কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জনের অফিসে ৪৫ জন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ করা হয়েছে সুপারসনিক গতিতে। প্রায় আড়াই হাজার প্রার্থীর প্রত্যেকের মৌখিক পরীক্ষা নিতে গড়ে দেওয়া হয়েছে মাত্র ৩৬ সেকেন্ড। এছাড়াও অভিযোগ উঠেছে এই নিয়োগে বাণিজ্য হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকার। স্থানীয় এমপি মোঃ জাফর আলী, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অলক সরকার, বীর প্রতীক তারামন বিবি, সদর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাংগঠনিক কমান্ডার একাব্বর আলী এই নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতি হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ফলে জেলা জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার রাতের অন্ধকারে সিভিল সার্জন ডাঃ গোলাম মোস্তফা কর্মস্থল থেকে উধাও হয়ে যান। রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিচালক ডাঃ মতিয়ার রহমানও তার বর্তমান অবস্থান জানাতে পারেননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণীর অফিস সহকারী, হোম ভিজিটর, ড্রাইভার ও জুনিয়র মেকানিক পদে মোট ১০ জন এবং চতুর্থ শ্রেণীর এমএলএসএস, ওয়ার্ড বয়, আয়া, কুক/মশালচী, মালি, নিরাপত্তা প্রহরী ও সুইপার পদে মোট ৩৫ জন সর্বমোট ৪৫ জন নিয়োগ করা হয়েছে। ৫ দিন ব্যাপী মৌখিক পরীক্ষা শেষে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে অফিসের নোটিশ বোর্ডে অত্যন্ত সঙ্গোপনে এই নিয়োগের ফলাফল টাঙ্গানো হয়। গভীর রাতে সিভিল সার্জন নিয়োগ ফলাফল পত্রে স্বার করে কুড়িগ্রাম ছাড়েন সিভিল সার্জন। অপর দিকে আগামী ১দিনের মধ্যে তাদের যোগদানের ব্যবস্থা করছেন সিভিল সার্জন।
অভিযোগে জানা যায়, এতে ২ জন হোম ভিজিটর পদে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ নূরুজ্জামানের স্ত্রী রিনা চৌধুরী ও জেলা স্বাচিপ’র সাধারণ সম্পাদক ডাঃ লোকমান হাকিমের ভাতিজী মরিয়ম বেগম নিয়োগ পেয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিমের কন্যা রোমা (রোল নং-১৪১) অভিযোগ করেন, হোম ভিজিটরের লিখিত পরীক্ষা প্রহণের সময় রিনা চৌধুরী (রোল নং-১৪২) প্রকাশ্যেই মোবাইল হেডফোনের মাধ্যমে পরীার উত্তরপত্র লিখেছে। এনিয়ে অন্যান্য পরীক্ষার্থী প্রতিবাদ করলেও কেউ তা আমলে না নিয়ে উল্টো তাদের হুমকী দেওয়া হয়েছে। সদর হাসপাতালের আরএমও ডাঃ কে. কে. পালের দ্বিতীয় স্ত্রী দীপিকা রানী সরকার এমএলএসএস পদে এবং মেডিকেল অফিসার ডাঃ আমিনুল ইসলামের বাড়ীর কাজের লোক আব্দুল মান্নানকে সুইপার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অথচ হাসপাতালে যারা ১০/১২ বছর হইতে চাকরী একদিন সরকারী হবে এই আশায় বিনা বেতনে কাজ করছে তাদের কে আশা দিয়ে কেউ তাদের খোজ রাখেনী। টাকার কাছে নিয়োগ দাতারা হয়েছে অমানবিক ! জুয়েল নামে একজন খাটছে প্রায় ১৪বছর হতে, সবাই যখন বলছে কারও চাকরী না হলেও জুয়েলের টা হবে কিন্তু যখন হলোনা তখন সবাই অবাক ! জুয়েলের কান্না ছাড়া আর কিছু থাকলো না।
জেলা বিএমএর সভাপতি ডাঃ নাসির উদ্দিনের মনোনীত ২ জন এবং স্বাচিপ নেতা ডাঃ নজরুল ইসলামের মনোনীত মতিয়ার রহমানকে এমএলএসএস এবং জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক ডাঃ শামসুদ্দোহার মনোনীত একাব্বর আলীকে ড্রাইভার পদে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সিভিল সার্জন ডাঃ গোলাম মোস্তফার গ্রামের বাড়ী ভূরুঙ্গামারী এলাকার ১১ জনের মধ্যে শহিদুল ইসলাম ও জাহেদুল ইসলাম ড্রাইভার পদে, আলমগীর হোসেন সরকার, মোস্তাফিজুর রহমান ও আব্দুল মজিদ এমএলএসএস পদে, আব্দুর রউফ ও নূর আলম ওয়ার্ড বয় পদে, শামীমা আক্তার আয়া পদে, আবুল হোসেন ও ফরমান আলী নিরাপত্তা প্রহরী পদে এবং আব্দুর রশীদ মন্ডল সুইপার পদে নিয়োগ পেয়েছেন।
বীর প্রতিক তারামন বিবি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা সঠিকভাবে পুরণ করা হয়নি। এ ব্যাপারে মামলা করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
সদর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সহকারী কমান্ডার সাংগঠনিক একাব্বর আলী অভিযোগ করেছেন এই নিয়োগে অফিস সহকারী পদে ৪ লাখ, হোম ভিজিটর ও ড্রাইভার পদে ৫ লাখ, জুনিয়র মেকানিক পদে ৪ লাখ, এমএলএসএস, ওয়ার্ড বয়, আয়া, মালী, কুক/মশালচী ও নৈশ্য প্রহরীসহ প্রতি পদে নেওয়া হয় ৩ লাখ। এছাড়াও সুইপার পদে ২ লাখ টাকা করে উৎকোচ নেওয়া হয়েছে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল কাদের সোহেল, ক্যাশিয়ার আব্দুল করিম ও পিএ নিয়ামত আলীর মাধ্যমে এভাবে প্রায় দেড় কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। ফলে মুক্তিযোদ্ধার কোটাও সঠিকভাবে পূরণ করা হয়নি।
জেলা স্বাস্থ্য কমিটি’র সদস্য শেখ বাবুল জানান, নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে আরএমও ডা. কে. কে পালসহ কতিপয় ডাক্তারও জড়িত ছিলেন বলে আমাদের কাছে অভিযোগ আছে। আমরা স্থানীয় এমপি’র মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।
কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক অলক সরকার চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে এ নিয়োগ বাতিলের দাবী জানিয়েছেন। সিভিল সার্জন ও স্বাচিপ নেতারা স্থানীয় হওয়ায় তারা পারস্পারিক যোগসাজসে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়ে সরকার ও দলকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে।
শুক্রবার স্থানীয় এমপি মো: জাফর আলী সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার চক্রান্তের জন্য সিভিল সার্জনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন ডাঃ গোলাম মোস্তফার বাসার টেলিফোন এবং ০১৭১২২১১১৫৬ নম্বর মোবাইলে অনেক চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। নিয়োগ কমিটির সদস্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট শহিদুল ইসলাম এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তিনি নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিবের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিচালক ডাঃ মোঃ মতিয়ার রহমান নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সঠিকভাবে সবকিছু করা হয়েছে। তবে তিনি সিভিল সার্জনের বাড়ীর এলাকার লোকজন বেশী নিয়োগ পাওয়ায় বিষ্ময় প্রকাশ করেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ২:১২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




