somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবিকা

০৫ ই এপ্রিল, ২০০৯ সকাল ১০:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ সকাল সকাল প্রচন্ড রোদ পড়েছে। মাত্র ৮ টা বাজে। তাতেই রোদের জন্য তাকানো যাচ্ছে না। রইস উদ্দীনের চোখ দুটো এমনিতেই ছোট। ছেলেবেলায় সবাই তাকে চাইনিজ বলে ক্ষ্যাপাতো। রোদেলা দিনে চোখদুটো এত ছোট হয়ে যায় যে মাঝে মাঝে সে ভাবে এখনতো তাকে ক্ষ্যাপানোর জন্য কোনো শব্দ খুঁজে পাওয়া যাবে না। হাতের খামটা মুখের সামনে ধরে হাঁটছে রইস। কিছুদূর এগোতেই তার চোখে পড়ল। বিশাল ভবনটা। নিচ থেকে উপরে একবার তাকাতেই অনেক সময় লেগে যায়। ছোট বেলায় একটু বড় বিল্ডিং দেখলেই গুনতে ইচ্ছে করত কয়তলা। কিন্ত এই ভবনটা গুনে শেষ করা রইসের পক্ষে সম্ভব না। ৫-৬ তলা বিল্ডিং হলেই প্যাঁচ লেগে যায়। আর এইটাতো বিশাল। একপা একপা করে রইস যতই এগুতে থাকে অর বুক ধড়ফড় বাড়তে থাকে। এত উঁচু। মাথা ঘুরতে থাকে রইসের।

আজ তার কাজের প্রথম দিন। রইসের চাচা অনেক দেন দরবার করে কাজটা জোগাড় করে দিয়েছে। কাজটা শুনে প্রথমে কিছুতেই করতে রাজি হয়নি রইস। কিন্ত কোনো উপায় ছিল না তার। এমনিতেই একটু চুপচাপ ধরনের সে। তার উপর বাবা মারা যাবার পর মেরুদন্ডটা আরো দুবর্ল হয়ে গেল। তাই চাচা এসে যখন গলা ভারী করে চাকরীর কথা বললো, না বলার মতন কোনো উপায় তার হাতে ছিল না।

“কিরে রইস পারবি না ?”

“জ্বী চাচা অবশ্যই পারবো। পারতে আমারে হবেই। নইলে চলবে কেমনে কন? ”

“শাবাস বেটা। এইতো চাই। তাইলে তুই সব গোছ গাছ কইরা নে। সামনের বুধবার যেতে হবে।”

চাচাকে ভয়ের কথাটা মুখ ফুটে বলা হয় নাই আরেকটা অজানা ভয়ে। একবার যদি চাচা ক্ষেপে যায় তাহলে অনেক সমস্যা হয়ে যাবে। এইটুকু বোঝার মতন বয়স রইসের হয়েছে। কিন্ত তারপরো চাইলেইতো আর ভয় দূর করা যায় না। নিচ থেকে দেখেই গলা শুকিয়ে আসছে। উপর থেকে একবার নিচে তাকালে না জানি কেমন লাগবে?

“কি ব্যাপার রইস মিয়া? আইজকা তোমার প্রত্থম দিন। আর আইজকাই তুমি দেরি কইরা আসলা? এমন করলেতো চাকরী টিকায় রাখতে পারবা না।”

কি বলবে ভেবে পায় না রইস। চুপ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। ভয়ে তার পা কাপঁছে। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না।

“কি হইল? দেরী কইরা আসছ। আর এখন দেহি নড় না জায়গা থেইকা। এইভাবে করলে চলবো কেমনে? আস, আমার পিছে পিছে আস।”

আগে কখনো লিফট দেখেনি রইস। লিফট বস্তটা কি এখনো ঠিক মতন বুঝতেই পারছে না। সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। রইসরা যাবে বিল্ডিং এর ছাদে। যেই বিল্ডিং এর নিচ থেকে উপর পযর্ন্ত তাকাতেই ঘাড় ব্যথা হয়ে যায় সেই বিল্ডিং এর ছাদ পযর্ন্ত হেঁটে উঠতে পায়ের কি দশা হবে কে জানে? অজানা আশংকা নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে রইস।

“কই রইস মিয়া। নাও শুরু কর। এইটা কোমরে বাইন্ধা নাও।”

জিনিষটা হাতে নিয়ে একবার উঁকি দিয়ে নিচের দিকে তাকালো সে। সারা শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠল যেন। নিচ থেকে বুঝাই যায়নি আসলে বিল্ডিংটা কতটা উচু। কাপূনি বাড়তে লাগলো।

“তুই মি এইটা পড়তে জান? নাকি পরাইয়া দেওন লাগবো?”

“এইটা কেমনে পরে আমি জানি না।”

“সেইটা আগে কইবা না। খালি খালি দেরি করাও। তোমারে নিয়া কেমেনে যে কাম করমু এটাই বুঝি না। আস এইদিকে আস। আমি পরাইয়া দিই।”

রইসের মন বসে না। লোকটা কি কি জানি করছে। রইস তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। অনেক ভয় করছে রইসের। এমনিতেই সে ভিতু প্রকৃতির ছেলে। ছেলে বেলায় কিছু হলেই তার কান্না পেত। লুকিয়ে লুকিয়ে কাদঁত। কারন তার বাবা বলেছিল ছেলেদের কাঁদতে হয় না।

“ও কি রইস, বাপ কান্দ কেন? বেটা ছেলেগো কাঁদতে হয় না বাপ। লোকে মন্দ কবে নে। চোখ মুছ।”

রইসের চোখ টলটল করছে বাবার কথা মনে করে। বাবা থাকলে আজ তাও একটু ভরসা দিতে পারত। কিংবা হয়তো বাবা থাকলে তাকে আজ এইখানে এই ভয়ংকর কাজই করতে হতো না।

“নাও হইয়া গেছে রইস মিয়া। চল, এইবার আল্লার নাম নিয়া শুরু কইরা দেও। আগে কইয়া দিই। ঝুপ কইরা নামবা না। তাইলে কইলাম ভাংচুর হইয়া যাইতে পারে। পাওটারে শক্ত রাখবা। হাত দুইটা হইল তোমার আসল জিনিষ। এই দুইটা দিয়া তোমার কাম করতে হইব। তাই সবচাইতে যেইটা বেশি দরকার তা হইল এই যন্ত্রের উপর ভরসা করা। এর উপর ভরসা করতে না পারলে কাম ঠিক মতন হইব না। বুঝতে পারছ কি কইলাম?”

“জ্বী বুঝতে পারছি।”

“তোমারে দেইখাতো মনে হইতাছে অনেক ভয় পাইতাছ।”

“না না ভয়ের কি আছে। বেটা ছেলের আবার ভয় কিসের?”

“ভয় না লাগলেই ভালো।”

এটা বলেই লোকটা তর তর করে নিচে নেমে গেল। ভয়টা কেমন যেন কমে আসছে আস্তে আস্তে। বাবা যেন অনেক দূর থেকে বলছে

“বেটা ভয়ের কি আছে? একদম ভয় করবি না। বেটা ছেলের ভয় কি?”

মায়ের মুখটা ভাসছে চোখের সামনে।

“আমার জন্যি দোয়া কর মা।”

পুরো শহরের দিকে পেছন ঘুরে শহরের সবচাইতে উঁচু দালানের ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে রইস । শহরের সবচাইতে আভিজাত হোটেলের গ্লাস ক্লিনার।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০০৯ সকাল ১১:২৩
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×