somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফকির ইলিয়াস
আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ইমেইল প্রতারনার রকমফের

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ সকাল ৯:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইমেইল প্রতারনার রকমফের
ফকির ইলিয়াস
=============================================
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতারনার অন্যতম একটি হচ্ছে ইমেইলে প্রতারনা। হ্যাকিং করে কারো ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব নম্বর, ক্রেডিট কার্ড, সোস্যাল সিক্যুরিটি নম্বর জালিয়াতি করে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেয় হ্যাকাররা। তাছাড়াও ইমেইল এ্যাড্রেস পাচার করে বিভিন্ন লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। ইমেইলের মাধ্যমে প্রতারণার বড় বড় ঘটনার পেছনে ছুটছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্খা। এগুলোর নামও দেয়া হয়েছে। আফ্রিকা কানেকশন, ডলার কানেকশান ইত্যাদি।

আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে একটি সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী এসব প্রতারণার কলকাঠি নাড়ে। এ রকম প্রতারণার একটি ঘটনা উল্লেখ করা যাক। একদিন একটি লোভনীয় প্রস্তাবসহ ইমেইল পান নিউইয়র্কের একজন বাংলাদেশী অভিবাসী। যে ইমেইল করেছে, সে নিজেকে পরিচয় দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার একজন প্রয়াত জেনারেলের মেয়ে হিসেবে। মেয়েটি জানায়, তার পিতা শ্বেতাঙ্গের নির্যাতনে নিহত একজন জেনারেল। তার পিতা ২৭ মিলিয়ন ইউএস ডলার রেখে গেছেন। তারা এগুলো যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করতে চায়। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রে একজন অভিভাবক প্রয়োজন। ইমেইলে প্রস্তাব করা হয় যদি নিউইয়র্কের ঐ ব্যক্তিটি তার ব্যাংক একাউন্ট নম্বরসহ যাবতীয় তথ্য প্রদান করে, তবে ঐ ২৭ মিলিয়ন ডলার তার একাউন্টে জমা দেয়া হবে। এ বাবত তিনি কমিশন পাবেন পনেরো শতাংশ। লোভনীয় ঐ প্রস্তাবে রাজী হন ঐ বাংলাদেশী। তিনি কয়েক দফা ইমেইল বিনিময় করে পুরো নিশ্চিত হন। দেন তার ব্যাংক একাউন্টসহ পুরো তথ্য। দু-সপ্তাহ পরে দেখা যায় তার একাউন্টে নিজের জমানো এগারো হাজার ডলার হ্যাকিং হয়ে গেছে।

তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। ব্যাং কে বিস্তারিত জানানোর পর বিষয়টি এখন ততন্তাধীন। এজন্য দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। কে জানে তিনি তার উপার্জিত ডলারগুলো ফেরৎ পাবেন কিনা।

আরেকটি ঘটনা আরো মর্মস্পর্শী। একজন অভিবাসী বাঙালী প্রায় একই ধরনের ইমেইল পান। ঐ ইমেইলে বলা হয় ইমেইলকারী নাইজেরিয়ার একজন উচ্চপদস্খ অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা। তিনি বিশ মিলিয়ন ডলার পাচার করতে চান। এজন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বস্খ পার্টনার প্রয়োজন। নিউইয়র্কের ঐ বাঙালীকে এজন্য তিনি নাইজেরিয়া ভ্রমণের আহ্বান জানান। ফোনে তাদের কথাও হয় কয়েক দফা। নিউইয়র্কের ঐ ভদ্রলোক বিশ্বাসে এবং লোভে নাইজেরিয়া যান। বিমানবন্দর থেকে তাকে স্বাগত জানিয়ে হোটেলে নিয়ে তোলা হয়। ঐ রাতেই অস্ত্রধারীরা প্রথমে তার কাছ থেকে নগদ তিন হাজার ডলার ছিনিয়ে নেয়। তাকে হুমকি দেয়া হয় যদি তিনি তার সাথে থাকা প্রতিটি ক্রেডিট কার্ড পরদিন ব্যাংকে চার্জ না করেন তবে তাকে মেরে ফেলা হবে। তিনি শংকার রাত কাটিয়ে পরদিন তার সবগুলো ক্রেডিট কার্ড সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেন। তারা তা ইচ্ছেমতো চার্জ করে। তারপর তাকে অর্ধমৃত অবস্খায় বিমানবন্দরে ছেড়ে যায়। তিনি কোনমতে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বাঁচিয়ে নিউইয়র্কে আসতে সক্ষম হন। তিনি যে একটি ফোন করতে পারবেন সে সুযোগও তার ছিল না। নিউইয়র্ক ফিরে তার ক্রেডিট কার্ড কোম্পানীগুলো থেকে তিনি জানতে পারেন প্রায় পঞ্চাশ হাজার ডলার চার্জ করা হয়েছে। তীব্র সংকটাপন্ন জীবন কাটাচ্ছেন ঐ প্রবাসী। গোয়েন্দা সংস্খাগুলো বিষয়টি ইনভেনটিগেশন করছে।

কিন্তু যা হবার তাতো হয়ে গেছে। তার ভাষ্য অনুযায়ী তিনি যে বেঁচে আসতে পেরেছেন তাই তার সৌভাগ্য। ইমেইলে এসব ডলার পাচার বিষয়ক প্রস্তাবগুলো বেশি আসছে দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলো থেকে। নাইজেরিয়া, কঙ্গোঁ, ফিজি, বার্মুডা, এ্যাঙ্গোঁলা, সোমালিয়া, উগান্ডা, মোজাব্বিক, রাশিয়া প্রভৃতি দেশগুলোর স্বঘোষিত প্রিন্স, কর্ণেল, জেনারেল, মন্ত্রী, ট্রেজারার পরিচয়দানকারীরা এভাবেই লুফে নেয় তাদের শিকার। তারাই এতোই ধূর্ত যে বিভিন্ন ইমেইল এ্যাড্রেস দেখে তারা বাছাই করে নেয় অপেক্ষাকৃত সহজ সরল কে বা কারা হতে পারে। এবং সেভাবেই চালায় তাদের ডলার কানেকশন।
দুই.

ইন্টারনেটে চ্যাটিং করে পরে ইমেইলে সখ্যতা গড়ে তোলার রেওয়াজ এবং অবৈধ সম্পর্ক স্খাপন একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। বিশেষ করে তা যদি হয় কোন অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরীর সাথে। প্রায়ই পত্র-পত্রিকায় দেখা যায়, এক শ্রেণীর বিকার গ্রস্খ পুরুষেরা ইমেইল চালাচালি করে সম্পর্ক গড়ে তোলে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের সাথে। অবশ্য এসব রোধে ইন্টারনেটে গোয়েন্দাদের রেড এলার্টও এখন বাড়ছে ক্রমশ:। সন্দেহ হলেই চ্যার্টিং পর্বটি মনিটরিং এবং রেকর্ডিং করছে নেট গোয়েন্দারা। সম্প্রতি নিউইয়র্কের একজন ধনকুবের ইমেইল সংযোগের ফল হিসেবে স্কুলগামী তিনজন কিশোরীকে বাগিয়ে নিয়ে উঠেছিল লং আইল্যান্ডের একটি হোটেলে। গোয়েন্দারা আগে থেকেই ওৎ পেতে ছিল সেখানে। হোটেলের রুমে ঢুকার সাথে সাথেই তিনি গ্রেফতার হন। শিশু কিশোর উৎপীড়ন আইনে তার পঁচিশ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।

ইমেইল প্রতারণার আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে ইমেইলে মিতালী গড়ে তোলে সাহায্য চাওয়া। একাজটি বেশি হচ্ছে ইউরোপের তুলনামূলক গরীব দেশগুলো থেকে। পোল্যান্ড, রুমানিয়া, চেকোশ্লোভাকিয়া এবং ভেঙ্গে যাওয়া রাশিয়ার বিভিন্ন প্রজাতন্ত্র থেকে পাতা হয় এমন মিতালী ফাঁদ। চ্যাটিং করে এরা আমেরিকান যুবকদেরকে বেছে নেয়। মেয়ে সেজে কাছে আসার প্রলোভন দেখায়। এক সময় বলে, তুমি যদি আমাকে বিমান টিকিটের খরচ দাও তবে আমি তোমার কাছে চলে আসবো। আমেরিকান যুবক সরল বিশ্বাসে টিকেট ও অন্যান্য খরচ বাবৎ পাঠিয়ে দেয় হাজার / দেড় হাজার ডলার। তারপরই গায়েব হয়ে যায় সেই মিতা। আমেরিকান যুবকের অপেক্ষা আর শেষ হয় না। অন্যদিকে ‘মিতা’ খুঁজে নতুন শিকার। এক সময় যুবক বুঝতে পারে সে প্রতারিত হয়েছে।

ইমেইলে পণ্য বিপনন করে প্রতারনা প্রক্রিয়াটিও বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রে। এটা কিনুন, ওটা কিনুন, পঞ্চাশ থেকে ষাট শতাংশ ডিসকাউন্ট এমন অভিনব বিজ্ঞাপন সম্বলিত ইমেইল পাওয়া যায় প্রতিদিনই। ‘আগে আসলে আগে পাবেন- ডিজনীল্যান্ড ট্যুর’ বিজ্ঞাপন দিয়ে বলা হয় মাত্র পঞ্চাশ ডলার দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে আপনি পেতে পারে চারজনের ফিন্স টিকেটসহ পাঁচদিনের ভ্রমন প্যাকেজ, সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। লক্ষ লক্ষ লোক রেজিস্ট্রেশন করেন কিন্তু পান মাত্র দশ জন। এভাবেই শুভংকরের ফাঁকি’র মধ্যদিয়ে চলে যায় ‘দ্যা আমেরিকান লাইফ’।

ওয়েবসাইট দেখে কিংবা ইমেইলে জেনে অর্ডার দিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন অনেক ক্রেতা। দেখা যায়, ছবি দেখে একটি অর্ডার দেয়া হলো কিন্তু পার্সেলে যে দ্রব্যটি এলো তার গুনগত মান সম্পূর্ণই সস্তা। তারপর আবার যোগাযোগ, ফেরৎ পাঠানোর প্রক্রিয়া, নিজের একাউন্টে মূল্য ফেরৎ পাবার জন্য প্রতীক্ষা ইত্যাদি ঝামেলাগুলো পোহাতে হয়।

অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের সর্বশেষ এবং শক্তিশালী ভরসাটি হচ্ছে ক্রেতা স্বার্থ সংরক্ষনকারী সংস্খা ‘দ্যা কনজুমার এফেয়ার্স’। কিছু কিনে ঠকলে তাদেরকে জানালেই একটা বিহীত ব্যবস্খা হবে। বিক্রেতা, ক্রেতাকে ঠকিয়েছেন এমনটি প্রমাণিত হলে সুদাসলে ক্ষতিপূরণ দিতে হয় ক্রেতাকে। আর এভাবেই ক্রেতাস্বার্থ সংরক্ষিত হয় একটি সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে। ব্যবসার অন্যমত স্তম্ভ হচ্ছে বিশ্বাস। ক্রেতা বিক্রেতার সাথে বিশ্বাস স্খাপনই রক্ষা করে ব্যবসার স্বার্থ। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাই সেরা ভাগ্যবান(!)। যদি বাংলাদেশে শক্তিশালী কনজ্যুমার এফেয়ার্স থাকতো তবে হয়তো তারা এমন মনোপলী ব্যবসা করতে পারতেন না।


সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ সকাল ৯:৫৬
১২টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×