somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার দেখা কার্নেভাল

২২ শে এপ্রিল, ২০১০ বিকাল ৫:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফেব্রুয়ারী মাস মানেই জার্মানিতে কার্নিভালের মাস৷ পথে-ঘাটে, রেঁস্তোরায়, অফিসে সব জায়গায় শুধু কার্নিভালের আলোচনা৷ প্রতি বছর জার্মানিতে উদযাপিত হয় কার্নিভাল উৎসব৷ ছেলে বুড়ো থেকে শুরু করে প্রায় সবাই অংশগ্রহণ করে কার্নিভালে।

প্রতিদিন যখনই ট্রামে উঠি কখনো দেখি একদল বাচ্চা রং-বেরং-এর পোশাক পরা৷ ভাবি বোধহয় ক্লাস- পার্টি আছে৷ কিন্তু না এরপর দেখি বয়স্ক মানুষেরাও সেজেছে মনের মাধুরী মিশিয়ে৷ কেউ সেজেছে সঙ, কেউবা ডাইনী বুড়ি৷ কেউ কেউ পরীর সাজে৷ আবার কেউ কাউন্ট ড্রাকুলা৷ আমি প্রথমবার জার্মানিতে, জানিনা কোন রীতি-রেওয়াজ৷ ঠিক করে জানিওনা কেন এই উৎসব৷

১৯শে ফেব্রুয়ারী ট্রামে চড়ে অফিসে আসার পথে ঘটল এক আজব ঘটনা৷ একদল তরুণী ভীষণ সেজে-গুজে ট্রামে চড়েছে৷ আমি তাদের পাশে বসে আছি৷ একটি ষ্টেশনে ট্রাম থামল৷ ট্রামে চড়ে বসল দুজন যুবক৷ পড়নে অফিসিয়াল পোশাক, কোর্ট-টাই৷ আর তরুনীদল এক লাফে কেঁচি নিয়ে তাঁদের পাশে দাড়ালো৷ তারা কিছু বোঝার আগেই কেটে ফেললো টাই৷ আমি ভাবলাম, ভীষণ ক্ষেপে যাবে যুবক দুজন৷ অথচ অবাক চোখে দেখলাম দাঁত বের করে হাসছে তারা৷ পরে ভাবলাম হয়তো চেনা পরিচিত হবে, আগে থেকেই পরিকল্পনা করা ব্যাপারটা৷ তারপরও মনের কৌতুহল মেটাতে পাশের সহযাত্রীকে প্রশ্ন করলাম আসলে ব্যাপারটা কি ঘটেছে জানতে৷ সে জানালো ‘‘ হয়টে ইষ্ট ফ্রাউয়েন টাগ''৷ মানে ‘‘আজ হলো মহিলাদের দিন''৷ আমি বললাম, ‘‘কিন্তু ওমেন্স ডে-তো ৮ই মার্চ''৷ সে জানালো, এখানে কার্নিভালের সময় একদিন থাকে, যেদিন মহিলা দিবস পালন করা হয়ে থাকে৷ এরপর ধীরে ধীরে জানতে শুরু করলাম কার্নিভালের ইতিহাস৷

এরপর অফিস থেকে আমাকে পাঠানো হয় কোলনের কার্নিভালের রিপোর্ট কভার করতে৷ আমি ভাবার চেষ্টা করছিলেম, পহেলা বৈশাখের শোভা-যাত্রার মতো কিছু৷যাওয়ার পথে যখন কোলনের ট্রেন ধরতে গেলাম দেখি সেখান থেকেই সাজ সাজ রব পড়েছে৷পৌঁছে দেখি লাখ লাখ মানুষ সেখানে জড়ো হয়েছে৷ কেউ কেউ এসেছে ইতালি থেকে, কেউবা লুক্সেমবার্গ থেকে, ফ্রান্স থেকে...৷ দূর-দূরান্ত থেকে সেখানে এসেছে কত শত মানুষ ৷ জার্মানির বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ এসে জড়ো হয়েছে সেখানে৷ নানা রং-এর পোশাক তাদের পরনে৷ পৌঁছানোর পর দেখি পহেলা বৈশাখের ধারে কাছেও নেই এই উৎসব৷কোলনের কার্নিভালের উৎসব পুরো পৃথিবী বিখ্যাত৷

পুরো ফেব্রুয়ারী মাস গোটা জার্মানি জুড়ে চলে কার্নিভাল৷ বিশেষ করে নর্থ রাইন- ওয়েষ্টফালিয়া এবং রাইনল্যান্ডের মানুষেরা উদযাপন করে কার্নিভাল৷ এসময় মানুষেরা রং-বেরং-এর পোশাক পরে, যার যেমন খুশী৷ নিজেকে সাজায় মনের মাধুরী মিশিয়ে৷ এক কথায় বলা যায় যেমন খুশী তেমন সাজো৷

কার্নিভালের জন্য অপেক্ষা করে এ অঞ্চলের মানুষেরা সারা বছর ধরে৷ এসময় তাঁরা সময় সুযোগ পেলেই একজন আরেক জনের সাথে দেখা করে, কুচকাওয়াজের মাধ্যমে শোভা-যাত্রা করে, পার্টি করে আর উৎসবে মেতে ওঠে৷ মন খুলে কথা বলে, নাচে- গানে মেতে ওঠে৷

কার্নিভাল মূলত খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ক্যাথলিক গোত্রের ধর্মীয় উৎসব৷ কিন্তু আমার মনে হলো যেন ধর্ম-গোত্র, বর্ণভেদে সবাই এই উৎসব পালন করে৷ পূর্ব ইতিহাস থেকে জানা যায়, এটি যিশুর উপবাস স্মরণের উদ্দেশ্যে ইস্টারের পূর্বে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের চল্লিশ দিন ব্যাপী বাৎসরিক উপবাস উপলক্ষ্যে পালন করা হয়৷ এই উপবাস শুরু করার আগে তারা উৎসব পালন করে৷ বছরের এই সময়টায় তারা যা খুশী তাই করতে পারে৷পছন্দনীয় ভালো খাবার খায়, ইচ্ছেমতো পানীয় পান করতে পারে৷ কারণ এরপরেই তারা সংযম পালন করে চল্লিশ দিন ব্যাপী৷
এবারের কার্নিভালে ১২ হাজার মানুষ শুধু শোভা যাত্রায় অংশগ্রহণ করেছে৷ শোভা যাত্রা থেকে ১৫০ টন চকলেট সেখানে উপস্থিত লক্ষ মানুষকে বিলানো হয়৷ ছিটানো হয় অগণিত গোলাপসহ অন্যান্য ফুল৷ শোভা যাত্রা শুরু হয় স্বর্গের দেব-দেবীর বেশধারী কিছু মানুষের আগমন দিয়ে৷ তারা উপস্থিত জনতাকে জানায় শান্তির বার্তা৷তারপরই একের পর এক সাজানো বাহন আসতে শুরু করে৷ শুধু যে শুভেচ্ছা-বার্তা আর চকলেট নিয়ে আসে এই বাহনগুলো তা কিন্তু নয়৷ বর্তমান বিশ্বের রাজনৈতিক পটভুমি, অর্থনৈতিক মন্দা, ব্যাংক ধ্বস সব কিছুই ছিলো বিদ্যমান৷ এমন কি পুতিনের ডামিকে ভালুকের পোশাক পড়নো হয়, যে স্বর্গ জয় করতে চায়৷ ওবামা থেকে শুরু করে, গুয়ান্তানামো কারাগার সব কিছুই ছিল এই কার্নিভালে৷ কার্নিভাল শুরু হওয়ার কথা ছিল সকাল ১১টায়৷ কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারণে কার্নিভাল শুরু হয় বেলা দুটোয়৷

অনেক তরুণ-তরুনী, বয়স্ক মানুষ এবং শিশুরা জড়ো হয় কার্নিভালে৷ এই দিনে মানুষ ভুলে যায় সমস্ত ভেদাভেদ৷ এক সাথে পালন করে কার্নিভাল৷ ছেলে-বুড়ো সব বয়স ভুলে, গন্ডি ভুলে একসাথে চিৎকার করে ‘‘কামেলে, কামেলে'' মানে ‘‘চকলেট, চকলেট''৷ কেউ কেউ ছাতা পেতে ধরে বেশী চকলেট পাওয়ার আশায়৷ এক কথায় দারুণ এই উৎসব৷ বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের সাথে নিয়ে এসেছে নিজের দেশের সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে৷

শোভাযাত্রা শেষ হলো বিকেল পাঁচটায়৷ আমিও কোলন স্টেশন থেকে ট্রেন ধরলাম বন-এ ফিরে আসার জন্য৷ ফিরে আসছি আমি কিন্তু চলছে উৎসব৷ উদ্দাম তালে গানের সাথে নাচছে মানুষ৷ আর বলছে, কোলন কার্নিভাল ‘‘আলাফ''৷

ফারজানা কবীর খান।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×