শুধু জ্বালানি তেল নয়, পানির সাহায্যেও গাড়ি চালানোর প্রযুক্তি এবার বাংলাদেশেই উদ্ভাবন হয়েছে। এর সাহায্যে গাড়ি ছাড়াও সেচযন্ত্র, জেনারেটরসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি চলবে। এতে জ্বালানি খরচ অনেক কমে যাবে। চট্টগ্রামের জয়নাল আবেদীন এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। তার বিস্ময়কর আবিস্কারটির নাম ‘কম্প্রেস্ড ওয়াটার ট্যাঙ্ক হাইড্রোফুয়েল কিট’। রাজধানীর জাতীয় নাট্যশালায় গতকাল নতুন এই আবিষ্কারটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। তবে ওই অনুষ্ঠানে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে জয়নাল আবেদীন তার প্রাণনাশের আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন। তার এই জ্বালানি সাশ্রয়ী হাইড্রোফুয়েল কিট আবিষ্কারের ফলে বিশ্বের জ্বালানি তেলসংক্রান্ত বড় কোনো চক্র তাকে হত্যা করতে পারে বলে তার আশঙ্কা। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার জীবনের নিরাপত্তা চেয়েছেন।
নভেল ভেনচারের আয়োজনে অনুষ্ঠানে কম্প্রেস্ড ওয়াটার ট্যাঙ্ক হাইড্রোফুয়েল কিটের মোড়ক উন্মোচন করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য নাজমা আক্তার, নভেল ভেনচারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুল ইসলাম, পরিচালক হাসান মুরাদ, অথেনটিক ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক সালাহউদ্দিন অ্যানি প্রমুখ।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ চার বছর কম্প্রেস্ড ওয়াটার ট্যাঙ্ক নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম ও গবেষণা করে ২০০৩ সালের ১২জুলাই তিনি জ্বালানি তেলের সহায়ক হাইড্রোফুয়েল কিট উদ্ভাবন করেন। যার একমাত্র উৎস পানি। তিনি তার উদ্ভাবিত প্রযুক্তিকে হাইড্রোফুয়েল কিট নামকরণ করেন।
জয়নাল আবেদীন অনুষ্ঠানে তার আবিষ্কার সম্পর্কে জানান, শুধু গাড়ি চালনা নয়, অন্য অনেক কাজেই এটি ব্যবহার করা যাবে। এতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটারও আশঙ্কা নেই। এক লিটার ফুয়েল দিয়ে একটি ১৫০০ সিসি’র গাড়ি যেখানে সর্বোচ্চ আট থেকে ১০ কিলোমিটার চলে, সেখানে তার প্রযুক্তিটি ব্যবহার করলে একই পরিমাণ ফুয়েল দিয়ে দ্বিগুণ কিলোমিটার চলবে। তিনি আরো জানান, সেচযন্ত্রে এটি ব্যবহার করা হলে ডিজেলের সাশ্রয় হবে প্রায় ৪০ ভাগের মতো। এক লিটার ডিজেলে যেখানে সর্বোচ্চ সোয়া এক ঘণ্টা একটি জেনারেটর চালানো যায়, সেখানে কম্প্রেস্ড ওয়াটার ট্যাঙ্ক হাইড্রোফুয়েল কিট ব্যবহার করলে সর্বোচ্চ তিন ঘণ্টা পর্যন্ত অনায়াসে চালানো যাবে যা ইতোমধ্যেই পরীক্ষিত হয়েছে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান জয়নালের এই বিস্ময়কর আবিষ্কারের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের সন্তানরা এ ধরনের আরো নতুন নতুন আবিষ্কারের মধ্যে দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারেন। সরকার এ ব্যাপারে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে বলে তিনি আশা করেন।
নভেল ভেনচারের কামরুল ইসলাম জানান, দীর্ঘ আট মাস জয়নালের উদ্ভাবনের ওপর তারা যৌথভাবে কাজ করেছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তার এই আবিষ্কারের যথার্থতা প্রমাণ হয়েছে। হাইড্রোফুয়েল কিট ব্যবহারে ইঞ্জিনচালিত সব যানবাহন থেকে শুরু করে প্রত্যেক ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত জ্বালানি সাশ্রয় হবে। এ প্রযুক্তি ব্যবহারে জ্বালানি তেল আমদানি না করে কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব।
অথেনটিক ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের সালাউদ্দিন অ্যানি জানান, বিপুল জ্বালানি সাশ্রয়ী এই হাইড্রোফুয়েল কিট বুয়েটসহ বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষিত হয়েছে। নতুন এই আবিষ্কার ওই সব পরীক্ষায় সফল হয়েছে। এই ধরনের প্রযুক্তি বিশ্বে এটাই প্রথম। এটিতে হাইড্রোজেন স্টোরেজ হয় না। তাই বিস্ফোরণ ঘটারও কোনো আশঙ্কা নেই বলে তিনি জানান।
(সুত্রঃ দৈনিক নয়াদিগন্ত ৪ঠা মে ২০০৯ইং)
Click This Link