কিরে নওয়াবজাদার পোলা! বলি তোর কি ঘুম ভাঙ্গিলো? নাকি ঠান্ডা জল দিয়া বিছানা স্নান করাইতে হইবে?
শীতের মৌসুমে ঠান্ডা জলের নাম শুনিয়াই গিটলু মিয়া তত্ক্ষণাত্ ধরফরাইয়া বিছানা থেকে উঠিলো। উঠিয়াই এই শীতের সকালে ঘুমের ১২ টা বাজানোর জন্যে মনে মনে তাহার শ্রদ্ধেয় বাপজানকে কয়েকটা শ্রুতিকটু শব্দ চয়ন করিয়া শোনায় দিলো। তবে গিটলু মিয়ার মন থেকে ঐ শব্দ গুলি তাহার গলা বেয়ে ঠোটে আসিয়া আর পরিপূর্ণতা পাইলো না। তাই ঠোট যুগল একে অপরের সাথে আঠার মতো লাগিয়া পূর্বের ন্যয় চুম্বনে লিপ্ত থাকিলো।
চক্ষু যুগল কচলাইতে কচলাইতে দাত মুখ ধুইয়া যখন গিটলু মিয়া সকালের নাস্তা সারিবার নিমিত্তে ডাইনিং রুমে পৌছিলো তখন বাধিলো আরেক বিপত্তি। তাহার বাপজান তাকে দেখিয়াই বলিলো,
"আসো আসো আমার কলিজান ছিলকা মনি! তা তোমার ঘুম কি পরিপূর্ণ হইলো নাকি এই টেবিলেও একটা বিছানা পাতিয়া দিবো তোমার জন্যে?"
এক গাল হাসিয়াই গিটলু মিয়া কহিলো,
"কি যে বলেন না আব্বাজান! ঘুম আমার ষোলকলাই পূর্ণ হৈয়াছে। তাহা নিয়া আপনাকে চিন্তিত হইতে হইবে না"
নিস্কর্মা পুত্রের এহেন কথা শুনিয়াই তাহার বাপজান তেলে বেগুনে জ্বলিয়া উঠিলেন। কিছু অশ্রাব্য বাক্য চয়ন সহিত তাহাকে বলিলেন,
"তা দুই দুইবার মেট্রিক ফেইল মারিলা। এখন কাম কাজ কিছু করো। সারাদিন ঘুমাইলে এবং এলাকা ঘুরিলে ভবিষ্যতে তোমাকে ভাত দিবে কে?"
বাপের গালিগালাজ শুনিয়াই গিটলু মিয়ার স্নেহময়ী মাতাজান তত্ক্ষণাত্ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করিলেন এবং তাহার মূল্যবান বক্তব্য পেশ করিলেন যে,
"ছেলেটাকে এইবার বিয়েসাদি করিয়ে দাও। দেখিবে এমনিতেই মানিক আমার সুধরিয়া যাইবে"
বিয়ের নাম শুনিয়াই গিটলু মিয়ার লজ্জায় কান গাল লাল হৈতে শুরু করিলো। তাহার নিম্নদেশের ঘুমন্ত রাজকুমার ক্ষাণিক কাপিয়া উঠিয়া তাহার উপস্থিতি বয়ান করিলো। হয়তো রাজকুমার মনে মনে বলিলো,
"বিয়ে পরবর্তী কর্ম সম্পাদনে আমি প্রস্তুত"
কিন্তু গিটলু মিয়া ছাড়া তাহা কেহই বুঝিয়া উঠিতে পারিলো না।
মফিজের চা দোকানে বসিয়া বসিয়া গিটলু মিয়া পাঁচ কাপ চা পান করিয়া ফেলেছে এবং কিছুক্ষণ বাদে বাদে ঘড়িতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। আজ এতো দেড়ি হচ্ছে কেন তা গিটলু মিয়া বুঝিয়া উঠিতে পারছে না। যখন ছয় নম্বর চায়ের কাপে চুমুক দিবে তখনই রাস্তার ধারে সাথে তিন সখী সহিত হুরপরীর আগমণ ঘটিলো। এই হুরপরীর নাম জরিনা বেগম। কলেজে গমনের পথে যাকে এক ঝলক দেখিবার উছিলায় গত এক বত্সর মফিজের চা দোকানে বসিয়া বাকীতে চা খাইয়া খাইয়া তাহার ব্যবসার বারোটা বাজাইতেছে। জরিনা বেগমকে দেখিলে গিটলু মিয়ার অন্তরে ক্রমাগত গিটার বাজিতে থাকে। এবং সেই বাজনার তালে তালে তাহার হৃদয় গাহিতে থাকে সেই জ্বালাময়ী প্রেমের গান,
"ও জরিনা,ও জরিনা! তুমি কোম্বাই?"
আজকে হঠাত্ জরিনা বেগমকে এতো সুন্দর করিয়া চুলে বেনী সহিত কপালে লাল টিপ দেখিয়া গিটলু মিয়ার বুক মোচড় দিয়া উঠিল। তাহার উপরে আজ জরিনা বেগম তাহার দিকে চাহিয়া এক ছলনাময়ী হাসি প্রদর্শন করিলো যাহা পূর্বে কখনো ঘটে নাই। তাই এই অনাকাঙ্খিত ঘটনায় গিটলু মিয়া চমকিয়া উঠিলো এবং তাহার সারা বদনে কাঁপন ধরিলো। সেই সাথে চুমুকরত চায়ের কাপ কাপিয়া উঠিয়া তাহা হতে বেশ ক্ষাণিকটা চা গিটলু মিয়ার শার্টের ভেতর দিয়া গলিয়া তাহার নিম্নদেশে উপস্থিত হইয়া ঘুমন্ত রাজকুমারের ঘুমে ব্যঘাত ঘটাইলো। ব্যথায় ককিয়া উঠিয়া গিটলু মিয়া সঙ্গে সঙ্গে চায়ের কাপ রাখিয়া দাড়াইয়া গেল। এবং তাহার রাজকুমারও চায়ের উষ্ণতা পাইয়া জাগিয়া দাড়াইয়া গেল। জরিনা বেগম তাহার তিন সখী সহ গিটলু মিয়ার নিম্নদেশের এহেন অবস্থা দেখিয়া হাসিতে হাসিতে লুটিপুটি খাইতে লাগিলো। অন্যদিকে গিটলু মিয়া তাহার নিম্নদেশে দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া বুঝিতে পারিলো আজ বাপজানের ডাকাডাকির চোটে সকালে প্যান্টের ভেতর জাইঙ্গিয়া পরিতে ভুলিয়া গিয়াছে।
আরো কিছু দিন অতিবাহিত হবার পর গিটলু মিয়া বুঝিতে পারিলো জরিনাকে ছাড়া তাহার জীবন অসম্পূর্ণ।জরিনাকে ছাড়া গ্রীষ্মের পানিহীন ধুধু প্রান্তরে ছেড়ে দেয়া চাতক পাখির মতো মনে হতে লাগিলো নিজেকে।তাই সে জরিনা বেগমকে নিজের হৃদয়ের সুপ্ত ভালোবাসার কথা বলিতে ব্যাকুল হইয়া পরিলো।
যাহা চিন্তা তাহাই কাজ!একদিন দিবাগত পূর্নিমা রজনীতে গিটলু মিয়া জরিনা বেগমের উদ্দেশ্যে প্রেমপত্র লিখিতে বসিলো। কিন্তু কিছুতেই যেন তাহার হৃদয়ের সুপ্ত বাসনাগুলি প্রেমপত্রে উপস্থাপন করিতে পারিতেছিল না।
অবশেষে প্রায় সারে তিন দিস্তা খাতার অপচয় ঘটাইয়া গিটলু মিয়া তাহার কাঙ্খিত প্রেমপত্র লিখিতে সমর্থ হইলো।
তারপর বিজয়ের হাসি হাসিয়া নিজের লিখিত প্রেমপত্র নিজেই পড়িতে শুরু করিলো,
"
প্রিয় জরিনা,
আমি তোমার শ্রদ্ধেয় হবু বর গিটলু মিয়া।তুমি ভালো ভাবেই অবগত যে এই পুরো এলাকায় আমার লাহান সুদর্শন পুরুষ দ্বিতীয়টি আর নেই। যে মেয়েরাই আমাকে একবার দেখে তাহারাই আমার রূপগুণে পাগলী হইয়া আমাকে নিজের বশে আনিতে চায়। কিন্তু তুমি জানিয়া খুশি হইবা যে আমি কেবল তোমার সমীপেই নিজের সর্বস্ব দিতে প্রস্তুত।আমি তোমার হৃদয় মহাসাগরে প্রেমের জলে হাবুডুবু খাইতেছি। এখন এই প্রেমের মহাসাগর হইতে একমাত্র তুমিই পারো ডুবুরি হইয়া আমাকে উদ্ধার করিতে। তুমি হীনা আমার পুরো জগত আজ ইউজলেস। আমি যেখানেই যাই শুধু তোমাকেই দেখি। আমার বেডরুমের প্রতিটি আসবাবে তোমাকে দেখি,ডাইনিং এর প্রতিটি ভাতের কণায় তোমাকে দেখি এবং বাথরুমের প্রতিটি(থাক ঐটা আর নাইবা বলিলাম)। নিঝুম রাত্রিতে তোমাকে মনে করিয়া যখন কোলবালিশকে চাপিয়া ধরি তখন বেচারা কাঁদিয়া কাঁদিয়া বলে তোমাকে বিবাহ করিয়া তাহাকে মুক্তি দিতে। বেচারা কোলবালিশের মুক্তির কথা ভাবিয়া হইলেও তোমার উচিত্ আমাকে ভালবাসা।
আর কথা বারাইতে চাই না। শেষ কথা হইলো তুমি যদি আমার প্রেম প্রস্তাবে রাজি থাকিয়া থাকো তাহলে পত্র পাঠ করিয়া আমার দিকে তাকিয়া হাসিও। তাহলেই আমি সব বুঝিয়া নিবো।
ইতি,
শুধু তোমারই,
গিটলু মিয়া"
পত্র পাঠ করিতে করিতে কখন যে গিটলু মিয়া ঘুমাইয়া পড়িলো তাহা সে নিজেও জানেনা। রাতে জরিনা বেগমকে নিয়া একটা সুস্বপ্ন দেখিয়া খুব সকালে আনন্দ চিত্তে ঘুম থেকে উঠিলো সে। খুব ফিট ফাট হইয়া,গায়ে এক বোতল সেন্ট শেষ করিয়া ফুলবাবু সাজিয়া পকেটে রাতে লিখিত প্রেমপত্র লইয়া বের হইলো সে।মফিজের দোকানে বসিয়াই এক গাল হাসিয়া এক কাপ চায়ের অর্ডার দিয়া মফিজের ৭ বত্সরের পুত্রকে ডাকিয়া সব বুঝাইয়া দিলো এবং তাহার পকেটে ২০ টাকার একটা নোট গুজিয়া দিলো।
ক্ষাণিক বাদেই সেই মহেন্দ্রক্ষণ আসিলো যখন জরিনা বেগম তাহার সখীদের সহিত হাসিয়া হাসিয়া আসিতে লাগিলো। তাহারা চায়ের দোকানের সম্মুখে আসা মাত্রই মফিজের পুত্র গিটলু মিয়ার কাছ হইতে প্রেমপত্র লইয়া ছুটিয়া গিয়া জরিনা বেগমের হাতে গুজিয়া দিয়া আসিলো।
দীর্ঘ দুই মিনিট ধরিয়া জরিনা বেগম ঐ পত্রখান পড়িতে লাগিলো এবং গিটলু মিয়া তাহার দিকে চাহিয়া তাহার সম্মতি সূচক মায়াবী হাসির অপেক্ষা করিতে থাকিলো।
পত্রখান পড়িয়া জরিনা বেগম তাহাকে তত্ক্ষণাত্ প্রথমে দুই ভাগ,দুইভাগ থেকে চারভাগ,চারভাগ থেকে আটভাগ,আটভাগ থেকে ষোলভাগ এভাবে অসংখ্য ভাগে ছিড়িয়া অযত্নে হাওয়াতে উড়াইয়া দিলো। পত্রের ঐ খন্ডিত অংশের সাথে সাথে গিটলু মিয়ার সাজানো স্বপ্ন গুলিও সেদিন খন্ডিত হইয়া উড়িয়া গেলো।
দু দিন বাদেই জরিনা বেগমকে দেখা গেলো পাশের এলাকার বড় ব্যাবসায়ীর সুদর্শন পুত্রের সহিত মোটরবাইকে করিয়া গায়ে গা ঘেসাইয়া চড়িয়া বেড়াইতে। সে দিন জরিনা বেগমকে দেখিয়া গিটলু মিয়ার মনে আর গিটার বাজিয়া উঠিলো না। শুধু মন থেকে মুখ ফুটিয়া একটা কথাই বেরিয়ে আসিলো,
"নারী চেনেনা তোমার ভালবাসা,
নারী চেনেনা কোন পাবার আশা,
নারী চেনে শুধুই বিত্ত এবং টাকার নেশা..."
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১২ রাত ১:২৬