somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন আমার 'গল্প'

২২ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৩:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বেশ কিছুদিন ধরেই আমাকে নিয়ে লেখার বড্ড সাহস হচ্ছিলো। লিখবো লিখবো বলে লেখা হচ্ছিলোনা, যদিও দিনের অধিকাংশ সময় এই লেখালেখির মধ্যেই আমায় থাকতে হয়। অনেক অনেক প্রশংসা পাই যখন একেকেকটি ভালো লেখা কাছের দূরের সকলের হৃদয় স্পর্শ করে। এ বছরটাকে নিজের লেখালেখির 'স্বর্নালী সময়' বলাটাও বাঞ্চনীয় বলা চলে। অনেকটা স্বপ্নের মতো সময়টা যাচ্ছে। জাতীয় পর্যায়ের দৈনিক গুলোয় যখন নিজের নাম দেখি , তখন সগর্বে বলতে ইচ্ছে করে ,'হে পৃথিবী! দেখো আমি পেরেছি। আমার লেখা নিছক লেখা নয়। আমার লেখা সবাই পড়বে বলেই লেখা হয়!'

একসময় টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে যে পত্রিকাগুলো কিনে বাবা-মা'র 'ঘরকোণে' ছেলে এই আমি গভীর মনযোগে ডুব দিতাম আজকাল সে পত্রিকায় আমার লেখা ছাপা হচ্ছে, এটা নিশ্চয়ই গর্বের। নিয়তি একসময় আমায় পড়িয়েছে, এখন হয়তো লেখাচ্ছে!

সত্যি বলছি আজ আমাকে নিয়ে লিখবো বলে কি-বোর্ড হাতে নিয়েছি...

আমাকে নিয়ে লেখা শুরু করতে আমার বেশ কিছু চিন্তা জোগাড় করতে হয়েছে। আমি দেখতে পেয়েছি যে আমি বাক্য গঠন করতে পারছি। এবং আমি এই মুহূর্তে তেমন কোনো বিষয়বস্তু পাচ্ছি না যা নিয়ে লেখা যেতে পারে। তাছাড়া আমার বিষয়গুলো গত কয়েক ঘণ্টা ধরে আমাকে ভাবাচ্ছে। তাই এই মুহূর্তে আমাকে নিয়ে লেখাটাই সবচেয়ে জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গতরাত চারটার দিকে অবশেষে চোখ বন্ধ করেছিলাম। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সবগুলো মসজিদ থেকে একযোগে আযান দেওয়া শুরু করল এবং আশেপাশের এলাকার আযান শেষ হতে হতে একটা সময়ে আলো ফুটতে শুরু করল।

আমি টের পাচ্ছিলাম। কিন্তু তবুও ঘুমানোর চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। কিন্তু আকাশে চিলগুলো যখন ডাকাডাকি শুরু করলো তখন আমার চোখ মেলে তাকাতে ইচ্ছে করলো। তাকিয়ে দেখতে পেলাম খয়েরী রঙের চিলগুলো তাদের বিশাল ডানা মেলে দিয়ে উড়ছে। আর আকাশটার রঙ মাঝে মাঝেই বদলে যাচ্ছে। আমার দেখা সুন্দর দৃশ্যগুলোর ভিতরে এই দৃশ্যটাকে জায়গা করে দিতেই হলো।

এর আগে আমি চোখ বন্ধ করে রেখে নিজের বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে বোঝার চেষ্টা করছিলাম। কেন আমি শিল্পের কাছে যেতে পারছি না। কেন আমি নিজেকে সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারছি না। কেন আমি ঠিক কি চাই তা ভেবে বের করতে পারছি না এইসব। বলা বাহুল্য যে আমি এসবের কোনো কূল কিনারা বের করতে পারিনি। হয়তো আমি সঠিক ভাবে বিশ্লেষণ করা শিখে নিতে পারিনি এখনো!

কিন্তু সে কারণে আমার চিন্তা ভাবনা বিক্ষিপ্ত হয়ে গেছে এবং আমি ঘুমানোর ব্যাপারটায় মনোযোগ দিতে পারি নি তেমনটা নিশ্চয়ই হয়নি। তাছাড়া এর আগের অনেকবার আমি পরীক্ষার আগের রাতে নানান বাহানায় না ঘুমিয়ে রাত পার করেছি। কেনো যে এসব রাতেই সব কিছু বুঝে ওঠাটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে সেটাও এক রহস্য। তবে পরীক্ষার আগে রতে কতবার কত পরীক্ষার্থীকে মিথ্যে বলেছিলাম- আমি এখন ঘুমাব, এবং আমার মনে হয় পরীক্ষার হলে মস্তিস্কের সবচেয়ে ভালো পারফর্মেন্সটা পাবার জন্য তোমারও কিছুটা ঘুম প্রয়োজন!

আমি বুঝতে পেরেছি যে আমি একজন প্রকৃতি ঘেঁষা মানুষ বা প্রকৃতিপ্রেমী। কেননা আমার আকাশের রঙ বদলানো ভালো লেগেছে, পাখিদের চলাফেরা এবং শব্দ ভালো লেগেছে, ফুল এবং সবুজ গাছ ভালো লেগেছে। আমি লিখতে পারি। গদ্য এবং পদ্য। এবং একই সাথে আমি একজন বঞ্চিত মানুষ, কেননা পৃথিবী আমাকে যা যা দেবার কথা তার বেশিরভাগই আমি পাচ্ছি না।

এই ক্ষুদ্র জীবনে কতোইনা লম্বা পথ ধরে হাঁটছি! ইন্টারমিডিয়েটের সময় টিউশন করা থেকে শুরু হওয়া সেই পথ এখনও উদ্দেশ্যবিহীনভাবে চলছে তো চলছেই... টিউশন, কোচিংয়ে ক্লাস নেয়া, সেলসে চাকুরী করা, একাউন্টসের বড় দায়িত্ব নেয়া, পণ্যের রঙ্গচটা মডেল হওয়া, অভিনয়-থিয়েটার করা , বিতর্ক জেতা, সাংগঠনিক কাজে নিজেকে জড়ানো, টুকটাক লেখালেখি থেকে সংবাদকর্মী হয়ে ওঠা! সব কিছুতেই এক্সপেরিমেন্ট করেছি আমি নিজেকে। স্থিরভাবে কিছু চিন্তাও করিনি তবু আমি অনেক পেয়েছি জায়গাগুলো থেকে। শিখেছি অনেক, বুঝেছি অনেক এবং ...বঞ্চিত হয়েছি প্রতিটি স্তরে!

নিজেকে নিয়ে আমার স্বপ্নগুলো যখন ক্রমাগত বেড়েই চলছিলো, তখন বড় ধাক্কাগুলো খাই। নিজের বর্তমান পড়াশুনার জায়গা নিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে কতশত জন কত কথা বলে তার ইয়াত্তা নেই। ঠিক এই কথাগুলো শুনার পরেই নিজেকে 'হতাশাগ্রস্থ' এক মানুষ হিসেবে আবিষ্কার করি এবং এই হতাশা থেকে উতরে ওঠতে এই আমাকে প্রতিনিয়ত করতে হয়েছে মনস্তাত্ত্বিক সংগ্রাম। আর এই সংগ্রাম থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়ে বিভিন্ন স্তরে ঘুরতে হয়েছে, খোঁজতে হয়েছে সাফল্য। সব পেয়েছির এই পৃথিবীতে আমি চাওয়া অনুপাতে যদি পেতাম তাহলে নিশ্চিত আজকের এই লেখাটা ধৈর্য্য ধরে আপনার পড়তে পর্যন্ত হতোনা। যখনই কদাচিৎ কিছু পাওয়ার আনন্দে ভেসেছি আড়াল থেকে কিছু একটা হারিয়েছি... আর সেই 'কিছু একটা' আমাকে ধুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছে কতকাল ধরে।

আমি সগর্বে বলছি, আমি সাহিত্যের শিক্ষার্থী। হোক না তা ইংরেজী সাহিত্য। আমি ডুব দিই সাহিত্যে। সাঁতার জানিনা ঠিক তবু অক্লান্তভাবে ডুবার চেষ্টা চালিয়ে যাই। সবচেয়ে বড় কথা আমি আর ভালো ফলাফলের জন্য পড়িনা। যা পড়ি তা কেবলই জানার জন্য। ভালো ফলাফলের স্বাদ তো নেহাত কম পেলাম না! ভালোতে কতটুক ভালোতে পৌঁছেছি তা আমি ভালো করেই তো দেখছি।

বেশ কিছুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন মানুষের সাথে মিশে একটা এক্সপিরেমেন্ট চালিয়ে দেখলাম আমার চেয়েও বেশি হতশাগ্রস্থ মানুষ নেহাত কম নেই। প্রতিটি স্ট্যাটাস, ছবি, সেলফি, স্যাটায়ার, সার্কাজম কিংবা লাইভের পেছনের গল্পই হতাশার। যদি এসবে যথেচ্ছ সুখই থাকতো তবে কেন ফেবুতে এসব প্রকাশ করে বাড়তি সুখের আশা করতো মানুষ? আসলেই, আমরা প্রত্যেকে একেজন বড় বড় অভিনেতা । মনে শত কষ্ট নিয়েও কেমন একটা সুখ-সুখ চেহারা নিয়ে হাসি মুখে ঘুরে বেড়াই! আসলেই, আমরা পারিও!

নিজের সম্পর্কে আরও যেটা না বললেই নয় তা হলো আমার দায়িত্ববোধের অভাবের বিষয়টা। বন্ধুদের ভাষায় ‘চূড়ান্ত’ অভাব। ওদের কাছে এখনো প্রায়ই শুনতে হয়- তুই যদি আর একট রেস্পন্সিবল হতিস তাহলে ‘এই’ বিষয়গুলো ‘এরকম’ হত না ইত্যাদি ইত্যাদি। আসলে ব্যাপারটা নিয়ে আমিও ভেবেছি এবং দায়িত্ববোধের জন্ম দেবার চেষ্টা করছি নিজের ভিতরে।

যা দেখলাম- নিজেকে নিয়ে লেখার কাজটা খুব সহজ। কিভাবে এতোগুলো শব্দ লিখে ফেলেছি তা নিজেও জানি না। কিন্তু এই মুহূর্তে নিজের সম্পর্কে আরও অনেক কিছু জানার প্রয়োজনটাও দেখা দিয়েছে।

আর হ্যা, আপনার ধৈর্য্যের তারিফ করতে হয়! ভালো থাকবেন ।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৩:২৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×