=স্মৃতিময় ঈদ আমার=
এবারের ঈদ ছিল আমার সেরা ঈদ। কারণ এবারের ঈদ আব্বা আম্মার সাথে করেছি। প্রায় বিশ বছর পরে নিজের বাড়ীতে ঈদ করলাম। এই বছরের গত মার্চের শেষ দিকে আব্বার মাইল্ড স্ট্রোক হয়। আব্বা আগের চেয়ে অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছেন। মার্চেই এসেছিলেন ঢাকায়, কিছু টেস্ট আর ডাক্তার দেখানোর জন্য। ঢাকায় আমরা দুইবোন আছি, আমার ছোট বোনও বাংলাদেশ ব্যাংকেই জব করে। আব্বাকে দুই বোন মিলে ডাক্তার টেস্ট সব করিয়েছি। আব্বার বয়স প্রায় ৯০। তিনি মুক্তিযোদ্ধা এবং একজন সেনাবাহিনীর সৈনিক হিসেবে রিটায়ার্ড পারসন। আব্বা যথেষ্ট শক্ত এখনো আল্লাহর রহমতে। এন্ডোসকপি পর্যন্ত করালাম। সব টেস্ট ভালো রেজাল্টও আসছে। গ্যাস ছাড়া তেমন বড় কোন সমস্যা নাই।
যাই হোক সব টেস্ট ডাক্তার দেখানোর পরে বাড়ী গেলেন। যেদিন গেলেন, এর পরেরদিনই মাইল্ড স্ট্রোক করেন। এক সাইট হালকা প্যারালাইজড ভাব ছিলো। এখন সব ঠিক আছে আলহামদুলিল্লাহ্ । হাঁটতে পারেন। তবে দুর্বল বেশী। একটাই সমস্যা এখন মুখ তিতা তিতা। খেতে পারেন না তেমন। আলহামদুলিল্লাহ তবুও অনেক মানুষের চেয়ে সুস্থ আছেন আব্বা। আব্বা খুব কর্মট ব্যক্তি। তিনি বসে থাকা পছন্দ করেন না। গ্রামের বাড়ীতে কত কাজ, ক্ষেতে সবজি করা থেকে ধরে কাপড় ধোয়া ঘরের কাজে আম্মাকে হেল্প করা সবই আব্বা করতেন। বসে থাকার লোক তিনি ছিলেন না। কিন্তু এখন কাজ করতে ভয় পান দুর্বলতার কারণে। কাজকর্ম করতে না পারায় আব্বা অনেকইটা হতাশ। আল্লাহ আমার আব্বাকে নেক হায়াত ও সুস্থতা দান করুন।
এবার মনে মনে ভেবে নিয়েছিলাম আব্বা আম্মার সাথেই ঈদ করবো। কিন্তু করোনার লকডাউন। করোনার সংক্রমণ বেড়ে গেলো হঠাৎ। তাসীনের বাপে বললো যেতে পারো তবে বাচ্চারা যাবে না এই সংক্রমণকালে। আমি সেটাও মেনে নিয়েছি। আমার বোনও রাজী এবারের ঈদ আব্বা আম্মার সাথেই করবো ইনশাআল্লাহ। গত ১২ তারিখ একটা মাইক্রো ঠিক করে আমি ও আমার বোনের ফ্যামিলী আর আমার ছোট ভাই বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিলাম। বিকেল পাঁচটায় রওয়ানা দিয়েছিলাম। ওরে বাপরে বাপ, এত জ্যাম ঢাকা থেকে বের হতে পারিনি ইফতারের আগে। এক হোটেলে ইফতার সাড়লাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেই হোটেলে একটা থালায় দু'মুঠ মুড়ি আর একটা পিঁয়াজো রাখলো ৭৫/- । রোজার দিনেও এদের সীমাহীন লাভ করতে হয়। অথচ অন্যান্যা দেশে রোজাদারদের ফ্রি ইফতার করায় আর আমাদের দেশে করে ডাকাতি।
আমরা যে যাবো তা আবার বাড়ীতে জানাইনি সারপ্রাইজ দেবো বলে ! যাই হোক রাত প্রায় বারোটা বাজলো বাড়ী পৌঁছতে। ছোট ভাই বাড়ীতে যে ছিলো তাকে ফোন করে দিলে সে আমাদেরকে এগিয়ে নিতে আসে। ঘরে এসেই আব্বাকে তাক লাগিয়ে দেই। আব্বাতো হতবাক। কান্নাকাটি করতেই আছেন। ইশ কী যে আনন্দ আব্বার চোখে।
পরেরদিন ইফতার করতে বসছি আমরা পাঁচ ভাইবোন আব্বা আম্মা আহা আব্বার যে কী খুশি। এই খুশি লক্ষ কোটি টাকা দিয়েও কেনা যাবে না। আব্বা বলেন এবার আমার সেরা ঈদ হবে। আব্বা বলতেই থাকেন এই ইফতারীটা জীবনের সেরা ইফতারী। এসব শুনে বুকটা হাহাকার করে। মেয়েরা কত অসহায় । জামাইর ইচ্ছা ছাড়া বিয়ের পর বাপের বাড়ী ঈদই করা হয় না। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে সারাদিনই কারেন্ট ছিলো না। এমনকি ইফতার টাইমেও কারেন্ট ছিলো না। গ্রামের বাড়ী একটা বৃষ্টির ফোঁটা পড়লেই কারেন্ট উধাও। তাতে কিন্তু আনন্দে একটুও ভাটা পড়েনি।
ঈদের দিনটাও এমন আনন্দে কেটেছে। তবে মনটা খচখচ করতেছিলো তাসীন তামীমের জন্য। তারা আমার সাথে না থাকাতে কোথায় যেন আনন্দের ঘাটতি ছিলো। ইচ্ছে করলে ঈদের পর আরও কয়েকদিন থাকতে পারতাম। কিন্তু বাচ্চারা আমাকে ছাড়া ঈদ করেছে তাই ঈদের একদিন পরে চলে আসছি ঢাকা। ঈদে কোথাও বেড়াতেও যেতে পারিনি ওদের জন্য মন পুড়ছিলো। ছোট বোনটা বলেছিলো চল চা বাগানে অনন্ত ঘুরে আসি। মন সায় দিলো না যাওয়া হলো না কোথাও।
আমার স্মৃতিময় ঈদের আনন্দটুকু সবার সাথে ভাগ করলাম। থাকুক স্মৃতি হয়ে। আরও এমন ঈদ আমার জন্য ফিরে আসে সেজন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ আমার আব্বাকে সুস্থ সুন্দর রাখেন দোয়ার জন্য প্রার্থনা করছি।
০২। পথে গ্যাস ভরার সময় একটা দোকানে চকলেট আইসক্রিম খেয়েছিলাম যাওয়ার দিন।
০৩। আহা তরতাজা কামরাংগা। গ্রামের বাড়ী ফলের মেলা। গাছে গাছে প্রচুর আমও ধরেছে মাশাআল্লাহ।
০৪। গাছে ফুটেছে থরে থরে কামিনী ফুল । ঘ্রাণে মাতাল মন পাড়া।
০৫। প্রচুর ব্যাঙের ছাতা চারিদিকে। কত কিছিমের মাশরুম । ছবিও তুলেছি কতগুলোর । মাত্র একটা দিলাম।
০৬। দিনদুপুরে এক কাপ চা, সাথে আছে সোনালো, করবি, কামিনি। ঈদের পরদিন।
০৭। বাকবাকুম বাকবাকুম......... ওদের স্বাধীনতার দিন।
০৮। সব গাছেই দেখলাম প্রচুর কাঁঠাল। এমন মুহুর্তে গেলাম। কিছুই খেতে পারলাম না আফসোস।
০৯। কিতা গো আফা, পিছে পিছে আইতাছো কা? ফটো তুলতায় নি, নেও তুলো তুইলা ফুটো........ তার সাথে দেখা করতে
যাইতাছি আর বাধা দিয়ো না। দেখো তো সাজটা ঠিকাছে নি
১০। গামারী গাছের নিচেও ঝরা ফুলের মেলা আহা, গ্রামীন জীবন কত সুন্দর জীবন।
১১। কাঁঠাল
১২। আনারস।
১৩। কিছু জারুল ফুলের পাপড়ি। গাছ অনেক বড় যার কারণে ফুলের ছবি উঠাতে পারিনি।
১৪। আমাদের পুকুর ঘাট, জলের আয়নায় আকাশ ছবি
১৫। ধানকাটা শেষে প্রকৃতি
১৬। জোড়া কইতর
১৭। কাঁঠাল
১৮। মেহেদী রাঙা হাত, ভাইয়ের মেয়ের হাত।
১৯। চটপটি ঈদের দিন।
২০। গামারী ফুল হাতে
২১। কিতা গো বইন, ফটো তুলতে নি........ খাড়া পোজ দিয়া লই প্লিজ
২২। ঈদের পিঠা, ডাল পিঠা।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০২১ দুপুর ১:১১