চাঁদ পূর্ণিমার প্রতি আগ্রহ হারিয়েছি বহুবছর আগে। বরং ঘৃনা জন্মেছে তাতে। জানালার ফাঁক গলে চাঁদের ঝলমলে আলো ঢেকে দেই জানালার পর্দা দিয়ে। সেদিন আকাশে বড় একখানা চাঁদ উঠেছিল। তুমি বললে, দেখেছো আকাশে মস্ত বড় একটা চাঁদ!
আমি নিজের ঘরে কম্পিউটারের এজ অফ এম্পায়ারে মগ্ন। সবে মাত্র হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এমন সময় তোমার ফোন। একটেল জয়ে ইনজয় করছে প্রেমিক প্রেমিকারা। তোমার ফোন রিসিভ করার কথা ছিলো না। সারাদিন বহুবার ইগনোর করেছি তোমাকে। সম্পর্ক এগোনোর চেয়ে ব্যবধান বাড়াতে চলেছি। চেয়েছি ব্যবধান বারতে বারতে আলোকবর্ষ দুরে চলে যাবো একসময়।
কিন্তু তুমি নাছোরবান্দা। আমাকে নাকি তোমার চায়ই চায়। যদিও আমরা দুজনেই দুজনকে চেয়েছিলাম। কিন্ত আমার যা অবস্থা তাতে অবস্থানের পরিবর্তন হচ্ছিলো না কোন ভাবে। স্থায়ী কোন রোজগার নেই। তবে না খেয়ে থাকতাম না। তোমাকেও না খাইয়ে রাখতাম না। কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছিল তোমার সাথে অন্যায় করা হচ্ছে। আর তোমার পরিবারও একেবারেই আমাকে পছন্দ করে না। তোমার বাবা আমার ভবিষ্যত দেখেননি, বর্তমান টা দেখেছিলো শুধু। আর বর্তমানটা আমার ছিল যাচ্ছে তাই। অন্তত তোমাকে চালাবার মত নও।
তুমি অংকে ভালো ছিলে, চমৎকার ফিজিক্স পারতে। একবার ধরিয়ে দিলে ভুলতে না। আমি সাক্ষী। আমি তোমার টিউটর। আমার চেয়ে কে ভালো জানবে?
আমাদের রসায়ন কবে ঘনীভূত হয়েছিল ঠিক মনেই নেই। অনেক কিছুই ভুলে গেছি। ভুলে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। কিন্তু দেখো, আকাশের চাঁদ আর জোসনার আলো থেকে তোমাকে আবার মনে পড়লো। আজ ইচ্ছে হলেও কেন জানি জানালার পর্দা টানালাম না। আসুক আলো আসুক। সেদিনও হয়তো এমন মস্ত একটা চাঁদ উঠেছিল। তুমি চুপিচুপি কথা বলতে উঠলে ছাদে। বললে, দেখেছো আকাশে মস্ত বড় একটা চাঁদ । আমি কোন কথা বলিনি। আমি জানি এই চাঁদের আলোয় আমি তোমাকে ছুঁতে পারবোনা। কিন্তু তোমাকে বড্ড ছুঁতে ইচ্ছা হত। কানের পাশের চুল ছড়িয়ে দিতে ইচ্ছা হতো। কিন্তু আমি বর্তমানের কাছে হেরে গিয়েছিলাম। অপরাধী মনে হতো খুব।
দেখেছো? আকাশে মস্ত বড় একটা চাঁদ। কথাটা আমি মগজে নিয়ে বেড়াচ্ছি আজীবন। এটাই তোমার শেষ কথা ছিল। খবরটা দিয়েছিল রাসেল। তখন বাজে রাত তিনটা। তোমার বাড়িতে যাওয়া আমার নিষেধ। তবুও গেলাম। মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। তোমাকে ওরা দেখতে দিলো না। তোমার মুখ নাকি থেঁতলে গিয়েছিল। তিনতলা ছাদ থেকে পড়েছিল নিচের নির্মানাধীন ইটের উপর।
আজ ৫ই জুন। তোমার জন্মদিন। আকাশের চাঁদ দেখে হঠাৎই তোমাকে মনে পড়লো। যখন খুব বেশি মনে পড়ে, যখন আর সহ্য করতে পারিনা তখন ওরা আমাকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। লেখাটা লিখছি ওখান থেকেই।