কৌতুহল মেটাতে এসেছেন বলে স্বাগত। আমি নতুন করে কিছুই শেখাবো না শুধু আপনার গান শোনার ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে মনোযোগ দিতে বলবো।
গান শোনা আর গান শুনতে ভালবাসা বিচারে শ্রোতাকে আমি ৩টি ভাগে ভাগ করেছিঃ
প্রথম শ্রেণীঃ সারাদিন গান শোনে কিন্তু বেলা শেষে কোন গানই তাদের অন্তর স্পর্শ করতে পারে না।
দ্বিতীয় শ্রেণীঃ গানের কথা, সুর অথবা শিল্পীর আকর্ষণে বারবার সেই গানগুলি শুনে থাকেন। মূলতঃ বাছাইকৃত গান থাকে এদের সংগ্রহে।
তৃতীয় শ্রেণীঃ “গান পোকা”-এই শ্রেণীর কাছে গান শোনা এমনই একটা নেশা যে, তাদের প্রাত্যহিক জীবনের একটা অংশ হয়ে দাঁড়ায়। এরা যেমন বিভিন্ন ধরনের গান শোনেন তেমনি প্রচুর কালেকশন করেন।
মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে দুটো বিষয় সম্পর্কে জেনে তারপর সামনের দিকে পা বাড়াই।
১. ইন্সট্রুমেন্ট বা বাদ্যযন্ত্রঃ
তাল যন্ত্রঃ যে যন্ত্রের সাহায্যে তাল বা বিট দেয়া হয়।
তার যন্ত্রঃ তারের সাহায্যে যে যন্ত্র বাজানো হয়।
সুর যন্ত্রঃ সুর ওঠে এমন যন্ত্র।
২. তালঃ সংগীতে অনেক প্রকার তাল আছে তবে আধুনিক গানে সাধারণত তিনটি তাল (কাহার্বা/দাদরা/তেওড়া) জনপ্রিয় কিন্তু খুব বেশী ব্যবহৃত হয় দুইটি তাল, কাহার্বা-৮ মাত্রা এবং দাদরা-৬ মাত্রা। শতকরা হিসাবে ৭ মাত্রার তেওড়া তালের গান পাওয়া যায় ১/২ টা।
এবার যা যা করতে হবেঃ
যে গানটি শুনতে চাচ্ছেন তার লিরিক সংগ্রহ করুন। ভালভাবে পড়ে নিজের মত আবৃত্তি করুন। এবার গান ছেড়ে দিয়ে রিলিকটি শিল্পীর অনুভূতির সাথে মিলিয়ে দেখুন এবং শুনুন। আপনার আবেগের চেয়ে কত বেশী আবেগ দিয়ে গানটা গাইছেন।
গান আবার প্লে করে তালের বিট খেয়াল করে শিল্পীর সাথে গুনগুন করে যান। এখানে একটা মজার বিষয় হচ্ছে, কাহার্বা/দাদরা তাল বিভিন্ন গানে বিভিন্ন ছন্দে বাজে। ছন্দের ভেরিয়েশনে মনোযোগ দিন। শিল্পী অথবা ইন্সট্রুমেন্টাল সুরের সাথে তালের যে খেলা চলে এটা উপভোগ করতে শিখুন। এ বিষয়গুলো যখন আপনি ধরতে পারবেন তখন ভাল লাগবে।
এখন গান কম্পোজিশনে আপনার পরিচিত কি কি যন্ত্র বাজছে সেটা খেয়াল করুন। আপাততঃ ধরে নিলাম, তবলা-ডুগি/ড্রামস, কীবোর্ড, বাঁশী, সেতার, ভায়োলিন, লীড গীটার, বেজ গীটার।
একটা গানে তবলা-ডুগি/ড্রামস এর বাজানোর কালার চেঞ্জ হয় গান ধরা, ছাড়া এবং মিউজিকের সময় এটা খেয়াল করুন এবং উপভোগ করুন। এ বিষয়টা যেহেতু উপরে জানানো হয়েছে তাই আর নতুন করে কিছু বললাম না।
কীবোর্ডঃ আমরা যখন কোন গান শুনি তখন গানের নিচ দিয়ে কিছু মিউজিক থাকে। গান থেকে কিছুক্ষন মনোযোগ সরিয়ে এটার উপর মনোযোগ দিন দেখুন কেমন ভেসে ভেসে যাচ্ছে, এটা খেয়াল করুন। কীবোর্ড থেকে এই মিউজিক দিলেও মূলতঃ এটা ৫০/১০০ টা ভায়োলিনের কাজ। বর্তমান সময়ে কীবোর্ড থেকে প্রচুর ইন্সট্রুমেন্টাল সুর বাজানো হয়ে থাবে।
{এ ধরনের মিউজিকের জন্য দুটি গান রেখেছি শুনতে পারেন}
বেশী কিছু আশা করা- জগজিৎ সিং
যারা ডাকে তারা ভুলে যায়- অনুপ জালোটা
বাঁশীর কথা আলাদা করে বলার কিছু নাই। বাঁশীর সুর শুনতে না চাইলেও আপনার হৃদয় স্পর্শ করবেই। তারপরও মনোযোগ অব্যাহত রাখুন।
সেতারের শব্দের সাথেও আমরা কম/বেশী সবাই পরিচিত, সব গানে সেতার থাকে এমনও না। তবে যে গানে আছে সেক্ষেত্রে বাজনা খেয়াল করুন কিভাবে শুরু এবং শেষ করে এবং পাশাপাশি অন্য ইন্সট্রুমেন্ট কি ভাবে সেটা রিসিভ করে নতুন পিচ শুরু করে এটাতে মনোযোগ দিন।
লীড গীটার সাধারণত তিন ধরনের কাজ করে থাকে। (১) গানের কর্ড দিয়ে থাকে যার উপর নির্ভর করে শিল্পী গান করে থাকে, এটা যখন গভীর মনোযোগ দিবেন তখন বুঝতে পারবেন (২) কাউন্টার পিচ দিয়ে থাকে যেমন- গান অথবা অন্য মিউজিক চলাকালে ছোট ছোট পিচ দিয়ে এবং (৩) গীটারের বড় পিচ যা সাধারণতঃ ব্যান্ড সংগীতে বেশী দেখা যায়।
বেজ গীটারের কাজটা হলো সবচেয়ে মজার। তবলা-ডুগি/ড্রামস এর তালের সাথে এটা বিভিন্ন ঢঙ্গে বাজে। এমনিতে এটাও বোঝা একটু কষ্ট তবে বারবার শোনার পর যখন আলাদা করতে পারবেন তখন দেখবেন এটা আপনাকে অন্যরকম আনন্দ দিচ্ছে। এক্ষেত্রে কিশোর কুমারের আমি যে কে তোমার শুনতে পারেন, শুরু থেকেই বেজ গীটারের কাজ আছে।
আলোচ্য বিষয় ছাড়াও একটি গানে আপনার পর্যবেক্ষণ যত সুক্ষ হবে গান শুনে তত আনন্দ পাবেন। যাইহোক সব মিলিয়ে মোটামুটি ধারণা হলে গান ছেড়ে দিন। এতক্ষণ যে যে বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করলেন তার উপর মনোযোগ দিয়ে গান শুনুন এবং সর্বোচ্চ আনন্দ উপভোগ করুন। **ভালমানের হেডফোন হলে আকাশে উড়তেও পারেন।**
ছবি-নেট হতে সংগৃহীত।
এই লেখা যাদের জন্য নয়ঃ এই ব্লগের “গান পোকা”।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০২১ রাত ১১:০৫