somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছেলেবেলা, কৈশোর ও একটি ঝাপসা আয়না! (৪)

১০ ই মার্চ, ২০১০ রাত ১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছেলেবেলা, কৈশোর ও একটি ঝাপসা আয়না! (১)
ছেলেবেলা, কৈশোর ও একটি ঝাপসা আয়না! (২)
ছেলেবেলা, কৈশোর ও একটি ঝাপসা আয়না! (৩)
ছেলেবেলা, কৈশোর ও একটি ঝাপসা আয়না! (৪)
ছেলেবেলা, কৈশোর ও একটি ঝাপসা আয়না! (৫)

(পূর্ববর্তী অংশের পর...)
কৈশোরের শুরুতে প্রথম যে পরিবর্তনটা আসে আমার মধ্যে, সেটা জমিদার পুতুল রায়ের সাথে পরিচয় হবার পর। আমি তাকে চিনতাম না। একদিন দুপুরে যখন বিছানায় শুয়ে যাদব বাবু কষছি, তখন দরজায় কেউ একজন এল। দরজা খুলে দেখি ভিক্ষুক; টাকা চায় না, ভাত চায়। ভেতরের ঘর থেকে মা ভাতের কথা শুনে, তাকে বসতে বললেন। তখন আগন্তুক বললেন, 'চারটে গরম ভাত'ই দিয়েন মাইজি!' আমি তো শুনে অবাক! সচরাচর কোন ভিক্ষুককে গরম ভাত চাইতে শুনিনি। তখন বুঝিনি, কিন্তু এখন বুঝি, তাঁর কন্ঠস্বরে হয়ত' অভ্যস্ত কোন আদেশের সুর ছিল; বাবা-মা দুজনেই বাইরের ঘরে চলে আসলেন। আগন্তুকের ভগ্নপ্রায় চেহারায় কি যেন একটা আভিজাত্যের ছাপ- চমকে গেলেন বাবা-মা দুজনেই! জমিদার পুতুল রায়! পরে শুনেছি, পুতুল রায় ছিলেন হেমরাজার সর্বশেষ বংশধর, যিনি অল্প বয়সে বিভিন্ন নেশায় আসক্ত হয়ে, একদিন রাজবাড়ির সিন্দুক হাতিয়ে কোলকাতা চলে যান। তারপর তাঁর আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। সেই পুতুল রায় আজ হঠাৎ আমাদের দরজায়, তাও ভিক্ষুকের বেশে, বাবা-মা বেশ কিছুক্ষন নির্বাক হয়ে রইলেন! সে যাই হোক, একসময় একথা-ওকথা, কত স্মৃতিচারণ শেষে, আমরা একসাথে খেতে বসলাম। আমি কেবল শ্রোতা। তিনজন মধ্যবয়সী মানুষের সামনে আমি আর কি বলব? আমি কেবল অবাক হয়ে দেখছিলাম একজন প্রতাপশালী মানুষের ইতিহাস হয়ে যাবার উদাহরণ আগন্তুক কে। কথায় কথায় বাবা একসময় পুতুল রায়ের বংশগৌরব, প্রতিপত্তি আর রাজত্বের কথা তুললেন। বাবার গলায় ছিল মমতার ছাপ, হয়তো অজান্তে কিছুটা করুনাও ঝরে পড়েছিল কথার মাঝে; থেমে গেলেন জমিদার। কাঁপা কাঁপা হাতে ভাতগুলো নাড়তে থাকলেন। আমার ভুল'ও হতে পারে, মনে হলো, কয়েক ফোঁটা জল যেন পড়ল চোখ থেকে। কিছুক্ষন চুপ থেকে, দ্রুতই সামলে নিলেন। তারপর উদ্দেশ্যহীন ভাবে মাথা নেড়ে, একটু হেসে বললেন, "আবার'ও পানছি (পানশি) ভাছবে (ভাসবে) মাইজি, আবারো ছাত (সাত) মহলা দালান হোবে (হবে)।" আমার স্পষ্ট মনে আছে, পুতুল রায়ের ঘোলাটে দৃষ্টিতে হতাশা ছিল না, ছিল নিজের প্রতি অবজ্ঞা। তাঁর কন্ঠস্বরে আমি আশ্বাসের বদলে পেয়েছি প্রত্যয়।
কৈশোরের শুরুতেই আমি যা শিখলাম-কখনো হাল ছাড়তে নেই। এই শিক্ষাটা জীবন থেকে পেয়েছি বলেই কিনা জানিনা, আমার এই জীবনে কখনও ধৈর্য্য চ্যুতি ঘটেনি। থাক, এসব কথা বাদ। বরং আমাদের পথ হারানোর কথা বলি।
আমাদের শৈশবের বন'টা কৈশোরে এসে নতুন করে যেন আড়ি পাতলো। তখন হাফপ্যান্ট ছেড়ে ফুলপ্যান্ট হচ্ছি মাত্র। নিজের প্রিয় 'Phoenix' সাইকেলটা নিয়ে চলে যেতাম বনে। স্কুল পালিয়ে। কখনও বা নদীর ঘাটে। নৌকায়। এমন কত দুপুর গেছে, আমরা মাঝিদের সাথে দুপুরের খাবার খেয়ে, ওখানেই ঘুমিয়ে পড়েছি! তাস খেলাটাও রপ্ত করেছিলাম ওখানেই।
বনের ভেতর আমাদের একটা জায়গা ছিল, আমরা নাম দিয়েছিলাম 'মৃন্ময়ী'। চারদিকে টিলা ঘেরা আর মাঝখানে একটা হ্রদের মত। আসলে তো ডোবা, কিন্তু আমরা বলতাম হ্রদ। তার পাশে সাইকেলটা শুইয়ে রেখে আমরা বসতাম বাতাস মুখী হয়ে। জানিনা হয়তো পরিবেশের কারণেই কিনা, নিজেদের চেনামুখ গুলোই খুব অপরিচিত লাগত'। কৈশোরের দুঃখের তো আর অভাব নেই! স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ বলে গেছেন, বারো-তেরো বয়স নাকি উপদ্রবের মত। বড়দের সাথেও মেলেনা, ছোটরাও খেলায় নেয় না। তো থোরাই কেয়ার! আমরা ততদিনে আবিষ্কার করে ফেলেছি- 'নচিকেতা' তার গানে কখনো 'কষ্ট' শব্দটা ব্যবহার করেন না। (খুব ইচ্ছে আছে, নচিকেতাকে একদিন জিজ্ঞেস করব, ব্যাপারটা ইচ্ছাকৃত কিনা)।

আজ থাক। আর লিখতে ভালো লাগছেনা। চলবে যেহেতু, জোর করে চালানোর কোন মানে হয় না। ...(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০১২ দুপুর ২:৫১
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×