ছবি: নিয়াজির পেছনে কাদের মোল্লা
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা নিজেই সাফাই সাক্ষী হিসেবে সাক্ষী দিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ আবদুল কাদের মোল্লা তার বলেছেন, ১৯৭১ সালের ১২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের আমিরাবাদ চলে যান এবং মুক্তিযদ্ধের পুরো সময়ই গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করেন। গ্রামে অবস্থানকালে আবদুল কাদের মোল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং হাইস্কুলের প্রায় ৩০ জন ছাত্রের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নেন। ২৩ মার্চ থেকে ১ মে ১৯৭১ পাকিস্তান সেনাবাহিনী ফরিদপুরে পৌছার দিন পর্যন্ত অন্যদের সাথে তিনি মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং চালিয়ে যান। কাদের মোল্লাসহ অন্যদের ডামি রাইফেল দিয়ে মুক্তিযদ্ধের ট্রেনিং দেন সেনাবাহিনীর জুনিয়র কমিশন অফিসার (জেসিও) মফিজুর রহমান।
জবানবন্দীতে আবদুল কাদের মোল্লা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি বাড়িতে অবস্থান করে আকাশবাণী কলকাতা, স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র এবং পাকিস্তান রেডিও’র খবর নিয়মিত শুনতাম। গ্রামে অবস্থানকালীন সময়ে মৌলভী মোঃ ইসহাক ওরফে ধলা মিয়া পীর সাহেবের বাড়িতে যেতাম এবং উনার দুই মেয়েকে পড়াতাম ওই পীর সাহেবের এক জামাতা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন বলে পরে জানতে পেরেছি এবং পীর সাহেবের ছেলেরা সবাই স্বাধীন বাংলার সমর্থক ছিল। পীর সাহেব মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাকে কিছু টাকা দেন তার বাজারের ঘরটি ব্যবসা বাণিজ্য করার জন্য। বাজারটি চৌদ্দরশি বাজার নামে পরিচিত হলেও কাগজে-কলমে এটি সাড়ে সাতরশি বাজার নামে পরিচিত। বাজারটির হাটবার ছিল শনি ও মঙ্গলবার, তবে প্রতিদিন বাজার বসত। পুরো ১৯৭১ সাল এবং ১৯৭২ সালের প্রায় পুরো সময় আমি প্রতি সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবারে বাজারে যেতাম এবং পীর সাহেবের বাজারের ঘরে বসতাম এবং ব্যবসা করতাম।
জবানবন্দীতে আবদুল কাদের মোল্লা আরো বলেন, ১৯৭১ সালে তৎকালীন সদরপুর-ভাঙ্গা নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন এবং সদরপুর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি শাহজাহান তালুকদারের সঙ্গে আমার নিয়মিত আলাপ আলোচনা হতো। তখন সদরপুর থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লৎফুল করিমের সাথেও আমার পরিচয় হয় এবং তারপর থেকে এদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল।
এ পর্যন্ত জবানবন্দী দেয়ার পর কাঠগড়ায় আবদুল কাদের মোল্লা অসুস্থ হয়ে পড়েন। কাদের মোল্লা তার বুকে ব্যথা অনুভব করছেন বলে ট্রাইব্যুনালকে জানান। ট্রাইব্যুনাল জবানবন্দী গ্রহণ বন্ধ করে কাদের মোল্লাকে বিশ্রাম নিতে বলেন। অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালকে বলেন, কাদের মোল্লা হার্টের রুগী তার এনজিওগ্রাম করা হয়েছে। আজকের মতো জবানবন্দী গ্রহণ মুলতবি করা প্রয়োজন। এরপর ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে পুলিশ সদস্যরা কাদের মোল্লাকে এনে ট্রাইব্যুনালে আসামিদের অবস্থান করার স্থানে এনে শুইয়ে রাখেন। দুপুরের পর কাদের মোল্লার আইনজীবীরা ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করে তিনি সুস্থ হননি। এরপর কাদের মোল্লার অসুস্থতার কারণে ট্রাইব্যুনাল আগামী রোববার পর্যন্ত জবানবন্দী গ্রহণ মুলতবি করেন।
আজ সকালে ডিফেন্স লইয়ার অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালকে জানান, আবদুল কাদের মোল্লা নিজেই এক নাম্বার ডিফেন্স সাক্ষী। তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, কাদের মোল্লার নাম ডিফেন্স সাক্ষীর তালিকাতে আছে কি না। জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য কাদের মোল্লা নিজেই নিজের পক্ষে সাক্ষী দেবেন। ট্রাইব্যুনাল অনুমতি দিয়ে বলেন, আমরা আসামিকে সাক্ষী হিসেবে অ্যালাও করছি।
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:৪৪