somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক হালি এক্সরসিজম মুভি

১৪ ই মার্চ, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক্সরসিজম মুভিকে হরর মুভি বলতে আমার একটু আপত্তি আছে। এক্সরসিজম সিনেমাগুলো মানুষের বিশ্বাস নিয়ে খেলা করে। মানুষের উপর খারাপ কিছু প্রভাব বিস্তার করে বা করতে পারে এবং তা অন্য কিছু মানুষ তাদের আধ্যাত্মিক ক্ষমতা দ্বারা দূর করতে পারেন - এটা মানুষের চিরন্তন বিশ্বাস। একে টলানো সম্ভব কিন্তু উপড়ে ফেলা সম্ভব না। তাছাড়া, এর ব্যাখ্যায় বিজ্ঞান সবসময় সফলতা অর্জন করতে পারে নি, ফলে বিজ্ঞানকেই একমাত্র গ্রহণযোগ্য হিসেবে গ্রহন করা হয়ে উঠে না। সবচে' বড় কথা হলো, বিশ্বাস কোন বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে তৈরী হয় না, বিশ্বাস বিশ্বাসই, বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা নয়।

একটা এক্সরসিজম কালেকশন থেকে চারটি মুভি দেখলাম, সেগুলো নিয়েই এই পোস্ট।

The Exorcist

আইএমডিবি: http://www.imdb.com/title/tt0070047/

১২ বছরের ছোট্ট বালিকা রিগান এর বাসায়, বিশেষত তার রুমে কিছু একটা উপদ্রব শুরু করেছে।তার বিছানাকে কাপিয়ে দেয়, রিগানের আচরনেও কিছুটা পরিবর্তন দেখা যেতে থাকে, মাঝে মাঝে পুরুষের কণ্ঠস্বর, গোঙ্গানী শোনা যায়। ডাক্তাররা বয়:সন্ধি এবং ব্রেইনের সমস্যা মনে করে নানান পরীক্ষা করে কিন্তু ফলাফল শূন্য। এক্সরসিজমের জন্য আসেন ফাদার ডেমিয়েন কারাস, যিনি নিজেই কিছুটা বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলায় আছেন। জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিস্ট শুরু করেন এক্সরসিজম - ভূত তাড়ানোর কাজ। একা সম্ভব ছিল না, তাই অভিজ্ঞ লোক ফাদার মেরিন কে নিয়ে আসেন।

১৯৭৩ সালে নির্মিত এই সিনেমাটা একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এবং উপন্যাসটি একটি বাস্তব ঘটনার উপর ভিত্তি করে রচিত। পরিচালক উইলিয়াম ফ্রাইডকিন। এযুগের সিনেমার মতো দ্য এক্সরসিস্টে গ্রাফিক্স আর স্পেশাল ইফেক্টে কাজের বিন্দুমাত্র নেই। সাউন্ড আর অভিনয় - এর মাধ্যমেই সিনেমাটা শতকের সেরা হরর মুভিগুলোর তালিকায় বেশ উল্লেখযোগ্য অবস্থান দখল করে আছে। দুটো শাখায় অস্কার পেলেও সেরা চলচ্চিত্রের অস্কার জয় করা সম্ভব হয় নি কিন্তু উপার্জিত অর্থের পরিমানটা কম নয় মোটেও।সর্বমোট ৪০১,৪০০, ০০০ ডলার।


এই সিনেমার ব্যবসা সাফল্যের পরে বেশ কিছু সিক্যুয়েল এবং প্রিকুয়েল নির্মিত হয়েছে। তবে কোনটাই এতটা সাফল্য অর্জন করতে পারে নি, না অর্থে, না দর্শকপ্রিয়তায়।

দ্য এক্সরসিস্ট উপন্যাসের বেশ কিছু অনুবাদ দেশে পা্ওয়া যায়। সেবা প্রকাশনীর অনুবাদের তুলনায় হুমায়ূন আহমেদের অনুবাদটি চমৎকার।
মাস্ট সি সিনেমা।

Exorcist II: The Heretic


আইএমডিবি: http://www.imdb.com/title/tt0076009/

দ্য এক্সরসিস্টের বিশাল সাফল্যের পরে ১৯৭৭ সালে দ্য এক্সরসিস্ট টু: দ্য হেরেটিক নির্মান করা হয়, অবশ্য পরিচালক পাল্টে গেছেন এখানে যদিও প্রথম পর্বের রিগ্যান চরিত্রে রূপদানকারী লিন্ডা ব্লেয়ার বয়সে কিছুটা বেড়ে গিয়ে একই চরিত্রে অভিনয় করেন।

প্রথম পর্বের সাথে মিল রেখে এ পর্বে ফাদার মেরিনের হত্যা এবং অন্যান্য বিষয়ে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয় ফিলিপ লেমন্ট নামের এক প্রিস্টের উপরে। তিনি যোগাযোগ করেন রিগ্যানের সাথে যে নিয়মিত ভাবে সাইক্রিয়াটিস্ট ড: জেন টাস্কিনের তত্ত্বাবধানে চিকিৱসাধীন। বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে এখন দুজন মানুষ একই ব্রেনওয়েভে সংযুক্ত হতে পারে এবং একজনের চিন্তাভাবনা অন্যজন বুঝতে পারে। রিগ্যানের মাধ্যমেই প্রিস্ট লেমন্ট চেষ্টা করে যান পাজুজু নামের শয়তানের সাথে ফাদার মেরিনের যোগাযোগ উদ্ধারের কাজে।

ছবিটা কি পরিমান ব্যর্থ হয়েছে তার একটা নমুনা পাওয়া যায় আইএমডিবি রেটিং দেখে। পরিচালক জন বুরম্যান এক্সরসিস্ট প্রথম পর্বকে ছাপিয়ে যাওয়ার মতো কিছুই করতে পারেন নি।

The Exorcism of Emily Rose


আইএমডিবি: http://www.imdb.com/title/tt0404032/

এমিলি রোজ নামের এক ১৯ বছর বয়সী মেয়েকে একটি নয়, ছয় ছয়টি ডেমন আক্রমন করে, তার মধ্যে বাসা বাঁধে, এদের মধ্যে একজন লুসিফার নিজে। ডাক্তারী চিকিৎসা শুরু হয়েছিল কিন্তু তাতে প্রভাব কাটেনি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিজ বাড়িতে চলে আসে এমিলি আর এক্সরসিজম করার দায়িত্ব নেন ফাদার রিচার্ড মুর। প্রথমবার এক্সরসিজমে ব্যর্থ হন ফাদার। দ্বিতীয়বার করার সুযোগ পান নি তার আগেই ডেমনরা এমিলিকে হত্যা করে। পুলিশ ধরে নিয়ে যায় ফাদার মুরকে। কারণ তার প্ররোচনাই এমিলিকে মেডিকেশন থেকে দূরে রেখেছে যা তাকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে দিয়েছে। ডেমনের আক্রমন নয় বরং সাইকিয়াট্রিক এপিলেপ্সিতে ভুগছিল এমিলি আর তাই ফাদার মুর হত্যাকারী - এমন দাবীতে তার বিচার শুরু হয়। ফাদার মুরের পক্ষে তরুন উদীয়মান আইনজীবি এরিন ব্রুনার।ফাদার মুর এক শর্তেই আইনজীবিকে সহায়তা করবেন যদি তিনি তাকে সবার সামনে এমিলি রোজের কি ঘটেছিল তা বর্ননা করার সুযোগ করে দেন। বিজ্ঞান আর বিশ্বাস - এই দ্বন্দ্বে পরিপূর্ন একটি হরর কোর্টরুম ড্রামা দ্য এক্সরসিজম অব এমিলি রোজ।

২০০৫ এ মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমার পরিচালক স্কট ডেরিকসন। এই সিনেমাটিও সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। সিনেমাটা যতটা হরর তারচে' অনেক বেশী কোর্টরুম ড্রামা। ফ্লাশব্যাকের মাধ্যমে সিনেমাটার কাহিনী বর্নিত। এমিলি রোজ চরিত্রে জেনিফার কার্পেন্টার অনবদ্য অভিনয় করেছেন। সিনেমাটি দর্শকপ্রিয়, ক্রিটিকদর সেরা তালিকায়্ও এর অবস্থান দেখা যায়। দেখলে ঠকবেন না আশা করি।

The Last Exorcism


http://www.imdb.com/title/tt1320244/

রেভারেন্ড কটন মার্কাস প্রোডিউসার ডিরেক্টর আইরিস এবং ক্যামেরাম্যান ড্যানিয়েলের সাথে মিলে একটি ডকুমন্টোরীর আয়োজন করেন - উদ্দেশ্য এক্সরসিজম যে ভা্ওতাবাজী সেটা সবার সামনে তুলে ধরা, যদিও তিনি নিজেই এক্সরসিজম করেন।
আবালাম নামের এক শক্তিশালী ডেমন একজন কৃষকের মেয়ে নেল-র মধ্যে বাসা বেধেছে যা এক্সরসিজমের মাধ্যমে দূর করতে হবে - এরকম আহবানে ডকুমেন্টারী টিম নিয়ে কান্ট্রিসাইডে গেলেন কটন মার্কাস। নেল এম্নিতে স্বাভাবিক মেয়ে, কিন্তু ঘুমের মধ্যে সে যা করে তা বেশ ভয়ানক, রক্তারক্তি কান্ড। রেভারেন্ড কটন মার্কাস একটি লোকদেখানো এক্সরসিজম করে বেশ টাকা পয়সা কামিয়ে বাড়ি ফেরার সময় একটি মোটেলে রাত কাটান, কিন্তু অযাচিতভাবে গভীর রাতে সেখানে হাজির হয় নেল। ডেমনের আক্রমন নয় বরং শারীরিক সমস্যা - এমনটা প্রমানের জন্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে পরীক্ষা করার পরে জানা গেল, নেল প্রেগনেন্ট। তার বাবার বিশ্বাস ডেমনের সন্তান নেল এর গর্ভে, আরেকটা এক্সরসিজম করতে বাধ্য করলেন তিনি ফাদার কটনকে। এক্সরসিজমকে বানোয়াট প্রমাণ করতে এসে রেভারেন্ড দেখলেন তিনি নিজেও ডেমনের শিকারে পরিণত হতে যাচ্ছেন, জানটা খোয়াতে হবে হয়তো অচিরেই। এই হুমকী থেকে বাদ পড়েনি আইরিস আর ড্যানিয়েল নিজেও।

২০১০ সালেই মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমাটি। আইএমডিবি রেটিং যদিও বেশ কম এবং হতাশাজনক, আমার কাছে বেশ ভালোই লেগেছে। কারণটি আর কিছুই নয় - গল্প বলার ঢং। পুরো সিনেমাটিই ডকুমেন্টারী টিমের ড্যানিয়েলের ক্যামেরায় ধারণকৃত। ডকুমেন্টারীর ফ্লেভার পুরো সিনেমাতেই। পরিচালক
ড্যানিয়েল স্ট্যাম খুব পরিচিত কেউ নন, এটা তার দ্বিতীয় পরিচালনা। নেল চরিত্রে অ্যাশলে বেল্ও তেমন পরিচিত নন, তবে ডেমনের আক্রমনে শারীরিক পরিবর্তনের কাজটি বেশ দারুন করেছেন।
দেখা যেতে পারে, খুব একটা ঠকবেন না হয়তো।

অন্যান্য পোস্টস

দারাশিকো ব্লগ ফ্যানপেজ
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:০৫
২৫টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×