আমাদের দেশে গ্রামে বা শহরে মারামারি লাগলে প্রায়ই শোনা যায় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা, বা দেশীয় অস্ত্র সহ এতোজন আটক ব্লা ব্লা ব্লা। আবার এলাকা থেকে যদি একটু বড় পরিসরে আসি, দেশের রাজনীতির পটপরিবর্তনের সময় রাজপথেও আমরা হরহামেশাই দেখি দেশি অস্ত্রের ঝনঝনানি। দুই পক্ষ মুখোমুখি, ক্যাডারদের কারো হাতে দা-বটি কারো হাতে কাস্তে…আবার কারো হাতে চোখা করা কাটা তেল মাখানো চকচকে মুলি বাঁশ (সত্যি বলতে কি, এই ধরণের পরিস্থিতিতে এটাই মনেহয় সবচেয়ে কাজের জিনিষ)।
যাইহোক, দেশে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সহিংসতা এই পোস্টের বিষয় না। এই পোস্টের বিষয় হলো আমাদের থেকে বহুদূরের দেশ ইউক্রেনের মেইডেন স্কোয়ারে ‘দেশীয় অস্ত্রের’ প্রদর্শনী। বিদেশের খবর নিয়ে যারা ঘাটাঘাটি করি তারা নিশ্চই জানি গতবছর নভেম্বরে তুমুল সরকার বিরোধী বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিলো ইউক্রেনের জনগন। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচের পদত্যাগের দাবীতে তারা অবস্থান নিয়েছিলো রাজধানী কিয়েভের মেইডেন স্কোয়ারে। সেখানে কখনো পুলিশ আবার কখনো সামরিক বাহিনীর সাথে তারা সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে।
তো সেই অবস্থানের সময় বিভিন্ন সংবাদকর্মীদের সাথে কিয়েভে গিয়েছিলেন ফটোগ্রাফার টম জেমিসন। সেখানে গিয়ে ভদ্রলোক একটা অদ্ভূত ব্যাপার খেয়াল করেন, সেটা হলো, প্রত্যেকের হাতে কিছু না কিছু অস্ত্র আছেই। সেটা সামান্য লাঠি হতে পারে, অথবা লম্বা হাতুড়ি। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো সবগুলো অস্ত্রই একটার থেকে আরেকটা আলাদা! দেখে মনে হচ্ছে যেন, যার যার অস্ত্র সে তার মতো করে বানিয়ে এনেছে।
এই ব্যাপারটা খেয়াল করার পর জেমিসনের মনে হলো এই বিচিত্র ধরণের অস্ত্রগুলোই হতে পারে তার ফটোগ্রাফির সাবজেক্ট। যা ভাবা তাই কাজ, খেপাটে এই ফটোগ্রাফার উত্তাল বিক্ষোভের সেই দিনগুলোতে একটা কালো কাপড় নিয়ে চত্বরে ঘুরে বেড়িয়েছেন আর যেখানে এই ধরণের অস্ত্র দেখেছেন, তার ছবি তুলেছেন।
পরবর্তীতে এই অস্ত্রের ব্যাপারে আর আন্দোলনের ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো। তখন তিনি যেটা বলেছেন, এই অস্ত্রের প্রদর্শনী আসলে একটা শোডাউনের মতো ছিলো, পুলিশের গুলির সামনে এসব কিছুই না। তবে প্রতিরোধের একটা পালটা মেসেজ পৌছে দিতে এই শোডাউন বেশ ভালোই কাজে দিয়েছিলো।
আসুন দেখি ইউক্রেনীয়দের বানানো সেইসব ‘দেশীয়’ অস্ত্রের কিছু নমুনা,
বিভিন্ন ধরণের মুগুর, কোনোটায় কাঁটা লাগানো, কোনোটা দড়ি দিয়ে হাতের সাথে বাঁধা যেনো কেউ টান দিয়ে নিয়ে ফেলতে না পারে। কোনোটার উপর লেখা ইয়ানুকোভিচের পতন হোক, অথবা বিভিন্ন স্লোগান কিংবা শুধু “গ্লোরি ফর ইউক্রেন”।
লাঠির মাথায় হাতুড়ি। ঠকাস করে মাথার উপর একটা দিলেই খুলি ফুটা হয়ে যাওয়ার কথা। নিচের অংশ আবার চোখা করা আছে, মানে উপযুক্ত সময়ে সেটাও ব্যাবহৃত হতে পারে।
লাঠির সাথে শেকলের এক্সটেনশন। ঘুরিয়ে সপাং করে মুখের উপর মারলে চোখ দিয়ে আর দুনিয়া দেখতে হবে না!
পুলিশের লাঠিচার্জ?? হুহ, ডরাই নাকি!!!
দুইটা জিনিষ একদম সবার কাছে ছিলো, হেলমেট আর ব্যাট। অবশ্যই তার গায়ে সরকারবিরোধী স্লোগান লেখা!
কি?? চেনা চেনা লাগে? বলেন তো এটা কি জিনিষ, এর কাজ কি?
আর সব অস্ত্রের শেষ অস্ত্র ছিলো ইট-পাটকেল। আর সেগুলো সংগ্রহ করা হতো রাস্তা ভেঙ্গে অথবা আশপাশ থেকে।
--
আরও দেখুন এখানে
দা-বটি-বাঁশ তো বহু দেখেছেন! আসুন এবার দেখি কিছু ‘বিদেশী’ ‘দেশীয় অস্ত্র’ !!! (ইউক্রেনের মেইডেন স্কোয়ার থেকে)
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১৭টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ
ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন
সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?
আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন
পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?
রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন
গরমান্ত দুপুরের আলাপ
মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন