
আমার দুই পর্বের এই পোষ্ট মূলতঃ বৃহত্তর লন্ডনকে কেন্দ্র করে।
সামু ব্লগে আমার আগমনের প্রধান হেতু ছিল ভ্রমন-বিষয়ক লেখার আকর্ষন। অন্যান্য ব্লগারদের এই সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা পড়বো আর নিজের অভিজ্ঞতাও বিজ্ঞ ব্লগারদের সাথে যথাসম্ভব শেয়ার করবো; এটাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। কালের পরিক্রমায় সেই উদ্দেশ্য থেকে অনেকটা বিচ্যুত হয়েছি। বিভিন্ন ধরনের লেখা লিখেছি, কিন্তু মোটামুটি নিয়মিত বিরতিতে একটা ভ্রমন পোষ্ট নিজে না দিতে পারলে কেমন যেন শান্তি পাই না। অনুভূতিটা অনেকটা একজন ভেতো বাঙ্গালী দুই তিনদিন ভাত না খেলে যেমন হয়, তেমনটা। যতোই অন্যান্য খাওয়া-দাওয়া করি না কেন, কদিন ভাত না খেলে মনে হয়, কি যেন একটা খাই নাই…...সে যতোই পেট ভরা থাকুক!
এই বছরের শুরুর দিকেই তুরস্কের কাপাডোকিয়া যাওয়া ফাইনাল করে ফেলেছিলাম। এয়ার টিকেট, হোটেল বুকিং সব রেডি; শুধু জুনের প্রথমভাগে যাওয়াটা বাকী ছিল। কিন্তু করোনা আমাকে করুনা করলো না। যদি করতো, তাহলে আপনাদের জন্য এখন একটা টাটকা ভ্রমন কাহিনী ব্লগে পরিবেশন করতে পারতাম। করোনা ভাইরাসের এই হৃদয়বিদারক আচরণ ক্ষমার অযোগ্য। অবস্থা যা দাড়াচ্ছে, তাতে মনে হয় এ'বছরে আর কোথাও যাওয়া হবে না। জীবন থেকে একটা বছর চলে যাবে নতুন কোন একটা দেশ না দেখেই; বিষয়টা একেবারেই মানতে পারছি না আমি। বাচবোই আর কয়টা দিন, কতোকিছু দেখা বাকী। এদিকে সময় যেন দ্রুত ফুরিয়ে আসছে!!
সে যাকগে। ফ্যাদরা প্যাচাল বাদ দিয়ে এই পোষ্টের ছবিগুলোকে আউলা-ঝাউলা বলার কারনটা ব্যাখ্যা করি আগে। বেশ কয়েকমাস আগে আমার একটা ল্যাপটপ পঙ্গুত্ব বরন করে। এক বন্ধুর কল্যানে ডাটা রিকোভারী হয়েছিল আংশিক। গত সপ্তাহে আরো কিছু উদ্ধার করেছে সে। তার মধ্যে ১৪/১৫ বছর আগে তোলা এই ছবিগুলোও ফিরে পাই। সে'সময়ে যেহেতু আমি ব্লগাইতাম না, ছবি তোলার ব্যাপারে চরম আলসেমী ছিল। তখন আমি ফিলোসোফারদের মতো চিন্তা করতাম, যা দেখবো সবই মনের খাতায় বেধে রাখবো। বরং যারা ক্যামেরা নিয়ে ঘুরতো, বিভিন্ন কায়দা-কানুন করে ছবি তুলতো তাদের ক্যারিকেচার দেখলে হাসিই পেতো। কিছু যাও তুলতাম, সেসব হতো আউলা-ঝাউলা। অর্থাৎ উদ্দেশ্যহীন, এলোমেলো। সেগুলোর থেকেই কিছু তুলে দিলাম। ব্লগিং শুরু করার পরে আমার সেই দর্শণ এখন আমুল বদলে গিয়েছে বলাই বাহুল্য। পোলাওয়ের স্বাদ পান্তাভাতে পাওয়া যাবে না…...অর্থাৎ কাপাডোকিয়ার তরতাজা ছবির স্বাদ এটাতে পাবেন না ঠিকই, পাওয়ার কথাও না; তবে আমার বেড়ানোর পোষ্ট না দেয়ার যাতনা কিছুটা মিটবে। তাও কম কি এই করোনাক্রান্ত দিনগুলোতে!!
নীচের ছবি দু'টা লন্ডনের ইম্পেরিয়াল ওয়ার মিউজিয়ামের। মিউজিয়ামে ঢোকার মুখের এই কামান দু'টা যখনই দেখি, ''গানস অফ নাভারন'' মুভিটার কথা মনে পড়ে যায়। পরের ছবিটা ভিতরে প্রথম আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন বিভিন্ন ফাইটার আর বম্বারের। আমার এ্যাক্রোফোবিয়া (উচ্চতা-ভীতি) থাকলেও এইসব যুদ্ধবিমান দেখে খুব আনন্দ পাই আমি।


এই ছয়টা ছবি লন্ডনের সাবআর্ব এলাকার একটা পার্কের। আপনাদেরকে একটা তথ্য দেই। বৃটেনে রাজহাস হলো রাজকীয় পাখি। দ্বাদশ শতাব্দীতে করা একটা আইন অনুযায়ী এইদেশে যতো আনমার্কড রাজহাস আছে, তার মালিক হলো রানী। এগুলিকে আনুষ্ঠানিকভাবে Swan Upping নামে একটা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জাকজমকের সাথে গণনাও করা হয়। আমার মতে, রাজকীয় যেসব আজাইরা অনুষ্ঠান এখনও চালু আছে, এটা তার মধ্যে অন্যতম।






গ্রীনউইচের রাজকীয় মানমন্দির। এটা একটা পাহাড়ের উপরে অবস্থিত। GMT বা গ্রীনউইচ মীন টাইম এখান থেকেই এসেছে।

গ্রীনউইচের মানমন্দির থেকে দেখা বিখ্যাত ইউনিভার্সিটি অফ গ্রীনউইচ। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চাদ্দেশের ছবি।

তুষারাবৃত একটা কবরস্থান। সাধারনতঃ লন্ডনে প্রচন্ড তুষারপাত হয় না, তবে সেবার (২০০৭ সালে) হয়েছিল।

এই ছবি দু'টা হাইড পার্কে স্থাপিত রয়্যাল আর্টিলারী মেমোরিয়ালের।


এই তিনটা ছবি ক্যানারী হোয়ার্ফের। আইল অফ ডগস-এ অবস্থিত এটি লন্ডনের তথা বিশ্বের অন্যতম ব্যবসায়িক কেন্দ্র। অনেক বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় আছে এখানে। ছবিতে এইচএসবিসি ব্যাঙ্ক, সিটিগ্রুপ আর রয়টার্স এর প্রধান কার্যালয়।



লন্ডন টাওয়ার ব্রীজ। বড় জাহাজ আসলে এখানে 'খুল যা, সিম সিম' এর মতো কান্ড দেখা যায়।

টেমস নদীর ওই পাড়ে বাকিংহাম প্যালেস।

এইটা সবাই চিনেন…...কওনের কিছু নাই।

টেমস নদীর পাড়ে বিলাতি নাগরদোলা; যার গালভরা নাম, লন্ডন আই। ছবির নীচে বদনাটা খেয়াল করেছেন? এই বদনা নিয়ে একটা 'অত্যন্ত বেদনাদায়ক' করুণ কাহিনী আছে। শুনলে আপনারা চোখের পানির নিম্নমুখী পতন ঠেকাতে পারবেন না, তাই বলছি না। সেদিন এই বদনা কেনার জন্যই লন্ডন গিয়েছিলাম।

লন্ডনের একটা অত্যন্ত অভিজাত দোকান হলো হ্যারডস। তখন এর মালিক ছিল মিশরীয় ধনকুবের মোহামেদ আল-ফায়েদ। প্রথম ছবিতে দোকানের ভিতরে তার মূর্তি। আপনারা সবাই জানেন, তার ছেলে দোদি আল-ফায়েদ বেক্কলের মতো লেডি ডায়ানার সাথে প্রেম করতে গিয়া ফাইস্যা যায়। দোকানের ভিতরেই একটা জায়গায় তাদের স্মৃতির স্মরনে ব্যাপক আয়োজন করা হয়েছে। পরের ছবিটা সেই আয়োজনের।


পিকাডিলি সার্কাস। এটা ট্রাফালগার স্কয়ারের মতো একটা পাবলিক স্পেস। এর আশেপাশে বিভিন্ন বিখ্যাত স্থাপনা আছে।

আলতাব আলী পার্কে স্থাপিত আমাদের ভাষা আন্দোলনের শহীদ মিনার। এটা এখন যতোটা না শ্রদ্ধার জায়গা, তার চেয়ে বেশী পলিটিক্সের জায়গা। এইটা নিয়া এর চেয়ে বেশী কিছু বলতে চাই না, মেজাজ খারাপ হয়া যায়!

আপনাদের কারো কারো যদি মনে হয়, এইটা একটা ফাকিবাজী পোষ্ট, তাইলে জাইনা রাখেন…..আমারও তাই মনে হয়। এর বেশী আর কিছু কমু না। আজ এ'পর্যন্তই। যতো শীঘ্র পারা যায়, পরের পর্ব দেয়ার চেষ্টা করা হবে।
লং লিভ দ্য কুইন!!!
শিরোনামের ছবিটা আমি তুলি নাই।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৯:১৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




