somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশ বনাম মায়ানমার বনাম বিশ্ব

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৮:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ওয়ার্ল্ডে ১৩৩ টা মিলিটারি পাওয়ারের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে ৫৭ তম আর মিয়ামনমার ৩১ তম। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের রিপোর্ট অনুযায়ী ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে আমাদের সৈন্য সংখ্যা হইলো প্রায় আড়াই লক্ষ। এর মধ্যে এক্টিভ ফোর্স ১ লক্ষ ৬০ হাজারের মতো। বাকি ৬৫ হাজার হইলো রিজার্ভ ফোর্স।

অন্যদিকে ৫ কোটি জনসংখ্যার মিয়ানমারে সৈন্য সংখ্যা হচ্ছে ৫ লাখ। এক্টিভ ফোর্স হচ্ছে ৪ লাখ ৬ হাজার। বাকিরা রিজার্ভ ফোর্স।

১৬৬ টা হালকা এয়ার ক্রাফট নিয়ে আমরা যখন হুঙ্কার ছাড়ছি তখন মিয়ানমারের টোটাল এয়ার ক্রাফট হচ্ছে ২৪৯ টি। এর মধ্যে ফাইটার জেট ৫৬ টা। এটাক প্লেন হইলো ৭৭ টা। আমাদের ফাইটার আর এটাক প্লেন সমান সমান। দুইটাই ৪৫ টা করে আছে।

আমাদের ল্যান্ড ফোর্সে কমব্যাট ট্যাঙ্ক হচ্ছে ৫৩৪ টা। আর বার্মার হচ্ছে ৫৯২ টা। জিএফপির হিসাব মতে আর্মড ফাইটিং ভেহিক্যাল আমাদের আছে ৯৪২ টা। আর বার্মার আছে ১৩৫৮ টা।

নেভালের অবস্থা দেখবেন?
আমাদের নেভাল এসেট হইলো ৮৯ টা। এর মধ্যে ৬ টা হইলো ফ্রিগেট। ২৮ টা পেট্রোল ফোর্স। আর বার্মার টোটাল নেভাল এসেট হইলো ১৫৫ টা। ফ্রিগেট আমাদের থেকে কম। মাত্র ৫ টা। কিন্তু পেট্রোলে আমাদের থেকে বেশি, প্রায় ৪০ টা।

বিশ্বের দশটা সুপার মিলিটারি পাওয়ারের মধ্যে প্রতিবেশি ভারত আর চীনের নামও আছে। স্বাধীনতা যুদ্ধ ভারতেও হয়েছে। আবার আমাদের এখানেও হয়েছে। ১৯৪৭ সালে "হিন্দুস্তান" হিসাবে আত্মপ্রকাশ করার পর আজকের দিনে ভারত প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করে ৪৬ মিলিয়ন ডলার। ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিং এ ভারতের পজিশন চার নম্বরে। দুই হাজার একশো দুইটা এয়ার ক্রাফটের বিশাল এয়ার ফোর্স ৬৭৬ টা ফাইটার প্লেন আর ৮০৯ টা এট্যাক প্লেন নিয়া পৃথিবীর যে কোন দেশকে নাস্তানাবুদ করার ক্ষমতা রাখে ভারত। ল্যান্ড ফোর্সের কথা শুনলে লজ্জা পাবেন। শুধু জানিয়ে রাখি, হিন্দুস্তানের কম্বব্যাট ট্যাংকের সংখ্যাই চার হাজারের মতো। আর নেভালে তাদের সাবমেরিনই আছে ১৫ টা।

৭১ সালে পাকিস্তান কিন্তু যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিল। চেতনার উপর ভর করে আমরা জিতেছিলাম। সেই রাজাকার পাকিস্তানের কমব্যাট ট্যাংক হইলো ২৯০০। এয়ার ক্রাফট হইলো ৯৫১ টা। এর মধ্যে ৩০১ টা হইলো ফাইটার প্লেন। আর ৩৯৪ টা হচ্ছে এটাক প্লেন। বাকি জায়গাগুলা পুরন করেছে ট্রান্সপোর্ট প্লেন আর ত্রেনিং প্লেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান হয়ে গিয়েছিল একটা ধ্বংসস্তূপ। সেই ১৯৪৫ সালের কথা এটা। আজকের ১০টা সুপার মিলিটারি পাওয়ারে জাপানের নাম আছে। এই ক্ষেত্রে তারা ইসরাইল থেকেও এগিয়ে। আগের মতো যে কোন ধরনের আগ্রাসী অপারেশনে যায় না বলে জাপানের নামটা সেইভাবে আসে না। কিন্তু তলে তলে জাপান ঠিকই এগিয়েছে। শর্ট নোটিসে পরমানু বোমা বানানোর ক্যাপাবিলিটি জাপানের আছে। ৩ লক্ষ আর্মির ছোট একটা বাহিনী হইলেও তাদের এয়ার ক্রাফট আছে ১৫৯৪টা। এর মাঝে ফাইটার হইলো ২৮৮টা। ৭০০ টা অত্যাধুনিক কমব্যাট ট্যাংকের সমন্বয় জাপান কে বানিয়েছে একটা সাইলেন্ট ফ্রাঙ্কেস্টাইন।

বাঙ্গাল পড়ে আছে চীনের লেড টর্চ লাইট নিয়া।
Chendu J-20 এয়ার ক্রাফটের নাম শুনেছেন? চীনের মাথা থেকে আসছে এই জিনিস। সুপার কমব্যাট ফাইটার প্লেন। পৃথিবীর সেরা দশটা এয়ার ক্রাফটের মধ্যে একটা। এটা যেমন আকাশ থেকে আকাশে হামলা করতে পারে একই ভাবে আকাশ থেকে ভূমিতেও সমান দক্ষতায় আঘাত হানতে পারে। আমেরিকার তৈরি F-22 র্যাপ্টর থেকেও এই প্লেইন বেশি ফুয়েল বহন করতে পারে।

রাশিয়ার সুখই ,আমেরিকার F-15 ঈগল , F-35 , F-22 র্যাপ্টর নিয়ে যখন মেতে আছে তখন আমরা মেতে থাকি বন্ধু চুলা ,আর সনোফিল্টার নিয়ে। আমাদের ড্রোন তখন ১০০ ফিট উপরে উঠে ৯০ ফিট নিচে নেমে যায়। আহারে ...! শুধু মুখের বুলিতে কি একটা দেশের উন্নতি হয়? সময় তো কম গেলো না। ৭১ থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের সত্যিকারের অর্জন টা কি? দেশের ৩৯ টা পাব্লিক ভার্সিটির নাম বেচে খাওয়া ছাড়া আমরা কি করতে পেরেছি? আমাদের বিনোদোনের মাধ্যম হইলো রোস্টিং ভিডিও। আমরা সমাজ সেবার নাম করে ভিক্টিম মেয়েদের টাকা মেরে তরুন প্রজন্মের আইডল সাজি।

বিশ্বের সেরা ১০ টা যে ব্যাটেল ট্যাঙ্ক আছে তার সব গুলা চারটা দেশের দখলে আছে। আমেরিকা, রাশিয়া, তুরস্ক, এবং ফ্রান্স। ব্ল্যাক প্যান্থার সিরিজের ট্যাঙ্কগুলো ভারত অনেক দিন থেকেই বানানোর চেষ্টা করছে। এখনো পেরে উঠতে পারে নাই। তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

আর আমরা কি করছি?
আমাদের বুয়েট বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পাশ মেধাবী তরুণটি বিদেশে গিয়ে স্যাটেল হয়। এই দেশের তরুনেরা ইউটিউবে প্রাঙ্ক ভিডিও বানিয়ে নাম কামায়। রাস্তাঘাটে মেয়ে মানুষের গায়ে হাত তুলে শিরোনামে আসে। ফেসবুকে ভারত মাতার অর্ধেক মানুষ খোলা আকাশের নিচে হাগে - এই স্ট্যাটাস দিয়ে হাগার সমান শান্তি লাভ করে। অথচ ভুলে যায় খোলা আকাশের নিচে দেশের অর্ধেক জনসংখ্যার ল্যাট্রিন সম্পন্ন করা এই দেশটা পরমানু বোমার অধিকারী। তাদের আছে "ব্রহ্ম" নামের আধুনিক মিসাইল ব্যবস্থা। আছে উন্নত আইটি সেক্টর। আছে আধুনিক সমরাস্ত্র কারখানা। দিল্লীর মতো ইউনিভার্সিটি আছে তাদের। আইআইটির মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে তাদের। হরগোবিন্দ খোরানার মতো নোবেল উইনার সাইন্টিস্ট আছে তাদের।

পাকিস্তান কে গালি দিয়ে বহুত বড় মুক্তিযোদ্ধা সাজতে চায় কিছু অতি চেতনাবাদী। কিন্তু সবাই ভুলে গেছেন, তালেবান বিধ্বস্ত এই দেশটা পরমানু বোমার অধিকারী। শাহীন আর গাজ্জালী নামে ভয়ানক ক্ষেপণাস্ত্র আছে তাদের। তাদের ইউনিভার্সিটি গুলা ১০০ র্যাঙ্কিং এর মাঝে আছে।

'৭১ সালের পর আপনার উন্নতিটা ঠিক কোথায়? শিক্ষা ব্যবস্থায় নাকি সমরাস্ত্রে? নাকি মেরুদন্ডবিহীন পররাষ্ট্রনীতিতে? শুধু জিডিপি দিয়েই কি একটা দেশের সব কিছু বিবেচনা করা উচিত? আর কিছু লাগে না? শুধুই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস দিয়ে একটা দেশ উন্নতি করতে পারে? শুধুই ধর্ম দিয়ে একটা দেশ দাঁড়িয়ে যেতে পারে? শুধুমাত্র ক্রিকেটের মতো একটা খেলা কোন দেশকে সমীহ করার কারন হতে পারে?

বলছি না আমাদের সেনাবাহিনী কিছুই পারে না। তারা অনেক দিক দিয়েই চৌকস। জানিয়ে রাখি, বাইরের বিশ্বে বাংলাদেশি কমান্ডোদের আলাদা একটা সুনাম আছে। বুঝা যায় আমাদের মধ্যে ক্যালিবার আছে। কিন্তু সেটাকে কাজে লাগাতে হবে না? মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি শুধু বই কপচালেই হবে? সেই অনুপ্রেরনা কাজে লাগিয়ে সামনে এগোতে হবে না? অবশ্যই এগোতে হবে।

জাপান এগিয়ে গেলো।
ভারত এগিয়ে গেলো।
পাকিরা টেক্কা দিলো।
সর্বংসহা পররাষ্ট্রনীতি মেনে চলতে গিয়ে বন্যার মৌসুমে আমাদের হজম করতে হয় তিস্তার পানি। ভারত মাতা সীমান্তে গুলি করে মানুষ মারে। পাকিস্তান সুযোগ পাইলে বাঁশ দেয়। হজম করতে হয় মিয়ানমারের রোহিঙ্গা। তার সাথে হজম করতে হয় রোহিঙ্গাদের আমদানী করা ইয়াবাও। চীন বাংলাদেশকে বানিয়েছে তাদের থার্ড ক্লাস জিনিসের ফাস্ট ক্লাস বাজার। তুরস্ক আমাদের জন্য কান্না করে। আবেগ নিয়ে মেতে থাকি আমরা। ওদিকে তুরস্ক হইলো ন্যাটোর মেম্বার। মিলিটারি পাওয়ারে সিরিয়াল হইলো ৯ নম্বর। আমাদের কি আছে শুনি? '৭১ এর যুদ্ধ দিয়ে ঠিক কতোদিন চলবো আমরা?

সংগৃহিত
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৮:৪৮
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×