আমার দীর্ঘদিনের সাথী ছোটভাই দুর্ধর্ষ শোয়াইব সৈনিক অবশেষে সৈনিক জীবন ত্যাগ করে পারিবারিক জীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। এজন্য অবশ্য তার প্রস্তুতিও ব্যাপক। প্রথমে সে নামের শেষ থেকে 'সৈনিক' ছাটাই করেছে। তারপর চেহারায় নিরীহ জেন্টলম্যান ছাপ বসানোর জন্য কালো ফ্রেমের চশমা পড়া শুরু করেছে এবং সর্বশেষ, রিজিকের উৎস পালটে নিয়েছে। খোদা তায়ালা তার এই স্বেচ্ছা পরিবর্তনে সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং পারিবারিক জীবন শুরু করার জন্য একটি চমৎকার এবং উপযুক্ত তরুণীকে শোয়াইবের রিজিকে যুক্ত করার জন্য সন্ধান দিয়েছেন। তাকে নিয়ে আসার জন্যই সদলবলে যেতে হবে রাজশাহীতে।
বিয়ে শুক্রবার দুপুরে। ভোরবেলায় ঢাকা থেকে আত্মীয় স্বজন আর অল্প কিছু বন্ধুকে সাথে নিয়ে দুই বা তিনটে মাইক্রোবাসে চড়ে রাজশাহীতে পৌঁছানো এবং বিবাহ-সংক্রান্ত সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে রাতের মধ্যে ঢাকায় ফিরে আসা - এই হলো ওদের পরিকল্পনা। আমাকে থাকতে হবে বরযাত্রী হিসেবে। বরযাত্রায় আমার আপত্তি নেই, তবে আমার পরিকল্পনা একটু ভিন্নরকম। দুই চারদিন আগে একদিন ভোরবেলায় রাজশাহীতে নামবো, সাথে থাকবে পরিবার। শুক্রবারের আগের কয়েকদিন বেড়াবো কোন তাড়াহুড়া না করে, শোয়াইবের বিয়েতে যোগ দিবো এবং সেদিন রাতেই ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবো।
পরিকল্পনা অনুযায়ী সোমবার রাতে ঢাকার কল্যাণপুর থেকে যাত্রা করলাম আমরা।দীর্ঘদিন পরে পরিবার নিয়ে বেড়াতে যাচ্ছি। বিষয়টা চ্যালেঞ্জিং – কারণ দলে ছোট বাচ্চা আছে। তার যত্ন-আত্তির জন্য সবসময় খেয়াল রাখতে হয়। মূলত এ কারণেই প্রয়োজনের চেয়ে বেশী সময় বরাদ্দ রেখেছি। যে সকল দর্শনীয় স্থানের তালিকা করেছি সেগুলো সব দেখতেই হবে এমন সংকল্পও নেই।
রাজশাহীতে নামলাম ফজরের ওয়াক্তে। সরকারী একটি অফিসের গেস্ট হাউজে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাজির হয়ে পরিচয় দিলেই চলবে বলে জানতাম। কিন্তু তেমনটা হলো না। অফিসের গেস্ট রুমে বসে থাকতে হলো ঘন্টাখানেক। সিকিউরিটির কাছে তথ্য ছিল আরও পরে পৌঁছানোর। ফলে তার কাছে চাবী ছিল না। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাসা থেকে চাবী নিয়ে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হলো।
গেস্ট হাউজটা বেশ বড়। ভেতরে বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের জন্য বিভিন্ন আকৃতির পাঁচটি কক্ষ ছাড়াও রয়েছে বিশাল হলরুম, কিচেন। এটাচড টয়লেট ছাড়াও কমন বাথরুম, টয়লেট রয়েছে। আছে বারান্দা। সবচেয়ে আনন্দদায়ক ব্যাপার হল - এই বিশাল গেস্ট হাউজে কেবল আমরাই অতিথি। শুধু রুমে বসে থাকতে হবে এমন নয়, বাহিরের সোফায় বসা যাবে, বাচ্চাকে কোলে নিয়ে হেঁটে-হেঁটে ঘুম পাড়ানো যাবে, চাই-কি একটু দৌড়াদৌড়িও করে নেয়া যাবে। কিচেন ব্যবহার করে কারও বিরক্তি উৎপাদন করার সুযোগও থাকলো না।
জায়গা পাওয়া গিয়েছে, এবার প্রথম কাজ হলো রাতের ঘুমের ঘাটতি পূরণ করা। লেপ-কম্বল মুড়ি দিয়ে দিলাম ঘুম। ঘুম এত ভালো হলো যে উঠে প্রস্তুত হয়ে হোটেলে গিয়ে দেখি সকালের নাস্তা ফুড়িয়ে গেছে। হয় সিঙ্গারা গোছের কিছু দিয়ে নাস্তা করতে হবে, নাহয় দুপুরের ভাতের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। উপায় ছিল না, আমরা পরেরটিই বেছে নিলাম। মাস্টার শেফ নামের এক রেস্টুরেন্টে বসে ভাতের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।
রাজশাহী-নাটোরে (২য় পর্ব)
ই-বুক আকারে সকল পর্ব একসাথে
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:২৮