somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চাইছি তোমার বন্ধুতা (আপাতত শেষ পর্ব)

০৮ ই অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ১০:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(আগের কোনো পর্ব না পরেই এই পর্বের পুরোটাই বোঝা যাবে )

আজকের পর্ব কিছু বিলা ঘটনা নিয়া। আমার আশে পাশে বেশ কিছু আইনেস্টানের চেলারা থাকতো। আমরা ৬ জন একলগে থাকতাম। এর মধ্য গ্রেজুয়েশন শেষ হবার পর দেখা গেল একজন প্রথম, একজন দ্বিতীয়, একজন তৃতীয় সহ মোট ৫ জন শীর্ষ দশের মধ্যে। (আর একজন কে দশের বাইরে ছিল এইটা বলার কুনু অপেক্ষা রাখে না।) তো এরাম জিনিয়াসগো লগে থাকতাম, মাঝে মাঝে তাগো উপ্রে আইনেস্টাইনের আত্না ভর করত। তখন তারা কিছু উল্টা পাল্টা আইনেস্টাইন মার্কা আচরন করত। সে সব ছোট খাট ঘটনা নিয়া আজকের পর্ব। তো শুরু করি। সজীবরে নিয়া কইতাছিলাম গত পর্বে। ওরে দিয়াই শুরু করলাম।

ভাল ছাত্র আর রেজাল্ট ভাল। দুটোর মধ্যে পার্থক্য আছে। তবে এই দুইটা থেকে সজীবকে কুনু ভাবেই আলাদা করা যাবে না। কারন ও দুইটাই। তবে ব্যাপার হইল একজন ভাল ছাত্ররে রেজাল্ট ভাল করার জন্য অনেক পড়াশুনা করতে হয়। এই কারনেই সজীব অসম্ভব রকম পড়ুয়া ছেলে ছিল। পড়তে পড়তে ও মাঝে মাঝে দিন রাতের ফারাক বুঝতে পারত না। একবার আমাদের কি যেনো একটা পরীক্ষা ছিল। কিংবা ল্যাব এসাইমেন্ট, ঠিক মনে পড়তাছে না। সারারাত জেগে সে কাজ করল। এর পর সারাদিন ক্যাম্পাসে ছিল। তারপর বাসায় এসে আবার কাজ করতে বসে সন্ধ্যার দিকে কাজ শেষ করল। একটানা এতক্ষন কাজ করা একটা ভয়াবহ ব্যাপার ছিল। ওর চোখ দেখে বোঝা যাচ্ছিল ক্লান্তির ছাপ। ক্লান্তি নিয়ে অবশেষে এক সময় সে ঘুমিয়ে পড়ল। গভীর ঘুম। তবে তার সিক্সথ সেন্সটারে জায়াইয়া রাইখা সে ঘুমাইছিল। কারন যাতে করে বেশি ঘুম না ঘুমায়। সাম্নেই পরীক্ষা বইলা কথা। কিন্ত যতই সিক্সথ সেন্স থাকুক, মানব দেহ বইলা একটা ব্যাপারতো আছেই। তারো একটা চাহিদা আছে। একসময় শরীরের চাহিদারে বক্সিং মাইরা সিক্সথ সেন্স ওরে ধড়মড় কইরা টাইনা তুলল ঘুম থেইকা। এরাম কাঁচা ঘুম থেইকা উইঠা ওর মাথা কিছুতেই পরিস্থিতিরে আপন কইরা নিতে পারতাছিল না। ওর বিছানার কাছেই সুমন চেয়ারে লো কমোড ইস্টাইলে বইসা পড়তেছিল। সে সুমনের দিকে কিছুক্ষন হা কইরা তাকাইয়া রইল। সুমন একটা প্রশ্নবোধক দৃষ্টি দিয়া আবার নিজের কাজে ব্যস্ত হইয়া পড়ল। কিছুক্ষন পর সে সুমনরে জিগাইল

সজীবঃ “এখন কয়টা বাজে রে?”
সুমনঃ “রাত ১০টা।”
সজীবঃ “১০টা বাইজা গেছে?”
সুমনঃ “হমম।”
সজীবঃ “শোন, আমি আরেকটু ঘুমাই। যদি আমি ১২টার সময় ঘুম থেকে না উঠি, তাইলে তুই আমারে ১১টার সময় জাগাইয়া দিস।”

একটু অবাক হয়ে সুমন বললো “দোস্ত, রাত ১১টার সময় আমি কিভাবে বুঝব যে তুই ১২টায় ঘুম থেকে উঠবি কিনা?”

কি বুঝল কে জানে? ‘ও আচ্ছা’ বইলা আবার ঘুমিয়ে পড়ল বেচারা।

কিছু মানুষের নাকি গরম কালে মাথায় সমস্যা দেখা দেয়। মাথা নাকি অনেক গরম থাকে তাদের।তাই তারা অপ্রকৃতস্থ কাজ কর্ম করতে থাকে। আমাদের সজীব রে আমি ঠিক অপ্রকৃতস্থ কমু না। গরম কালে ওর তেমন কোনো সমস্যা না থাকলেও শীতকালে ওর মাথা একটু কম কাজ করে। এইটা একটা ধ্রুব সত্য। এমনি এক শীতের রাতে, রাত দুইটার সময় সুমনের ইচ্ছে হলো চা খাবে। কিন্ত অত রাতে সব দোকান বন্ধ হয়ে যায়। এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য ওর কিছু বেক আপ টী ব্যাগ থাকে। সাথে কিছু চিনি। তো সে পড়ায় একটা বিরতি দিয়ে চুলায় চায়ের পানি দিয়ে এসে আমাদের সাথে আড্ডা দিতে বসল। আড্ডা নাকি এমন জিনিষ যে মানুষ বউয়ের কথাও ভুইলা যায় মাঝে মাঝে। আরতো পাতিল। যথারিতি সুমনও ভুইলা গেল চুলায় চাপানো পাতিলের কথা। কিছুক্ষন পর সজীব রান্না ঘরে ঢুকল সিগারেট জ্বালানোর জন্য। গিয়া দেখে চুলায় একটা পাতিল। পানি আলরেডী শুকাইয়্যা গেছে। সে পাতিল না নামাইয়া আমরা যেখানে আড্ডা দিতেছিলাম ঐখানে আইসা চিৎকার দিয়া কইল

“আইচ্ছা, এই খালি পাতিলডা কেডায় গরম করতাছে আমিতো বুঝলাম না। খালি পাতিল গরম করার মানে কি?”

ভাইবেন না তার সেন্স অব হিউমার খুব ভালো, সে কথাডা খুব সিরিয়াসলি বলছে।

এরকমি আরেক শীতের রাতে দুইটার সময় সজীবের চা খাইতে মন চাইল। ওইদিন দোকানও বন্ধ আর সুমনের স্টকও শেষ। আমার কাছে একটাই কফির ছোট প্যাকেট ছিল। ওকে জিজ্ঞেশ করলাম নেবে কিনা? লাফ দিয়া নিয়া গেল। রান্না ঘরে গিয়া চুলায় পানি বসালো। তারপর চুলা জ্বালানোর আগেই কি মনে করে যেন কফির প্যাকেটটা কাটল। ডান হাতে কাটা কফির প্যাকেট, বাম হাতে দিয়াশলাই। কিভাবে চুলাটা খুব সহজে জ্বালানো যায় এই নিয়া মিনিট দুয়েক একটু ভাবল বোধহয়।অনেক ভাবনা চিন্তার পরে ডান হাতে চুলাটা অন করতে গেল। কি ঘটল কেউ কি বুঝতে পারলেন? মাটিতে গড়িয়ে পড়া কফির দিকে উদাস মুখে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষন।

আরেক আইনেস্টাইন মিঃ সুমন। সব সময় দেখতাম, কারন্ট থাকলে সে নানান আব জাব কাজে ব্যস্ত। আর কারেন্ট গেলেই সে চরম পড়াশুনা শুরু করত। কঠিন কঠিন সমস্যার সমাধান নিয়া চিন্তা শুরু করত। যহেতু কারেন্ট গেলেই ওর পড়ার কাজ শুরু হইত, তাই ওর কাছে সবসময় মোমবাতি থাকতো। আর সিগারেট না খাইলেও আমার কাছে সবসময় একটা বেকাপ ম্যাচ থাকতো। একদিন কারেন্ট গেল। আমি শুয়ে আছি সন্ধ্যার দিকে। আমার পিসি ইউ,পি,এসের ব্যাক আপে চলছিল। এমন সময় সুমন মোমবাতি হাতে আমার রুমে আসল ম্যাচের জন্য। বোধহয় কিছু একটা নিয়া চিন্তা করতেছিল।আমার ড্রয়ার থেকে ম্যাচ বের করে মোম জ্বালালো। (ম্যাচে শেষ এক্টাই কাঠি ছিল সেদিন।)আমি তখন ভাবছিলাম শোয়া থেকে উঠে পিসি বন্ধ করব।সুমনরে দেইখা বললাম, “আমার পিসিটা একটু বন্ধ কইরা দেতো।” সে তখন গভীর ধ্যানে মগ্ন। মোমবাতি হাতে আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল আমার পিসির দিকে। ওর কান আমার কথা শুনেছে, মাথা পর্যন্ত ডেলিভারীও দিয়েছে। তবে মনে হয় ঠিক ওই মুহুর্তে মাথার মেমরী ফুল ছিল। তাই ফাংশনটা এক্সিকিউশনে কিউতে পরে গিয়েছিল। তাই সে পিসির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ। আমি বিরক্ত হয়ে একটা ধমক দিয়ে বললাম, “কিরে আগে পিসিটা বন্ধ কর, ব্যাক আপ শেষ হয়ে যাচ্ছেতো।” আমার ধমক খেয়ে সে একটু চমকে উঠল। হয়তো মাথার কিউর ফাংশন গুলো একটু নড়ে চড়ে উঠল। আর সে একবার আমার কম্পিউটার আর দিকে, আরেকবার জ্বালানো মোমের দিকে তাকালো,তার মাথা একটা ডিশিসানে পৌছাল যে একটা কিছু বন্ধ করতে হবে এবং সাথে সাথে সে একটা ফুঁ দিয়ে মোমবাতিটা নিভিয়ে দিল। তারপর কি হলো কিছু না বুঝে বেক্কলের মতন আমার দিকে তাকিয়ে রইল, আর বললো , “ম্যাচের কাঠি একটাই ছিল। তোর কাছে কি আর কোনো ম্যাচ আছে?”

আরো অনেক ঘটনা আছে। যেমন প্রসূন একবার টয়লেটে গিয়া ট্রাউজার না খুইলা ভুলে টি শার্ট খুইলাই নাকি কমোডে বইসা পড়ছিল। ভাগ্যিস কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আগেই সে বুঝতে পারছিল যে সে গোসল করবে না, টয়লেট করবে।(এইটা শোনা ঘটনা। প্রসূন কইছে)।আর একদিন আরাফাত ইউনি থেকে আইসা ড্রেস চেঞ্জ করতে গিয়া হঠাৎ আবিষ্কার করলো একটা আন্ডু খোলার পরেও কোত্থেকে যেন ওর পরনে আরেকটা আন্ডু। সে অবাক বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল।:P আন্ডু রহস্য হয়তো তেমন জটিল কিছু না। তবে ভয়াবহ হাস্যকর ছিল।

আইনেস্টাইনের একটা ছুডু ঘটনা কইয়া শেষ করি তাইলে (আইনেস্টাইন কিন্ত আমাগো লগে থাকতো না)। একবার মহাশয় ট্রেনে কইরা কই যেন যাইতাছিল। তো একসময় টিটি আইসা কইল টিকেট প্লিজ। আইনেস্টাইন ভাইজান অনেক্ষন সব কয়ডা পকেট খুইঁজাও টিকেট পাইল না। ইত্যবসরে টিটি তারে চিনতে পারল। তো টিটি ভাবল উনি এত জ্ঞানি মানুষ, টিকেট ছাড়া কি আর ট্রেনে চড়বে? তাই সে বললো, ‘ঠিক আছে স্যার,আপনার টিকেট লাগবে না’। বইলা সে চইলা যাইতাছিল। হঠাৎ পিছন ফিরে দেখল, মহাশয় আইনেস্টাইন আবারো টিকেট খুঁজতেছে। সে আবার কাছে গিয়ে বললো, ‘স্যার, আপনি রিলাক্স থাকুন। আপনার টিকেট দেখাতে হবে না'’। তখন আইনেস্টাইন কইলো, "আসলে আমি টিকেট খুজছি, কারন ওখানে লেখা ছিল আমি কোথায় নামবো"।

(তো আপাতত এটাই এই সিরিজের শেষ লেখা। সিরিজে একটা বিরতি টানতেছি। কারন একটা সিরিজ লিখতে গেলে এর মাঝে আমি আর কিছু লিখতে পারি না। আর এই সিরিজ শেষ করে অন্য কিছু লেখার প্ল্যান করলে, এই জীবনে আর কিছু লেখার মতন সময় পাব বলে মনে হয় না।
: P তাই এই বিরতি। একটা বিরতি দিয়া হয়তো আবার বন্ধুদের গল্প নিয়া এই সিরিজ হাজির হবে। ততদিন পর্যন্ত আলবিদা।)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ১০:২৮
৭৪টি মন্তব্য ৭৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×