somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাচীন মশকে অর্বাচীন দ্রাক্ষারস

০৭ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একদা এক শৃগাল নির্নিমেষ লাফাইয়া দ্রাক্ষা’র নাগাল না পাইয়া ঘোষণা করিলো ‘দ্রাক্ষাফল অম্ল স্বাদ যুক্ত’-আলোচ্য গল্পখানি আশা করি সকলেরই অবগত। ইহার মূলভাবও সকলেরই অন্তঃস্থ সন্দেহ নাই। কিন্তু অতঃপর কি হইলো-তাহা কি আমরা জানি? সে একখানা দীর্ঘ ইতিহাস। আলোচ্য শৃগাল ব্যর্থ মনোরথ হইয়া নিজ কার্যে মনোনিবেশ করিলো। যথাসময়ে বিবাহ করিয়া সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিলো। কিন্তু অদৃষ্টের কি পরিহাস! চাহিলেই কি আর অতীত মুছিয়া ফেলা যায়? ঈশপ নামক এক দুষ্টু লোক তাহার দ্রাক্ষা সংক্রান্ত ব্যর্থতার কথা জনে জনে রাষ্ট্র করিয়া দিলো। সকলেই এখন তাহাকে দেখিয়া ঠাট্টা মশকরা করে। এতদ্ব্যতীত অত্যাচার সহ্য করিতে না পারিয়া শৃগাল তাহার স্ত্রী ও পুত্র সহযোগে নতুন আবাসে গিয়া থাকিতে আরম্ভ করিলো। এইখানে যথাপিও সকলেই ঘটনাখানা শুনিয়াছে, কিন্তু তাহারা কেহ অত্র শৃগালকে চিনিতে পারেনাই বলিয়া বিরক্ত করিতো না। বরং শৃগাল স্বয়ং বহুবার অন্যদের সহিত উক্ত গল্প করিয়া হাসাহাসি করিয়াছে-যাহাকে দুষ্টু মানুষেরা কাষ্ঠহাসি বলিয়া থাকে। সে কিন্তু স্ব-পুত্রের সম্মুখেও নিজের মূর্খামির কথা ঘুণাক্ষরেও কহেনাই। যাহা হউক, পুত্র বড় হইলো, বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় এর পাঠ চুকাইয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হইলো। বিদ্বান হইবার পর তাহার নাম হইলো শৃগাল পণ্ডিত। কিন্তু কথায় আছে যে, খাসিলত যায়না মরিলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠিনীদের দেখিয়া সে তাহাদের দ্রাক্ষাফলের ন্যায় সুমিষ্ট মনে করিতে লাগিলো। স্ব-পাণ্ডিত্য জাহির করিবার ছলা-কৌশলে সে চশমার অন্তরালে সহপাঠিনীদিগের দিকে চৌর্যদৃষ্টিতে তাকাইতে লাগিলো এবং কয়েক বৎসরের ভিতরেই হৃৎপিণ্ডে বেশ কয়েকবার উত্তাপ পাইলো। সে অনুধাবন করিলো, সকলেই শৃগাল এবং দ্রাক্ষাফল জনিত একখানা গল্প লইয়া তাহাকে বেশ নাজেহাল করিতে ছাড়ে না। গল্পখানা সে-ও বিলক্ষণ পড়িয়াছিলো, সুতরাং প্রতিবাদ করিবার অবকাশ হইয়া ওঠেনাই। সত্যই তো গল্পখানা হাসির উদ্রেককারী! এইদিকে একেরপর এক উত্তাপ খাইবার পর তাহার অবস্থাও কাহিল। তাবৎ সহপাঠিনীদের প্রতি তাহার আক্রোশ চরমে উঠিলো।
তাহারপর একদিন আলোচ্য শিক্ষিত শৃগাল পূর্বপুরুষদিগের মূর্খামির পুনরাবৃত্তি না করিয়া নতুন ঘোষণা করিলোঃ ‘দ্রাক্ষাবৃক্ষই অম্লস্বাদ যুক্ত’। কেননা, স্ব-ফলিত দ্রাক্ষাগুলিকে একই বৃন্তে না ধারণ করিয়া পৃথক বৃন্তে ধারণ করিবার অর্থ হইতেছে তাহাদিগের একতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করা। উপরন্তু, দ্রাক্ষাগুলি নিজেদের স্বরূপ এমনতরো ভাবে বাহির করিয়া রাখে যে, আত্ম লোভ সংবরণ করিতে কষ্ট হয়। নিশ্চিতভাবে ইহা কুটিল আহবান। তাকাইতে না চাহিলেও কিরূপে যেন চক্ষু ওইদিকে চলিয়া যায়। এহেন একতাহীন এবং রূপসর্বস্ব দ্রাক্ষাফল নিশ্চয়ই কদাকার দ্রাক্ষাবৃক্ষের ন্যায় কূট-বুদ্ধি সম্পন্ন! সুতরাং উহা গলধঃকরণ করিলে শরীরের সমস্ত প্রত্যঙ্গের একতাকেই হুমকীর সম্মুখে ঠেলিয়া দেওয়া হইবে এবং চরিত্র নষ্ট হইবে। অতএব উহাদের নিকট হইতে দূরে থাকাই উত্তম

অতএব, এতদ্ব্যতীত সিদ্ধান্তে আসিয়া শৃগাল সন্তুষ্ট চিত্তে দূর হইতে পুনরায় চশমার অন্তরালে দ্রাক্ষা দেখিতে লাগিলো এবং এহেন দুঃশ্চরিত্র কটু ফল ফলাইবার কারণে দ্রাক্ষাবৃক্ষকে র্ভৎসনা করিতে লাগিলো।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১:১৯
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×