somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প-- মুক্তির ডাক...

২৬ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দুদিন পরই একটা বড় অপারেশন আছে। না, একটা নয়; দু দুটো বড় অপারেশন! বড় অপারেশন মানেই দক্ষ যোদ্ধা প্রয়োজন, শক্তিশালী হাতিয়ার দরকার, আর চাই সুন্দর একটা পরিকল্পনা।
এখন সন্ধ্যে, আস্তে আস্তে রাত বাড়ছে, অন্ধকার বাড়ছে। আজাদ বসে বসে এই কথা গুলোই ভাবছে। এই অপারেশন দুটো খুব কঠিন, প্রাণ যাওয়ার সম্ভাবনাই খুব বেশি। মানে বেঁচে ফিরে আসার সুযোগটা খুবই কম। সাথে আরও সহযোদ্ধা। এক সাথে অনেক দিন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করছে, এখন আর কেউই পর নয়, সবাই ভাই, সবাই বন্ধু।

আজাদের দিকে তাকিয়ে, আসাদ জিজ্ঞেস করলো, কি আজাদ ভাই খুব চিন্তায় মশগুল হয়ে আছেন? আরে ভাই এতো কি চিন্তা করেন?

আজাদ ওর দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হেসে বললো, চিন্তার তো অনেক কিছুই আছেরে!

সুমন একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো, আরে ভাই, এখন তো শুধু একটাই চিন্তা; সেটা হলো দেশ।

শফিক গম্ভীর হয়ে বসে ছিলো। গম্ভীর ভাবে বলে উঠলো, হুমম, কখন একটা হামলা হয় আবার, কখন আবার কোন জায়গায় যুদ্ধ লাগে বলা তো যায় না। চিন্তার বিষয়।

এবার জাহাঙ্গীর বললো, ভাই তোরা একটু মাথা ঠান্ডা করে ভাব, এই দুইদিন কি করা যায়! দুইদিন পরেই অপারেশন তাও দুইটা!

আজাদ সবার দিকে তাকিয়ে বললো, সেটাই বেশি চিন্তা করছিলাম রে। সেক্টর কমান্ডারও এখনও কোনো প্লান আর ঘোষণা বার্তা দিলো না।

সুমন খুব ঠান্ডা স্বরে বললো, ভাই সময় হলেই দেখবেন বার্তা এসে পরবে। আর আমাদের রাসেল সব সময় তো রেডিও ওয়াকিটোয়াকি নিয়ে বসে আছে, একটা ডাক এসে পড়বেই।

হুমম, আজাদ একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। তার দীর্ঘশ্বাসটা খুব ভারী।

আসাদ কথার ফাঁকে বলে উঠলো, ছোটবেলায় যখন বিপদে পড়তাম, বেশি কঠিন বিপদে। তখন মা'কে গিয়ে জানতাম। মা বকাঝকা করতো, কিন্তু বেদম মার খাওয়ার হাত থেকে বাঁচার একটা সমাধান বের করতো। আহ্ এখন যদি মা কাছে থাকতো!

আজাদ খুব প্রফুল্ল হয়ে বললো, মা..। যেন তার সকল চিন্তা দূর হয়ে গেল। মায়ের কথা মনে করতেই কেমন যেন একটু অস্থির হয়ে বললো, তোরা বোস আমি একটু আমার রুমে গেলাম, চোখ কান খোলা রাখিস।

এক জায়গায় সবাই গোল হয়ে বসে আছে। মাঝখানে চুল্লী বানিয়ে আগুন ধরানো। এই অল্প আলোতে যতটুকু আলো হয় তাই বেশি এই পরিত্যক্ত জমিদার বাড়ির আঙিনায়। সেখানেই ওদের ক্যাম্প।
আজাদ সেখান থেকে উঠে হাটা ধরলো, আর সবাই বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলো অল্প আলোতেই।

আজাদ তার ঘরে ঢুকলো। আপাতত এটাই তাদের অস্থায়ী বাসস্থান। টেবিলে উপর একটা খাতা কলম রেখে ভাঙা একটা চেয়ার ছিলো সেটাতে বসলো। তারপর একটা চিঠি লেখা শুরু করলো।

মা,
কেমন আছো তুমি? মা তোমাকে কতদিন দেখি না, মনে হয় কয়েক যুগ কয়েক শতক পার হয়ে গেছে! আমি জানি মা তুমি ভালো আছো, কারণ যে সবার খেয়াল রাখতে পারে সে তার নিজের খেয়ালও রাখতে পারে। তারপরও মা তোমাকে খুব কাছ থেকে দেখতে ইচ্ছে করে, মনে খুব ইচ্ছে জাগে তোমার হাতের রান্না খাই আবার। এখানে খাওয়া দাওয়া ভালোই হয়, কোন দিন দুই বেলা কোনোদিন এক বেলা খাই। মা যুদ্ধ করতে আসছি, কখন কোথায় যুদ্ধে যেতে হয় ঠিক নেই তাই খাওয়ারও কোনো ঠিক সময় নেই, তবুও বেশ ভালো আছি। তোমার হাতের রান্না মা বেহেশতে গেলেও এরোকম স্বাদ পাওয়া যাবে না। তুমি মা একদম সবার সেরা মা। তোমার মত কেউই হয় না এই পৃথিবীতে। তুমি কিন্তু ভেবোনা না যে, তোমার সন্তান না খেয়ে থাকে। দেশ স্বাধীন হয়ে গেলে কত সুখে তোমার হাতের রান্না খাওয়া যাবে।
তুমি জানো মা! তুমি যেই ছেলেকে খুব ভীতু ভাবতে সে আজ অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে, শত্রুর মোকাবেলা করে, দেশের জন্য, তোমার জন্য মা। আমরা এখানে এক পরিত্যক্ত জমিদার বাড়িতে মুক্তিযুদ্ধের ক্যাম্প করেছি। আমাদের সাথে আসাদ, শফিক, সুমন, রুহুল, জাহাঙ্গীর, রাসেল আরও অনেকেই আছে যারা দেশের জন্য যুদ্ধ করবে বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে। দেখেছো মা, সবার দেশের জন্য কত ভালোবাসা। ওরা সবাই দুই হাতে পুরো দেশের ভার নিয়েছে, এই বয়সেই। ওদের একটাই চিন্তা দেশকে শত্রু মুক্ত করতে হবে, স্বাধীন করতেই হবে এদেশ। তুমি কোনো চিন্তা করো না মা, দেশ একদিন স্বাধীন হবেই...

হঠাৎ রাসেল এসে দরজা খুলেই ঢুকে পরলো। রাসেল খুব উৎফুল্ল, আজাদ ভাই ১১ নং সেক্টর থেকে কমান্ডার কথা বলতে চাইছেন। আপনি আসেন ভাই তাড়াতাড়ি।

আজাদ আর রাসেল খুব দ্রুত ছুটে গেল কন্ট্রোল রুমে। আসাদ, শফিক, সুমন, রুহুল, জাহাঙ্গীরও কন্ট্রল রুমের ভেতরে সবাই অধীর আগ্রহে দাঁড়িয়ে আছে! তাদের চোখ মুখে উজ্জ্বল এক আলোক আভা ফুটে, সবাই খুব উৎফুল্ল ও উৎসুক হয়ে আছে মেসেজের জন্য। পরবর্তী অপারেশনের পরিকল্পনার মেসেজ। সুমন আজাদের দিকে তাকিয়ে, ভাই সময় খুব কম তারাতারি কথা বলুন। আজাদ এগিয়ে গিয়ে চেয়ারটায় বসলো, রাসেল রেডিওর সাথে মাউথ পিস টা সামনে এগিয়ে দিল। একটু ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে কথা ভেসে আসলো, সেক্টর ১১ থেকে আমি খায়রুল আহসান বলছি। মধুমতিতে এখন অনেক স্রোত, রাতের মধ্যেই বাঁধ ভেঙে ফেলতে হবে। ঠিক মত কি শুনতে পাচ্ছেন সবাই!?

আজাদ বুঝতে পারলো, আগামী পরশুর কাজ আজ রাতেই করতে হবে।

আবারও রেডিও থেকে কথা বেরিয়ে আসলো, সেক্টর কমান্ডার বলছি, রজনীগন্ধা বাগানবাড়ির দায়িত্বরত ভ্রমররা কি শুনতে পাচ্ছেন? কেউ উত্তর দিন।

আজাদ সবার দিকে তাকালো সেই হাসিমাখা উজ্জ্বল, উজ্জীবিত মুখ গুলোর দিকে, যেন একটা আলো সবাই তার সামনে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে! এরপর মাউথ পিসটা শক্ত করে ধরে, জি শুনতে পাচ্ছি, রজনীগন্ধা বাগান থেকে "আমি আজাদ বলছি..."

.

এক ঘন্টার ক্লাস অথচ লেকচার শেষ হলো দের ঘন্টা পর! খুব কঠিন সাবজেক্ট, টিচার খুবই দায়িত্ববান। দায়িত্বের সাথে সম্পূর্ণ ক্লাস নিয়ে তারপর ক্লাস ডিসমিস করলো এবার আধা ঘন্টা বেশিই লাগুক না কেন ক্ষতি নেই। লেকচার শেষে যে যার মত যার যার কাজে চলে গেলো।

ক্লাসে বসা রাফিদ আজাদকে লক্ষ্য করে বললো, কিরে বিদ্যা সাগর কি এত ভাবিস? তুই তো এমনিতেই ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে যাবি!

আজাদ ওর দিকে ফিক করে একটা হাসি দিয়ে বললো, শুধু পড়া নিয়ে ভাবলেই হবে? আরও অনেক ভাবনা আছে, অনেক কাজ আছে, সেগুলো নিয়ে ভাবতে হবে না!

রাফিদ চমকে উঠলো! কি ব্যাপার? এই শান্ত, চুপচাপ ছেলেটা আজ এরকম কথা বললো কেন? সে ততলিয়ে জবাব দিলো, আ আ আর কি কাজের কথা বলছিস, মাথায় ঢুকলো না? এখনও লেখা পড়াই তো শেষ করতে পারলাম না!

হুমম, এটাই এদেশের সমস্যা!

রাফিদ এবার আরও টেনশনের মধ্যে পরে গেলো। সে কি বলছে তার কিছুই বুঝতে পারছে না! আহসান ওদের দুজনের কথার ভেতর ঢুকে পরলো, কিরে তোরা কি এত আলাপ করছিস? আয় বাইরে আয়। ক্লাসে বসে থাকতে ভালো লাগছে না!

আজাদ বললো, হুম, বাইরে বের হতে হবে। আলোর জগতে যেতে হবে।

রাফিদ এবার একটু উত্তেজিত স্বরে বললো, এই তোর আজ কি হয়েছেরে?
আহসান রাফিদের কথা শুনে বুঝতে পারলো, কিছু একটা অন্যরকম কথা বার্তা চলছে দুজনের মধ্যে!
আহসান দুজনকেই উদ্দেশ্য করে বললো, এবার চল তো বাইরে। বাইরে গিয়ে চা খাবো তারপর জমিয়ে আড্ডা দিবো, তখন মনে খুলে তর্ক করিস।

আহসান ওদের দুজনকে নিয়ে বের হওয়ার সময় শিউলি, ফারিহা, নাঈম, শোয়েবকেও ডাকলো।

সবাই বটগাছের ছায়ার নীচে সবুজ ঘাসের উপর গোল হয়ে বসে আছে। যে যার মত একজন আরেকজনের সাথে কথা বলছে, কেউ স্মার্টফোনে সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে ব্যস্ত। আহসান লক্ষ্য করলো, আজাদ খুব চিন্তিত মনে কিছু একটা ভাবছে। যা ভাবছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ!

আহসান, ওর কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো, কিরে কি এত ভাবিস।

আজাদ একটু মুচকি হাসি দিয়ে বললো, ভাবি অনেক কিছুই!

কি নিয়ে ভাবছিস? বল আমাদের।

রাফিদও তাল দিলো, হ্যা বল।

আজাদ বললো, দেশের কথা ভাবছিরে। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের কথা ভাবছি।

সবাই ওর কথা শুনে বেশ হয়েই তাকালো ওর দিকে। আহসান জিজ্ঞেস করলো। আরে দেশ নিয়ে এতো কি ভাবিস। দেশ তো ভালোই আছে।

আজাদ একটি হাসি দিলো। এরপর হাসি থামিয়ে বললো, তোর কি মনে হয় দেশের সকল স্তরের মানুষ ভালো আছে? আমরা কি এখনও পুরোপুরি স্বাধীন? আমাদের বাক স্বাধীনতা কি এখনও আমাদের আছে!?

সবাই চমকে গেলো। হঠাৎ এরকম কথা কেন!? শোয়েব বললো, তা খারাপ বলিসনি দোস্ত, আসলে আমরা কেউই তো এরকম করে ভাবিনা। দেখ, প্রতি নিয়ত দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু একজন স্বল্প আয়ের মানুষ কিভাবে সে সংসার চালাবে? যদি তার আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হয়!!

আজাদ বললো, এটাতো আছেই। তোরা সবাই একটু চিন্তা করে দেখ, প্রতি মুহূর্তে প্রতিটা ক্ষেত্রেই সব জায়গায় দুর্নীতি বাড়ছে। কিন্তু কারও কিছুর করার নেই! ধনী আরও ধনী হচ্ছে, গরিব আরও গরিব! এই একটা সিস্টেম একদম সেট হয়ে গেছে। যেন পরিবর্তন করার কোনো উপায় নেই!

রাফিদ ওদের কথা গুলো শুনছে আর মাথা আলতো করে ঝাঁকাচ্ছে।
এক ফাঁকে নাঈম বললো, আমরা তো সেইই ছোটবেলা থেকেই ঘুষ সুদ, রাহাজানি, দুর্নীতি এগুলো দেখেই আসছি। কিন্তু আমাদের করণীয় কি!? আমাদের কাছে এমন কোনো ক্ষমতাও নেই যে আমরা তা বন্ধ করতে কাজে লাগাবো।

এবার শিউলি বলতে লাগলো, আমরা হলাম সাধারণ জনগণ। আমাদের কিইই বা করার আছে? যদি কিছু বলতে যাই তাহলে তো বিপদ!

ফারিহা একমত হয়ে বললো, বিপদ তো আছেই, মান ইজ্জত নিয়েও তখন টিকে থাকা কষ্ট হয়ে যাবে।

ওদের সবার কথা শুনে আজাদ মেরুদন্ড সোজা করে করে বসে বললো, আজ পরিস্থিতি এমন আমরা কথা বলতে ভয় পাচ্ছি। কেন ভয় পাচ্ছি? কারণ আমরা জনগন এক নই। এই সুযোগে দুর্নীতিবাজ সহজেই দুর্নীতি করে যাচ্ছে। বিচারভাগ উদাসীনতা দেখাচ্ছে। পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন পত্র ফাঁস হচ্ছে, অথচ এটা নিয়ে মন্ত্রী বা উপরমহল এমনকি সাধারণ জনগণ যারা অভিভাবক তাদেরও মাথা ব্যাথা নেই! আমাদের এর থেকে বের হতে হবে। সবাইকে এক হতে হবে।

আহসান বললো, দেখ আজাদ যা বলছিস সবই সঠিক। কিন্তু এটা করাটা সহজ নয়। কে বা কারা এগিয়ে আসবে? সবাই চুপ করে কোণঠাসা হয়ে আছে। দিন দিন আরও ভয়াবহ হচ্ছে এই পরিস্থিতি। আমরা জনগণই তো ঠিক নেই। কিভাবে এসব সম্ভব হবে!?

আজাদ উচ্চ স্বরে বললো, জনগন ঠিক নেই, আমাদের ঠিক হতে হবে। ঠিক করতে হবে। একদিনেই যে সব ঠিক হয়ে তা তো নয়। এই জাতির মেরুদন্ড দুর্বল, এটা সবল করতে হবে।

রাফিদ সব কথা অনুধাবন করে বললো, তুই দোস্ত বেশি ভাবিস। তাই তোর মাথায় এতো কথা ঘুরছে। কয়জনা এরকম ভাবে!?

আহসান বললো, দেখ রাফিদ আজাদের যে ভাবনা সেটা সবারই ভাবা উচিত। কিন্তু আমরা নিজের স্বার্থ নিয়ে পরে থাকি।

আজাদ এবার হাসি মুখে বলে উঠলো, এটাই হলো সমস্যা যে আমরা নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ব্যস্ত। আর এই সুযোগটাই রাজনীতিবিদ, দুর্নীতিবাজরা খুব ভালো ভাবে কাজে লাগাচ্ছে!

শোয়েব বললো, যে দুর্নীতি করছে তার হাত কিন্তু বিশাল। তুই কিছু বলবি, তো তোকে পরদিন গায়েব। গায়েব না হোক, অন্তত হুমকি তো দিবেই।

শিউলি ওর কথার জবাব দিলো, শুধু হুমকি? বাড়ি ছাড়াও করতে পারে!

ফারিহা আজাদকে লক্ষ্য করে বললো, তুই সব সময় ঠিকই বলিস। আমরা আসলেই প্রকৃত অর্থে স্বাধীন নই।

আহসান ফারিহার কথার সাথে তাল রেখে বললো, ৬৯ এরপর ৭১ এর পরেও আমরা বাক স্বাধীনতা পেলাম না।

আজাদ প্রফুল্ল গলায় বললো, বাক স্বাধীনতা আমরা জনগন নিজের দোষেই হারিয়েছি। আসলে এটা আমরা বুঝেও না বুঝার ভান করি। ভাবি ভালোই তো আছি, এতো কথা বলে লাভ কি!!

রাফিদ অনেক চিন্তা ভাবনা করে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো, শোন সবাই দুদিন পর স্বাধীনতা দিবস। ভার্সিটিতে প্রোগ্রাম আছে। অনেক বিশিষ্ট লোকজন, রাজনৈতিক ব্যক্তি বর্গ উপস্থিত থাকবে। আজাদ দোস্ত, তুই একটা বক্তৃতা দিলে কেমন হয়! বল, পারবি না।

সবাই ওর কথা শুনে আজাদের মুখের দিকে রইলো। আজাদ একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো, সময় হলেই দেখতে পারবি কি করতে পারি কি পারবো।

আজ ২৬শে মার্চ। সে মহেন্দ্রক্ষন মহান সেই দিবস। আজাদ বাসা থেকে বের হবে, এমন সময় মাকে জড়িয়ে ধরে বললো, মা তুমি অনেক ভালো। আজাদের মা জিজ্ঞেস করলো, হঠাৎ কি হলো রে তোর!?

কিছু না মা। এমনিই। অনেক দিন তোমাকে দু চোখ ভরে দেখি না মা।

ছেলের কথা শুনে সে জোরে হেসে দিলো। পাগল ছেলে। এখন কোথায় যাচ্ছিস যা। তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরবি।

আজাদ মার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হলো। রাস্তায় রিকশা খুঁজছে, ভার্সিটিতে পৌঁছতে হবে দ্রুত।

ভার্সিটি পৌঁছনোর সাথে সাথেই, সে দেখতে পেলো সবাই এক সাথে তার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। সবার মুখ উজ্জ্বল, প্রফুল্ল। মনে হচ্ছে এরা সবাই আজকে আজাদের নেতৃত্বে যুদ্ধে যাবে। জীবন তো একটা যুদ্ধই।

নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠান শুরু হলো, এক পর্যায়ে আজাদের ডাক পরলো। তাকে একটা ভাষণ দিতে হবে।

আজাদ স্টেজে উঠছে, সবাই তার দিকে তাকিয়ে। সেটে দাঁড়িয়ে আজাদ অজস্র মানুষের দিকে তাকালো, তার বন্ধুদের দিকেও তাকালো। সবাই তার দিকে তাকিয়ে হাজারো চোখ, হাজারো অনুভূতি। আজাদ মাউথ পিস টা শক্ত করে ধরে বলতে শুরু করলো,,
আজ ২৬শে মার্চ, মহান স্বাধীনতা দিবস। এইদিন স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ ৯মাস স্বাধীনতা যুদ্ধের পর আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি। কিন্তু আজ আমরা এই বর্তমান সময়ে কতটুকু স্বাধীন। আমরা কি পুরোপুরি স্বাধীন!? না, আমরা আজ স্বাধীন নই। স্বাধীনতা কেবল কাগজে কলমে, বাস্তবে আমরা স্বাধীন নই। "আমি আজাদ বলছি," দেশ এখনও প্রকৃত অর্থে স্বাধীন হয়নি। আমরা এখনও পরাধীনতার অন্ধকারে বন্দী...
.
পুরো গ্যালারি, উপস্থিত সবাই চুপ হয়ে রইল। যেন একটা নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে! প্রত্যেকে নিজের জায়গায় বসে থাকা, বিশেষ ব্যাক্তিবর্গও চুপ হয়ে রইলো। কারও মুখে কোনো শব্দ নেই।
স্টেজের একদম সামনে থাকা আহসান, রাফিদ, শোয়েব, শিউলি, ফারিহা, আর সকল বন্ধুরা সবাই আজাদের দিকে তাকিয়ে রইলো! যেন এক আলোর দিকে তাকিয়ে আছে সবাই। এখুনি সেই আলোতে আলোকিত হবে একটা নতুন দিনের...!


** প্রথম অংশটুকু যা মুক্তিযুদ্ধের একটি কাল্পনিক প্রক্ষাপটের উপর ভিত্তি করে লেখার চেষ্টা করেছি। এই গল্পে আজাদ আমার কল্পনার একজন চরিত্র। যাকে আমি গল্প কবিতায় বের করার চেষ্টা করি।

লেখা: স্বর্বসত্ব সংরক্ষিত।
ছবি কৃতজ্ঞতা: গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:৫৩
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×