১৯৪৮ খৃস্টাব্দের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলিগ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাকালিন সংগঠনটির নাম ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলিগ’ হলেও
১৯৫৫ খৃস্টাব্দের সম্মেলনে ‘মুসলিম’ শব্দটি কর্তন করে অসম্প্রদায়িক নীতি গ্রহণ করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হল মিলনায়তনে ‘নাজমুল করিমের’ সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একটি সভায় ‘পূর্বপাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলিগ’ নামে একটি নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। রাজশাহির নঈমউদ্দীন আহমেদকে আহবায়ক করে ১৫ সদস্যের কমিটি আত্মপ্রকাশ করে। ১৫০ মোগলটুলি মুসলিম লিগ ওয়ার্কার্স ক্যাম্পই ছিলো পূর্বপাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলিগের প্রথম কার্যালয়-
১৫ সদস্য বিশিষ্ট প্রথম ‘আহবায়ক কমিটির অন্যান্য সদস্য হলেন, বরিশালের আব্দুর রহমান চৌধরী, ফরিদপুরের শেখ মুজিবুর রহমান, কুমিল্লার অলি আহাদ, নোয়াখালির আজিজ আহমেদ, পাবনার আব্দুল মতিন, দিনাজপুরের দবিরুল ইসলাম, রংপুরের মফিজুর রহমান, খুলনার শেখ আব্দুল আজিজ, ঢাকার নওয়াব আলি, ঢাকা সিটির নুরুল কবির, কুষ্টিয়ার আব্দুল আজিজ, ময়মনসিংহের সৈয়দ নুরুল আলম, চট্টগ্রামের আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরী-
দবির-খালেক ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক দবিরুল ইসলাম
১৯৫৩ খৃস্টাব্দের ছাত্রলিগের প্রথম সম্মেলনে সভাপতির পদ অলংকৃত করেন। সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন খালেক নেওয়াজ খান। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনকেই পরের বছর বিদায় নিতে হয় ১৯৫৪ এর নির্বাচনে বিজয়ি হওয়ায়। পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষমতার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে শেরেবাংলা -সোহরাওয়ার্দি- ভাসানির যুক্তফ্রন্ট কোন্দলের মুখে পড়ে আওয়ামি লিগ।
১৯৫৪ খৃস্টাব্দে কামরুজ্জামানের শুধু নয়,
১৯৫৫ খৃস্টাব্দে পরবর্তি সভাপতি আব্দুল মমিন তালুকদারেরও জুটি রূপে এম. এ. ওয়াদুদ ছাত্রলিগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বপালন করেন। ওয়াদুদের মেয়ে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রি ও বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রি ডাঃ দীপু মনি। মতিয়াগ্রুপ ছাত্রইউনিয়ন করা দীপু মনি আওয়ামি লিগের যুগ্ম সম্পাদক।
১৯৫৪-১৯৫৫ এবং ১৯৫৬-১৯৫৭ দু’মেয়াদে ছাত্রলিগের সভাপতির পদে দায়িত্বপালনকারী আব্দুল মমিন তালুকদার-
১৯৫৭-১৯৬০ মেয়াদে ছাত্রলিগের সভাপতি ছিলেন রফিক উল্লাহ চৌধুরী। সি.এস.পি. পরিক্ষায় প্রথম স্থান অধিকারি রফিক উল্লাহ আমলাতান্ত্রিক জিবনব্যবস্থা বেছে নেন। বর্তমান স্পিকার ডঃ শিরীন শারমিন চৌধুরী তার মেয়ে। রফিক উল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে দু‘বছর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন কাজী আজাহারুল ইসলাম। ব্যারিস্টারি পড়তে বিলাতে গমন করায় পরবর্তি এক বছর (১৯৫৯-১৯৬০) সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বপালন করেন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। ১৯৬০-১৯৬৩ ওই দুই মেয়াদেই সভাপতি হন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন।
১৯৬০-১৯৬৩ পর্যন্ত শাহ মোয়াজ্জেমের সঙ্গে শেখ ফজলুল হক মনির জুটি ছিল ছাত্রলিগের ইতিহাসে একটি বলিষ্ঠ জুটি।
১৯৬৩-১৯৬৫ মেয়াদে ছাত্রলিগের সভাপতি ছিলেন কে. এম. ওবায়দুর রহমান। তার সঙ্গে জুটি বেঁধে ছিলেন সিরাজুল আলম খান।
ফেরদৌস আহমেদ কোরেশি ও আব্দুর রাজ্জাক ও মাজহারুল হক বাকি ও আব্দুর রাজ্জাক জুটিও ছাত্রলিগের ইতিহাসে এক অনবদ্য চরিত্র। ফেরদৌস কোরেশি ছাত্রলিগের সভাপতি শুধু নন, ডাকসুরও ভি.পি. ছিলেন। ১৯৬৫-৬৬ মেয়াদে।
১৯৬৫-১৯৬৬ মেয়াদে ছাত্রলিগের সভাপতি ছিলেন মাজাহারুল হক বাকি। বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা আন্দোলনের তুখোড় নেতা হিসাবে সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাকের ন্যায় বলিষ্ঠ ভুমিকায় অবতির্ণ ছিলেন বাকি।
আব্দুর রউফ ১৯৬৮-১৯৬৯ খৃস্টাব্দে ছাত্রলিগের সভাপতি হন আব্দুর রউফ। খালেদ মোহাম্মদ আলি আব্দুর রউফের সঙ্গে ছাত্রলিগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন খালেদ মোহাম্মদ আলি। ১৯৬৯ গণঅভ্যুত্থানের সময়ে তিনি বিশিষ্ট ভুমিকাপালন করেন।
তোফায়েল আহমেদ ছাত্ররাজনিতির ইতিহাসে কিংবদন্তিতুল্য মহানায়ক। ১৯৬৯ র গণঅভ্যুত্থান হয় তার নেতৃত্বে। তোফায়েল আহমেদ ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানত্তোর ২৩ ফেব্রুয়ারি কারামুক্ত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘‘বঙ্গবন্ধু’’ উপাধীতে ভূষিত করেন। ছাত্রলিগের সভাপতি হন এরপর পরই। তার সাধারণ সম্পাদক আ.স.ম. আব্দুর রবও পরের বছর ডাকসু ভি.পি. হন।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৫১