somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিঠি - ০১

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শঙ্খবতী,

আজ সারাদিন বৃষ্টি পড়লো খুব, খুব! সারাদিন হাঁটতে হাঁটতে যখন নিজেকে নিজের ভেতর হারিয়ে ঘুরিয়ে প্রথম বৃষ্টির ফোঁটা বরণ করে নিলাম, আমার খোঁজ মিললো লেকের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে, আমি একটা গাছের দিকে চুপচাপ তাকিয়ে আছি। গাছের বয়সটা কত হলো? আমি অনুমান করতে পারি না এসব বিষয়ে তবুও ভাবলাম, “হবে হয়তো বিশ-তিরিশ!”; কে জানে?

আজ এতো বৃষ্টি পড়লো, আমার ভাবতে ইচ্ছে হলো অন্য একটা কথা, কিন্তু ভাবি নি। কারণ সে ভাবনার দায় আমার আর নেই; আমি বরং চুপচাপ বসলাম একটা বেঞ্চির উপর, গাছের নিচে বৃষ্টি আমায় ছুঁতে পারলো কমই! কারণ যদি তোমার নক্ষত্রের ভেতর থেকে যদি নতুন সমুদ্রের সৃষ্টি হয় তবে তাতে ভেসে যেতে পারি আমি; যদিও চোখ কখনো সমুদ্র নয়। চোখে আটকে থাকতে পারে নদী, খানিকটা শুকিয়ে আসতে পারে তার জল; পুরোপুরি শুকোয় না – কেননা মানুষের জীবনে দুঃখ কেবল একটা থাকে না।

পথ এখনো শেষ হয় নি...

আমি চুপচাপ তাকিয়ে থাকলাম দূরে, সেখানে কিছু মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে এদিক সেদিক; তাদের ভেতর কি কি দুঃখ আর সুখ আছে? তারা কি লুকিয়ে রেখেছে নিজের ভেতর – ভাবতেই কয়েকটা অনাহারের দিন মনে পড়লো আমার; ভাতের দুঃখের মত আর কিছু নেই! একদম নেই! আমি দেখলাম – আজ প্রতিটা ভাত খাওয়া প্রতিটা মানুষ শুরু থেকেই ভীষণ সুখী; সাদা ভাত ধরতে ইচ্ছে করলো হঠাৎ, আজ সারাদিন ভাত খাওয়া হলো না আমার!

তুমি কি খেয়েছ নাকি?

যদি খাও তাহলে তুমি সুখী। তারপর তুমি দেখতে শুরু করলে পাশে কে কে আছে আর কে কে নেই। তুমি দেখতে চাইলে নিজের ভেতর নদী, তার ভেতরকার জল বের করে দিলে উপর থেকে নিচে! একটু রোদ খোঁজার ইচ্ছে হলো, একটু ইচ্ছে হলো বিষণ্ণতার লালন। একটু ইচ্ছে করলো ভেতর ভেতর কাউকে পালন। তারপর ধীরে ধীরে সন্ধ্যা হতেই খোঁজ নিলে ব্যক্তিগত জীবনের, কারণ চোখও একসময় ক্লান্ত হয়। অনেক সময় পর মুখ একটু প্রশস্ত হয়, একটু হাসি ফোটে এরই মাঝে। স্রোতের মত তারপর শুরু হয় চলা, চলছে সুন্দর।

এই যে চোখ কখনো সমুদ্র হয় না তাতে ক্ষতির কিছু নেই; নদী হলেও হয়। যারা জানে জলের কতটুকু মূল্য, তাদের কাছে নদীর সামান্য জলেরও অনেক মূল্য; তারা বৃথা নষ্ট করে না নিশ্চয়ই! আমি একসময় জলের কষ্টে ভুগেছি; তখন জানো, নতুন টিনের মেটে রঙের বাড়িটায় এতটুকু জলের যোগান নেই! তখন আমার মা আর আমাকে যেতে হতো অনেকটা দূর এক বালতি পানি টেনে আনার জন্য, কাছের এক প্রতিবেশী শিক্ষকের বাড়িতে যখন কুয়োর খোঁজ পেলাম, কষ্ট কমে এলো আরও অনেক কম। আমি তাই শিখেছি জলের কতটা দাম, তোমার ব্যক্তিগত নদীর দু একফোঁটা জলের মূল্য আছে তাই আমার কাছে। নদী চোখ নিয়ে তাই দুঃখের কিছু নেই!

বরং সে নদীর কিছু জল যে আমার জন্য ছিলো – আমার ভালো লাগে বড়ো!

তুমি বরং ভাবো সুন্দর একটা দিন – উড়ে বেড়াবার মত। তুমি কখনো উড়ো নি এমনটা হতে পারে না – উড়ে বেড়াবার দিন তাই তোমার মনে আছে নিশ্চয়ই। ভাবো – আমি আবার একদিন উড়বো পূর্ণ একটা আকাশে। পূর্ণ একটা আকাশ সত্যিই আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে; কিছুদিন পর নদীর জল আমি আবার বাড়াবো নতুন কোন দুঃখের জন্যে।

‘আমি’ নামক দুঃখটা সত্যি একদিন নেই।

আপাতত ভাতের একটা দুঃখ হয়ে জমে আছি রাস্তার পাশের শিশুটার চোখে, এক বোতল জল বেঁচে যদি দশটা টাকার ভাত জোটে, আমি ভীষণ সুখী হবো! আপাতত কাঁটা হয়ে বসে আছি কারো গাছের ভেতর, ভীষণ যত্নে তুলে দিলে আমি হাসতে হাসতে অনেক দূর হেঁটে যাবো।

আমি আপাতত ভালো নেই যদিও...

তুমি ঠিকঠাক আমায় লুকিয়ে অনেকটা ভালো থেকো।

ভালো থেকো তুমি...

ইতি,
নীর..
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৫১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×