somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"সুখ" বলতে কি বোঝায়? (আবেগ নয় বরং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে কেমন মনে হতে পারে : নিজস্ব ব্যক্তিগত কিছু গবেষণা)

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



"সুখ" জিনিসটা আসলে কি?
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উত্তর পেয়েছি ব্যাপারটা আপেক্ষিক!
আর আপেক্ষিকতার কথা আসলেই সবার আগে মাথায় আসে আইনস্টাইন এর "থিওরি অব রিলেটিভিটি"র কথা! আর এই থিওরির কথা আসলেই প্রথমেই মনে আসে "সময়" এর আপেক্ষিকতা।
তাহলে "সুখ-আপেক্ষিকতা-সময়" এদের মাঝে কি আদৌ কোনো সম্পর্ক আছে? নাকি নেই?

ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় "সুখ আর সময়" একে অন্যের সাথে একেবারেই অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত!
এক কথায় বললে "সময়কে দ্রুত অতিবাহিত করতে পারার নামই সুখ"।

তেমনি সুখ আর দুঃখ যেমন একে অন্যের বিপরীত, তাই বলা যেতেই পারে, "সময়কে দ্রুত অতিবাহিত করতে না পারার নামই দুঃখ"

যেমন-

#ছোটবেলায় স্কুল খোলার দিন স্কুল না যেতে পারলে খুব মন খারাপ থাকত, কারণ স্কুলে গেলেই সময়টা খুব দ্রুত কাটত তাই।

# স্কুলের ক্লাস করতে আবার প্রায়ই ভাললাগত না, কারণ তখন মনে হইত ক্লাসটা শেষ হয় না কেন? ক্লাস শেষ হইলেই তো খেলতে যেতে পারতাম। ক্লাসের টাইমটা বড় মনে হইত। খেলাধুলার সময়টা আবার তাড়াতাড়িই শেষ হয়ে যাইত।

#আমাদের আড্ডা দিতে ভাললাগে। কিন্তু কেন? কারণ আড্ডার সময়, "সময়" টা যে কখন চলে যায় টেরই পাওয়া যায় না।

#আগে কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলে ভাল লাগত কেন? কারণ বিয়ের অনুষ্ঠান মানেই ছোটদের মজা, হইহুল্লোর করতে করতে কখন যে "সময়" চলে যেত খোঁজ থাকত না। কিন্তু এখন বিয়েতে গিয়ে হইহুল্লোর করে "সময়" কাটাইতে পারি না, সময়টাকে দীর্ঘ মনে হয়, তাই খারাপ লাগে।

#আগে নানা বাড়ি গেলে খুব ভাললাগত কেন? কারণ, নানা বাড়িতে গেলে সব ছুটি! ইচ্ছামত দৌড়াদৌড়ি, ফালাফালি করে "সময়"টাকে খুব দ্রুত কাটানো যেত।

#অসুখ হলে শরীরের পাশাপাশি মনটাও খারাপ থাকে কেন? কারণ একটাই, তখন "সময়" অতিবাহিত হতে চায় না।

#কলেজের শেষ ক্লাসে আপনার সেদিন এত খারাপ লেগেছিল কেন? কারণ আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে আড্ডায় আর "সময়"কে এত দ্রুত অতিবাহিত করতে পারবেন না।

#ছেলেপেলে রাজনীতি করে কেন? কারণ তখন ছোটভাই বড়ভাই সবার সাথে আড্ডায় আলাপচারিতায় অথবা সামনের কোনো একটা "প্রোগ্রাম" এরেঞ্জ করা নিয়ে কথা বলতে বলতেই "সময়"টা খুব দ্রুতই কাটে।

#বইপড়ুয়া ছেলেটার সারাদিন বই পড়তে ভাললাগে কেন? কারণ বই পড়ার সময় তার এতই দ্রুত "সময়"কাটে যে, কখন যে তার খাওয়ার সময় হয়েছে সেটাও ভুলে যায়। অথচ আমাদের অনেকের কাছেই পড়াশুনাটা ভাললাগেনা কেন? কারণ একটাই, বই পড়তে গেলে একটুখানি পড়লেই মনে হয়, অনেক তো পড়েছি আর কত পড়ব? অর্থাৎ "সময়"টা এখানে দীর্ঘ হয়ে যায়।

#যখন ছেলে-মেয়ে নতুন প্রেমে পড়ে তখন এত্ত ভাল লাগে কেন? কারণ একজন আরেকজনকে জানতে জানতে, ভাবতে ভাবতেই খুব দ্রুত সময় পার হয়ে যায়। আর নতুন প্রেমে পড়া যেকোনো ছেলে-মেয়েই একবাক্যে স্বীকার করবেই যে তখন তার সময়টা দ্রুতই যাচ্ছে।

#অপরদিকে স্বামী যদি বউকে বাসায় রেখে চাকরির জন্য দূরে কোথাও যায়, তখন দুজনেরই খুব খারাপ লাগে, কারণ তখন বউ বা স্বামী দুজনেরই সময়টা খুব ধীর হয়ে যায়। স্বামী কবে বাড়ি যাবে, কখন "সময়"টা দ্রুত কাটাতে পারবে সে অপেক্ষায়ই থাকে দুজন।

#বিয়ের পর একটা মেয়ে বাচ্চা নেয়ার জন্য এত উতলা হয়ে থাকে কেন? কারণ বাসায় একা একা তার "সময়"টা কাটতেই চায় না।

#আমরা সবসময় চিন্তা করি কিভাবে সুখ কিনা যায়। যেমন অনেকেই ভাবে হয়ত টাকা হলেই ফ্যান্টাসি কিংডম এ যেয়ে "সময়"টাকে দ্রুত কাটানো যাবে। অনেকে হয়ত ভাবে টাকা হলেই স্টার সিনেপ্লেক্সে যেয়ে একটা "সাই-ফাই" মুভি দেখে "সময়"টাকে দারুণভাবে উপভোগ করা যাবে। অনেকে ভাবে টাকা হলে মাকে একটা শাড়ি কিনে দেব, বিনিময়ে মায়ের হাসির কথা ভেবে ভেবেই "সময়"টা আমার দ্রুতই কাটবে। অনেকে হয়ত ভাবে টাকা জমিয়ে দুইদিন জম্পেশ একটা নেশার ঘোরে থাকা যাবে, দুইদিন কোনদিক দিয়ে যাবে টেরই পাওয়া যাবে না।

#সারাদিন অফিসের কাজে ব্যস্ত সরকারী কর্মকর্তা অবসর গ্রহণের পর এরকম দৃশ্যত বদলায়ে যান কেন? কেনই বা তার প্রথম একবছর খুবই বাজেভাবে কাটে? কারণ অফিসে তিনি তার সময়টাকে খুব "দ্রুত" কাটাতে পারতেন, যেটা তিনি বাড়িতে হঠাৎ এসে আর পারছেন না।

#মানুষ আত্মহত্যা করে কেন? যখন তার আর কিছুই ভাললাগছে না, যখন তার সময়টা আর কাটতেই চাচ্ছে না, যখন সময়টা তার কাছে আরও দীর্ঘ হয়ে পড়ে, তখনই তার মাথায় আসে "আত্মহত্যা"র মাধ্যমে তার বাকি "সময়"টুকুকে একেবারেই শেষ করে দেয়ার।

#আবার কষ্টের দিনের কথাগুলি সুখের দিনগুলির চেয়ে বেশি মনে থাকে কেন আমাদের? কারণ, কষ্টের দিনগুলিতে আমরা হাঁড়ে হাঁড়ে "সময়"কে টের পেয়েছিলাম, সময়টা ছিল তখন অনেক বড়, এজন্যই আমাদের মাথায় সেটা গেঁথে গেছে, অথচ সুখের দিনগুলিতে তার বিপরীত।

এরকম আরও হাজার হাজার ভুড়ি ভুড়ি উদাহরণ দেয়া যাবে এ ব্যাপারে।

তার মানে কি দাঁড়ালো? ভাললাগা বা সুখের অপর নামই হল "সময়কে দ্রুত অতিবাহিত করতে পারা"।

আমরা আসলে সবাই "সময়"কে ভয় পাই, অন্তত আমি পাই, তাই সময়কে কিভাবে দ্রুত পার করা যায় সেই চিন্তায় থাকি। ইন্টারস্টেলার মুভিতে প্রফেসর ব্রাণ্ড এর কথাটা তাই খুব মনে পড়ে- "I'm afraid of TIME"
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৩৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×