somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্রমণ কাহিনী: রাজশাহী-নাটোরে (৪র্থ পর্ব)

২৫ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রাজশাহী-নাটোরে (৩য় পর্ব)

বিদিরপুরে

পরিবার নিয়ে রাজশাহী ভ্রমণের উদ্দেশ্য কেবল শোয়াইবের বিয়ে, এমনটি নয়। রাজশাহীতে আমার স্ত্রীর দুজন ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর স্থায়ী আবাস, রাজশাহীতে গেলে তাদের সাথেও সাক্ষাতের সুযোগ পাওয়া যাবে - এই চিন্তাও আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলেছে।

বান্ধবীদের একজন গ্লোরিয়া। আমার স্ত্রীর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অন্তরঙ্গ বন্ধু। নানা গুণে গুণান্বিত এবং সংগ্রামী নারী। ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ার পরে তার মা-ই নানা প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়ে সন্তানদের বড় করেছেন, প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মায়ের সেই সংগ্রামী চরিত্র গ্লোরিয়ার মধ্যেও আছে। ঢাকায় থাকতে আমাদের বাসায় এসেছে বেশ কয়েকবার। একবার তার মা-কে নিয়েও এসেছিল। এখন একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরীর সুবাদে রাজশাহীতেই কর্মরত। সব কিছু মিলিয়ে পরিস্থিতি এমন যে, রাজশাহী গিয়ে গ্লোরিয়াদের বাসায় এক বেলা না বেড়ালে গুরুতর অন্যায় হয়ে যাবে।

কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা যে সপ্তাহে রাজশাহী পৌঁছলাম সেই সপ্তাহে এক বান্ধবী অফিসের ট্রেনিং এ ঢাকা আসলো, ফিরলো আমরা চলে আসার পর। তার অনুপস্থিতিতে বাসায় উপস্থিত হয়ে তার মাকে বিড়ম্বনায় ফেলার কোন ইচ্ছেই আমাদের ছিল না, কিন্তু গ্লোরিয়ার একের পর এক ফোনের পরে যখন আন্টি ফোন দেয়া শুরু করলেন, তখন আর না গিয়ে উপায় রইল না। নাটোর থেকে ফেরার সময় কিছু মিষ্টান্ন আর ফলমূল কিনে রাতে হাজির হলাম গ্লোরিয়াদের বাসায়।

গিয়ে দেখি এলাহী কান্ড! আন্টি একাই বিস্তর রান্না বান্না করেছেন। বললেন, রাজশাহীর হোটেলের খাবার কত ভালো তা জানা আছে। উনার বাসায় না উঠার জন্য খুব অনুযোগ করলেন। ভরপেট খাবার আর কথাবার্তায় চমৎকার দুটো ঘন্টা কাটিয়ে তারপর আমাদের আস্তানায় ফিরলাম।

আরেকদিন গেলাম লীনাদের বাসায়। লীনা আমার স্ত্রীর স্কুল জীবনের বান্ধবী। স্বামীর সাথে পাবনায় সংসার করেন। এখন রাজশাহীতে বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। থাকেন বিদিরপুরে।

লীনার বাসায় যেতে বেশ এক অভিজ্ঞতা হলো। বাসা কোথায় জিজ্ঞেস করলেই লীনা বলে - আপনার আস্তানা থেকে বের হয়ে অটোতে উঠে অমুক জায়গায় আসবেন। সেখান থেকে আবার অটোতে অথবা বাসে করে আসবেন অমুক জায়গায়। সেখান থেকে অমুক জায়গায় যাওয়ার পথেই আমার বাসা। যতই জিজ্ঞেস করি জায়গার নাম কি - ততই বলে এভাবে এভাবে আসতে হবে। একই ঘটনা গ্লোরিয়ার বাসায় যাওয়ার সময়ও ঘটেছিল। হয়তো রাজশাহীর নিয়ম এটাই।

যাহোক, লীনা যখন তাদের বাড়ির জায়গার নাম বলল, তখন গুগল ম্যাপে সার্চ করে দেখি, সেটা নাটোরের দিকে, প্রায় বিশ কিলো দূরে। এবার লীনা আরও নির্দিষ্ট করে ঠিকানা দিলো - গোদাগাড়ী উপাজেলার বিদিরপুর বারোমাইল। আমারও আর ঠিকানা খুঁজে পেতে অসুবিধা হলো না। মজার ব্যাপার হলো - অটোচালক জিজ্ঞেস করলো, কার বাড়িতে যাবো। অথচ আমরা লীনার বাবার নামও জানি না। লীনাকে ফোন দিয়ে বাবার নাম জানতে চাইলাম, লীনা উত্তর দিয়ে পালটা জানতে চাইল - বাবার নামের কি দরকার। বুঝিয়ে বলার পরে লীনা বলল, অটোচালককে বলতে 'অমুকের বাড়ি'। অটোচালক একবারেই চিনল এবং এক্কেবারে ঠিক বাড়ির দরজায় নামিয়ে দিল। বুঝলাম - এখানে সব বাড়িই অটোচালকদের চেনা।

বেশ আপ্যায়ন হলো। বাহারি পদের নাস্তা। মাছ-গরু-মুরগী-সবজি ইত্যাদি মিলিয়ে বিশাল আয়োজন। ফলমূল। গলা পর্যন্ত খেতে হলো। আবার উপহার! ভালোবাসায় ডুবে মরার অবস্থা আরকি!

লীনাদের বাড়ির রাস্তাটা বাঁধের মতো। ডানদিকে লীনাদের বাড়ি, বামদিকে এক মিনিট হাঁটা দূরত্বে পদ্মা নদী। সবাই যখন গল্পে ব্যস্ত আমি তখন দুইবার নদীর তীরে বেড়িয়ে এলাম।

নদীতে প্রচুর পানি। বড় বড় অনেক গাছের গোড়া পানিতে ডুবে আছে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টি আর খুলে দেয়া ফারাক্কা বাঁধের পানিতে ডুবে দিয়েছে এসব এলাকা। কিছু নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। নদীতে ছলাৎ ছলাৎ শব্দ। বাতাস আছে। ছায়ায় বসে থাকলে শান্তি লাগে বেশ।

শেষ বিকেলে লীনা আমাদেরকে ঘুরিয়ে দেখালো। নদী। ক্ষেত। ফল-ফলাদি। গেরস্থ বাড়ি। জানা গেল, এত কাছে নদী আসে না সাধারণত। বহুদূরেই থাকে। নদী পর্যন্ত এই বিশাল চরে চাষবাস হয় ধান, কলাইসহ বিভিন্ন ফসলের। এই জমির কোন সীমানা নেই। প্রত্যেকে তার বাড়ির সামনের জমি চাষ করে। নদী দূরে থাকলে জমির পরিমাণ বাড়ে। নদী কাছে এলে জমি কমে।

রাতে থেকে যাওয়ার জন্য বেশ জোরাজুরি করলো লীনারা। থেকে যেতে ইচ্ছেও করছিল। কিন্তু আমরা এসেছি রাজশাহী ঘুরে দেখার জন্য, এক বাড়িতে এত সময় কাটালে চলবে?

ফেরার পথে মেয়ে আমার বারবার প্রশ্ন করছিল - কেন আমরা চলে যাচ্ছি? কেন আমরা রাতে এখানে থাকবো না? উত্তর দিচ্ছিল ওর আম্মু, সেদিকে আমার মনযোগ ছিল না, আমার মন পড়ে থাকলো বিদিরপুরের নদীর তীরে।

সেই মন এখনও নদীর তীরে পড়ে আছে। হয়তো একারণেই আবারও যেতে হবে লীনাদের বাড়িতে।

পরবর্তী পর্ব - রাজশাহীর খাবার

ই-বুক আকারে সকল পর্ব একসাথে
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:২৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×