনার আগে তিনটে প্রশ্ন করবো।
--কি প্রশ্ন ?
--প্রথম প্রশ্ন : তুমি যা বলতে চাও তা কি সম্পূর্ণ ভাবে সত্য ?
--না , মানে আমি নিজে শুনিনি , অন্যদের বলতে শুনেছি।সম্পূর্ণ সত্য কিনা নিশ্চিত নই।
--আচ্ছা , দ্বিতীয় প্রশ্ন : তুমি আমার প্রিয় মিত্রদের ব্যাপারে শ্রুতিমধুর কিছু বলতে চাও?
--না, আসলে এর উল্টো , এগুলো কটু কথা।
--আচ্ছা , তাহলে মিত্রদের ব্যাপারে যা বলতে চাও তা তুমি নিশ্চিত যে এটা সম্পূর্ণ ভাবে সত্য নয় এবং এটা তাদের ব্যাপারে কটু কথা।
--হ্যাঁ ----
--এবার তৃতীয় প্রশ্ন : তা বৎস, তুমি যা জানাতে চাও সেটা জানা কি আমার পক্ষে একেবারেই ভীষণ প্রয়োজনীয় ?
-- না ভীষণ প্রয়োজনীয় কিছু নয় --জানাবার জন্যে জানানো।
---তার মানে অন্যের সম্পর্কে তুমি আমাকে কিছু জানাতে চাও যা সম্পূর্ণ ভাবে সত্য নয় , তাদের সমন্ধে শ্রুতিমধুর নয় এবং জানাটা আমার জন্য ভীষণ প্রয়োজনীয় নয়। তাহলে এটা জেনে আমার কি উদ্দেশ্য সাধিত হবে বাপু?

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩১
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×