somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নীরবতা– জীবনের পথ অথবা অস্ত্র

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ১১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পৃথিবীতে নীরবতার চেয়ে মোক্ষম অস্ত্র আর কিছুই হয় না। প্রতিবাদ করে যা করা যায় না নীরব থেকে তা-ই করা যায়। প্রতিবাদ কী, ভাষা ব্যবহারে যতটুকু ফল– নিঃশব্দে তারও বেশি। এই ধরুন, আপনার আম্মু বলল, বিদ্যুৎ-গ্যাস বিল পরিশোধ করতে। (অবশ্যই ব্যাংকে গিয়ে)। কিংবা কাঁচা বাজার করতে। আপনি করবেন না বলেন নি বটে, তবে করবেন যে সেটাও যদি না বলেন- তাতেই আপনার বাজিমাত। মা আপনার কাছ থেকে ফিরে গিয়ে ছোট ভাইকে একই কাজ করতে বলবে। নীরবতার চেয়ে বড় অস্ত্র আর কীইবা হতে পারে বলুন।

আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কৃতিত্বের সাথে সময়ের পরে অ্যাসাইনমেন্ট / হোমওয়ার্ক জমা দেন। কোর্সশিক্ষক আপনাকে আপনার এই কৃতিত্বপূর্ণ গাফলতির জন্য প্রায় বকাঝকা করেন তবে মার্কস দেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ হেরফের করেন না। তবে আপনি স্যারের মুখে মুখে কথা না বলে ঠোঁট এটে দিন। নীরবতা-ই আপনাকে দুইটে নম্বর পাইয়ে দিবে।

ধরুন, আপনি ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ। ভার্সিটিতে যেটা সিআর নামে অধিক খ্যাত। সিআর হওয়ার সাথে সাথে আপনাকে বড়, মাঝারি ও ছোট মাপের বাঁশ খাওয়ার জন্য রেডি থাকতেই হবে। আরও প্রকরণ করলে দেখবেন বাঁশ আসছে দুইদিক থেকে। অর্থাৎ প্রথম বাঁশটা আসে শিক্ষকদের কাছ থেকে এবং বাকিগুলা ক্লাসমেটদের কাছ থেকে। আপনাকে মনে রাখতে হবে, শিক্ষকদের কাছ থেকে খাওয়া বাঁশের সবগুলোই আপনার গুণধর ক্লাসমেট বন্ধুদের জন্যই খাবেন। অতএব আপনাকে এখানে চুপ থাকতেই হবে। এক্ষেত্রে এই চুপ থাকা হলো আত্মরক্ষার অস্ত্র।

আর বন্ধুদের কাছ থেকে কেমন কেস খাবেন সে লিস্টটা লম্বা। এই ধরুন, আপনার বন্ধুরা চাচ্ছে একটা মিডটার্ম লেট করতে মানে ২/৪ দিন পরে দিতে, কিন্তু স্যারকে একটু ক্ষ্যাপা দেখে আপনি সাহস করে বলতে পারলেন না। ফলে সঠিক সময়ে মিডটার্ম দিতে হলো। এবার আপনার রক্ষা নাই। আবার যদি সাহস করে বলে ফেলেন, এবার স্যার কয়েকশ বাক্যের একটি প্যারাগ্রাফ আপনাকে উপহার দিবেন। যার সারমর্ম এরকম- "সারাবছর পড়াশোনা করো না, পরীক্ষার সময় যত আবদার। পেয়েছো কি? এটা মামার বাড়ি? যাও সঠিক সময়ে পরীক্ষা হবে।" যেন সিআর একা পড়াশোনা করে নি কিংবা পরীক্ষা দিতে চায় নি। ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসার পর সহপাঠা-পাঠীদের আরেক দফা কথার বৃষ্টি ঝরতে থাকে সম্মানিত সিআর এর উপর।
এই অবস্থায় কী করবে সে? কী আর! চুপ করবে। নীরব না থেকে আর এমন একটিও কাজ নেই যাতে এমন ঝড়বৃষ্টি থেকে বাঁচা যায়। মিডটার্ম পেছানো বা অ্যাসাইনমেন্ট দেরিতে জমা দেয়া– নিজেদের যৌক্তিক হিস্যা মনে করে ক্লাসমেটরা যতই গালাগাল দিতে থাকুক না কেন, সিআর কে তার প্রতিবাদ করা চলে না।

একশ্রেণির মুরুব্বি-বড়ভাই-শিক্ষক-অভিভাবক আছেন, যারা নীরবতাকে এতটাই ভালোবাসেন যে, অন্যায় করার পর (কোনক্ষেত্রে ন্যায় করলেও উনারা অন্যায় মনে করায়) সরি বলাটাকেও পছন্দ করেন না (শব্দের প্রকৃত বানানটা হওয়া উচিৎ "ছঋ", সরি বানানটা ভুল)। আমি এমন সরি বিরোধী অসংখ্য লোকের দেখা পেয়েছি আমার এই ২৫ বছরের জীবনে। তাদের তাৎপর্যপূর্ণ একটি বেদবাক্য আছে। সামান্য হেরফের না করেই তারা এটা ব্যবহার করেন। বাক্যটা এমন– "এমন কাজ করো কেন যে সরি বলতে হয়?" দেখুন প্রথমত আপনাকে আপনার কাজের জন্য সরি বলতে হচ্ছে (অথচ বেশিরভাগ সময়ই ঠিক কাজ করেও সামান্য হেরফের বলে এবং "তিনি" বড় কিংবা সম্মানিত বলে), তার উপর আপনি সরি বললেন কেন তার জন্যও কথা শুনতে হচ্ছে। তখন কী করবেন? কী আর করবেন! নীরব থাকা অবধারিত।

আপনার প্রেমিক/প্রেমিকা ((আধুনিক মনস্করা এই বস্তুকে বয়ফ্রেন্ড/গার্লফেন্ড বলে। প্রকৃতপক্ষে এই শব্দ দুটির অর্থ হওয়া উচিৎ বালক-বন্ধু/বালিকা-বন্ধু)) আপনার কথা শুনছে না তবে আপনি ক'টা দিন চুপচাপ নিভৃতে থাকুন। গ্যারান্টি দিয়ে না বলা গেলেও ধারণা করা যাচ্ছে একটা ভালো ফল পাবেন। (ধারণা করার কারণ, আমার অভিজ্ঞতা নাই)। শুধু কথা না শুনলেই নয়, বরং আপনাদের পারস্পরিক সম্পর্কের অমিলগুলোতে চুপ করে যান, দেখবেন ভালো কিছু ফল আসছে। তবে এখানে একটা সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ আছে। একসাথে দুইজন চুপ করে যাবেন না। তাহলে অনন্তকাল আর কথা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। নিঃশব্দতা নিয়ে একজন বেনামা প্রেমিক (অথবা প্রেমিকা) লিখেছেন–
–প্রত্যেক নিঃশব্দতার
একটা নিজস্ব শব্দ থাকে
– প্রত্যেক শব্দের থাকে একটি পরিণতি
–না বলে যা বলতে পেরেছি আমি
–বলে তা বোঝাতে পারিনি তাকে
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ১১:২৭
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×