somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্প: দারিদ্র্য এবং বন্ধুত্ব

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একজন দরিদ্র লোক দূরের হাঁটে শাক সবজি বিক্রী করতে যায়। চাষ করা শাক সবজী নয়, বন বাদাড় থেকে কুড়িয়ে পাওয়া।
বিশেষ করে কিছু ওষধী গাছ বিক্রী করে সে। গ্রামের হাটে এসব কে কিনবে, তাই সে দূরে শহরের হাটে যায়। অতদূরে যাওয়া খুব সহজ কথা নয়, খুব খরচের ব্যাপার, পোশায় না। সকালের ট্রেনটা ধরতে পারলে একটু যা হয়। ট্রেনে কোনোমতে গেলে কখনও দু পয়শা দিলে হয়, টিটির দয়া হলে কখনও না দিলেও হয়।
কিন্তু ঝামেলা বাধে জায়গায় পৌঁছে, স্টেশন থেকে বাজার অবশ্য বেশি দূরে নয়, কিন্তু অত সকালে ও বাজার মেলে না, ওখানে বাজার বসে দুপুরে।
বিকাল পর্যন্ত কাটানো এক মহা মুশকিল। তাছাড়া কিছু খাওয়াও তো লাগে। ছোটবেলার এক বন্ধু অবশ্য স্টেশনের খুব কাছেই থাকে। নরেন ভাবল, লজ্জা কীসের, স্কুলের বন্ধুই তো—কত একসাথে খেলেছি, কাঁচা আমা চুরি করে খেয়েছি …
খুব আত্মবিশ্বাসের সাথে শাক সবজীর ডালাটা স্টেশনের এক দোকানে রেখে বন্ধুর বাসায় যাবে ভাবছে, ঠিক এমন সময় সুকুমার পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে নরেন কে দেখে বিগলিত হয়–
আরে নরেন, তুই এখানে!
নরেন সব বলল।
“তা তুই এখানে কেন বসে থাকবি, রোজ আমার বাসায় যাবি, খেয়ে দেয়ে তারপর বাজারে আসবে, আর শোন, আমাকেও ওসব কিছু দিস কিন্তু।“
নরেন খুব আশ্বস্ত হয়। অাজকে আর যায় না। কাল থেকে যাওয়ার কথা ভেবে রাখে।
নরেন খুব ফুরফুরে মেজাজে আছে আজ। বউকে কিছু মাশকলাই ডালের বড়ি প্যাকেট করে দিতে বলে। থানকুনি পাতা, তেলাকুচা পাতা, বুনো কচু গাছের লতি, কলার মোঁচা -এরকম তরতাজা কিছু শাক সবজী সুকুমারের জন্য সে আলাদা করে রাখে।
আজকে সে দুইভাগে শাক সবজী নিয়ে রওনা হয়। এক ভাগ বিক্রীর জন্যে, আরেক ভাগ সুকুমারের জন্যে।
ট্রেন থেকে নেমে আর দেরি করে না, আজকে এমনিতেই ট্রেনটা একটু দেরি করে ফেলেছে।
ডালাটা খুব ভারী আজকে, বয়স পঞ্চান্ন হলেও পরিশ্রমে অপুষ্টিতে তাকে সত্তর বছরের বৃদ্ধের মতো দেখায়। কোনোমতে ডালাটা মাথায় নিয়ে নরেন সুকুমারের দরজায় হাজির হয়।
একি! দরজা তো তালাবন্ধ …
হতাশ হয়ে ফিরে আসে নরেন।
পরের দিনও একই রকম।
শাক সবজীগুলো পাশের বাসায় রেখে চলে আসে।
তৃতীয় দিন আর যায় না, অপেক্ষায় থাকে হয়ত সুকুমার স্টেশনে এসে তাকে নিয়ে যাবে।
সপ্তাহ খানেক পরে সুকুমারের সাথে আবার দেখা—
সুকুমার আবার একইরূপ বিগলিত হয়ে বলল,
“নরেন, তুই আজকেও এখানে বসে আছিস যে, আমার বাসায় যেতে পারতিস তো। আর, ও হঁ্যা, তোর দেওয়া শাক সবজীগুলো পাশের বাসার ওরা দিতে চেয়েছিল, বললাম, তোর বৌদি বাসায় নেই, তাই ওরা যেন খেয়ে ফেলে।”
নরেন কোনো কথা খুঁজে পায় না, শুধু বলে, তোর অফিশ কয়টায়?
“ও তুই তো আসলে কিছু জানিস না। আমি তো অবসর নিয়ে নিয়েছি, এখন প্রায় বাসায়ই থাকি, কখনও কখনও একটু বাজারে আসি। ‘বিশ্বাস ট্রেডার্স’ নামে যে চালের দোকানটা ওটার অর্ধেক মালিক আমি, মাঝে মাঝে একটু খোঁজ খবর নিতে হয়। পাইকারি দোকান, কর্মচারীরাই চালায়। আমি একটু হাঁটাহাঁটি করি, এই আর কী …
আছি তোদের আশীর্বাদে ভালোই। তুই কিন্তু যাস।” বলতে বলতে সুকুমার চলে যায়।

গল্পটি দিব্যেন্দু দ্বীপ -এর গল্প সংকলন ‘মানুষের মন’ থেকে সংগৃহীত।

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৪২
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×