somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিজোফ্রেনিয়াঃ একটি মানসিক ব্যাধি

২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মীরা এখন প্রায় প্রতি রাতেই ঘুমায়না। রাত তিনটার দিকে একটু ঝিমুনির মত আসে, কিন্তু ঘুম আসতে চায়না। গত্কাল রাতের কথা ভাবতেই, মীরার গাঁ কাঁটা দিলো। গত রাতে একটু ঝিমুনি আসছিলো, হঠাৎ দেখে সামনের চেয়ারটায় রফিক মামা বসে আছে, পায়ের কাছে পক করে পানের পিক ফেললো। ভালো করে চোখ খুলতেই রফিক মামা নেই। মীরা আর ঘুমাতেই পারেনি। সারা রাত বাতি জ্বেলে বসে ছিল।
রফিক মামা মীরার আপন মামা না মীরার মা রিনির লতা-পাতা সম্পর্কিত ভাই। উনি চার বছর আগে মারা যান। মীরার মা-বাবার বিবাহ বিচ্ছেদের পর এই লোকের আনাগনা হঠাৎ করে বেড়ে যায়। মায়ের সাথে রফিক মামার সম্পর্ক একটু বেশি তরল মনে হতে থাকে ওর। মীরাকে খুব স্নেহ করতেন “মা মনি” বলে ডাকতেন। তারপরেও লোকটাকে কেন যেন ওর সহ্য হতো না। পারিবারিকভাবে মীরার মা বিশাল সম্পত্তির অধিকারী হওয়ায় তাদের কখনও টাকার চিন্তা করতে হয়নি। তাই রিনির দিন কাল কাটতো সমাজ সেবা, সভা, সেমিনার-পার্টি নিয়ে। মাঝে মাঝে মীরার মনে হয় ওর বেকার বাপ নিরুদ্দেশ হয়ে বেঁচে গেছে।
রফিক মামা যেদিন মারা যান, মীরা একটুও কাঁদেনি। কারণ ঐ লোকটা যেদিন ওকে বাসায় একা পেয়ে বিছানার সাথে চেপে ধরেছিল, ওকে মাকড়শার মতো শুষে নিয়েছিল, ১২ বছরের মীরা কাউকে কিছু বলতে পারেনি।

এক মাস পর
রফিক মামা এখন খুব ঘন ঘন দেখা দিচ্ছেন। মীরা এখন প্রায়ই রফিক মামার কড়া জর্দার গন্ধ পায়। ওর এখন ঘুম আসেনা।


দুই মাস পরঃ
রিনার সময়ই হয়না মেয়ের সাথে দেখা করার। আজকে একটা বিশেষ দিন, আজ মীরার জন্মদিন, আজকের পুরো দিনটি সে মেয়ের সাথে কাটাবে। রিনা দরজায় নক করলো, ঠক ঠক ঠক, নাহ! কোনও সাড়া শব্দ নেই।দরজা একটু জোরে চাপ দিতেই খুলে গেলো।দরজার দিকে পিছন ফিরে মীরা বিছানায় বসা, চুল গুলো এলোমেলো হয়ে মুখ ঢেকে আছে। মায়ের ডাক শুনে মীরা ঘুরে তাকালো, মীরার ঠোঁটের কষ বেয়ে রক্ত ঝরছে। হাতে একটা মরা টিকটিকি।
রিনা আর কিছু দেখার মতো অবস্তায় থাকলেননা।

এত গেলো একজন মীরার কাহিনী, আমাদের আসে পাশে এরকম হাজারো মীরা আছে যাদের কাহিনী আমরা কখনই জানবোনা।


মীরা একটি মানসিক রোগের শিকার, এটিই সিজোফ্রেনিয়া। এটি কোন জীনে ধরা বা ভুতে পাওয়া না। আসুন জেনে নেই সিজোফ্রেনিয়া কি?

সিজোফ্রেনিয়া একটি মানসিক ব্যাধি যা সাধারণত কৈশোর বা তরুণ বয়সে বেশি হয়, তবে এটি যেকোনো বয়সে হতে পারে। সিজোফ্রেনিয়া রোগীর হিস্ট্রি নিলে দেখা যায়, তাদের জীবনে এমন কোন ঘটনা আছে যা তাদের ক্রমাগত মানসিক যন্ত্রণা দেয় যা অন্যের সাথে শেয়ার করা যায় না।
যেসব বিষয় সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হওার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। সেগুলি হচ্ছে,
১। মা-বাবার বিবাহ বিচ্ছেদ।
২। একাকী বড় হয়ে উঠা।
৩। অল্প বয়সে যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া।
৪। মাদকাশক্তি
৫।পরিবার কারো এই রোগ থাকা।
৬।অসামাজিক পরিবেশে বেড়ে উঠা।
৭। ছেলেবেলা থেকে ভুত, জীন সম্পর্কিত অস্বাভাবিক কাহিনী পরিবারের সদস্য দ্বারা শুনানো।


সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর লক্ষণ সমূহঃ
১। সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রোগী নিজের মধ্যে ভ্রান্ত বিশ্বাস লালন করে, অনেক সময় নিজেকে অস্বাভাবিক ক্ষমতার অধিকারী মনে করে।
২। কোন মানুষের কণ্ঠস্বর শোনা বা দেখা যাদের বাস্তবে কোন অস্তিত্ব নেই, তাদের সাথে কথা বলা।
৩। অন্য কারো স্বরে কথা বলা, অনেকে মনে করেন তাদের মাথায় কেউ ঢুকে বসে আছে।(মাল্টিপল পারসোনালিটি)
৪। ঘর অন্ধকার করে থাকা, কারো সাথে না মিশা।
৫। ছন্ন ছাড়া কথাবার্তা।
৬। নিজেকে অন্য কেউ মনে করা।
৭। কারণ ছাড়া রেগে যাওয়া।
৮। নিজে্কে অন্য কোনো প্রাণী মনে করা ইত্যাদি।




সিজোফ্রেনিয়া রোগীর মস্তিস্ক নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখেন তাদের মস্তিস্কের গঠন সাধারণ মানুষ থেকে একটু আলাদা। মস্তিস্কের কুঠুরি গুলো সাধারণ মানুষের তুলনায় বড় এবং এতে কেমিক্যাল ইমব্যাল্যান্স দেখা যায়।

শুধু আমাদের দেশ না উন্নত বিশ্বের অনেক দেশই দুষ্ট আত্মা ছাড়ানোর নাম করে এসব রোগীদের ওপর চলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।এরকম একটি অনুষ্ঠান হচ্ছে “এক্সসরসিজম”। এতে অনেক সময় ভিকটিম মারা যায়। অবশ্য অনেক দেশেই এটি নিশিদ্ধ করা হয়েছে। আমাদের দেশে এদের বলা হয় পাগল,জীনে ধরা। শিকল দিয়ে বেধে এদের চিকিৎসা করা হয়।

এধরনের মানসিক রোগে যারা আক্রান্ত তাদের সবথেকে বেশি প্রয়োজন পরিবারের ভালোবাসা। সঠিক চিকিৎসা ও কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে সিজোফ্রেনিয়া রোগী সুস্থ জীবন জাপন করতে পারেন।পীর-ফকির কবিরাজ না। একজন ডাক্তার, একজন ভালো সাইক্রিয়াটিস্ট পারেন এসব রোগীকে সুস্থ-সুন্দর জীবন ফিরিয়ে দিতে।
জীনে ধরা বা ভুতে ধরা বলে কিছু নেই, প্রয়োজন সঠিক চিকিৎসার আর প্রিয়জনের ভালোবাসার।

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৭
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×