ইসলামের বদনাম হয় একশ্রেণির মুসলিমদের আচরনের জন্য। আপনার আসে পাশে যত মুসলিম আছে তাদের মাঝে কিছু সংখ্যক এমনও আছে যাদের জিগ্যেস করুন তুমি কি শিয়া, সে বলবে না সুন্নি অথবা তুমি কি সুন্নি সে বলবে না শিয়া।
আল্লাহ এক তার কোন শরিক নাই -এইটা মুসলিমদের মুল শিক্ষা হলেও সেইশ্রেণির মুসলিমরা হাদিস হাদিস করতে করতে নবী মুহাম্মাদ সাঃ কে আল্লাহর উপর বেশী প্রাধান্য দিয়ে ফেলে।
আল্লাহ প্রদত্ত কিতাব পবিত্র কোরআন হলেও ৯৮% মুসলিমরা কোরআন পড়ে তোতা পাখির মত এবং অর্থ বুঝার চেষ্টাও করে না। আর যারা বুঝে তারা এর ব্যাখা বা তাফসির এমনভাবে করে এক্কেবারে মুল অর্থের বারোটা বাজিয়ে দেয়। আর এরাই কোরআন বাদ দিয়ে হাদিস অনুসরন করে। শিয়াদের হাদিস সুন্নিরা মানে না আর সুন্নিদের হাদিস শিয়ারা মানে না, যদিও উভয়েরই দাবী হাদিস হল রাসুলের কথা, কাজ, আচরন।
ইসলামের প্রাথমিক যুগের ইতিহাস, মুসলিম স্ম্রাজ্যের বিস্তার এইসব কমবেশি সবাই জানেন। ইতিহাস সাক্ষী দেয় একসময় মুসলমানরা অর্ধেক পৃথিবী (Half of the known world) শাসন করেছে, এবং জ্ঞান বিজ্ঞান, ন্যায় বিচারে সবার জন্য একটা রোল মডেল ছিল। ঐ সময়ে তারা সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছিল, বাক স্বাধীনতা, মত প্রকাশের সবার সমঅধিকার, অন্য ধর্ম, মতের প্রতি শ্রদ্ধা সবই ছিল, যেখানে ইউরোপ সহ অন্য দেশ গুলি তখন কুসংস্কারে নিমজ্জিত ছিল। মানুষ মুসলমানদের কাছে জ্ঞান বিজ্ঞান শিখতে আসত, আজকে যেমন মুসলমানরা অন্যদের কাছে শিখতে যায়। এই ইহুদীদের স্বর্ণযুগ ছিল মুসলমানদেরই শাসনামলে। স্পেনে মুসলিম শাসনকালে ইহুদীরা সবচেয়ে ভাল ছিল-এটাও ঐতিহাসিক সত্য। তারপর হটাত করে সব কিছু বদলে যেতে লাগল। মুসলিমরা আস্তে আস্তে অন্য মত, ধর্মের প্রতি অসহনীয় হয়ে উঠল এবং নিজেরাই উগ্রতা এবং কুসংস্কারের মধ্যে ডুবে যেতে লাগল।
এর ফলে আস্তে আস্তে মুসলমানরা তাদের গৌরব হারাতে লাগল, সেই সাথে সম্রাজ্যও। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর অটোমান সম্রাজ্যের পতন, ১৯৪৮ সালে প্যালেস্টাইন দখল, ১৯৬৭ সালের ৬ দিনের যুদ্ধে পরাজিত এই সবই মুসলিম জাতির নিকট অতীতের পরাজয়ের ইতিহাস। এর সাথে আছে মুসলিম অধ্যুষিত দেশ গুলির চরম খারাপ অবস্থা। সবখানেই জ্বালাও পোড়াও চলছে। আমি আমার এই লেখায় মুসলিম জাতির পরাজয়ের সম্ভব্য কারন কি সে বিষয় খুজার চেষ্টা করব।
মুসলমানরা যখন পরাজিত, তখন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মুসলিম, বিভিন্ন গোষ্ঠী, বিভিন্ন মুসলিম দেশ এর সুনির্দিষ্ট কারন অনুসন্ধান করেছে এবং এর থেকে উত্তরণের পথও খুজেছে। অনেকেই মুসলিম জাতিকে তার আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নেবার চিন্তা করেছে। তারা বুঝতে পেরেছে, কোথাও অবশ্যই ভুল হয়েছে, এবং সে ভুল খুজে, তা শুধরিয়ে বা শুরু থেকে চেষ্টা করে আবার আগের অবস্থানে ফিরে যাওয়া যায় কিনা সেই ব্যপারেও চিন্তা করেছে এবং চেস্টাও করেছে। এই জন্য তারা আগের মত করে ইসলামিক স্টেট সৃস্টি করে ইসলামিক গভর্নমেন্টের মাধ্যমে দেশ পরিচালিত করার চেষ্টা পর্যন্ত করেছে, কিন্তু সেই চেষ্টা কোন ইতিবাচক ফল বয়ে আনতে পারেনি। মুসলমানদের এই ধারাবাহিক পরাজয় এবং বিভিন্ন মুসলিম দেশের এবং মুসলমানদের বর্তমান অবস্থান দেখে অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে মুসলমানরা যাকে স্রস্টা বলে মানে, সেই “আল্লাহ” মুসলমানদের পরিত্যাগ করেছে। তাই যদি হয় তবে প্রশ্ন হচ্ছে কেন? আল্লাহ তালা পবিত্র কুরআনের ১৩ নম্বর সুরার ২৫ নম্বর আয়াতে বলেছেন-এবং যাহারা আল্লাহর (সঙ্গে কৃত) প্রতিজ্ঞাকে উহা সুদৃঢ় করিবার পর ভঙ্গ করে এবং যে সম্বন্ধকে সংযুক্ত রাখিবার জন্য আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন উহাকে ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে, ইহারাই ঐ সকল লোক যাহাদের জন্য (আল্লাহর) অভিসম্পাত এবং তাহাদের জন্য এক নিকৃষ্ট বাসস্থান রহিয়াছে। “As for those who break their pledge with God after having made its covenant, and they withhold what God has ordered to be delivered, and who cause corruption on the earth; upon those is a curse and they will have a miserable abode.” (Qur’an 13:25)
তবে কি মুসলমানরা ইহুদীদের মত তাদের সৃষ্টিকর্তার সাথে করা চুক্তি(Covenant ) ভঙ্গ করেছে এবং সেই ইহুদীদের মত শাস্তি ভোগ করছে?
কোরআনের এই ১৩:২৫ আয়াত আবার পড়ুন এবং দরকার হলে বার বার পড়ুন এবং মুসলিমদের অবস্থা সম্পর্কে মেলানোর চেষ্টা করুন। The curse of God is upon us
(কোরআনে আল্লাহ এই covenant এর কথা অনেক জায়গায় মুসলমান এবং ইহুদীদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। এই covenant এর কথা মোল্লাদের কে আমি কখনো তেমনভাবে বলতে শুনিনি। মুসলমানদের জন্য এই covenant খুবই গুরুত্বপুর্ন, কিন্তু এটা সবসময় আমরা ওভারলুক করে যাই। বাইবেলেও বিভিন্ন নবীর সাথে ঈশ্বরের এই covenant এর অনেক কথা বলা আছে, এবং কোরআনে তা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাই হোক, এইটা এখানে আমার লেখার বিষয় না, তবে কেউ যদি এই বিষয়ে আগ্রহী হন তাদেরকে আমি ইহুদীদের ধর্মীয় ইতিহাস পড়ে দেখতে বলব, এটা করলে দেখতে পাবেন মুসলমানদের ধর্ম ইতিহাস আর ইহুদীদের ধর্ম বিকৃতির ইতিহাস প্রায় একই রকম)।
এখন,আমার প্রশ্ন হচ্ছে সেই শ্রেনীর মুসলমান কারা যাদের জন্য ইসলামের এত দুর্দশা?
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:০২