ছবির কাহিনী শুরু বেলারুশের (তখনকার সময় সোভিয়েতের অন্তর্গত একটি সমাজতান্ত্রিক দেশ)একটি বালুক্ষেত্রে। বেলারুশ তখন জামার্ন দখলে। ।প্রথম দৃশ্যপটে দেখা যায় দুইটি অল্পবয়স্ক কিশোর বালুর মধ্য কিছু খুজতে ব্যস্ত এবং একজন গ্রামীণ কৃষক চিৎকার করে তাদেরকে খুজতে নিষেধ করা। কৃষকটি চলে যাওয়ার পর একটি কিশোর খুজে পায় একটি রাইফেল। কিশোরটির নাম ফ্লোরিয়া,তাকে ঘিরেই কাহিনী আবর্তিত এবং তার চোখ দিয়ে দেখান হয় যুদ্ধের নির্মমতা এবং গণহত্যা।
পরবর্তী দৃশ্য দেখা যায় ,মায়ের প্রতিরোধের মুখে ফ্লোরিয়া সোভিয়েত পার্টিজান গ্রুপে জয়েন করে। তারপরে দেখা যায় ছোট্র কিশোর ফ্লোরিয়া পার্টিজানে ক্যাম্পে,সেখানে কেবল মুখ দেখা হয় ক্যাম্পের কমান্ডারের প্রেমিকা গ্লাসার সাথে। অতঃপর নাজিদের ফেস করার জন্য বাহির হয় পার্টিজান পিছনে রেখে যায় রিজার্ভ হিসেবে ফ্লোরিয়াদেরকে। মনোক্ষুন্ন ফ্লোরিয়া কাদঁতে কাদঁতে জঙ্গলের পথ ধরে বাড়ী ফেরার জন্য, পথিমধ্য দেখা হয় কমান্ডার কতৃক ফেলে যাওয়া কমান্ডারের গোপন প্রেমিকা গ্লাসার সাথে। অতঃপর ক্যাম্পস্থ জঙ্গলে জার্মান বিমান এবং প্যারাট্রুপার আক্রমণ। ক্ষনিকের জন্য ফ্লোরিয়ার বধির হয়ে যায়। একদিন এবং রাত জঙ্গলে কাটিয়ে শুন্য বাড়িতে ফিরে আসে ফ্লোরিয়া এবং সাথে আশ্রয়হীন গ্লাসা। সেখান থেকে ফ্লোরিয়া বাহির হয় মা এবং ছোট দুই জমজ বোনের সন্ধানে জলাভূম পাড়ি দিয়ে এক ছোট্র ভূমিতে। ফ্লোরিয়ার সাথে বাহির হওয়ার পথে গ্লাসা দেখে ফ্লোরিয়ারদের বাড়ীর পিছনে লাশের স্তুপ। জলাভূমি পাড়ি দেওয়ার পরে দেখা হয় একদল গ্রামবাসির সাথে যারা নিশ্চিত করে ফ্লোরিয়া ফ্যামিলির ধ্বংসের কথা, দেখা মিলে গ্যাসোলিনে পুড়ে যাওয়া ফিল্মের শুরু দিকের সেই মরণপথ যাত্রী কৃষককে। পরবর্তীতে দেখা যায়, হতভাগ্য গ্রামবাসী হিটলারের এক মূর্তি বানাতে ব্যস্ত যেই মূর্তির মাথায় চুল দেওয়া হয় হত বিহবল ফ্লোরিয়ার চুল কেটে।
ছবিঃ হিটলারে মূর্তি
গ্রামবাসিদের জন্য খাবার সন্ধানে বাহির হয় ফ্লোরিয়া সহ চারজন সাথে হিটলারের প্রতিমা। পথিমধ্য হিটলারের মূর্তি গেথে দেওয়া হয় একটি চার রাস্তার মধ্য যেন জার্মান সেনাদের আসা-যাওয়ার পথে চোখে পড়ে। একে একে হারায় ফ্লোরিয়া সাথের তিনজনকে এমনকি জো্র করে এক জার্মান প্রেমিক বেলারুশ থেকে গ্রামবাসীদের জন্য আনা গরুকেও হারায় জার্মানদের গুলিতে।
ছবিঃ মৃত গরুর উপরে ফ্লোরিয়া
মৃত গরুকে টেনে নেওয়ার জন্য ফ্লোরিয়া নিজের বন্দুকের জোড়ে যখন অন্য এক বেলারুশের ঘোড়ার গাড়ি নিতে চায় কিন্তু তখন জার্মান সেনাদের আগমন। সেই অপর বেলারুশ ফ্লোরিয়াকে নিজের গ্রান্ডসন বানিয়ে নিজেদের গ্রামে নিজের বাড়ীতে নিয়ে যায় এবং যাওয়ার সময় খোলা প্রান্তরে খড়ের মধ্য লুকিয়ে রেখে যায় ফ্লোরিয়ার পার্টিজান কোর্ট এবং বন্দুক। সেই বাড়ীতে দেখা মিলে অগণিত ভীত সম্ভ্রস্ত্র লোক এবং সেই ভীত লোকদের মধ্য এসে এক জার্মান তার ভুড়ি ভোজন সম্পন্ন করতে বসে । জার্মানটির ভোজনাবস্থায় মাইকে ঘোষিত হয়,গ্রামের সবাইকে চার্চের নিকটস্থ জার্মানদের কাছে রিপোর্ট করার ঘোষনা এবং বলা হয়-তাদের জার্মান পাঠান হবে, জার্মান একটি সভ্য দেশ,সকলের যেন টুথপেস্ট থাকে টুথব্রাশ থাকে এবং আলাদা তোয়ালে থাকে। রিপোর্ট সম্পূর্ণ শেষ না হওয়ার আগেই গ্রামের সকল লোককে(অধিকাংশ মহিলা এবং শিশু) ঢুকানো হয় চার্চের মধ্য। পাশের জানালা দিয়ে একজন জার্মান ঘোষনা দেয় বাচ্চা রেখে পূর্ণবয়স্করা জানালা দিয়ে বাহির হয়ে আসতে। প্রথমে বাহির হয়ে আসে ফ্লোরিয়া,যাকে জার্মানরা নিজদের কাছে নিয়ে নেয়।ফ্লোরিয়ার পরে এক মহিলা শিশু নিয়ে বাহির হয়ে আসলে শিশুটিকে আবার চার্চে নিক্ষেপ করে এবং মহিলাটিকে নিজেদের ভোগের জন্য টেনে হিচরে লরীর কাছে নিয়ে যায়। তারপরে গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয় চার্চে,দেওয়া হয় আগুন, জলন্ত পুড়িয়ে মারা হয় গ্রামের লোকদের। দেখানো হয় একজন বেইমান বেলারুশকে যে শুরু থেকে জার্মানদের এই ঘৃণ্য কাজে সহযোগিতা করেছিল। যখন একদিকে আগুনে পুড়ছিল চার্চের মধ্যর লোকজন তখন অন্যদিকে চলতে থাকে জার্মানদের হাততালি এবং ক্ষাণিক গেস্টাপোদের আনন্দময়গুলি বর্ষণ। পাশাপাশি দেখান হয় এক জার্মান মহিলার তৃপ্তি সহকারে খাবার গ্রহণের দৃশ্য। চার্চ পোড়াকালীন সময়কালের শেষদিকেই ফ্লোরিয়াকে গুলি করছে এমনভাবে ছবি তোলার পোজ দেয় জার্মান সৈন্যরা।যদিও ফ্লোরিয়াকে গুলি না করে ফেলে দিয়ে চলে যায় ঐ সৈন্যরা। মাটিতে লুটিয়ে পরে ফ্লোরিয়া। জলন্ত চার্চের জায়গা ছেড়ে যায় জার্মানরা ধীরে ধীরে। যাওয়ার আগ মূহূর্তে মোটর বাইকে আরোহিত এক জার্মান সৈন্য লাথি দিয়ে বোঝার চেস্টা করে মাটিতে শয়নরত ফ্লোরিয়া মৃত না জীবিত। আরেকদল সৈন্য চলৎশক্তিহীন এক বৃদ্ধাকে খোলা প্রান্তরে একটি খাটে রেখে যায় এবং যাওয়ার সময় কটাক্ষ করে বলে-"ঠিক আছে দাদীমা তুমি এখানে থাক এবং ভবিষ্যত প্রজন্ম তৈরি কর"। দেখান হয় বেলারুশ নারী যে লরিতে উঠেছে সেই লরিতে উঠার জন্য জার্মানদের দৌড়াদৌড়ি।
ছবিঃ আনন্দের সাথে জার্মানদের চার্চে গুলি বর্ষণ
ছবিঃ ফ্লোরিয়াকে গুলি করছে জার্মানদের এই রকম পোজ (পিছনে জলন্ত চার্চ)
উঠে দাড়াঁয় ফ্লোরিয়া, কিছুদূর হাটাঁর পর ফ্লোরিয়া দেখতে পায় পার্টিজানদের অ্যামবুশে বিধ্বস্ত কিছুক্ষণ আগেই নির্মমতায় মত্ত জার্মানদের দেহ। পরে থাকতে দেখা যায় চার্চে বেলারুশদের জলন্ত পোড়ার সময় যে জার্মান নারী তৃপ্তির সহকারে খাবার নিচ্ছিল তার নিশ্চল দেহ। দেখা মিলে যে বেলারুশ নারীকে জার্মানরা ভোগের জন্য নিয়ে গিয়েছিল তার ক্ষতবিক্ষত জীবন্ত দেহ। একটি খড়ের মধ্য খুজে পায় ফ্লোরিয়া পূর্বে লুকিয়ে রাখা বন্দুক এবং পার্টিজান কোর্ট। বিধ্বস্ত জার্মান মোটরযান থেকে সংগ্রহ করে পেট্রোল। একটু দূরেই ফ্লোরিয়া দেখতে পায় পার্টিজান কতৃক ধৃত জার্মান SS বাহিনীর হর্তাকর্তাদের। যেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডার নিজেকে ফ্লোরিয়ার দাদার সাথে তুলনা করে কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া চার্চে গণহত্যার দায় এড়াতে চায় এবং সাথে সাথেই সে ভৎসণার শিকার হয় তার বাহিনীর এক অধস্তন অফিসারের। অফিসারের বক্তব্য হল-"নিচু জাতিদের পৃথিবীতে থাকার দরকার নেই এবং নিচুরাই কমিউনিজম নামক বস্তু ছড়াচ্ছে"। ফ্লোরিয়া নিজের সাথে নিয়ে আসা পেট্রোল এগিয়ে দেওয়ার মূহুর্তে ভয়ার্ত এক জার্মান সহযোগি পেট্রোল ছিটানো শুরু করে জার্মানদের গায়ে।তবে আগুন ধরানোর পূর্ব মূহুর্তে ক্রোধে পাগল পার্টিজানরা গুলি করে মারে জার্মানদের। তারপরে দেখা যায় ব্রিজের পাশে একটি ছোট্র ডোবার পাশে ফ্লোরিয়ার সমবয়সী এক কিশোরের দাড়িয়ে দাড়িয়ে ডোবাতে ডুবন্ত হিটলারের ছবির দিকে একদৃস্টিতে তাকিয়ে আছে । ছেলেটির পাশে ফ্লোরিয়া যখন দাড়ায় তখন পার্টিজান সহকারিদের ডাকে ছেলেটি চলে যায়। তারপরে দেখান হয় ক্যামেরায়,যুদ্ধের বাস্তব নারকীয় হত্যাযজ্বের ছবি,যুদ্ধবন্দীদের কংকালসার দেহ। ঘৃণাভরে ফ্লোরিয়া নিজের বন্দুক থেকে একটি করে গুলি ছুড়তে থাকে হিটলারের ছবির দিকে আর প্রতিটি গুলির সাথে স্ক্রীনে ভেসে আসতে থাকে ব্যাটল অফ বার্লিনে হিটলার ইয়থ বাহিনীকে হিটলারের সম্ভাবশণ থেকে শুরু করের জার্মানীতে নাৎসী মুভমেন্ট ,হিটলারের প্রথম মহাযুদ্ধের ছবি যা শেষ পর্যন্ত থামে মায়ের কোলে ছোট শিশু এডলফ হিটলার। মায়ের কোলে ছোট শিশু হিটলার আসার সাথে সাথে থেমে যায় ফ্লোরিয়ার বন্দুক থেকে গুলি। স্ক্রীনের পর্দায় ভেসে আছে নাজীদের হাতে বেলারুশ ভিলেজ ধ্বংস হওয়ার সংখ্যা(৬২৩)। তারপর ফ্লোরিয়া মিশে যায় পার্টিজানদের দলে এবং পার্টিজানরা হারিয়ে যায় জঙ্গলের মধ্য।
"কাম এন্ড সি" মুভিটি চ্যানেল-৪ এর মৃত্যর পূর্বে অবশ্যিই দেখা প্রথম পঞ্চাশ মুভির একটি।ছবিটি "আলেস আদামোভিচ" নামক এক পার্টিজান সদস্য নিজের চোখে দেখা ঘটনা নিয়ে চিত্রায়িত।
আমি মুভিটি অনেক ধৈর্্য্য নিয়ে র্যাপিড শেয়ার থেকে ডাউনলোড করে দেখেছি এবং দেখার পর আমার ধৈ্য্য কে সার্থক মনে হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৪৭