somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুহূর্ত কথা

১৩ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বয়স হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বুঝি অতীতের সাথে একটা অদ্ভুত যোগাযোগের উপায় তৈরি হয়ে যায়! ঠিক যেন তারবিহীন কোনও দূরালাপনি!
আরও পাঁচ ছয় বছর আগেও যখন মা-বাবা দুজনেই বেঁচে ছিল, তখনও কিন্তু এই দূরালাপনি তেমন সচল ছিল না। মাঝে মাঝে দুই একটা ঘটনা মনে পড়ত, আবার ফস করে তা কোথায় যেন হারিয়েও যেত। এখন কিন্তু কোথাও হারায় না। মনের মধ্যে শক্ত করে ঘাঁটি বেঁধে বসে থাকে।

এখনকার শিশুদের শৈশব আর আমাদের শৈশব কতটাই না আলাদা! ফেসবুকে মাঝে মাঝে কিছু পোস্ট দেখি। কোনো একটা ফলমূল, গাছ লতা পাতা অথবা খাবারের ছবি দেখিয়ে ক্যাপশন থাকে, 'যারা চিনতে পারবে, তাদের শৈশবটা মধুর ছিল!'
প্রতিটা ছবিই চিনতে পারি। কারণ আমাদের শৈশব তো মধুরই ছিল!

আমরা ভাঙ্গা কাঁচ কুড়িয়ে জড়ো করে রেখে দিতাম। মা জানতে পারলে খুব বকাবকি করতো। কারণ সেই কাঁচে হাত কাটবে। কিন্তু কে শুনবে কার কথা! সেই কাঁচ যারা হাঁড়িকুঁড়ি বিক্রি করত তারা মাঝে মাঝে কটকটি দিয়ে কিনে নিত। ছোটবেলায় অবাক হয়ে ভাবতাম, এই ভাঙ্গা কাঁচের বিনিময়ে কেউ এমন মজার জিনিস দিয়ে দেয়? লম্বা টানা গুড়ের সেই কটকটি খেতে কী যে অমৃতের মতো লাগত তা এখন আর কীভাবে বোঝাই!

রঙিন ফড়িং এর পেছন দিকটা খুব সুকৌশলে ধরে কেউ ফড়িং ধরেছেন? সেটা ছিল আমাদের প্রিয় একটা খেলা। আজ মনে হলে অবশ্য একটু একটু খারাপ লাগে। আহা কীভাবে কষ্ট দিয়ে ধরতাম ফড়িং গুলোকে। কিন্তু সেই বয়সে তো এটা বুঝতে পারতাম না যে ওদের কষ্ট হচ্ছে! শিশুরা কি একটু নির্দয়ও হয়?

আরেকটি খেলা আমাদের খুব প্রিয় ছিল। এই খেলাটা অবশ্য গ্রামে গিয়ে খেলতাম। দাদার বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে। রাতের বেলা তো বিদ্যুতের বালাই ছিল না। সারাদিনেও বিদ্যুৎ মাঝে মাঝে একটু উকি দিয়ে নিজেকে চিনিয়ে যেত। পল্লীবিদ্যুত ছিল না তখন।
আমরা চাচাত ফুফাত ভাইবোনেরা উঠানে গোল হয়ে বসে হ্যাজাক বাতি ধরানো দেখতাম। ওহ সে এক দেখার মতো দৃশ্যই ছিল বটে। গোল একটা কাপড়ের বেলুনের মতো জিনিসকে আগুন দিয়ে ফুলানো হতো। তারপর সেটাকে হ্যাজাকের ভেতরে ঢুকিয়ে পাম্প করা হতো। পাম্প করতে করতে যখন প্রায় মনে হতে শুরু করতো যে কিছুই হবে না, তখন একটা উজ্জ্বল আলো কোত্থেকে যেন এসে একেবারে চোখ ধাঁধিয়ে দিয়ে যেত।

আমাদের সেই খেলাটার কথা তো বলা হলো না! আমরা জোনাকি পোকা ধরতাম। ধরে ধরে একটা কাঁচের বোতলে বন্দি করে রেখে দিতাম। সেই জোনাকি জ্বলত নিভত। আমরা অন্ধকারে সেই বোতলের উজ্জ্বল আলোর ফোটার ওঠানামা মুগ্ধ হয়ে দেখতাম। ইচ্ছে করত, সেই জোনাকিগুলোকে বোতলে ঢুকিয়েই দিনরাত রেখে দিই। ওরা রাতের বেলা আমাদের খেলা দেখাবে। উজ্জ্বল আলোকবিন্দুর জ্বলা নেভার খেলা।
সেই ইচ্ছে পূরণ হতো না। বড় কেউ দেখামাত্রই জোনাকি গুলোকে বোতলের বাইরে বের করে দিতো।
আমি খুব সুন্দর খেজুর পাতার পাটি বানাতে পারতাম।বড়সড় করে বানাইনি কখনও। তবে তিন চার সারি জোড়া লাগাতে পারতাম। কার কাছে যে শিখেছিলাম এখন আর মনে নেই। একবার পাড়ার এক বড় আপা আরেকজনকে ডেকে নিয়ে এসে আমার সেই পাটি বানানো দেখিয়ে বলে, 'দ্যাখ দ্যাখ এইটুকু মেয়ে কী সুন্দর পাটি বানায়!'

এইটুকু মেয়ে! আশ্চর্য! আমার মনে হচ্ছে কেউ যেন এখনই কানের কাছে গুনগুন করে কথাটা বলে গেল! অথচ এইটুকু মেয়ে এই বড়োটি হয়ে জীবনের অর্ধাংশের ওপারে কখন যে চলে এলাম কই বুঝতে পারলাম না তো!
জোনাকি পোকাগুলো বুঝি প্রতিশোধের হাসি হাসতে পারল এতদিনে!
তাদের ধরে রাখতে পারিনি শক্ত করে। নিজের জীবনের সুন্দর সেই দিনগুলোও কবে যে মুঠো গলে বেরিয়ে গেছে... টেরই পাওয়া হলো না!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১:৪৫
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×