somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার নতুন ভালোবাসা!!!

৩১ শে আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গত বছরের জানুয়ারী মাসের কথা। জরুরী দাপ্তরিক কাজে দু'দিনের ঝটিকা সফরে প্যারিস গিয়েছি। প্যারিসের আউটস্কার্টের একটা সাবআর্ব এলাকাতে আমার এক অতি ঘনিষ্ঠ বাল্যবন্ধু থাকে। কতোটা ঘনিষ্ঠ বন্ধু বোঝানোর জন্য বলি, আমরা স্কুলে ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় একসাথে ধুম্রপানে হাতেখড়ি নিয়েছিলাম। তো, ও ফোন করে বললো, ফেরত যাওয়ার আগে সময় করে একবার বাসায় আয়। তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে। অনেক চেষ্টা করেও যেতে পারলাম না ওর বাসায়। ফোনে বললাম, দোস্ত, আগামী জুলাই মাসে এক সপ্তাহের জন্য আসবো। তখন তোর বাসায় আসবো তো বটেই, সপরিবারে দু'দিন থেকে বেড়িয়েও যাবো। যাওয়ার ব্যাপারে এতোটাই নিশ্চিত ছিলাম যে, ''ইন শা আল্লাহ''ও বলি নাই। সৃষ্টিকর্তা তখন অলক্ষ্যে বসে নিশ্চয়ই অট্টহাসি দিয়েছিলেন।

দৌড়ের উপরে কাজ শেষ করে বাসায় তো ফিরলাম, কিন্তু মাথার মধ্যে খচখচ করতে থাকলো, সারপ্রাইজটা কি? বেশ কিছুদিন আগে বউয়ের সাথে তুমুল ঝগড়া করে ওকে ফোনে কথায় কথায় বলেছিলাম, ''দেশী বউয়ের ভালোবাসা আমার জন্য শ্যাষ। তুই আমার জন্য একটা ফ্রেন্চ পাত্রী যোগাড় কর। শুনছি, ফরাসী ললনারা অত্যাধিক প্রেমময়ী হয়! ছলনা টলনা কম করে! আমার এই বর্তমান বঙ্গ ললনার ধারালো কথার চোটে আমি একেবারে ফালা ফালা হয়া যাইতাছি!!'' আমার এই বন্ধুটা একটু পাগলা কিসিমের। কখন কি করে বসে বলা মুশকিল। সত্যি সত্যি মেয়ে যোগাড় করে ফেললো নাকি? ওকে কোন বিশ্বাস নাই। বন্ধুকে যতোই চাপাচাপি করি, ও শুধু হাসে, আর বলে আছে…...আছে। বইলা দিলে তো কোন মজা থাকে না!! সমস্যা হলো, এ একবার যখন না করে, পেট থেকে কথা বের করা মোটের উপর অসম্ভব।

পরের কাহিনী অত্যন্ত করুণ বলাই বাহুল্য। করোনার হামলায় পৃথিবীময় তোলপাড়ের সূত্রপাত!! ওদিকে গোদের উপর বিষফোড়ার মতো ব্রেক্সিটও হয়ে গেল। আমাদের প্রতিষ্ঠানে একটা মাঝারী মানের রিডানডেন্সি হলো। সর্বোপরি, ব্যয় সংকোচন আর ফোকাস পরিবর্তনের কারনে প্যারিস অফিস বন্ধ করে দেয়া হলো। জুলাই মাসে প্যারিস তো দুর কি বাত, বাসা থেকে বের হওয়াই মুশকিল হয়ে গেল। বন্ধুকে বললাম, দোস্ত, ঘটনা যা দাড়াইছে তাতে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, আমার আর প্যারিস আসা হবে না। তুই এইবার ঝাইড়া কাশি দে। তোর কারনে বেশ কয়েক মাস ধইরা পেটের সমস্যায় ভুগতাছি!!

ঘটনা হলো, আমার এই বন্ধুর বাগান করার খুব শখ। দিনের একটা সময় রুটিন করে সে বাগানের পিছনে ব্যয় করে। এদিকে আমারও এই শখ আছে, তবে ওর মতো এটা আমার অবসেশানে রুপান্তরিত হয় নাই। তাছাড়া এদিকে বাগান করার প্যারা আছে। একদিকে তো আমি অলস টাইপের মানুষ, তার উপরে স্লাগের অত্যাচার। এই স্লাগ জিনিসটাকে আমি প্রচন্ড ঘেন্না করি। এরা যে কখন কোথায় ঘাপটি মেরে থাকে, তার কোন ঠিক-ঠিকানা নাই। দেখা যায়, একটা পাতা সরিয়েছি, আর তার নীচে থাকা মহাশয় মোচড় দিয়ে উঠে! ডিসগাস্টিং!! আমরা বেশ কিছুদিন ধরে অর্কিড নিয়ে কথাবার্তা বলছিলাম। আমার বিশেষ আগ্রহ ছিল, কারন এটা ইনডোর প্ল্যান্ট। আর ইনডোরে স্লাগের উৎপাত হওয়ার কোন চান্সই নাই। তো, আমি শুধু ভাবাভাবির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও সে কাজে নেমে পড়েছিল। গুটিকয় অর্কিড কিনে নিয়ে এসে ইউটিউব দেখে নিজেও কিছু বানিয়েছে; আর সেগুলো নাকি ফুলে ফুলে ছেয়ে গিয়েছে। আমাকে সেটা দেখানোটাই হলো সারপ্রাইজ। ওর কথা শুনে হাফ ছেড়ে বাচলাম। যাক, এই যাত্রা আমার সংসার টিকে গেল!!!

আমারও অর্কিড কেনা দরকার। তবে অলস বলে কথা! আজ যাবো, কাল যাবো করতে করতে নভেম্বর মাস চলে এলো। ভাবলাম, আর দেরী করা ঠিক না। একদিন শুভক্ষণে স্লাগের মতোই মোচড় দিয়ে উঠলাম। বাসার লোকজনদেরকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য বেড়িয়ে পড়লাম। স্টোরে গিয়ে দেখি, একেকটা অর্কিডের দাম ১২ পাউন্ড। আমি অবশ্য দমে যাওয়ার পাত্র না। বীর বিক্রমে ১২টা অর্কিড কিনে ফেললাম। আমার আবার বহুদিন মাথার মধ্যে জমে থাকা কাজ ঝেড়ে ফেলতে পারলে নিজেকে ট্রিট দিতে ইচ্ছা করে। গাড়িতে ওগুলো সাজিয়ে রাখতে রাখতে মাইনাস টেম্পরেচারের ঠান্ডায় জমে গিয়ে ভাবলাম যাই, স্টোরের কফিশপ থেকে কফি আর গোটাকয় কুকিজ মেরে দিয়ে আসি। সেটা ছিল একটা মারাত্মক বেকুবী সিদ্ধান্ত। কারন বলছি।

আয়েশ করে খাওয়া-দাওয়া সেরে, দুই-একজন পরিচিতের সাথে কিছুক্ষণ প্যাচাল পেড়ে, একটা বিড়ি টেনে যখন গাড়িতে ফিরলাম, ততোক্ষণে ঘন্টা দেড়েক পার হয়ে গিয়েছে। গাছগুলো বাসায় এনে দেখি কেমন যেন ন্যাতানো ভাব। দিলাম দোস্তকে ফোন। ও তো পারলে আমাকে টেলিফোনেই মারে আর কি!! বলে, হালার পো হালা, করছোস টা কি!! ওর উপদেশমতো তাড়াতাড়ি সেন্ট্রাল হিটিং ছেড়ে বাড়ি গরম করলাম। ঘটনা হলো, অর্কিড ঠান্ডা একেবারেই সহ্য করতে পারে না। মানুষ যেই টেম্পারেচারে স্বস্তি অনুভব করে, এরাও তেমনি। এই গাছগুলো যে মানুষের মতো, তা কে জানতো!! ফলাফল, তিনটা গাছের পাতা আস্তে আস্তে হলুদ হয়ে সম্পূর্ণ মরে গেল। পাচটা পুরাপুরি তাজা হয়ে উঠলো, আর চারটা এখনও দুর্বলভাবে বেচে আছে। এর থেকে আরেকটা শিক্ষাও পেলাম। অর্কিডদেরও সহ্য ক্ষমতা ভিন্ন ভিন্ন, ঠিক আমাদের ব্লগারদের মতো। কেউ সহ-ব্লগারদের প্যারা সহ্য করতে না পেরে ব্লগ ছেড়েই চলে যায়, কেউ মরার মতো কোনরকমে ব্লগে পড়ে থাকে, আর কেউ কেউ বীর-বিক্রমে ব্লগিং চালিয়ে যায়!!! :-B

যাইহোক, এতোগুলো গাছ কিনে আনায় আমার বউ রেগেমেগে আগুন হয়ে গেল। বললো, তোমার টাকা কি গাছে ধরে? ঝাকি দেও, আর যা খুশী কিনে নিয়ে আসো!!

আমি বললাম, ট্যাকা আমার কাছে……….! দুঃখের বিষয়, ত্যাজপাতা বলার আগেই ওর দিকে তাকিয়ে দেখি, আমার দিকে বাঘিনীর মতো রক্তচক্ষু দিয়ে তাকিয়ে আছে। অগত্যা কি আর করা। ত্যাজপাতা শব্দটা মুখ দিয়ে বের না করে গিলে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে হলো। তবে নতুন ফুল আসার পরে আজকাল দেখি সে সকালবেলা কফি হাতে অর্কিডদের সাথে কুশল বিনিময় করে!! কি প্রেম!!! অর্কিডগুলা সেই দিনের কথা নিশ্চয়ই ভুলে যায় নাই, কি বলেন!

অর্কিডের সবচেয়ে ভালো দিক হলো, ফুলগুলো প্রায় মাস খানেক গাছে শোভাবর্ধন করে। এরা পেটুক প্রজাতি না। সপ্তাহে একবার অল্প একটু কুসুম গরম পানি দেই…...ব্যাস; একেবারেই স্বল্পাহারী। দীর্ঘ সময় ধরে সরাসরি রোদ এরা সহ্য করতে পারে না। যেখানে রাখা আছে, সকালে দুই ঘন্টার মতো পর্দাভেদ করা যতোটুকু রোদ পায়, ওতেই ওদের চলে যায়। লাভের মধ্যে সবচেয়ে বড় লাভ, ওদের দিকে যখনই তাকাই……..মনটা একেবারে চনমনে হয়ে যায়। এদেরকে ভালো না বেসে উপায় আছে?

চলেন তাহলে, আমার অর্কিড পরিবারের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেই।

এই পাচটার স্টেম বের হয়ে প্রচুর কলি এসেছিল। সেখান থেকে ফুলও ফুটেছে। ভাবে বোঝা যায়, আরো স্টেম আসবে। এদের সাথেই আমার বউ মূলতঃ কথা বলে।







এই চারটার স্টেম বের হয়, কলিও আসে কিন্তু বেশীরভাগই ঝড়ে যায়। অল্প দু'চারটা ফুল ফোটে। এদেরকে কোয়ারেন্টিনে রেখেছি। আমি এদের সাথে কথা বলি। জীবনের গান শোনাই। বেচে থাকার সাহস যোগাই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এরাও একদিন বাকীদের মতো বিকশিত হবে।






শিরোনামের ছবিটা আমার কিচেনের জানালায় গড়ে তোলা ছোট্ট ইনডোর গার্ডেনের। বাকীদেরকে ফটো সেশানের জন্য একটা জায়গায় এক এক করে এনেছিলাম। আমার ক্যামেরা হলো……….থাক, ক্যামেরার কথা আর নাই বা বলি! ব্লগার অপু তানভীরের নিষেধ আছে। ;)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:৩৮
৪৮টি মন্তব্য ৪৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×