somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্রমণ কাহিনী: রাজশাহী-নাটোরে (২য় পর্ব)

২৩ শে আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজশাহী-নাটোরে (১ম পর্ব)

শহীদ এ এইচ এম কামরুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা

যেদিন রাজশাহীতে পৌঁছলাম সেদিন থেকে শুক্রবার পর্যন্ত রাজশাহীতে বৃষ্টির দেখা পাইনি। অথচ এর আগের কয়েকদিন 'হালকা থেকে মাঝারী অথবা ভারী বৃষ্টিপাত' হয়েছে। তার উপর আমাদের প্রতিবেশী বন্ধু দেশ ফারাক্কা বাঁধের অনেকগুলো স্লুইসগেট খুলে তাদের অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দিয়েছে। ফলে পদ্মায় পানি বেড়েছে, বিপদসীমাও অতিক্রম করেছে কিছু জায়গায়। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনার কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে এবং বন্যার আশংকা করা হচ্ছে। রাজশাহী ভ্রমণের সময় আমরা এই পানি বৃদ্ধির কিছু চিত্র দেখেছি বটে,সেটা রাজশাহী শহরে নয়। বিগত কয়েকদিনের বৃষ্টির ফলাফল দেখা গেল শহীদ এ এইচ এম কামরুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায়।



চিড়িয়াখানার প্রবেশপথ বেশ চমৎকার। বাঁধানো রাস্তা, বাহারী গেট, ছোট্ট ঘরে টিকেট কাউন্টার। ভেতরে বেশ প্রশস্ত বাঁধানো জায়গা। কিন্তু তার পুরোটাই পানিতে ডুবে আছে। অনেক আগ্রহ নিয়ে চিড়িয়াখানায় এসেছি, ভেতরে না ঢুকেই ফেরত যেতে হলে ব্যাপারটা বেশ খারাপ হবে। টিকেট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা মানুষটির সাথে কথা বলে জানা গেল - শুধুমাত্র এই চত্ত্বরটুকুই পানিতে ডুবে আছে। বাকী জায়গায় কাদা থাকলেও পানি নেই।

টিকেট কেটে, জুতা-মোজা হাতে নিয়ে, প্যান্ট গুটিয়ে প্রায় হাঁটুপানিতে নেমে বুঝলাম - বেশ ঝুঁকি নিয়েছি। টাইলস করা মেঝে অত্যন্ত পিচ্ছিল হয়ে আছে। যে কোন সময় পা হড়কালে কেবল ব্যাথাই পেতে হবে না, নোংরা কাদা-পানিতে মাখামাখি হতে হবে। বাচ্চাকে কোলে নিয়ে সবাই হাত ধরাধরি করে অত্যন্ত সতর্কভাবে পা টিপে টিপে প্রায় ষাট ফিট দুরত্ব পার হয়ে তারপর মূল অংশে পৌঁছলাম। নিজেকে কলম্বাস মনে হচ্ছিল।

আমার রাজশাহী ভ্রমণ এবার প্রথম নয়। প্রথম এসেছিলাম ২০০৯ সালে। তখন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের প্রযোজকের সহকারী ছিলাম। রাজশাহীর টেনিস ক্লাবে একটি ইন্টারন্যাশনাল টেনিস টুর্নামেন্ট কাভার করতে এসেছিলাম। থেকেছি পর্যটন কর্পোরেশনের মোটেলে। মোটেল, টেনিস ক্লাব আর চিড়িয়াখানা পায়ে হাঁটা দূরত্বে। চিড়িয়াখানাও তখন বেড়িয়ে গিয়েছিলাম।

যে বিশাল জায়গা জুড়ে আজকের কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা তা এককালে ছিল রেসকোর্স ময়দান। ব্রিটিশ আমলে এবং সম্ভবত পাকিস্তান আমলেও এখানে ঘোড়দৌড় হতো। পরে রেস বন্ধ হলে এই বাগান অব্যবহৃত অবস্থায় ছিল। স্বাধীনতার পরে একে কেন্দ্রীয় উদ্যান হিসেবে কিছু উন্নতি সাধন করা হয়। আশির দশকে প্রথমে কয়েকটা ঘড়িয়ালের বাচ্চা ছাড়ার মাধ্যমে চিড়িয়াখানার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। বর্তমানে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এর তত্ত্বাবধায়ক।

দশ বছরের ব্যবধানে চিড়িয়াখানার বৈচিত্র্য বাড়েনি, অবকাঠামোগত কিছু উন্নয়ন হয়েছে। তখন সবচেয়ে অবাক হয়েছিলাম খাঁচায় আটক একটি গাধাকে দেখে, কারণ ঢাকা জাতীয় চিড়িয়াখানায়ও গাধা দেখিনি। এবার অবশ্য গাধা একটা নেই, অনেকগুলো হয়েছে। এখন অবশ্য ঢাকার চিড়িয়াখানাতেও গাধা আছে, কিছুদিন আগে দেখে এসেছি। বিভিন্ন ধরণের হাঁস, পাখি আর হরিণ-বানর-বেবুন-অজগর ছাড়া উল্লেখযোগ্য আর কিছুই নেই। বাঘ-সিংহ-ভালুক ছাড়া চিড়িয়াখানা ঠিক জমে না। জ্যান্ত না হলেও একটি জিরাফ, আর একটি গরিলা দেখা গেলো। তারপর হঠাৎ করেই চিড়িয়াখানাটা শেষ হয়ে গেলো।

দেখার কিছু না থাকলেও চিড়িয়াখানায় লোকজন আসছে। বেশিরভাগই তরুণ-তরুণী। অল্প কিছু বাচ্চা-কাচ্চাও আছে। তারা কেন এখানে আসে তা বোঝা গেল চিড়িয়াখানার শেষাংশে পৌঁছানোর পর।

একটি মিনি শিশুপার্ক আছে এখানে। দোলনা, ট্রেন, ঝুলন্ত নৌকা সহ বেশ কিছু রাইড রয়েছে। আছে পানিতে ঘূর্ণায়মান হাঁস আকৃতির নৌকা। পানিতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে কিছু প্লাস্টিকের বল। হাঁসের পিঠে বসে ঘুরতে ঘুরতে সেই বলগুলো ধরতে পারার মধ্যে এক ধরণের সাফল্য আছে। প্রত্যেক রাইডের জন্য আলাদা আলাদা টিকেট। তা হোক, বিনোদনের জন্য এসেছি, সেটা তো হলো।



চিড়িয়াখানা আর মিনি শিশুপার্ক ছাড়া আর আছে ফাঁকা মাঠ। বড় একটি লেক রয়েছে। লেকের মাঝখানে আছে জলপরী ফোয়ারা। আছে একটি ছোট্ট সেতু। চারদিকে বসার বেঞ্চি। প্রেমিক-প্রেমিকারা এখানে বসে সম্পর্ক গড়ে। কেউ কেউ ভাঙ্গে।

সৌভাগ্যবশত বের হবার সময় সেই পানি-কাদা মাড়াতে হলো না। কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় ভিন্ন একটি রাস্তা দিয়ে প্রবেশ ও বাহিরের উপায় করেছে। প্রথম থেকেই এই পথ চালু থাকলে কাদা-পানি এড়ানো যেতো। সেক্ষেত্রে প্রথম শিশুপার্ক, তারপর চিড়িয়াখানা বেড়াতে হতো। শিশুপার্ক পেরিয়ে চিড়িয়াখানা উপভোগ্য হতো কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ আছে।

আমাদের এবারের গন্তব্য বরেন্দ্র গবেষনা জাদুঘর।

বরেন্দ্র গবেষনা জাদুঘর

বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরাতন জাদুঘরটি যে রাজশাহীতে অবস্থিত এই খবর আমার রাজশাহী ভ্রমণের সময়ও অজানা ছিল। ঠিক হলো না, বরং বলা উচিত রাজশাহীতে যে একটি জাদুঘর রয়েছে সেটিই এবার রাজশাহী ভ্রমণের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে জেনেছি। জাদুঘর এমনিতেই আমার বেশ পছন্দের স্থান, সুতরাং সবচেয়ে পুরাতন জাদুঘরে যেতেই হবে। কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা থেকে যখন অটোতে চড়ে বরেন্দ্র গবেষনা জাদুঘরে উপস্থিত হলাম, তখন দুপুর আড়াইটা বেজে গেছে।

বরেন্দ্র জাদুঘর একদম শহরের মধ্যে অবস্থিত। পরের কয়েকদিনে বার কয়েক এর পাশ দিয়ে যেতে হয়েছে। বোঝা যায়, রাজশাহী শহরের পুরাতন এলাকাগুলোর মধ্যে এটি একটি।



ব্যক্তিগত উদ্যোগ থেকে এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ১৯১৩ সালে। মূল ভবনটি একতলা। পরবর্তীতে পাশে আরও ভবন তৈরী করা হয়েছে। সেখানে রয়েছে অফিস ও লাইব্রেরি। তবে সাধারণ দর্শকদের জন্য কেবল মূল দালানের অভ্যন্তরে জাদুঘর অংশটিই কেবল উন্মুক্ত। সেখানে রয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন সময়ের নিদর্শন। এদের মধ্যে সনাতন ধর্মীয় নানা রকম দেব-দেবীর মূর্তি, বুদ্ধমূর্তি, ব্যবহার্য জিনিসপত্র ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এসব নিদর্শনের মধ্যে কিছু রয়েছে যা হাজার বছরেরও পুরানো।

বরেন্দ্র গবেষনা জাদুঘর বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন। এর প্রতিষ্ঠার ইতিহাস এবং দর্শনীয় উপকরণের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা বাংলাপিডিয়ার ওয়েবসাইটে রয়েছে। তথ্যগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিধায় কিছুটা সম্পাদনা করে এখানে তুলে ধরলাম।

নাটোরেরর দিঘাপাতিয়া রাজপরিবারের জমিদার শরৎকুমার রায় এবং তাঁর সহযোগী আইনজীবী অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক রমাপ্রসাদ চন্দ প্রমুখ প্রত্ন-অনুরাগী এই প্রতিষ্ঠান দুটি গড়ে তোলার জন্য তাঁরা তাঁদের সময় ও শ্রম ব্যয় করেন। তাঁদের সারা জীবনের প্রয়াস ছিল ওই সময়ের টিকে থাকা অমূল্য প্রত্নসম্পদ (বাংলার, বিশেষ করে বরেন্দ্রীর) জনসম্মুখে প্রকাশ করা।

অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আরও কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে প্রত্নস্থল আবিষ্কারের লক্ষ্যে শরৎকুমার ১৯১০ সালের এপ্রিলে মান্দইল থেকে চন্ডীর কয়েকটি প্রমাণসাইজ মূর্তিসহ প্রায় ৩২টি ভাস্কর্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হন। রাজশাহীতে ফিরে আসার পর শহরের গণ্যমান্য নাগরিকগণ শরৎকুমার ও তাঁর সহকর্মীদের সংবর্ধনা জ্ঞাপন করেন এবং রাজশাহীতে প্রত্নসামগ্রী সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সুতরাং প্রয়োজনের তাগিদে রাজশাহী জাদুঘর (পরবর্তীকালে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর) গড়ে ওঠে এবং প্রত্নসামগ্রী সংরক্ষণের জন্য শরৎকুমার মাসে ২০০ টাকা প্রদানের ব্যবস্থা করেন। ১৯১১ সালে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে সংগৃহীত সকল দুষ্প্রাপ্য ও অনন্য নমুনা কলকাতার ভারতীয় জাতীয় জাদুঘর দাবি করলে বরেন্দ্র জাদুঘরের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার উপক্রম হয়। বাংলার তৎকালীন গভর্নর লর্ড কারমাইকেল ১৯১২ সালে রাজশাহীতে এসে সোসাইটির সংগ্রহগুলি দেখে মুগ্ধ হন। এর অল্পকাল পরেই বাংলার গভর্নর ১৯১৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারির ১১ নং প্রজ্ঞাপন দ্বারা স্থানীয় জাদুঘরগুলির সংগঠকদের প্রত্নসম্পদ সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং সাধারণ্যে প্রদর্শনের অনুমতি প্রদান করেন।

শরৎ কুমার নিজ ব্যয়ে তাঁর বড় ভাই দিঘাপতিয়ার রাজা প্রমদানাথ রায়ের দানকৃত জমির উপর জাদুঘরের জন্য ভবন নির্মাণ করেন। ১৯১৬ সালের ১৩ নভেম্বর লর্ড কারমাইকেল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

১৯৩০ সালে অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় এবং ১৯৪৫ সালে শরৎ কুমার রায়ের মৃত্যুর ফলে জাদুঘরের অপূরণীয় ক্ষতি হয়। ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগ জাদুঘরের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তোলে। ১৯৪৯ সালে জাদুঘরটিকে মেডিকেল স্কুলে রূপান্তর করা হয়। ১৯৬১ সাল পর্যন্ত জাদুঘরের উত্তরাংশ স্কুলের দখলে ছিল।

দেশ বিভাগের পর থেকে প্রায় ১৯ বছর জাদুঘরটি প্রায় অচল অবস্থায় পড়ে ছিল। ১৯৬১ সালে মেডিকেল স্কুলটি জাদুঘরের উত্তরাংশ জাদুঘরকে প্রত্যর্পণ করলে কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট থেকে প্রাপ্ত ত্রিশ হাজার টাকা অনুদানের অর্থ দিয়ে ১৯৬১ সালে বর্তমান লাইব্রেরি ভবনটি নির্মিত হয়। কিউরেটরের বাসভবন এবং অন্যান্য সম্পত্তির ক্ষতিপূরণের জন্য জাদুঘরের দেয়াল ঘেরা চত্বরে নির্মিত স্কুলের এনাটমি জাদুঘর ভবনটি বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরকে দেওয়া হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী জেলা প্রশাসন জাদুঘরটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট অর্পণ করার ব্যাপারে প্রাদেশিক সরকারের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। ১৯৬৪ সালের ১০ অক্টোবর এটি আইন সম্মত উপায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর পরিচালনার সকল আর্থিক দায়িত্ব গ্রহণ করে।

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের সংগ্রহের মধ্যে রয়েছে পাথর ও ধাতুনির্মিত ভাস্কর্য, খোদিত লিপি, মুদ্রা, মৃৎপাত্র ও পোড়ামাটির ফলক, অস্ত্রশস্ত্র, আরবি ও ফারসি দলিলপত্র, চিত্র, বইপত্র ও সাময়িকী এবং সংস্কৃত ও বাংলা পান্ডুলিপিসমূহ।

১নং গ্যালারিতে সাজানো রয়েছে সিন্ধু সভ্যতার (খ্রি.পূ ২৫০০) প্রত্নসম্পদ, বাংলাদেশের পাহাড়পুরে (৮ম-১২শ শতক) উৎখননকৃত প্রত্নসম্পদ, ফারসি ফরমান ও বাংলা দলিলপত্র, পুরানো বাংলা হরফে সংস্কৃত লিপিসমূহ, চকচকে টালিসমূহ, ইসলামি রীতির ধাতব তৈজসপত্র, হাতে লেখা কুরআন শরীফ, বাংলা ও সংস্কৃত পান্ডুলিপি, মুগল চিত্রকলা, পাথর ও ব্রোঞ্জ নির্মিত বিভিন্ন ভাস্কর্য, বিহারের নালন্দা এবং ভারতের অন্যান্য স্থানে প্রাপ্ত প্রাচীন নিদর্শনাবলি। ২নং গ্যালারিতে রয়েছে বৌদ্ধ ও হিন্দু দেবদেবীর প্রস্তর মূর্তি এবং কাঠের আধুনিক ভাস্কর্যসমূহ। ৩নং গ্যালারিতে প্রদর্শিত হয় হিন্দু ভাস্কর্য: বেশ কয়েকটি সূর্য মূর্তি, শিব মূর্তি, গণেশ মূর্তি এবং বিষ্ণু মূর্তি। ৪নং গ্যালারিতে সাজানো আছে দুর্গা-গৌরী-উমা-পার্বতী, মাতৃকা ও চামুন্ডা মূর্তি। ৫নং গ্যালারিতে প্রদর্শিত হয় বুদ্ধ মূর্তি, বোধিসত্ত্ব, তারা, জৈন তীর্থঙ্কর এবং হিন্দুধর্মের গৌণ দেব-দেবীর মূর্তিসমূহ। ৬নং গ্যালারিতে সাজানো রয়েছে আরবি, ফারসি, সংস্কৃত এবং প্রাচীন বাংলা প্রস্তর লিপিসমূহ, মুসলিম যুগের খোদিত পাথর, মিহরাব, অলঙ্কৃত চৌকাঠ ও লিন্টেল এবং শেরশাহের আমলে নির্মিত দুটি কামান। বারান্দার উপরের সারিতে পাহাড়পুর থেকে প্রাপ্ত পোড়ামাটির ফলক সাজানো রয়েছে। নিচের সারিতে রয়েছে হিন্দু-বৌদ্ধ ভাস্কর্যরাজি। প্রাঙ্গণে সজ্জিত রয়েছে হিন্দু ও মুসলমান স্থাপত্যনিদর্শন খোদাইকৃত পাথর, পাথরের স্তম্ভ, শিবলিঙ্গ ইত্যাদি”।


সবচেয়ে পুরাতন এই জাদুঘরের বর্তমান অবস্থা মোটেও সুবিধাজনক নয়। অল্প যে কটা কক্ষ ঘুরে দেখা যায় সেগুলো শীতাতপনিয়ন্ত্রিত নয়, একতলা ভবন হওয়ায় ছাদের গরম টের পাওয়া যায়। জাদুঘরে এত বেশি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে যার স্থান সংকুলান হচ্ছে না। ফলে করিডোরে, খোলা আকাশের নীচে রেখে দেয়া হয়েছে প্রচুর নিদর্শন। নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে খুব শক্তিশালী মনে হয়নি। এই লেখাটি লিখতে গিয়ে বাংলানিউজের ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের একটি প্রতিবেদন চোখে পড়ল। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশিত জাদুঘরের পূর্ণাঙ্গ ইনভেন্টরি প্রতিবেদন মতে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৮৫টি প্রত্নসামগ্রীসহ প্রায় তিন হাজার দুর্লভ বস্তু হারিয়েছে জাদুঘর থেকে। জাদুঘরে নিবন্ধিত নানা ধরনের প্রত্নসামগ্রীর ১৮৫টির কোনো হদিস নেই। হারিয়ে যাওয়ায় প্রত্নসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে দু'টি ব্রোঞ্জ, দু'টি কপার, দু'টি লিনেন, একটি ব্রাশ, দু'টি সিলভার, একটি ক্রিস্টাল, ৪৭টি বিভিন্ন ধরনের পাথর, ১০১টি টেরাকোটা, ১৩টি কাগজ এবং দুটি প্রাণির চামড়া। এছাড়া পাঁচ হাজার ৯৭১টি নিবন্ধিত মুদ্রার মধ্যে ৩৩টি এবং ১৩ হাজার ৯৩৩টি গ্রন্থের মধ্যে ৮৫টি পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া যাচ্ছে না ১৩ হাজার ৫৭৬টি প্রকাশনার (পুস্তক, পুস্তিকা, গ্রন্থ, জার্নাল ইত্যাদি) মধ্যে তিন হাজার ৫২টি”।

ছোট্ট জাদুঘর। তাই বেশি সময় লাগলো না দেখে শেষ করতে। জাদুঘরের চত্ত্বরটা বেশ চমৎকার এবং গোছানো। ফুলের বাগান রয়েছে, তাই দর্শনার্থীরা ফুলের সাথে ছবি তোলায় ব্যস্ত। আমরা অবশ্য তাদের মত ছবি তোলায় ব্যস্ত হতে পারলাম না। টয়লেটে প্রাকৃতিক কাজ সারা, হালকা নাস্তা করে নেয়া ইত্যাদি কাজে ব্যস্ত হতে হলো। আর আমি প্রস্তুতি নিলাম পরবর্তী গন্তব্য রেশম চাষ/কারখানা ভ্রমণের জন্য

রাজশাহী-নাটোরে (৩য় পর্ব)

ই-বুক আকারে সকল পর্ব একসাথে

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:২৭
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×