সচারচরই এমন কথা শোনা যায়। মাতা-পিতারা এরকম বলে সাবধান করে থাকেন। ছোটবেলায় মামাদের মুথে শুনতাম- ঢাকার হকাররা সব বাটপাড়, ঢাকায় সিনতাইকার গিজগিজ করে। আমি বারো বছর ধরে ঢাকায় আছি, হকারদের কাছ থেকে অনেক জিনিস কিনেছি, ঠকেছিও, কিন্তু কোনোদিন কোনো বাটপাড় দেখিনি, দেখেছি জীবীকার তাগিদে ধুলোবালি খেয়ে ধাক্কাধাক্কি করে রাত পর্যন্ত কাজ করে কোনো মতে বেঁচে থাকা কিছু ক্লান্ত মানুষ।
হরহামেশাই শোনা যায়- কাজের বুয়ারা খুব খারাপ। চোর দেখেছি, ওদের চুরি করতেও দেখেছি, কিন্তু আমি এ পর্যন্ত কোনো খারাপ কাজের বুয়া দেখিনি, দেখেছি ভাগ্যবিড়ম্বিত কিছু মানুষ, যারা কখনই তাদের কাজের স্বীকৃতি পায় না, যারা কখনই ন্যায্য মজুরী পায় না, যাদের কোনো সাপ্তাহিক ছুটি নেই, যাদের কোনো ভবিষ্যত নেই।
“বাসের হেল্পার, কন্ড্রাক্টর, হেলপার, এরা খুব খারাপ হয়” আমরা এরকম বলি না? তাই তো আমরা বলি। তুই তোকারি তো করিই, পারলে চড় থা্প্পড়ও মারি, আবার এদের কাছেই আশা করি যে, তারা আমাদের নীরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে! আমি এ পর্যন্ত অনেক ড্রাইভার হেলপার কন্ড্রাক্টরের সাথে অন্তরঙ্গভাবে কথা বলেছি, কখনো কোনো আলাদা মানুষ পাইনি। খুজে পেয়েছি, কেউ পিতা, কেউ ভাই, কেউ ছেলে, কেউ বা একাকী মানুষ। এদের দুঃখ বেদনা না-পাওয়া সব ভুলে থাকি আমরা যাত্রীরা। আমরা শুধু জানি এরা হেল্পার ড্রাইভার কন্ড্রাক্টর। আমরা জানি না, জানতে চাই না- সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পরও্ কতটা নিম্নমানের জীবনযাপন করতে এরা বাধ্য হয়। আমরা এদের কাছ থেকেই নিরাপদ ভ্রমণ ব্যবস্থা চাই!
কি ভয়ঙ্কর আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি! সাম্প্রদায়ীকতার রকমফের কত দিকে দিনে দিনে পাখা মেলেছে! রিক্সালা ভাবছে যাত্রী খারাপ, যাত্রী ভাবছে রিক্সালা খারাপ। আমরা কেউ কাউকে বুঝতে চাচ্ছি না, সবসময় আমরা প্রতিপক্ষ খুঁজে নিচ্ছি, মনে মনে বিষাদগার করছি, কখনো তা সংঘর্ষে রূপান্তরিত হচ্ছে, এভাবে পুরো সমাজটা হয়ে উঠেছে প্রতিশোধপরায়ণ। কি ভয়ঙ্কর!
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:৪০