somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথক অমনিবাস-২

৩১ শে মে, ২০১১ রাত ১১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কথক অমনিবাস-১

কথক অমনিবাস-২। নিজের ছন্নছাড়া কবিতাগুলোকে কিছুটা ছাউনি দেবার প্রয়াস। কিংবা অপপ্রয়াস। কবিতাগুলো পূর্বে প্রকাশিত। সুতরাং কারো বিরক্তির উদ্রেক ঘটলে তার জবাবে আমার লজ্জাবনত মুখ ছাড়া কিছুই দেখাতে পারবো না।
ভালো থাকবেন সবাই।

৮. খোয়াবঃ
এই কবিতাটি লিখা নিজের জন্যে। একটা সময় খুব অস্থির হয়েছিলাম। কেন জানি নিজেকে সবখানে অর্বাচীন লাগতো। মানিয়ে নিতে পারতাম না। মনের অস্থিরতাটাকে দূর করতেই লিখা হলো কয়েক ছত্র।

খোয়াব

কষ্টে থাক, স্পষ্টে থাক
থাক চেতনায়; আয়নায় থাক।
বলিস, ভুলিস-
যতটা না বলতে পারিস
উদোম চড়ুই, উদোম চড়ুই
তোর আশাতেই বালির খোয়াব
স্নানের পরে সূর্য মাখিস।
খেলিসনে ঢেউ, খেলতে তো নেই
ভাবতে বসে ভুলতে গিয়েই
কলম-মনের পৃষ্ঠে থাক।
সৃষ্টে থাক। দৃষ্টে থাক।

৯. অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষীঃ
প্রতি ১৬/১২, ২৬/০৩, ২১/০২ এবং ১৪/১২ তারিখে আমি গভীর রাতে শহীদ মিনারে যাই। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকি অসামান্য তিনটি থামের দিকে তাকিয়ে। মাঝে মাঝে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, কিভাবে মাত্র ক'টি থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে আমরা ঠেকিয়ে দিয়েছিলাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সেনাবাহিনীকে! আমি হাতে একমুঠো মাটি তুলে নেই। চুপচাপ গাইতে থাকি 'আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।"

অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী

সেদিন আমার পূর্ব পুরুষেরা রুখে দাঁড়িয়েছিল বিপুল বিক্রমে
বীরাঙ্গনা 'মা' আমার লজ্জাবনত হাতে খামচে ধরেছিল
একমুঠো বিশুদ্ধ মাটি।
কৃষক-শ্রমিক-মজুর-বৃদ্ধ হয়ে উঠেছিল
এক একজন ফিল্ড মার্শাল।
তোদের শাস্ত্রীয় যুদ্ধজ্ঞান কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে
১২ বছরের ছেলে হয়ে উঠেছিল বীরপ্রতীক গেরিলা।
বুকের পাঁজর খুলে তাই দিয়ে বানিয়েছিল তোদের মৃত্যু ফাঁদ।
তোরা সেই খাঁচায় তড়পাতে তড়পাতে
সেদিন হাত জোর করেছিলি।
নয়টি মাসের প্রসব যন্ত্রণায় দেশমাতা আমার ডুকরে ঊঠেছিল;
তোরা মরে গেছে ভেবে উল্লাস করেছিলি।
মনে পড়ে?
আমার দেশের পশুগুলো হাত মিলিয়েছিল তোদের সাথে!

তোরা রাজাকার জানিস
মুক্তিযোদ্ধা জানিস না
তোরা যুদ্ধ জানিস,
বাঙ্গালি জানিস না।

তবে শোন,
এক একজন শহীদের বুক ছিল ৫৫ হাজার বর্গ মাইলের সমান প্রশস্ত।
তোদের সমস্ত পদাতিক সেখানে খড়কুটোর মতই নগণ্য।
এক একজন গেরিলা ছিল বাতাসের মত বিস্তীর্ণ-
তোদের জন্য যা ছিল ঝড়ো হাওয়া।

তোরা স্রেফ 'নেই' হয়ে গেছিস এই দিনে।

(বিঃদ্রঃ শিরোনামটি শ্রদ্ধেয় শুভাষ দত্ত'র থেকে ধার নেয়া।)

১০. চিঠিতাঃ
চিঠিতা কবিতাটা একটা হঠাৎ কবিতা। বৃষ্টিকন্যার জন্য লিখা। আমি কিছু পারিনা, পারি কেবল কয়েক লাইন লিখতে। তাই কিছু অ, আ, ক, খ জোগাড় করে একটা কবিতা লিখে ফেললাম।

পুনশ্চঃ ব্লগার সরলতা তার একটি গল্পে (আসাদের জন্য ভালোবাসা ) আমার এই কবিতাটা এমন ভাবে ব্যবহার করেছে, যেন মনে হয় কবিতাটা ওই গল্পের জন্যই লিখা। আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ।

চিঠিতা

মনে আছে তোর?
ইচ্ছে দুপুর?
সেই যে সটান রাস্তাটা-
যার এপার-ওপার জীবন চলে-বেখেয়ালে।
তুই চিনিয়েছিলি রোদের ঢেউ
পথের বালাই, খেয়ালী বাঁক
আর আমি বলি, নদীর মতন;
না না তোরই মতন
তুই বললি, আমি কি আর ভাঙ্গতে জানি?
আমার জবাব; আমি তো তোর গড়ার পারে-
ইচ্ছে হলে ভাঙ্গতে পারিস,
ডুববতো তোরই জলে!
কমল না পাই কোমল পাব-এটুকু জানি।
তা না হলে পাওয়ার আশা জলাঞ্জলিই!
সে'ও তো তুইই। একই কথা।

তোর হাসিটা বিষাদ মাখা
বয়েই গেল!
ওদিকে নয়,
এদিক আমি।
তোকে না পাই তোর ছায়াকে ধারণ করি
দেখনা তুই, কেমন করে ভেঙ্গে পড়িস!
জানিতো তুই তাকাবিনা,
চোখে যাকে ধারণ করিস-
তাকে কি আর দেখতে আছে!
তুই তো বেজায় পাগল আছিস!

তোর ঠোঁটে হাসির রেখায় অশ্রুবিন্দু-
পারিসনি তো?
দেখনা কেমন ধরা পড়িস!
বলছিলি তুই;
ঝড়ের জলে ভিজব জানি,
তার দুহাতে ভরিয়ে দেব মেঘের জোয়ার
সেই নদীটা আকাশ নদী
যার দু'পারের কেউ ভাঙ্গেনা-
নিজেই ভেঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে।
জড়িয়ে পড়ে-ঠিক যেমন আমার ছায়া;
তোরই গায়ে! ভিজবি তুই?
পথ না ফেরে-ফিরবনা আর।
তাও না পারি,
পথের পিঠে সওয়ার হব।
যাবি না তুই?

আর আমি বলি,
জলাঞ্জলি হবার আশায় ঝাঁপ দিলাম এই অথই জলে
জল নিজেই শেষে পথ হয়ে যায়-
আমার সাথেই সে পথ চলে।

১১. ছায়াবীঃ
এই কবিতাটি বৃষ্টি কন্যা-কে নিয়ে লিখা। আমরা যখন কথা বলতাম, আমাদের একটা জায়গা ছিলো। আমরা তার নাম দিয়েছিলাম ছায়াবী। মানে 'ছায়াময়' এবং 'মায়াবী' শব্দদুটোর সমস্ত শব্দ। আমাদের অনেক স্মৃতিঘেরা এই জায়গা-যা কখনোই মলিন হবার নয়।

ছায়াবী

প্রখর রোদের ঘের
ভ্রান্ত ঘুঘুর চোখে দিক হারাবার ভয়
তবু
একরত্তি দারুচিনি মেয়ে
স্বপ্নে বিভোর
পাখির ডাকের মত ব্যাকুল যদিও বা
কিছু প্রেম ছায়াবী
কিছু প্রেম দিক হারাবার নয়।

মতিহারের প্রতিজ্ঞা চাইনি
একটু সহায়- তাও বুঝিবা দূর খেয়ালে,
পতঙ্গ মিছিলে যাবার গুঞ্জন বুকে
মেয়ে আপন খেয়ালে কথা কয়-
'ভারী তো দেমাগ তোমার!
বলিনি, তাই বলে কি
বলতে নেই!
কূলটার মুখে ছাই!
আজ এ পথে যেতে অভ্যেসে তাকিয়ে ছিলে,
দেখিনি বুঝি!'

সহজ ছেলে- না জানে লুকাতে,
ভাবছে, 'ফিরে যাব? নাহ, থাক।
ঢের তাড়িয়েছি বৃন্দাবনের মাছি
মরুকগে!
চিঠিখানা দিই নি, এবার বুঝবে মেয়ে
তার চিঠি পরপুরুষের বুকে
তার পুরুষ নই যদিও-পরই তো!
এবার হাটে হাঁড়ি ভাঙ্গব।
তারপর হব দেশান্তরি
ইশশ! যদি সঙ্গে নিতে পারতাম!'

রত্তি মেয়ের চোখে ঘরবার,
'ফেরেনা যে!
যদি এমুখো না তাকায়,
গেলে দেব চোখ'।

এই লুকোচুরি দুদিনের নয়
কে বা জানে! প্রজন্মান্তরে-
কি লিখা চিঠির বুকে?
দারুচিনি মেয়েকে
সহজ ছেলে-
ভালোবাসি?
জেরবার ঘুঘু ডানা ঝাপটায়-
আসছে ছেলেটি,
মেয়েটিও ঘরের বার
পাখিটির চোখে সবজান্তার হাসি মাখা রোদ,
কি বলবে ছেলে-জানে সে।
মেয়েটিও রুমালে লিখে-
একই কথা একই সুরে
ছেলেটি হাত বাড়ায়
মেয়েটি হাত বাড়ায়
নিরবে বদল হয়।

মেঘের বন্যায় দিবা-নিশি ভাসি
অন্তরে লালিত প্রেম
ভাবনায় ভালোবাসি।

১২. কাল্পনিকঃ
এই কবিতাটি শহুরে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ। বাংলা বলতে শহর বুঝায়না। বাংলা হচ্ছে আমার মায়ের মতই সহজ, যার কোন অলিগলি, কানাগলি নেই। এক্কেবারে আমার গ্রামের আলপথ-যেখানে কয়েক ক্রোশ দূরের অতিথিকেও দেখে উৎফুল্ল হওয়া যায়। এটাই বাংলা। চিরায়ত বাংলা।

কাল্পনিক

কিছু অদ্ভুত রঙ বাতাসে
টিনের চালে ঢেউ ওড়ার শব্দরা
কি জানি কি নৈবেদ্য পাতায়
অলস পোকার দল রেশম বানানো ফেলে রেখে
ঝাঁপ দিয়েছে অন্ধকারে। বোকা।


"ও গোঁসাই, বাড়ি আছো?
একটা গান বেঁধে দেও দেখি!
আসছে হাটে মজমা দেব
কামাই যা, আট আনা-আট আনা
আমারটা না হয় মাধুকরী
কিন্তু তোমারটা?"

গোঁসাইয়ের মৃদু উচ্চারণ ভীড় ঠেলে ক্লান্ত হয়ে পড়ে
গান গেয়ে পয়সার দাম আছে।
গান বেচে কি পাওয়া যায়?

একজন সন্ত লোক ক্লান্তির পা বেয়ে হেঁটে আসলো,
বড় অদ্ভুত লোকটা কাঁধ থেকে ফেরি নামিয়ে
ওহ বুঝেছি! কাবুলিওয়ালা।
কিন্তু এ বাড়িতে তো কোন খুকি থাকেনা!
"খুকিরা এখন গ্রামে থাকে",
ছোট্ট ছেলেটা তার হারকিউলিস সাইকেলে চেপে বলল কথাগুলো
"গ্রাম চিনোনা বুঝি?
ওই যে, যেখানে খুকিরা থাকে"
হাতের তালু উল্টিয়ে-
"বুড়োটা দেখি বড্ড বোকা!"

শহর তবে কি গ্রাম ছাড়ালো?
একটুকরো সোঁদা গন্ধ কোথায় পাই!
পাট কিংবা ধান মাড়াইয়ের।

খুকি আজ বড্ড উদাস
তার বাংলা বইয়ের পাতায়
কে যেন লিখে রেখেছে "A"
হতচ্ছাড়া লিখাটা বড্ড বেশি বেমানান লাগছে
সে বোকা মেয়ে সবাই জানে
চালাক হতে বাধ্য করেনি তো কেউ!

খুকি, আমাদের অনাধুনিক খুকি
দাওয়ায় বসে দেখে
আসছে কাবুলিওয়ালা
সে হেসে ওঠে গ্রাম বিস্তারে।

একজন গোঁসাই, একজন গাতক
আর একজন কাবুলিওয়ালা

তখন,
কিছু অদ্ভুত রঙ বাতাসে
টিনের চালে ঢেউ ওড়ার শব্দরা
কি জানি কি নৈবেদ্য পাতায়
অলস পোকার দল রেশম বানানো ফেলে রেখে
ঝাঁপ দিয়েছে অন্ধকারে। বোকা।

১৩. জলজঃ
এটা মোটামুটি আত্মকথন। নিজের ইচ্ছেরা যখন অপারগ হয়, কবিতার নৌকায় তখন পারাপার চলে। সেরকমই বৃষ্টিতে লিখেছিলাম। এর বেশি কিছু মনে নেই।

জলজ

কিছু দূর্দান্ত কবিত্ব মনে হয়
আমাদের সবার জিন-বিন্যাসের ভেতরেই লুকিয়ে আছে।বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে কেউ,
বৃষ্টি দেখে-
ছেলে বেলায় বাতাবী লেবু দিয়ে ফুটবল খেলার কথা মনে হয়নি,
কিংবা চালভাজা...সাথে বাবু-ডাকাত-চোর-পুলিশ খেলা...!!!
গ্রামের মেয়েটি এখনো খোঁজে তার হারিয়ে যাওয়া নথ,
পুকুর পাড়ের পিছল ঘাটে
সেদিন বৃষ্টিতে সে ঠাঁই নিয়েছিল স্থির ঘোলাটে জলে।

দাওয়ায় বসে বৃষ্টি দেখছিলাম তুমুল।
কয়েকটি ছেলে যেন মৃত্তিকার সন্তান-
জল-কাদা মেখে মেঘের প্রতিদ্বন্দ্বী।
আছে এমন কোন প্রতিমা
কিংবা কোন প্রতিপুরুষ ওদের উপেক্ষা করে যাবার?
হয়তো নয়
এবং
কখনোই নয়।

আমিও মানুষ-কিংবা আমার মত কোন নতজানু কীট,
কি জানি কি দেখে উজান হয়!
মক্তবে পড়া ছেলেটির মত, আমারও ইচ্ছে করে
আমপারা মাথায় দিয়ে আবারও শিশু হই।

আস্মৃতিলম্বিত সময়গুলো বড় বেমানান অতিথির মত উজান বায়।
চোখ থেকে ঝেড়ে ফেলি-কিন্তু মন ঝাড়ার উপায় তো শিখিনি!

কে জানে তাই
দৃপ্ত পায়ে আমিও পা রেখেছিলাম বিন্দু জলে
অশ্বমেধ পরিক্রমার মত বিপুল বিক্রমে নেমে এসেছিলাম জনপদে-
ভিজব বলে।
মেঘ দেখে আজ
শত বছরের ঘুমিয়ে থাকা কবি'টা
হঠাৎ বেরিয়ে এসেছিল দোর্দন্ড প্রতাপে!
ঝড়ের জগঝম্প পেরিয়ে সে এঁকেছিলো
এলোমেলো কিছু বৃষ্টির ফোঁটা।
মুখ উঁচিয়ে দেহে নিয়েছিল বজ্রের নিনাদ।
তার
উন্মাদ চাহনি-আর দৃষ্টিসীমায় আঁকা ঘূর্ণির তটরেখা।

১৪. বর্ষাকথনঃ
আমার বর্ষা-প্রীতির কথা মনে হয় সবাই কিছুনা কিছু জানেন। একবার বৃষ্টিকন্যা-র জন্য একটা বরষার কবিতা লিখার ইচ্ছে হলো। অফিসের কীবোর্ড ঠেলে একটুকরো কাগজ নিয়ে বসে গেলাম। সেখান থেকেই এই কবিতার জন্ম। একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই কবিতার প্রতিটি লাইন কিন্তু আমার চোখে দেখা। কি বিশ্বাস হচ্ছেনা? ব্যাপারনা! কবিরা এক-আধটু পাগলই হয়!

বর্ষাকথন

১.
ঘেমো দুপুরের অলস চোখ হাতড়ে বেড়ায় মেঘ
বেতফলের গায়ে লাগে বর্ষার আবির
সেখান থেকে সটান আকাশে। বর্ষা এলো...বর্ষা এলো
জরাগ্রস্থ ধরণী আজ বিশল্যকরণী।

২.
পাড়া-ন্ত বিলের আকাশে
একটি চাঁদ গলে গেছে;
জলের ভেতর চোখ, ব্রজবুলি ঠাউরে দেখে
মন গলে তবু মেঘ গলেনা।
বর্ষা লেগে গেছে আকাশে-
তাই নিয়ে মেঘেরা
দে ছুট! ছুট বিষ্টি ডাক!
ভেজা কাশবন মেরুদন্ড বাঁকিয়ে দোলে।

৩.
গাছের পাতায় মেঘ, নদীর কানায় মেঘ
মেঘে মেঘে বিবাদ চলে ধুল পরিমাণ
আছড়ে পড়ে মাটিতে
মাটির মানুষ তাতেই ভেজে।
আকাশ পুকুরে বর্ষার চাষ
মনের মুকুরে বৃষ্টির নাচ- ভুল থাক ব্যাকরণে।
আর এদিকে,
মানুষের মনে ছোটে আকাশ গলা নদী।

১৫. বর্ণপ্রপাতঃ
প্রিয় ছোটভাই 'বঙ্গবাসী রাণীপুত্র' বললো, সেবার ক্যাম্পাসে ২১শে ফেব্রুয়ারীর অনুষ্ঠানে সে আমার লিখা একটি কবিতা আবৃত্তি করতে চায়। মুক্তিযুদ্ধ-ভাষা আন্দোলন নিয়ে কবিতা লিখতে আমার বর্ণমালার অভাব হয়না। নিজের ভেতরের দ্রোহটাকে কিছুটা উষ্কে দিতে হয়েছে মাত্র। মগজ থেকে কলমে, কলম থেকে কাগজে, কাগজ থেকে আমার মৃত্তিকায়। অসাধারণ আবৃত্তি করেছিলো ছেলেটা।
"ও আমার দেশের মাটি, তোমার 'পরে ঠেকাই মাথা।"

বর্ণপ্রপাত

আরো একজন এসেছিল ফাঁসির দাবি নিয়ে
যেমন কোন এক মা-
বুলেটবিদ্ধ খোকার শব দেখে
কেঁদে উঠেছিল বাংলায়;
লোহিত রাস্তায় সারি সারি বুটের ছাপ ছাপিয়ে
মৃত্তিকা বলে উঠেছিলো- এবার বাংলা ছাড়ো
মিছিলের স্রোত হয়ে গিয়েছিল রক্তপ্রপাত-
এইতো সেদিন!

কেউ এসেছে মা'কে না জানিয়ে,
বন্ধুর দেয়া ঝর্ণাকলম বুক পকেটে ঝুলিয়ে
আবার ফিরব বলে এসেছে নরম ছেলেটি।
আরেকটি ছেলে যেন ঝড়ের পূর্বাভাস
মুঠিবদ্ধ হাতে তার বর্ণমালা লিখা।
কেউ টিউশন ছেড়ে এসেছে,
কেউ প্রেমিকার হাত ছেড়ে এসেছে-
কেউবা মিছিল শেষে কিনতে যাবে
বোনের জন্য টাঙ্গাইল শাড়ি।
পাগল ছেলেটি নিয়ে এসেছে মা'কে লিখা চিঠি।
একজন কবি, একজন দার্শনিক এবং একজন মোটর মেকানিকও এসেছেন।
হলের ডাইনিং বয়-হাতে তার এলুমিনিয়ামের থালা
মিছিলের তালে তালে সে বাজাচ্ছে তার বিদ্রোহের রণগীত।
একজন ভিক্ষুকও ছিল মিছিলে।
বিপ্রতীপ হাতে ধরা আদর্শলিপি
কোমরে শার্ট প্যাঁচানো সেই ছোট্ট শিশুটি এসেছিলো নির্ধন্ধ উচ্চারণেঃ
"রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই"।
সমস্ত আকাশ সেদিন কেঁপে উঠেছিল মিছিলের বজ্রনাদে,
ঝরে পড়ার বদলে গাছের পাতাগুলো সেদিন হয়ে উঠেছিল চির হরিৎ।

তোমাদের জড় বুলেটের তপ্ত সীসা এতোটা শক্তিশালী নয় যে
ভেদ করে যাবে রক্তক্লেদাক্ত শ্লোগান
তোমাদের বারুদ এতটা স্রোতজ নয় যে
সহজেই ভাসিয়ে নিয়ে যাবে গণজোয়ার;
আমাদের এক একটি বর্ণ পঞ্চান্নহাজার বর্গমাইল বিস্তৃত
ক'টা বন্দুক আছে তোমাদের যে গুলি করবে?
আমাদের এক একটি বর্ণের ভেদাঙ্ক কাবুকের চেয়েও তীক্ষ্ণ-
ক'টা বুক আছে তোমাদের-যা পেতে নেবে?

মিছিলে গুলি করে তোমরা একটাও জীবন থামাতে পারোনি
কেননা ওরা অমর হয়ে গেছে
মিছিলে গুলি করে তোমরা একটাও ধ্বনি থামাতে পারোনি
কেননা ওটা আমাদের ভাষা হয়ে গেছে।

তোমরা মিছিল থামাতে পেরেছ
'বাংলা' থামাতে পারোনি।

১৬. বৃন্তকে-কথকঃ
আমার বন্ধু বৃন্ত। একটু খেয়ালী। ওর বাড়ি যশোর। Allen Ginsberg এর September On Jessore Road আর মৌসুমী ভৌমিক এর 'যশোর রোড' গান-সেই সাথে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যশোর রোডের ভয়াবহ দিন-সব মিলিয়ে এই রাস্তাটা যেন আমার তীর্থ হয়ে উঠেছিল। মনে আছে, অনেক রাতে আমি স্বপ্নেও দেখেছি-যশোর রোড ধরে হাঁটছি। বৃন্ত'র মুখে সেই যশোর রোডের কথা শুনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললামঃ যশোর রোডে হাঁটতে হাঁটতে একটা সিগারেট না খেতে পারলে জীবনই বৃথা। ছেলেটা স্বপ্ন দেখাতে জানেও বটে! আমার এই কবিতাটা এই খেয়ালী পাগল ছেলেটার জন্য।

বৃন্তকে-কথক

উৎসঃ
যশোর রোডের ভ্যাঁপসা বাতাসে
তার নিঃশ্বাস ছিল সবচেয়ে তাজা
যদিও ধোঁয়ার আড়ালে ঢেকে থাকতো মুখ;
আমি তার নাম দিলাম 'বিদ্রোহ'।

প্রসঙ্গঃ
প্রায় ছ'ফুটি শরীর (মনটা নিত্যতার অনুপাত)
গান শিকারীর দলে ভীড়ে উচ্ছন্নে গেল!
খোদা-ভগবান-ঈশ্বরেরা তাকে
বুঝতে না পেরে-
দোহাই!
যীশূখ্রীস্ট দাবী করিসনা নিজেকে।
শয়তান'ও না
কিংবা রাম-রাবণ;
সে নিজের নাম দিল 'কবি'।
মানুষ তাই মেনে নিল।
(কবিরা একটু পাগলই হয়!)

বিশ্লেষণঃ
আমাকে থামিয়ে দিল তার শীর্ণ হাত।
-'আমি বৃন্ত'। 'খামোকাই ফুল ঘাঁটছিস যে বড়ো!'

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৩:৪১
৩০টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×