মানুষের জীবন-কতভাগে বিভক্ত। কতবার মন হয় পরিবর্তন। কতবার পড়তে হয় বিপদের সম্মুখীন ।কতবার পান করতে হয় অদৃশ্য বিষ। শিশু বয়স, চিন্তাহীন জীবন। ডানা মেলা পাখি, সুতো ছেঁড়া ঘুড়ি, প্রজাপতি, কখনো পাখি, কখনো শরতের শুভ্র মেঘের ভেলা। আহা দিন যায় রাত যায়, আনন্দের দিনগুলো স্বপ্ন হয়ে উড়ে শিশুটির চোখে মুখে বুকে। সকলের চোখের মণি আদরের ধন, হাঁটি হাঁটি পা পা করে আগানো সময় সুখোক্ষণ। তার হাসিতে ঘর হাসে বাড়ি হাসে, তার খুশিতে আপনজনেরা লুটিয়ে পড়ে উচ্ছ্বাসে।
সময় যায় ধীরে শিশু.....কিশোর/কিশোরী হয়,একটু একটু বুঝতে শেখা আদরের মণিটি নিজের জগতে পা রাখতে শিখে যায়, শাসন লাগে এখন তেতু, আদর লাগে অতিরিক্ত কিছু। ডানা ভাঙ্গা পাখির মতো ছটপটানি ঘরের ভিতর বন্দি থাকতে সে কি চায় আর । তার ভাবনাগুলো মিলে না আপনজনদের সাথে। সে যা করতে চায় তাতে একটু বাঁধা বিপত্তি আসলেই মুষড়ে পড়ে, বলতে শিখে যায় তর্ক বিতর্ক, বড়দের প্রতি বিষাক্ত মনোভাব।
সময় যায় ধীরে কৈশোর হয়... তরুণ/তরুণী-পড়াশুনায় ফাঁকি, রাত জেগে মোবাইল ভিডিও গেইম, প্রেম পত্র, প্রেমের আকাশে উড়ায় রঙিন ঘুড়ি। আলাদা রুমে বন্দি তার মন, দুয়ারে ধাক্কা দিতে সাহস যোগাতে হয় আপনজনদের। ঔদ্ধত্যপূর্ণ মনোভাবে সে তার জগত চিনে নিতে চায়। ছুঁতে চায় ভুল ইচ্ছেগুলো। নিজের ভুলগুলো শুদ্ধ ভেবে আগায় পথ। সে আপনজন থেকে হয়ে যায় কিছুটা বিভক্ত। উদাসীন জীবনে কেউ কেউ পেয়ে যায় ভুলের পথ আবার কেউ সব কিছু ঠেলে অনায়াসে শিক্ষাক্ষেত্র সুনামের সাথে শেষ করে দেয়। কত বন্ধু বান্ধব এই সময়টুকুতে ঘিরে থাকে তাদের। তাদের মনে হতে থাকে কেউ তাদের ছেড়ে যাবে না, চিরটা জীবন বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ থাকার অঙ্গিকারে পথ চলা শুরু কলেজ জীবনের।
স্কুল ছেড়ে কলেজ, কত বন্ধু ঝরে গেলো কত বন্ধু চলে গেলো দৃষ্টি সীমা ছেড়ে। কত বন্ধু শহর ছেড়ে গেলো অন্য শহরে এখান থেকেই শুরু বিভক্ত হওয়া। অতঃপর কলেজ জীবন ধীরে ধীরে শেষের পর্যায়ে। আবার ভাঙ্গনের খেলা্ কেউ কাউকে আটকাতে পারে না জীবনের প্রয়োজনে। ভালো কলেজ ভাল বিশ্ববিদ্যালয় বেছে বেছে যে যার মতো চলে যায় বন্ধুত্বের বন্ধন কেটে। যে যার সাধ্যমত ভালো থাকার আশায় চলে যায়, ভেঙ্গে যায় বন্ধুত্ব আবারো। এখানেই একেকজন বিভক্ত একেকজন থেকে। অঙ্গীকার সে তো ধরে রাখা যায় না।
বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে উঠে আরেকটি বন্ধুত্বে বন্ধন। কত সুখ দুঃখে কেটে যায় প্রহর। কত স্বপ্ন চোখের পাতায় ভর করে। প্রেম হয়, বিয়ে করার অঙ্গীকার হয়।কেউ কেউ হয়ে যায় ঘর পালানো ছেলে। সব মায়ার বন্ধন ভুলে সে শুধু সুখি হতে চায়। ধীরে ধীরে বিশ্ববিদ্যালয় শেষ হবে তখন দেয়া যাবে কপালে চিন্তার রেখা। কে কোথায় জব করবে, কোথায় পাবে দুমুঠো অন্নের যোগান। সংসার হবে সন্তান হবে আহা কত স্বপ্ন ঘুরে ফিরে যুবক/যুবতির মনের আনাচে কানাচে।
এতটুকু জীবনে কেউ আপনজনদের সাথে ধরে রেখেছে সম্পর্ক আবার কারো হয়ে গেছে তেতো যুক্ত সম্পর্ক। যারা নিজেদেরকে নিজেদের মতো করে ভাবে তারাই এমন ভালোবাসাহীন জীবনে এসে প্রবেশ করে। একদিন ঠিকই বুঝতে পারবে পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার মজা।
আবার বন্ধুত্বের ভাঙ্গন, বিভক্তি সম্পর্কের। প্রেমগুলো আঁচড়ে পড়ে নর্দমায়। চাকুরীর প্রতিশ্রুতি ধীরে হতে থাকে ক্ষয়। আহা ছেলেদের প্রেম সে আর টিকে কই, বিয়ে হয়ে যায় মেয়েদের/প্রেমীকাদের। আবার হতাশা জীবনে প্রবেশ। অন্যদিকে চাকুরী খুঁজে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ানো। এখানে এপ্লাই সেখানে এপ্লাই- এগোতে থাকে সময়।
কেউ পেয়ে যায় সুখের ঠিকানা আবার অনেক মেধাবী পড়ে যায় হোঁচট খেয়ে ভালো চাকুরী সন্ধান না পেয়ে। বয়স সে কী আর থেমে থাকে। অবশেষে কেউ ছোটখাট কোম্পানীতে ঢুকে পড়ে কেউ বা ব্যবসায় মনোনিবেশ করে আবার কেউ কেউ বিদেশ বিভুঁই পাড়ি দেয় স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছবে বলে। অবশেষে বিয়ে থা, নিজের সংসার সাজানো। নিজের পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশংকা দেখা দেয়। কেউ সরে আসে আপনজনদের হতে আবার কেউবা পড়ে থাকে সম্পর্ক ছুঁয়ে সংসারে অশান্তি সত্ত্বেও। এখানেও বিভক্তির খেলা খেলে নিয়তি। যুবক/যুবতী বাবা মা হয়, দায়িত্ব বাড়ে, সম্পর্কগুলো হতে থাকে মধুর অথবা তেতোযুক্ত।
যুবক যুবতী প্রৌঢ়প্রৌঢ়া হয়, ছেলেমেয়েদের সাথে তাদের একটা বিভক্তি চলে আসে। একেকটা মন যেনো প্রজাপতির মতো। উড়ে যায় আবার নীড়ে ফিরে। সুখে দুঃখে কেটে যায় প্রহর। প্রৌঢ়প্রৌঢ়া বৃদ্ধ হতে থাকা সময় বিতৃষ্ণায় কেটে যায় আরো কিছু কাল অথবা সুখেই কাটে। এখন অন্য ভাবনা মনে নেয় ঠাই। অতীত জীবনের ভুল ত্রুটি ধরা পড়ে।
নিজেদের ক্ষমার অযোগ্য মনে করতে থাকে কেউ। গোরের আঁধারে যেতে হবে ভেবে দিনে রাতে নামায শুরু অথচ সময় থাকতে কেউই এদিকে পা মাড়ায়নি আর কেউ কেউ নামাযের মধ্যে থেকেই বৃদ্ধ হয়েছে। এবার চলে যাওয়ার পালা আবারো পরিবার হতে বিভাজন হতে হয়। তবে তা হয় চূড়ান্ত পর্যায়। চলে যায় মানুষ রেখে যায় তার ভালো মন্দ। কেউ জানে না কার ঠিকানা কোথায়। চলে যেতে হবে তবু মানুষ, বিষাক্ত ছোবলে জর্জরিত করে মানুষের জীবন। মানুষ হয়ে মানুষের রক্তে সাড়ে স্নান। অথচ তার পরিণতি সে একই, তাকেও যেতে হবে শেষ ঠিকানায়। একটি ছোট জীবনে মানুষ কি হতে চায় কিইবা পেতে চায়। সবই স্বপ্নই সমুদ্দুরের বালি, মুঠোয় পুরলেই ঝরঝরিয়ে পড়ে যায় আঙ্গুলের ফাঁক গলে। এ যেনো গোলক ধাঁধার পৃথিবী। এখানে কেউ কারো মন বুঝে না কেউ কারো ভালো চাইতে পারে না।কেউ কেউ ভালো চেয়ে করে বসে নিজের ক্ষতি। অতঃপর মানুষ নিজের স্বার্থে কাটিয়ে দেয় একেকটি জীবন।
(ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০১৭)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:০৪