জেনারেল নিজের কমান্ড রুমে একা বসে আছেন । বাইরে আকাশ টা লালচে – সন্ধ্যা নেমে আসছে । আক্ষরিক অর্থেই গ্যালাক্সিতে সন্ধ্যা নেমে আসছে । তার সামনে একটা কাঁচের ডিসপ্লে তে একটা চকচকে বর্ম , সাথে শিরস্ত্রাণ, দস্তানা । শুধু একটা সমস্যা, এই বর্ম বা আরমার টা জেনারেল বা বা অন্য কারো দেহের আকৃতিতে নয় । বহুদিন ধরেই একটা উপকথা প্রচলিত ছিল যে এই আরমার টা একটা অন্য বুদ্ধিমান প্রজাতির প্রাণীদের দেহের উপযোগী করে তৈরি । তাতে কিছু আসে যায় না – গ্যালাক্সি জুড়ে এমন অনেক আজেবাজে রুপকথা ছড়িয়ে আছে, জেনারেল এসব কথায় কান দেয়ার মত লোক নন ।
একটা প্রাচীন, অদ্ভুতুড়ে আরটিফ্যাক্ট – যা কিনা কালেক্টরদের পাগলামির বস্তু – জেনারেলের আগ্রহ জাগাত না কখনোই । শুধু গত বছর, বিজ্ঞান একাডেমির মহাপরিচালক আবিষ্কার করেন যে আরমার টা কোন সাধারণ এন্টিক নয়, এটা কাজ করে । এবং তাত্ত্বিক ভাবে , আরমারের আকৃতির প্রাণীরা এটা যদি পড়তে পারে তবে এই আরমারের ক্ষমতা হয়ে দাঁড়াবে প্রায় অসীম । স্বভাবতই এর নাম হয়ে দাঁড়ায় গডস আরমার – ঈশ্বরের বর্ম । সেটাও বিজ্ঞানী আর সরকারের মাথাব্যাথা ছিল, জেনারেলের না । গতকাল পর্যন্ত ।
এখন গ্যালাক্সিতে দুটি রাজনৈতিক জোটের ভিতর প্রায় যুদ্ধাবস্থা, এবং জেনারেলের বিরোধী জোট এই আরমারের খোঁজে আছে । ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের খবর অনুযায়ী তারা কোন একভাবে এই আরমারের শক্তি ব্যবহার করার পদ্ধতি খুজে পেয়েছে । তারপর থেকেই এই আরমার জেনারেলের একদম নিজের দুর্ভেদ্য দুর্গের ভিতর স্থানান্তরিত হয় । আর গতকাল...
গতকাল সন্ধ্যার মিটিং টা এখন কেমন যেন ভাসা ভাসা লাগছে ।
একাডেমীর প্রধান এস্ট্রোনমার একা দেখা করতে এলেন । হাইপার স্পেসে যুদ্ধে এস্ট্রোনমার দের সাহায্য লাগে, তাই বলে চীফ এস্ট্রোনমার নিজে? তাও রুদ্ধদার মিটিং? বুঝাই গেল চীফ এস্ট্রোনমার বেশিরকম নার্ভাস । কোনমতে বসল । তারপর, কোন ভূমিকার ধার না ধেরে প্রায় ফিসফিসিয়ে একটা বোমা ফাটাল,
“গডস আরমার পুরোপুরি নিখুঁত ভাবে মিলে যাবে – এমন দৈহিক কাঠামোর প্রাণীদের খোজ পেয়েছি আমরা”
জেনারেলের মনে হল লোকটা আবল তাবল বকছে – তারপর, দু সেকেন্ড পরে তিনি বুঝলেন ব্যাপারটার গভীরতা কত । সুপ্রাচীন কালের এক রুপকথা বাস্তব হয়ে গেছে! তাও গ্যালাক্সি জুড়ে এক সংঘাতের সময়!
“কোথায়?” , জেনারেলের গলার স্বর চীফ এস্ট্রোনমারের চাইতেও নিচু ।
একটা ফাইল বাড়িয়ে দিলেন চীফ এস্ট্রোনমার, “কো অরডিনেট, আর অন্যান্য ডিটেইল দেয়া আছে ।”
এখন, একটু পরে তার সেরা এবং বিশ্বস্ত তিনজন কোমান্ডো আসবে । ইতিহাসের সবচে গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু গোপন মিশনে তারা এই আরমার টা নিয়ে যাবে সেই প্রানীদের গ্রহে । যদি একটা রিক্রুট পাওয়া যায় – এই যুদ্ধের চেহারাই পালটে যাবে । আর যদি বর্মের নাম অনুসারে, প্রাণীগুলা আসলেই ঈশ্বরের মত হয় ... আর ভাবলেন না জেনারেল । হয়ত গ্যালাক্সি হবে তাদেরই ।
তিন কোমান্ডো কক্ষে ঢুকল । আরমারটা নিয়ে যাবে । নিয়ে যাবে গ্যালাক্সির একদম প্রান্তের একটা আপাত গুরুত্বহীন সৌরজগতে । সেই প্ল্যানেটারি সিস্টেমের তিন নম্বর গ্রহটায় থাকে সেই অদ্ভূত গড়নের প্রানীগুলো – মানুষ ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:১২