কৃষক নেতা অ্যাডভোকেট শহিদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত -
কৃষক নেতা অ্যাডভোকেট শহিদ আবদুর রব সেরনিয়াবাতের অমর কির্তি, যা অধিকাংশ মানুষ ভুলে গেছে – নতুন প্রজন্ম জানেন না -
১৯৫৩ খৃঃ জুড়ে তৎকালিন পূর্ব পাকিস্থান ছিলো মুসলিম লিগ বিরোধি গণ আন্দোলনে উত্তাল ! ঘোষিত রাজনৈতিক দল না হলেও এ গণ আন্দোলনে পূর্ব পাকিস্থান যুবলীগের ভূমিকা ও নেতৃত্ব ছিলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্র্ণ (এই যুব লিগ বর্তমান আওয়ামি যুবলিগ নয়) ! সে বছর শেষের দিকে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) বরিশাল জেলার যুবলীগের ও কৃষক নেতা অ্যাডভোকেট আবদুর রব সেরনিয়াবাতের সভাপতিত্বে গণতন্ত্রী দলের জেলা অফিসে মুসলিম লিগ বিরোধি রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও রাজনৈতিক সক্রিয় কর্মীদের একটি বৈঠক (সভা) আহ্বান করেন ! প্রথমেই পূর্ব পাকিস্থান যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) এ বৈঠকের উদ্দেশ্য ব্যখ্যা করে বলেছিলেন, ‘যে প্রকারেই হোক মুসলিম লিগকে ১৯৫৪ র প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাচ্যুৎ করতেই হবে ! এ ক্ষেত্রে মুসলিমলিগ বিরোধি রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটি ‘যুক্তফ্রন্ট’ গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন’ ! পাক ভারত উপমহাদেশে (এমন কি পৃথিবিতে কোথাও) তখন পর্যন্ত কোনো সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল একত্রিত হয়ে একটি যৌথ প্লাটফর্ম (‘যুক্তফ্রন্ট’) গঠন করে নির্বাচন করেছে এমন নজির নেই ! তাই উপস্থিত সকলের মনে নানা প্রশ্ন জাগাই স্বাভাবিক ! কিন্তু যৌথ প্লাটফর্ম (‘যুক্তফ্রন্ট’) র প্রয়োজনিয়তা যুবলিগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) এমন সুন্দরভাবে উপস্থাপন করলেন যাতে করে সেখানকার সবাই তাতে একমত পোষণ করতে কোনো দ্বিধা করলেন না ! কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ কংগ্রেস ও কমিউনিস্ট পার্টিকে ‘যুক্তফ্রন্টের’ অন্তর্ভূক্ত করার বিরোধিতা করেন ! শেষ পর্যন্ত সর্র্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় যে, (১) আওয়ামি লিগ, (২) কৃষক শ্রমিক পার্টি, (৩) গণতন্ত্রী দল ও (৪) নেজামে ইসলাম এই ৪ (চার) টি দল নিয়ে ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হবে ! এই ৪ (চার) দলের কেন্দ্রিয় নেতাদের সাথে যোগাযোগে করা ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার দায়িত্ব অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা), অ্যাডভোকেট আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও মঠবাড়িয়ার মহিউদ্দিন আহমেদের উপর অর্পন করা হয় ! যতদূর জানা যায়, ১৯৫৪ এর ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠনের প্রাথমিক উদ্যোগ অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা), অ্যাডভোকেট আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও মঠবাড়িয়ার মহিউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে বরিশাল থেকেই শুরু হয়েছিলো ! ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠন ও ‘যুক্তফ্রন্ট’এর বিজয়ে তাঁদের ভূমিকা ছিলো অন্যতম শীর্ষস্থানীয় !
বিশাল মনের অসাম্প্রদায়িক এবং সংস্কৃতিমনা এই মানুষটি ১৪ চৈত্র ১৩২৭ বঙ্গাব্দে এবং ২৮ মার্চ ১৯২১ খৃস্টাব্দে বরিশাল জেলার আগৈলঝড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তারা ছিলেন দুই ভাই, এক বোন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল খালেক সেরনিয়াবাত এবং মাতার নাম বেগম হুরুন্নেছা। তাঁর বাবা ছিলেন গৈলা ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট। তিনি ছয় কন্যা এবং তিন পুত্রসন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম আমেনা বেগম হেলেন। যিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেজো বোন। কৃষক নেতা অ্যাডভোকেট শহিদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশালের গৌরনদীর চাঁদশী হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা পাস করেন। বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে এইচ.এস.সি. উত্তীর্ণ হন। উচ্চশিক্ষার জন্য কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে পড়েন, থাকতেন বেকার হোস্টেলে। এই কলেজে তরুণ শেখ মুজিবুর রহমানকে সহপাঠী হিসেবে পান।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:৪৪