তিনটা পয়তাল্লিশ। আমি বাস থেকে নেমে দাঁড়িয়ে আছি ঢাকা সিটি কলেজের সামনে। গন্তব্য স্টার কাবাব। হেঁটে গেলে তিন মিনিট লাগবে।
আজ বিকালে ওখানে আমাদের খাওয়ার কথা। বাসে থাকা অবস্থায় ঝিনুক বেশ কয়েকবার কল করেছে। টের পাইনি তাই রিসিভ করা হয়নি।
মোবাইলের স্ক্রিনে বেশ কয়েকটি মিসড কল উঠে আছে। কল ব্যাক করবো সেই উপায় নেই। ব্যালেন্স শেষ। খুব বাজে ধরনের উদাসীনতা এটা। ফ্লেক্সিলোড দিতে হলে রাস্তার ঐপাশে যেতে হবে। রাস্তা ক্রস করলেই ফ্লেক্সিলোডের দোকান। ঝিনুক হয়তো অনেকক্ষণ ধরেই বসে আছে । কে জানে আমার প্রিয় ঝাল ফ্রাই আর কাবাবের অর্ডার দিয়েও দিয়েছে কিনা। হুট করে কাবাবের গন্ধ আমার নাকে লাগলো। এতো দুরে কি গন্ধ আসার কথা? খিদেটাও চনমন করছে।
আমি রাস্তা ক্রস করছি। আচমকা কেউ একজন আমার গায়ের উপর এসে পড়লো। পরক্ষণেই আমি উঠে দাঁড়ালাম। ছোটখাটো একটা ঝটলা। সামনে মেগাসিটি বাস দাঁড়িয়ে আছে। থামানো হয়েছে। আমাকে যে ধাক্কা দিয়েছিল সে রাস্তায় পড়ে আছে। তার শার্ট রক্তে ভেজা। উৎসুক জনতা বাস ভাঙচুর করার জন্য তৈরী হচ্ছে। আমি আর দাঁড়ালাম না। এর মধ্যে ঝিনুকের দুটা মিসড কল উঠে আছে। এইবারো রিসিভ করতে পারলাম না। মোবাইল রিচার্জ না করেই স্টার কাবাবের দিকে হাঁটা শুরু করলাম। মেয়েটা অনেকক্ষণ ধরে বসে আছে।
যা ভেবেছিলাম তাই। কাঁচে ঘেরা রুমের একপাশে ঝিনুক কে দেখা গেলো। তার সামনে কাবাব আর ঝাল ফ্রাই রাখা। সে আনমনে আমার জন্য অপেক্ষা করছে । আমি এগিয়ে গেলাম। আনমনে থাকার কারণে সে হয়তো আমাকে খেয়াল করেনি। আমি চেয়ারে বসলাম। ঝিনুক আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি হেসে কিছু বলতে যাবো। এই সরি টরি জাতীয় কিছু। কিন্তু কেন জানি কিছুই বলতে পারলাম না। হঠাৎই বিষন্ন হতে শুরু করলাম। ঝিনুকের কাজল টানা চোখ আরো বিষন্ন করে তুললো।
সামনে রাখা কাবাব আর ঝাল ফ্রাইয়ের খিদে চনমনে গন্ধও নাকে এলো না। আসলে কোন গন্ধই আমি পেলাম না।
আমি মারা গেছি সেটা বুঝতেও অনেকক্ষণ সময় লাগলো।
ছবিঃ ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০২৩ রাত ৩:১৩