somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

=যেখানে রিযিকের দানা শেষ হয়ে যায় সেখানে এক সেকেন্ডও থাকা সম্ভব না=

২৮ শে মার্চ, ২০২২ বিকাল ৪:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



চাকুরীজীবী হওয়াতে আমাদের বেড়ানো খুব কমই হয়। যেখানেই যাই মাত্র এক সপ্তাহ থাকতে পারি। হয় অফিসের সমস্যা। না হয় বাচ্চাদের পড়াশুনা স্কুলের সমস্যা। কত প্লান ভেস্তে যায় স্বয়ংক্রিয়তায়। এইতো গত ফেব্রুয়ারীতেই প্লান ছিলো স্বপরিবার মানে দুই পরিবার আমরা কক্সবাজার যাবো। প্লেনের টিকিট বুকিং দেয়ার কথা আর হোটেলও অনলাইনে ঠিক করা। হঠাৎ করোনার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় তাসীনের বাপ যাওয়া কেন্সেল করে দিল। যা'ও একটু আশ্বাস পাইছিলাম তা'ও আর হলো না।

তারপর একের পর যাত্রা কেন্সেল। বাপের বাড়ী যাবো গত তিন দিনের ছুটিতে। ট্রেনের টিকিটও কেটে ফেলছিল আমার বোন। বাধ সাধলো তাসীনের বাপ বললো তাসীনের পরীক্ষা সামনে এখন যাওয়া ঠিক হবে না। ব্যস যাত্রা বাতিল। ট্রেনের টিকিটের টাকাও গেল। আমার বোনের ফ্যামিলি কী সুন্দর ঘুরে আসলো। আচ্ছা যাই হোক, তাসীনের ইন্টার পরীক্ষা সামনের আগস্টে। বেচারা খুবই বিজি পড়াশুনায় যেন নিঃশ্বাস ফেলারও টাইম নাই, কারণ করোনার কারণে কলেজও তেমন একটা হয় নাই।

এই মাসেই তার একটা পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই পরীক্ষাও এপ্রিলের ১০ তারিখে পেছালো। সে হতাশা থেকে বাঁচতে তাঁর বাবাকে বললো বাবা রোজার পরে আর বেড়ানো যাবে না। তাহলে আমাকে নিয়ে ঘুরে আসো দাদা বাড়ী থেকে একটু রিফ্রেশ হই। এই ব্যস্ততা ঠেলে সবাই রাজী যেতে। তাসীনের বাপ ফজরের সময় স্টেশনে দাঁড়িয়েছিল টিকিট কাটতে, দিনের দশটায় টিকেট পাইছে (অনলাইনে নাকি টিকেট দিচ্ছে না ইদানিং)। যাক আরামে আরামেই শুক্রবারে রওয়ানা হলাম ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে। সহিসালামতে গিয়ে পৌঁছলাম সাড়ে বারোটায়।

গ্রামগুলো আগের মত আর নেই। তাদের গ্রাম এতটাই নিরব কোনো হইচই কিচ্ছু নাই। তাছাড়া আর বাচ্চা কাচ্চাও দেখি তেমন নাই। তাসীনের চাচাতো ভাইয়ের যাওয়ার কথা ছিল, তারা কুমিল্লা থেকে যাওয়ার কথা। টিকেট না পাওয়াতে তারা গেল না। বাড়ী গিয়েও বাচ্চারা মন মড়া। খেলাধুলা করার মত মানুষ নাই।

শুক্রবার বিকেল এমন করে কেটে গেল। তাসীন তেমন সাইকেল চালাতে পারে না। মানে ঢাকায় বাসার বাহিরে সাইকেল নিয়ে বেরই হয়নি। কিন্তু তামীম ঢাকায় সাইকেল চালানোতে অভ্যস্ত, ছাব্বিশ ইঞ্চি সাইকেল কিনছে তামীম যেটা তাসীন চালাতে পারে না মাটি নাগাল পায় না বলে। আর সেটাই তামীম স্বাচ্ছন্দ্যে চালায় সারাদিন। ঢাকার রাস্তায় অলিগলিতে ঘুরে। তারে নিয়ে সারাক্ষণই ভয় কাজ করে। একটু বেশীই সাহসী ভাব দেখায়। আমরা তাকে দিতে চাই না এতটা স্বাধীনতা। তাও চুপি চুপি বের হয়ে যায় যখন অফিসে থাকি।

যেখানে তাসীন সাইকেল চালাতে অভ্যস্ত না বেশী সেখানে সে বাড়ীতে গিয়ে দেবরের ছেলের সাইকেল নিয়ে মাটির রাস্তায় গেল চালাতে। অনেকক্ষণ না আসাতে তাসীনের বাপ বলতেছে কেন এতক্ষণ যাবত আসতেছে না তাসীন কী হলো কে জানে! তার কথায় আমিও টেনশনে পড়ে গেলাম। তখন আরেকটা সাইকেলে তামীমকে পাঠালো দেখে এসো ভাইয়া কেন আসতেছে না। তামীম গেল সেও আর আর আসে না। আমরা আগালাম হাঁটতে হাঁটতে, হঠাৎ দেখি অচেনা এক লোক (গ্রামেরই) তাসীনকে ধরে ধরে আনতেছে, আমার তো হুশ নাই দৌঁড়ায়ে যাই তার কাছে, সারা গায়ে ধুলোয় মাখামাখি, ডান হাত নাড়াতে পারছে না। পরমুহূর্তেই হাতের বাহুতে তীব্র ব্যথা, চিল্লায়ে কান্না করতেছে ছেলেটা। ভয়ে আমাদের গলা শুকিয়ে তখন। তাদের গ্রামে ডাক্তার হাসপাতাল এত কিছু নেই। গ্রামের ফার্মেসী থেকে ব্যথার ট্যাবলেট এনে খাওয়ানো হলো অনেকক্ষণ পর ব্যথা কমলো। আমরা ময়মনসিংহ রওয়ানা হলাম হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।

বিকেলে ময়মনসিংহ সদর হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়ে এক্সরে করানোর পর দেখা গেল ডান হাতের বাহুর উপরে যে জোড়া সেটা মিসপ্লেইসড হয়ে গেছে সামান্য। এইদিনই রাতের ট্রেনে করে ঢাকা চলে আসলাম।

পরিশেষে এটাই বলতে চাই, কত পরিকল্পনাই আমরা করি কিন্তু আল্লাহ না চাইলে তার একটাও সুফল হয় না, আলোর মুখ দেখতে পারে না। আমরা এক শুক্রবারে গিয়েছি আরেক শুক্রবারে ফেরত আসবো ঢাকায় কথা ছিল তেমনই । কিন্তু সেখানে আমাদের রিযিক দুপুর পর্যন্তই, এর এদিকও না সেদিকও না, আমরা হাজার চাইলেও হবে না। কারণ সেখানে আমাদের রিযিক এতটুকুই মহান আল্লাহ্ তাআলা লিখে রেখেছেন। তাসীনের জন্য দোয়ার দরখাস্ত রইলো। আগামী দশ তারিখে তার পরীক্ষা। আল্লাহ যেন তাকে সুস্থ করে দেন।



অঃটঃ দৃষ্টি আকর্ষণঃ মরুভূমির জলদস্যু ভাই....... ইমগোরে কী কোনো সমস্যা ছবি আপলোডানো যাচ্ছে না?
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০২২ বিকাল ৪:০৪
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×