©কাজী ফাতেমা ছবি
=ফ্রেম্বন্দির গল্প=
দিন কেঁদেই চলেছে অবিরাম। হিম আবেশ ছুঁয়ে থাকা মন উচ্ছ্বাস হারিয়ে বন্দি ঘরের কোণে। হেমন্তের এই মেঘলা দিনে মন উড়ু উড়ু। এ রুম ও রুম পায়চারী, কাহাতক লাগে আর ভালো। আলসেমি এসে ভর করে চোখের পাতায়। অথচ বিছানায় দেহ ছুঁয়ালেই ফরমায়েশের হাক, এ দাও ও দাও, এই করো, কাছে এসো উফ! বেটা বাচ্চার দুরন্তপনায় আরাম এলোমেলো।
ঘুম আবেশ, বিতৃষ্ণায় মন। জিভের লোভ ছটফট। কিছু খাওয়ার জন্য মন এগিয়ে যায় রসনা পানে। কী খাওয়া যায়! কী খাওয়া যায়! এ করেই কেটে যায় অফুরন্ত সময়। ঘড়ির কাঁটা বুঝে না মন, ঠিকঠিক টিকটিক এগিয়ে যায় ভবিতব্যে।
তবুও খাওয়ার তৃষ্ণা যায় না মুছে। হুম ঠান্ডা দিনের কোলে বসে কিছু খাওয়াই চাই। আইডিয়া বলেই জ্বলে উঠে দিমাগ কি বাত্তি। সবুজ বাদামী প্রলেপে মোড়া হলুদাভ স্বপ্ন দানা, আহা ওদের গায়ে সোনা রঙ বসন। আর কেনো তবে দেরী, মুঠোয় পুরে আদরে আহলাদে নিয়ে যাই চুলোর কিনারে। পাতিলে তেলের ফোঁটা এক চিমটি লবণ আর চামচ, ওদের ঢেলে দেই! সরি উৎসর্গ করি আগুনের শিখায়।
চামচ নাড়াচাড়ায় ওরাও নড়ে উঠে, হেসে উঠে ঝুপঝাপ শব্দে। নিমেষেই ফুটুস ফাটুস বোম ফুটিয়ে ওরা উল্লাসে উঠে মেতে। ঢাকনার অন্দরে ওরা খেলে বন্দুক বন্দুক যুদ্ধ আর আমি তুষ্টি মনে দাঁড়িয়ে থাকি ঠাঁয় চুলো ঘেঁষে। ওদের খেলা শেষ ঢাকনা উঠাতেই একি! শুভ্র বসনে সেজে আছে ওরা, আমায় দেখেই ওরা শুদ্ধতায় সন্তুষ্টি প্রকাশে ব্যস্ত।
ওদের আদুরে রূপ আহা, ঢেলে দেই সবুজ রঙ্গা ঝুড়িতে। মুঠোয় পুরে একসঙ্গে সবাই কুড়কুড়ে স্বাদে ডুবে যাই মেঘলা দিনের মিষ্টি হাওয়ার বৃষ্টির জলে। ওরা ওদের উৎসর্গ করে গুটি কয়েক জিভের জলে। উদরে হোক এবেলা ওদের বসবাস। ব্যস কিচ্ছে খতম। তো এবার ছন্দ হয়ে যাক সুরে সুরে সুর মিলিয়ে চলো গেয়ে উঠি একসাথে সবাই।
মেঘলা দিনের আরাম ছুঁয়ে, কে কী খাবে বলো
কুড়মুড়ে স্বাদ নিতে তবে, সঙ্গে আমার চলো!
বসো বসো সোফায় বসো, অপেক্ষাতে থেকো,
টিভির মাঝে এবার তবে, দৃষ্টিখানা রেখো।
মুড়ি খাবে বিস্কিট খাবে, নাকি কফি খাবে?
চায়ের স্বাদে জিভ রাখতে কী, তোমরা মত বদলাবে!
চিপ্স নাকি চানাচুর খাবে, খাবে কী পপকর্ণ,
কানের কাছে বাজিয়ো না, খাই খাই সুরের হর্ণ!
আচ্ছা বাবা রাজী আছি, পপকর্ণই আজ খাবো
একই সাথে খাবো আহা কী যে মজা ভাবো!
দেখবো টিভি গাপুস গুপুস খানা দানা হবে,
ছুটির দিনের মজার সময় স্মৃতি হয়ে রবে।
ভুট্টার দানা তেল আগুনে, জ্বলে হবে ভষ্ম
শীতে হাওয়ায় আসবে ফিরে, দেহে মিহি উষ্ম;
পপকর্ণের এই বিকেল ক্ষণে, দাও না হেসে সুখে
কে যে রাখে সবার ঠোঁটের হাসিখানা রুখে।
(স্যামসাং, স্থান৷ আমগো বাসার রান্নাঘর)
পপকর্ণ এক্কেরে সহজ বানানো
উপকরণ-ভুট্টা এক মুঠ, তেল, লবণ, হাঁড়ি, ঢাকনা, চামচ, রান্নাঘর, চুলা আর আগুন।
হাঁড়ি চুলায় দিয়া তেল দিয়া তাতে লবণ, গরম হলে ভুট্টা দিয়া নাড়ন আর চাড়ন, খানিকক্ষণ পরেই এক দুই ভুট্টা লাফাইয়া উঠিবেক। তাত্তারি ঢাকনা দিয়া দাঁড়াইয়া কান পেতে সেই মধুর সুর আহা গুরুম গারুম আওয়াজ, আর নাক পেতে ঘ্রাণ আহা মজাই মজা। শব্দ বন্ধ হলে ঝুড়িতে নামায়া একটুপর মুখে পুরুন ব্যস পপকর্ণ হু গেয়া।
(কাঁথার নিচে শুইয়া শুইয়া পোস্টের আবির্ভাব)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৫৬