somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাড়ির সাথে বাঙালি নারী

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১.
প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর বা তারও আগে থেকে এ অঞ্চলে শাড়ির প্রচলন ছিল। তবে যদিও শাড়ির নামকরণ নিয়ে গবেষকদের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মত। মধ্যভারতীয় আর্য ভাষায় শাড়িকে সাটক, বা সাটিকা বলা হত।
আনুমানিক ৩০০ থেকে ৫০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কেও গুপ্ত যুগ হিসেবে ধরা হয়। ওই সময় অজন্তা ইলোরা গুহার চিত্রাবলিতেই পাওয়া যায় শাড়ির অস্তিত্ব। তবে সেই সময় শাড়ি পরিধানের সঙ্গে আজকের শাড়ি পরিধানের খানিকটা পার্থক্য রয়েছে পদ্ধতিতে। এছাড়াও সে সময় ব্লাউজ, পেটিকোটের প্রচলন ছিল না। মূলত কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল থেকেই ব্লাউজ, পেটিকোটের প্রচলন শুরু। শাড়ি এবং ব্লাউজ মিশ্রিত রূপটি এক ধরনের বিলাতি পোশাকের আবহ তৈরি করত। ব্রিটিশদের সময়ে ফুলহাতা ব্লাউজ এবং কুচি ছাড়া শাড়িই ছিল উঁচু সমাজের নারীদের প্রধান ফ্যাশন।
১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পরে বাংলাদেশিরা নিজেদের সংস্কৃতিকে আলাদা করে তুলে ধরতে দেশি খাদি এবং তাঁতের শাড়ি ব্যবহারে বিশেষ জোর দেয়। সেই জোর দেওয়াটা এখন বেশ ক্ষীণ হয়ে পড়েছে কারণ এখন বাঙালি নারীর সাথে আর শাড়ির সম্পর্কটা মধুর নয়। সময়ের সাথে তাল মেলাতে ব্যস্ততাময় জীবনে কর্মময় জীবনের ব্যস্ততায় মেয়েদের এখন শাড়ি গায়ে জড়ানো হয় শুধু উৎসব-পার্বণ বা পারিবারিক আবহে।



২.
কিছুদিন আগে প্রথম সারির জাতীয় দৈনিকে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল, বাঙালি নারীদের শাড়ি পড়ার চল কমে যাচ্ছে এই ভাবনায়। যারা শাড়ি তৈরির সাথে জড়িত তাদের অর্থনৈতিক অবস্থাও এখন শোচনীয়। ওই প্রতিবেদনে ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল হক চৌধুরীও এই নিয়ে কিছুটা আক্ষেপ করে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের একশ্রেণির পোশাক এসে আমাদের পোশাকের কদর কমিয়ে দিয়েছে। বাঙালি নারীর আদি এবং অন্যতম প্রধান পোশাক শাড়ি হলেও সেই শাড়ি কালের বিবর্তনে, আধুনিকতার ছোঁয়ায় বা ধর্মীয় বেশভূষার কারণে এখন হারিয়ে যাচ্ছে, যা খুবই শঙ্কাজনক। যদিও আমাদের মসলিন, জামদানি, বেনারসিসহ সুতি শাড়ি তৈরির ঐতিহ্য বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।
ঐতিহ্যবাহী মসলিনের পরেই আসে জামদানির ইতিহাস। ধারণা করা হয় মসলিনের আধুনিক রূপই হল জামদানি। ২০১৬ সালে দেশের কৃষ্টি-ইতিহাসের অনুষঙ্গ হিসেবে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বস্ত্র জামদানি আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব বিষয়ক সং¯’া ইন্টারন্যাশনাল প্রোপার্টি রাইটস অর্গানাইশনের কাছ থেকে জিওগ্রাফিক্যাল ইনডেকেশন তথা ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
এছাড়াও রয়েছে বেনারসি শাড়ির ঐতিহ্য। জামদানির সূত্রপাত অনেক আগে থেকে হলেও বেনারসির কারিগররা এই দেশে এসেছে ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময়। ঐ সময় ভারতের বেনারস থেকে বেনারসি শাড়ির তাঁতিরা ঢাকার মিরপুরে বিহারি ক্যাম্পে আবাস গড়ে। তাদের বিশাল অংশ তাঁত পেশায় জড়িত থাকলেও কালের বিবর্তনে তাও সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে।
টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির জনপ্রিয়তা এখনও অমলিন। রাজশাহীর দোয়েল সিল্কের কদরও কিছু কম নয়। আমাদের দেশী তাঁতীদের এসব সৃষ্টিই আমাদের ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রেখেছে আজও।
জামদানি, বেনারসির পাশাপাশি টাঙ্গাইলের সুতি শাড়িরও বেশ সুনাম রয়েছে। এছাড়াও বাঙালি নারীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে জর্জেট,শিফন, সিল্ক সহ অন্যান্য শাড়ি।



৩.
মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির মধ্যে নতুনকে ধারণ করার অদ্ভুত একটা ইচ্ছাশক্তি কাজ করে। পারিপাশ্বিকতার বিবেচনায় শাড়ি এখন পরিধেয় হিসেবে প্রায় গৌণ। তবে যদি আমরা বিভিন্ন সমৃদ্ধশালী দেশের ইতিহাস দেখি তবে বুঝতে পারবো নিজেদের ঐতিহ্য সহই তারা আধুনিকায়নকে কিভাবে রপ্ত করে, কিভাবে নিজেদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে মনে মননে ধারণ করে। কিন্তু আমরা এর থেকে সম্ভবত কিছুটা ব্যতিক্রম পথে হাটি। তবে তাই বা হবে কেন? জাতিগতভাবে নিজেদের শিকড়ের গল্প জেনেই পা বাড়ানো উচিত ভবিষ্যৎ এর পথে।
বিভিন্ন ঘাত, প্রতিঘাত, ঘটনার আড়ালে শাড়ির ব্যবহার কমে চলেছে প্রতিনিয়ত। অনেকটা নিজের শিকড় থেকে দূরে সরে যাবার মতই ঘটনা। তাই ফিরে যাই ঐতিহ্যে, গর্বিত হই স্বমহিমায়।




লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছে অক্টোবর ২০১৭ তে আইস টুডে’র এই লিংকে।
http://icetoday.net/2017/10/শাড়ির-সাথে-বাঙালি-নারী/


বিনয় দত্ত
কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:৫৩
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×