somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটকাকার বিয়ে

০৯ ই আগস্ট, ২০০৮ রাত ১২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এইসময় ছোটকাকার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখা শুরু হল। নানান জায়গায় ঠাকুমা পিসিমা দিদি আর আমি মেয়ে দেখতে যেতাম। কোন মেয়েই পছন্দ হচ্ছিল না। একবার টালিগঞ্জে আমরা একই দিনে দুটো মেয়ে দেখতে গেলাম। প্রথম যে মেয়েটাকে আমরা দেখতে গেলাম তাকে আমাদের কারোরই পছন্দ হল না। মেয়েটা যেমনি মোটা তেমনি কালো।

সেইদিনই আর একটা মেয়ে দেখতে গেলাম ওই টালিগঞ্জেই। আমরা যখন গেলাম, মেয়ে তখন বাড়িতে ছিলনা। মাসতুতো ভাইকে কোলে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিল, কিছুক্ষণের মধ্যেই মেয়ে ফিরে এল। মেয়ের গায়ের রং ভীষণ ফরসা। এত ফরসা যে মাথার চুলগুলো লালচে। মাথায় মস্ত বড় একটা বড় খোঁপা বাঁধা। পরণে একটা চেককাটা শান্তিপুরে শাড়ী। আমাদের সবার মেয়ে দেখে খুব পছন্দ হল। ঠাকুমা চুলটা খুলে দেখতে চাইলেন। ঠাকুমার এই স্বভাব আমার একদম পছন্দ হতনা । ঠাকুমার ওপর আমার খুব রাগ হচ্ছিল। মেয়ের হাঁটু পর্যন্ত লম্বা চুল। ভালই দেখতে লম্বা দোহারা চেহারা। দেখে পছন্দতো হয়েই ছিল তারপর গান শুনে খবার দাবার খেয়ে আমরা মোহিত হয়ে চলে এলাম। মেয়ে দেখে ঠাকুমার খুব পছন্দ হল।

মেয়ের মা বাবা কেউ বেঁচে নেই । একটা মাত্র দাদা। মেয়ে কখনও মেসোর কাছে টালিগঞ্জে, কখনও ঈশ্বরদীতে মামার কাছে থাকত ওঁরাই ছিলেন অভিভাবক। মেয়ের মেসোর সাথে আমার বাবার আলাপ ছিল । তিনিই বাবাকে দেখে বিয়ের প্রস্তাব তোলেন। ওঁরা আর ছেলে দেখতেও চাইলেন না। বাবার পরিচয়ই ওঁদের কাছে যথেষ্ট ছিল।

এইবার আমাদের বাড়িতে সাজ সাজ রব পড়ে গেল। আমাদের সকলেরই নতুন নতুন করে পোষাক তৈরী হল। বাবা কৃষ্ণচূড়া আমলেট দিয়ে আর্শীবাদ করে এলেন। ছোটকাকার ব্যবসায় তখন রমরমা অবস্হা । ছোটকাকা সুন্দর সু্ন্দর ডিজাইনের নানা ধরনের গহনা তৈরী করে বাড়ীর সব বড়দের হাত দিয়ে একটা করে উপহার দেওয়ালেন। তখন জ্যৈষ্ঠ মাস স্কুলগুলোতে গরমের ছুটি পড়ে গিয়েছিল। ছোটকাকা বিয়ে উপলক্ষ্যে নিবেদিতা স্কুল ভাড়া নিলেন।

বিয়ের চারদিন আগে আমরা স্কুল বাড়িতে চলে এলাম। গায়ে হলুদের তত্বে পাঠানো হয়েছিল একটা মস্ত বড় রুই মাছ। তারপর আরও কত বিয়ে দেখলাম, কিন্তু কোন তত্বে অতবড় মাছ দেখিনি। বেনারসী শাড়িই কেনা হয়েছিল তিনখানা। একটা ছিল নীল রংয়ের জমি তার ওপর বড়বড় জরির কাজ করা ফুল। এছাড়া ছিল ঢাকাই শাড়ি আর তাঁতের শাড়ি। কি সব নাম অনন্যা, মানে না মানা, দেখতে খুব সুন্দর ছিল শাড়িগুলো, তাই বোধহয় আমার আজও মনে আছে। বিয়ের জন্য কবিতা ছাপা হয়েছিল। কবিতার একটা লাইন এখনও মনে আছে, " টালিগঞ্জে আনতে কাকী
শহর থেকে দূরে--"

আমরা সাজগোজ করেছিলাম খুব। ছোটকাকা আমাকে আর দিদিকে দুটো করে জামা বানিয়ে দিয়ে ছিলেন। নীলনেটের উপর সাদা ফুল কাটা জামা আর খয়েরী রং এর সিল্কের শালোয়ার কামিজ। কানে বরফি প্যাটার্নের ঝোলা মিনে করা সোনার দুল। দু বোনের একই রকম । বিয়েতে আমরা বরযাত্রী গিয়ে ছিলাম।

বর যখন বিয়ের আসরে পৌঁছল, তখন খুব চেঁচামেচি শুরু হয়ে গেল। আমরা খুব ভয় পেয়ে গেলাম। ঘুম ভাল করে নাহলে ছোটকাকার চোখ লাল হয়ে যেত। বিয়ের আগে ছোট কাকিমার দাদা ছেলে দেখেননি। ছেলের গায়ের রং কুচকুচে কালো, চোখ টুক টুকে লাল । স্বাভাবিক ভাবেই তিনি মনে করলেন ছেলে নিশ্চয় নেশা করে।সেইজন্য তিনি বিয়ে দেবেন না বলে বেঁকে বসলেন।সবাই তাঁকে বোঝাতে লাগল এবং শেষ পর্যন্ত বিয়ে হয়ে গেল। বৌ নিয়ে ফেরার সময় গাড়ীতে দিদি বসল কাকিমার কোলে। আমি ছোটকাকার কোলে বসলাম।আমার সমস্ত আনন্দই মাটি হয়ে গেল। আমি কোনমতে আড়ষ্ট হয়ে ছোটকাকার কোলে বসে রইলাম।

বাড়ি ফেরার পর সবাই বউ কে নানা রকমের গহনা দিয়ে আশীর্বাদ করতে লাগলো। বৌকে বলা হল সবার কানে মধু দিতে। ছোটকাকা মাকে দেখিয়ে বলতে লাগলেন, এঁর কানে বেশি করে মধু দাও। মাও বললেন তোমার কথা আমি মধুর মত মিষ্টি না শুনলেও তোমার কিছু যায় আসে না, বরং তোমার কথা যাদের কাছে মধুর মত না লাগলে তোমার ক্ষতি, তাদের কানে বেশি করে মধু দাও।

তখন বিয়েতে লোক নিমন্ত্রণ নিয়ন্ত্রন করা হয়েছিল অর্থাৎ বেশি লোক খাওয়ানোর নিয়ম ছিল না। কিন্তু ছোটো কাকা যথারীতি বেশি লোক নিমন্ত্রণ করেছিল যা ছিল আইন বিরুদ্ধ। নেমন্তন্য খাওয়ানোর জন্য ছোটকাকা ফুলকাটা ডিশ এনেছিলেন। নিমন্ত্রিত অতিথিরা চলে গেলে ছোটকাকা অনেক রাতে চুপিচুপি এঁটো ডিশগুলো বাইরে ফেলতে গেলে ছোটকাকাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল। মুহুর্তের মধ্যে বাড়ির চেহারা বদলে গেল। ছো্টকাকিমা কাঁদতে লাগলেন। কিছুক্ষনের মধ্যেই ছোটোকাকা ফিরে এলেন। থানার বড় অফিসার নাকি ছোটোকাকাকে দেখে চিনতে পেরেছেন, বলেছেন, এ কাকে ধরে এনেছিস, এ তো আমাদের নতুন জামাই। পরে শুনেছিলাম ওই অফিসার ছোটকাকিমার সম্পর্কে মামা হন।

বিয়ের পরদিন থেকে দেখলাম, ছোটকাকার ঘরটা একেবারেই দখল হয়ে গেল। যখন তখন ও ঘরে ঢোকা নিষেধ হয়ে গেল। ছোটকাকিমা বেশিরভাগ সময় ঘরেই থাকতেন। বাড়িতে মাত্র তিনটে ঘর । ছোটোকাকার ঘরটা ছিল আমাদের পড়ার ঘর, সন্ধ্যেবেলা ওখানেই পড়তাম। কিন্তু ছোটকাকার বিয়ের পর দেখতাম ছোটকাকা দুপুরবেলাতে দরজা বন্ধ করে ঘুমতে লাগলেন আর রাতেও। যে ছোটকাকা দুপুরে বাড়িতেই ঢুকত না, সে একেবারে ঘরের মধ্যে বন্দি হয়ে গেল। এর রহস্য কি তা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারতাম না। রহস্য ভেদ করতে পেরেছি অনেক পরে, বড় হয়ে।

৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×