সত্য একটি ঘটনা । ২০০৮ সালের দিকে।আমার রুমমেট বন্ধূকে তার এক আত্মীয় ফোন দিল তাদের নভোজাতক সন্তানটিকে দেখে যাওয়ার জন্য। আসলে তাদের উদ্দেশ্য ছিল নভোজাতেকের সদ্যবিচ্ছিন্য নাভীটি যেকোন ভাবে হোক বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি নজরুল ইসলামের মাজারের পাশে পুঁতে দিতে হবে।এতে সন্তান ভবিষ্যতে কবি নজরুলের মত মহাজ্ঞানী হবে এই কুসংস্কারে তারা পলিব্যাগে মোড়ানো ওই জিনিসটি বন্ধুটির হাতে তুলে দিল।
সন্তান বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মত হোক সব অভিবাবকই চায়।কিন্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জীবন আদর্শ অনুকরনের বিষয়ের উপর তেমন কেউই গুরুত্ব দেয় না। যেই নজরুল সারা জীবন সাম্যের গান গাইতেন। যুদ্ধ করেছেন অন্যায়,অত্যাচার,শোষণ ও নিপীরণের বিরুদ্ধে ।আপন মহিমায় লালিত করছেন অবহমান বাংলার সংস্কৃতি। সৃস্টি দিয়ে সম্বৃদ্ধ করেছেন তাকে। এসব চেতনা নিচ্ছয়ই এই অভিবাবক তার সন্তানের ভিতর জাগ্রত করার চেস্টা করবেন না। শিশুটি বড় হবে অপসংস্কৃতির ভয়াবহ কালো বিষদেয়ালে বন্ধী হয়ে।আতি আধুনিকতার আর স্বার্থপরতার ভ্রমে দ্রূত মানসিক বিবর্তিত হয়ে দেশের জন্য সে এক নিরর্থক নাগরিক হয়েই থাকবে।
আমরা কি ধীরে ধীরে মানবিকতা,দেশপ্রেম,সংস্কৃতি এসব আমাদের আতূরঘরেই বিসর্জন দিয়ে আসছি না?মাহান ব্যক্তিদের আদর্শ আমাদের কাছ থেকে অনেক দূরে। একটু বিশেষ লক্ষ করলে দেখব আমাদের বাঙালীর যা কিছু গৌরবমন্ডিত, হাতে গোনা গুটিকয়েক মানুষের সৃস্টি।আমরা বাকীরা তা নিয়ে ভোগ-বিলাস,দূর্নীতি,বিতর্ক,টানাহেচড়ার মধ্য দিয়েই জীবন পার করছি। জীবন বাহ্যিকতায় মোহাবিষ্ট হয়ে আমাদের জীবনের গভীর সৌন্দর্যের দিকে লক্ষ্য করা হয়না।
আমাদের কাছে পেশা মানে কেবলমাত্র আর্থিক আবলম্বন,বিনোদন মানে ডীজুসমার্কা বিদেশী নোংরা সংস্কৃতির আগ্রাসন,শিক্ষা মানে-ভবিষ্যত উপার্জনের হাতিয়ার আর ইংরেজীর শিক্ষার একক দখলদারিত্ব! বই মানে পাঠ্যবই ছাড়া বাকীসব শেলফে সাজিয়ে রেখে আধুনিক ব্যাক্তিত্ব প্রকাশের মাধ্যম !
আমরা কখনো লক্ষ্য করেছি আমাদের নতুন প্রজণ্ম অনলাইনে কি কি করে?ভার্চুয়াল জগতের অন্ধকার দিকটা কি তাকে গ্রাস করছে না?তার সেলফোনটি কি পর্ণ ছবিতে ঠাসা?কিংবা এটি দিয়ে গভীর রাতে বিপরীত জেণ্ডারের সাথে কথ্যসেক্স করছে না? সে কি ইয়াবা বা এজাতীয় নেশাদ্রব্যে আসক্ত না?
আমাদের নতুন প্রজণ্ম ধীরে ধীরে তলিয়ে যাচ্ছে । সে সাথে তলিয়ে যাচ্ছে সংস্কৃতি,ঐতিহ্য,জাতিগত চেতনা।
আর এসব যদি না থাকে, নামে এ দেশ ,এ জাতি থেকে কি লাভ?
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৫ সকাল ১১:০৮