নুসরাত ফারিয়া ইস্যূতে কিছু কথা না বললেই দেখছি নয় এখন। ব্যাপারটা ‘অনেকেই’ হয়তো জানেন, কিন্তু ‘সবাই’ জানেন না। দেশ ও দশের স্বার্থে এই ব্যাপারে কিছু একটা বলাটা ফরজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সবসময় সোজা কথাটা সোজাভাবে বলার মানুষ আমি। তবে আজ একটু তেরছাভাবে সামান্য ভূমিকা করে শুরু করি।
হাইস্কুলে থাকতে একটা ছড়া পড়েছিলাম আমরা, নাম ছিল পণ্ডশ্রম; মনে আছে নিশ্চয়ই? থাকারই কথা।
ছড়াটার সারসংক্ষেপও আমরা সবাই জানি, তাই ওই প্যাঁচালে গেলাম না।
ব্যাপারটা নিয়ে ওদিন আমার এক বন্ধুর সাথে অনেকটা তর্কাতর্কিই হয়ে যায়।
চিলে কান নেয়ার গাঁজাখুরি গল্প শুনেই চিলের পিছে ছোটার অভ্যাসটা আমাদের পুরাতণ স্বভাব।
ঘটনাটা হল এই- “গাওয়াহ-দি উইটনেস” নামক একটি বলিউড মুভিতে ইমরান হাশমির বিপরিতে অভিনয় করবেন নুসরাত ফারিয়া। লুক টেস্ট হয়ে গেলেই তিনি চুক্তিবদ্ধ হবেন এই ছবিতে।
এই সংবাদ এখন সবার মুখে মুখে। এটা আমাদের জন্য একটি খুশির সংবাদ অবশ্যই। অনেক খুশিও হয়েছি।
তবে একটা ব্যাপার হঠাত্ লক্ষ করলাম, অনেকেই প্রচারণা চালাচ্ছে নুসরাত ফারিয়া নাকি প্রথম বাংলাদেশী অভিনয়শিল্পী যিনি বলিউডে অভিনয় করতে যাচ্ছেন। এই নিউজটা কয়েকটা অনলাইন নিউজ পোর্টালেও দেখেছি আমি। বেশ অবাকই হলাম!
ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা নিউজ পোর্টালগুলোয় কি নেশাগ্রস্তদের সুযোগ দেয়া হয়? কোন খবর প্রকাশ করার আগে এই বিষয়ে যাচাই করে দেখারও প্রয়োজনীয়তা বোধ করে না এরা?
আর এদের থেকে দেখে দেখে কতিপয় জনগণ শুরু করেছে তথাকত্থিত কানহরণকারী চিলের পিছে অযৌক্তিক ছোটাছুটি।
যাই হোক, কাজটা ওরা জেনে করেছে নাকি অজ্ঞতাবশত, জানিনা। তবে সাংবাদিকতার মত একটা আদর্শ পেশাকে কলুষিত করা বা সাংবাদিকদের মেধা-বোধবুদ্ধিকে প্রশ্নবিদ্ধ করাটা আদৌ ঠিক হল কিনা সেটা বিচারের দায়ভার তারাই নিক।
সবচেয়ে বড় কথা হল, ইতিহাসবিকৃতি যেমন অনুচিত কাজ, তেমন অপরাধও।
লেটস কাম টু দ্যা পয়েন্টঃ
ফারিয়ার বলিউডে যাওয়ার কথা শুনে নানামত থাকে সত্বেও আমার মতো অনেকেই খুশি হয়েছেন সেটা জানি। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না, ফারিয়ায় প্রথম বাংলাদেশী বলিউডগামী অভিনয়শিল্পী নন।
১। ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ ও কানাডার যৌথ প্রযোজনায় একটি ছবি মুক্তি পেয়েছিল, নাম ‘গেহরি চোট’। যেটি বাংলা ও হিন্দি দুটি ভাষায়ই রিলিজ হয়েছিল। যেখানে নাদিম বেগের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন বাংলাদেশের একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ববিতা। ওই ছবিতে শশী কাপুর, পারভিন ববি, শর্মিলা ঠাকুরের মতো গুণী শিল্পীরাও অভিনয় করেছিলেন।
এখানে দেখুন
২। ১৯৮৫ সালে মিঠুন চক্রবর্তীর একটি ছবি মুক্তি পায় ‘আর পার’ নামে। যেখানে নায়িকা ছিলেন বাংলাদেশী অভিনয়শিল্পী রোজিনা। এ ছবিটি বাংলায় ডাব করা হয়েছিল ‘অন্যায় অবিচার’ নামে।
এখানে দেখুন
৩। ১৯৮৬ সালে প্রমোদ চক্রবর্তীর ছবি ‘শত্রু’-তে অভিনয় করেন শাবানা। যেখানে তিনি সুপারস্টার রাজেশ খান্নার বিপরীতে অভিনয় করেন। একই ছবিতে গোলাম মোস্তফা একজন অসত্ পুলিশ অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করেন এবং হাসান ইমামও ছিলেন ওই ছবিতে।
এখানে দেখুন
এছাড়াও বাংলাদেশের নায়কদের মধ্যে রিয়াজ ২০০৫ সালে হলিউড-বলিউডে যৌথভাবে নির্মিত ইংরেজী ভাষার ছবি ‘It Was Raining That Night’-তে অভিনয় করেন, যেখানে তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেন সুষ্মিতা সেন।
এখানে দেখুন
নায়ক ফেরদৌস ২০০১ সালে ‘মিট্টি’ নামক একটি ছবিতে অভিনয় করেন এবং ছবিটি গোটা ইন্ডিয়াজুড়ে দর্শকদের মন জয় করে নিতে সমর্থ হয়।
এখানে দেখুন
তাই, নুসরাত ফারিয়ার প্রথম বাংলাদেশী বলিউডে টিকেট পাওয়া অভিনেত্রী কথাটি ডাহা মিথ্যা কথা। তথ্যটি সম্পুর্ন ভুল। নুসরাত ফারিয়ার অনেক আগেই রোজিনা, ববিতা, শাবানারা বলিউডে অভিনয় করেছেন। ফারিয়া শুধু তাঁদের পদছাপ অনুকরণ করেছেন মাত্র।
বাংলাদেশী অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোকে জানাতে চাইব, চোখগুলো হাতে নিয়ে নিউজ না বানিয়ে চোখকে চোখের জায়গায় থাকতে দিন আর মস্তিষ্ককে কাজে লাগান। সম্পাদনা থেকে নেশাগ্রস্তদের অপসারণ করে সুস্থ মস্তিষ্কের লোক নিয়োগ দিন; সাংবাদিকতাকে কলঙ্কিত করবেন না। ভূয়া তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত না করলেই কি নয়?
আমার বন্ধুটিকে কোনভাবেই বিশ্বাস করাতে পারলাম না যে, ফারিয়ার আগে আরো অনেক অভিনেত্রীই বলিউড আঙ্গিনায় পা রেখেছিলেন। সে ঘুরেফিরে একটা কথাই বলে, “নিউজে কি মিথ্যা তথ্য দিয়েছে? তুই কি ওদের চেয়েও জ্ঞানী?”
তার মানে, জনগণ এখনও সাংবাদিকদের ওপর আস্থা রাখে। মানুষকে সাংবাদিকদের ওপর থেকে বিশ্বাস উঠিয়ে নিতে বাধ্য করবেন না প্লীজ।
বিঃদ্রঃ আমার এই লেখা দেখে কেউ আবার আমাকে নুসরাত ফারিয়ার সমালোচক ভেবে বসবেন না। সত্যটাই সর্বসমক্ষে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি মাত্র।
উনার সাথে আমার কোন ব্যাক্তিগত বিরোধ নেই। উনার অর্জনে আর দশজন ভেতো বাঙ্গালীর মতো আমি নিজেও খুশি ও গর্ববোধ করি। উনার সাফল্য কামনা করছি।
সকলকে ধন্যবাদ।।
.
তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট।।