somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে যায় লঙ্কায়: শ্রীলঙ্কা সফর/১০

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইতিহাসের ঊষাকাল থেকেই শ্রীলঙ্কার মশলা এবং ভেষজ উদ্ভিদের জগতজোড়া খ্যাতি দেশটির সামনে বিপুল বাণিজ্য সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছিল। সেই প্রাচীন কালে শুধুমাত্র মশলার প্রয়োজনে শ্রীলঙ্কার সাথে বাণিজ্যিক যোগসূত্র স্থাপন করেছিল গ্রিক রোমান আরব এবং পর্তুগিজ ব্যবসায়ীরা। বর্তমান কালের পর্যটন ব্যাণিজ্যে মশলার চেয়েও পশ্চিমা বিশ্বে গুরুত্ব লাভ করেছে শ্রীলঙ্কার আয়ুর্বেদ চিকিৎসা এবং এই চিকিৎসায় ভেষজ লতাগুল্মের ব্যবহার। তাই মধ্য শ্রীলঙ্কার বিশাল এলাকায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য মশলার বাগান, শুরু হয়েছে মশলা এবং ভেষজ গাছপালার বাণিজ্যিক চাষাবাদ এবং এই সব উদ্যোগকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার জন্যে গঠিত হয়েছে স্পাইস কাউন্সিল অব শ্রীলঙ্কা।

আমাদের পরবর্তী গন্তব্য আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। তারপরেও দাম্বুলার গুহামন্দির থেকে নিচে নেমে অনূঢ়াকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘হোয়্যার ইজ দ্য নেক্সট ডেসটিনেশান? এবারে কোথায়?’
‘টুওয়ার্ডস ক্যান্ডি। অন দ্য ওয়ে মাতালে- স্পাইস গার্ডেন এ্যাট মাতালে।’
‘মাতালে! মোর ভাবনারে কি হাওয়ায় মাতালে?’ আমি একটু রবীন্দ্রনাথ থেকে আবৃত্তি করলে অনূঢ়া ধন্ধে পড়ে যায়। তার তো রবীন্দ্রনাথ দূরে থাক বাংলাভাষার একটি শব্দও বোঝার কথা নয়। সে বেচারা নিতান্তই কিছুটা ইংরেজি জানা স্বল্প বেতনের ভ্রমণ সহযোগী। স্কুলে পড়া দুই ছেলে মেয়ের বাবা অনূঢ়ার স্ত্রীও কর্মজীবী মহিলা। অনেকগুলো বাংলা শব্দের মধ্যে শুধুমাত্র ‘মাতালে’ শব্দটা বুঝতে পেরে সে তার মতো করে বললো, ‘সবচেয়ে বেশি মশলার চাষ হয় মাতালে এবং পেরেদনিয়ায়। এই এলাকার মাটি এবং জল হাওয়া দুটোই মশলার জন্যে খুবই উপযোগী।’
‘মাতালে তাহলে আমাদের ভাবনাকে হাওয়ায় না মাতালেও মশলার গন্ধে মাতাবে মনে হচ্ছে?’ আমি আবারও বাংলায় বললাম। অনূঢ়াও হাল ছাড়ার পাত্র নয়। সে দিব্যি ইংরেজিতে উত্তর দিলো, ‘মাতালে ইজ নট ভেরি ফার, ওনলি ফরটি ফোর কিলোমিটার স্যার।’
‘হারি হারি! লেট আস গো।’ আমি দেখলাম আর বেশিক্ষণ এই খেলা চালিয়ে যাওয়াটা ঠিক হবে না। বিদেশেÑ বিশেষ করে যে সব দেশে ইংরেজি একেবারেই চলে না সেখানে অকারণে ইংরেজিতে কিছু বোঝাবার জন্যে গলদঘর্ম না হয়ে বরং মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলে সাথে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ যোগ করলে কোনো কিছু বোঝাবার ব্যাপারটা তুলনামূলকভাবে সহজ হয়ে যায়। আমার এই একই অভিজ্ঞতা হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়, পোল্যান্ডে এবং অতি সম্প্রতি বেলজিয়ামে।


দাম্বুলা থেকে যাত্রা শুরুর কয়েক কিলোমিটার পরে রাস্তার পাশে দোকানে রঙিন ডাবের স্তুপ দেখে গাড়ি থামিয়ে নেমে গেলাম। বেশ কয়েক দিন ধরেই পথে ঘাটে হালকা হলুদ, ফিকে গোলাপি অথবা প্রায় কমলা রঙের ডাব চোখে পড়েছে কিন্তু চেখে দেখা হয়নি। এবারে দেখা গেল, তিরিশ রূপি দামের মাঝারি সাইজের একটা ডাবে প্রচুর পানি থাকলেও স্বাদে গন্ধে আমাদের সবুজ ডাবের সাথে কোনো পার্থক্য নেই। পামেলা জানালো, আমাদের উপকূলীয় জেলাগুলোতে এ ধরণের কমলা বা গোলাপি রঙের ডাব প্রচুর পাওয়া যায়। নোয়াখালিতে স্থানীয় মানুষের কাছে এই রঙিন প্রজাতি ’বিলাতি ডাব’ নামে পরিচিত।

অনূঢ়া এবং বান্দারাসহ দশজনের জন্যে এক এক করে দশটি ডাব অনায়াসে কেটে দিলো দোকানের একমাত্র মালিক অথবা কর্মচারি তরুণী। দোকানটাও নেহায়েত ছোট নয়। চিপস চানাচুর বিস্কিট এবং কোল্ডড্রিংক্স এর পাশাপাশি ডাব ছাড়াও স্থানীয় ফলের মধ্যে দেখা গেল তরমুজ ও আনারসের বেশ বড় একটা স্তুপ। ঝুলছে কয়েক কাঁদি পাকা কলা। ডাবের পরে আমাদের কেউ কেউ শ্রীলঙ্কার নারিকেলের স্বাদ কেমন জানতে চাইলে গোটা দুই ঝুনা নারিকেল ভেঙে শাঁস তুলে দিল মেয়েটি।
খোকন বললো, ‘নারিকেলের সাথে একটু মুড়ি হলেই ব্যাপারটা পুরোপুরি জমে যেতো।’
আমার আগেই মনে হয়েছিল চলার পথে ট্যুরিস্টদের প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই সাজিয়ে রেখেছে রাস্তার ধারের দোকানগুলো। বললাম,‘এই দোকানে খোঁজ করলে চিড়া মুড়ি গুড়ও পাওয়া যেতে পারে।’
তবে গুড় মুড়ির খোঁজ নেয়ার আগেই বান্দারা গাড়িতে স্টার্ট দিয়েছে। চলতে শুরু করার পর নয়ন বললো, ‘শ্রীলঙ্কাতেও মাঝে মধ্যে কিছু সুন্দরী মেয়ে দেখা যায়।’
আমি বললাম, ‘আমাদের দেখার বাইরে শ্রীলঙ্কায় অসংখ্য সুন্দরী পথে ঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ইনফ্যাক্ট শ্রীলঙ্কায় সুন্দরী মেয়ের কোনো অভাব নেই। কিন্তু এখানে আপনি সুন্দরী দেখলেন কোথায়?’
নয়ন এবারে বললো, ‘কেন আমাদের ডাবওয়ালি!’
এতোক্ষণে বুঝলাম সুন্দরী বলতে নয়ন আসলে বোঝতে চেয়েছিল ফর্সা রঙের কথা। সত্যিই গড়পরতা শ্রীলঙ্কানদের তুলনায় আমাদের রঙিন ডাবের মেয়েটি যথেষ্ট ফরসা। তবে সে সুন্দরীর সংজ্ঞায় পড়ে কিনা তা আলোচনা সাপেক্ষ।


ক্যান্ডি দাম্বুলা সড়ক থেকে একটু ডাইনে ঘুরে আধাঘণ্টার মধ্যেই আমরা পৌঁছে গেলাম মশলার জগতে। ওল্ড ভিলেজ স্পাইস এ্যান্ড হারবাল গার্ডেনে প্রবেশের সাথে সাথেই দেখা গেল আন্তরিক অভ্যর্থনার ছড়াছড়ি। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে সহজেই বুঝে ফেললাম শেষপর্যন্ত এখানেও গলা কাটার ব্যবস্থা আছে। তবে নিজের কাঁধে মাথা যতোক্ষণ অক্ষত আছে ততোক্ষণ মশলা এবং ভেষজের বিচিত্র বাগান ঘুরে ফিরে দেখতে সমস্যা কোথায়! বোটানিক্যাল গার্ডেনের একটা ছোট সংস্করণের মাঝখানে গাছের ছায়ায় চারিদিকের বৃক্ষ লতায় চোখ ফিরিয়ে দেখলাম পরিচিত প্রজাতির মধ্যে তেজপাতা, গোল মরিচ, লবঙ্গ এবং শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ ভারতে রান্নার অপরিহার্য উপাদান কারিপাতা। ভেষজ চিকিৎসার আমলকি-আলোভেরা, অর্জুন-অশ্বগন্ধা ও নিম-নিশিন্দার মতো নানা প্রজাতির গাছপালার পাশাপাশি আমাদের অতি পরিচিত আনারস, আদা, রশুন, হলুদ এবং ধনেও এই বাগানে তাদের জায়গা করে নিয়েছে। নারিকেলের খোসা চমৎকার ভাবে ব্যবহার করে বড় গাছগুলোর গোড়া বাধাই একই সঙ্গে ও শিল্প ও সারের সমন্বয় বলে মনে হয়।


অপরিচিত মশলা ও বনৌষধির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে যিনি এলেন তিনি তাঁর টিপিক্যাল দক্ষিণ ভারতীয় ইংরেজি উচ্চারণে প্রতিটি বৃক্ষ এবং তার ফল ফুল লতা গুল্মের গুণাগুণ ও ব্যবহার অনর্গল ব্যাখ্যা করে এ ধরনের একটি উদ্ভিদ উদ্যান যে আসলে সর্বরোগ নাশক চিকিৎসার উৎসভূমি তা প্রমাণ করে ছাড়লেন। বক্তব্যের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে তিনি নাকের কাছে তুলে ধরলেন লবঙ্গ তেলের শিশি, হাতে ঘষে দিলেন চন্দনের ক্রিম এবং পেড়ে দেখালেন এলাচের ফুল। এ ভাবেই এক এক করে জায়ফল জয়ত্রী জাফরানসহ বেশ কিছু মূল্যবান মশলার গাছ জীবনে প্রথমবারের মতো দেখবার সুযোগ হলো। শেষপর্যন্ত তিনি দারুচিনি গাছের ছাল ছুরি দিয়ে কেটে তুলে ছোট ছোট টুকরো সবার হাতে দিয়ে চিবিয়ে দেখতে বললেন।


দারুচিনি চিবিয়েই অবশ্য আপ্যায়নের পালা শেষ হলো না। ডাক পড়লো বাগানের এক কোণের চালাঘরে। সেখানে সবার জন্যে এলো হারবাল চা। আমরা যাকে সহজে বোঝার জন্যে লাল চা বলি তেমনি চায়ের মধ্যে নানাজাতের মশলা অথবা শেকড় বাকড়ের নির্যাস মিলে মিশে স্বাদে গন্ধে একটা অদ্ভুত ঈষদোষ্ণ পানীয় পান করে শেষপর্যন্ত এলাম ‘ওল্ড ভিলেজের’ সেলস সেন্টারে। স্পাইস টি এবং নানা ধরনের মশলা ছাড়াও এখানে সুদৃশ্য মোড়কে সাজানো রয়েছে লবঙ্গ এলাচ ও দারুচিনির তেলসহ ব্যথা বেদনা নাশক তেল, হারবাল কফ সিরাপ এবং ভেষজ দাঁতের মাজন। নিদ্রা কুসুম জাতীয় মাথা ঠা-া রাখার এবং যথা প্রয়োজনে শরীর গরম করার দাওয়াইয়ের ব্যবস্থাও এখানে আছে। সম্ভবত এখানকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় হার্বাল প্রোডাক্ট চন্দন সাবান ও হার্বাল বিউটি ক্রিমের মতো ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ক্রিম। পর্যটক ভারাক্রান্ত এ সব ভেষজ সামগ্রীর শোরুমে প্রায় সব কিছুরই দামই আমাদের মতো সাধারণ উপমহাদেশীয় ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। কিছুই কেনার দরকার নেই ভাব নিয়ে যথেষ্ট দরদাম করে শেষপর্যন্ত প্রায় বার হাজার শ্রীলঙ্কান রূপির ভেষজ জিনিসপত্র আমাদের ব্যাগে উঠে পড়লো।

আমরা গাড়িতে উঠতে যাচ্ছি সেই সময় অনূঢ়াকে কাছে ডেকে নয়ন বললো, ‘উই স্পেন্ড টুয়েলভ থাউজেন্ড হিয়ারÑ গো এ্যান্ড গেট ইয়োর কমিশন।’ অনূঢ়া একটা লাজুক হাসি দিয়ে গাড়িতে উঠে পড়লো। ভাবটা এ রকম, ‘কি যে বলেন স্যার!’
খোকন বললো, ‘ওল্ড ভিলেজ স্পাইস গার্ডেনের প্রোডাক্ট যাই হোক, ওদের টয়লেটটা খুব ভালো। অন্তত হারবাল চা আর বিনামূল্যে চমৎকার টয়লেট ব্যবহারের সৌজন্যেও কিছু জিনিস না কিনে বের হয়ে আসাটা আমাদের জন্যে একটু কঠিনই ছিল।’

বনৌষধি বাগানের বকবকানো লোকটির অনন্য সাধারণ দক্ষিণ ভারতীয় উচ্চারণ আনিকা তার স্মৃতিতে ধারন করে রেখেছিল। গাড়ি চলতে শুরু করার পরপরই সে তার রেকর্ড চালিয়ে দিল। ‘ওল্ড ওয়্যানা পুট্যা... নিউ ওয়্যানা ক্রিয়েট্যা।’ আসলে কোনো একটি গাছের সম্পর্কে তিনি বলতে চেয়েছিলেন পুরোনো পাতা ঝরে যায়, নতুন করে ডালপালা গজায়- জন্ম নেয় নতুন পাতা। পরবর্তীতে মশলা এবং ভেষজ চিকিৎসা বা প্রসাধন সামগ্রী কার কি উপকারে লেগেছে জানি না, বয়সোচিত ব্যথা বেদনা নাশক তেলটি আমাদের বেশ কাজে লেগেছিল।

অল্প কিছু পরেই যে শহরে এসে ঢুকলাম সেখানে এক পাশের ঘর-বাড়ি দোকান-পাট দালান কোঠা সবারই নাক ভাঙা। রাস্তার বাঁ দিকে হাতুড়ি শাবল চালিয়ে ইট পাথর দরজা কপাট খুলে নেয়ার ফলে চারিদিকে একটা ভাঙাচোরা চেহারা নিয়েছে। তারমধ্যেই বিপনী কেন্দ্রগুলোতে ধুম বেচাকেনা চলছে বলে মনে হয়। লোকজন এবং গাড়ি বা অটো রিক্সার চলাচলও কম নয়। শহরের মাঝখান দিয়ে যাবার সময় একটুখানি যানজটে পড়তে হলো। তবে আমাদের বাহনকে কখনোই পথের উপরে থেমে থাকতে হয়নি, এগোতে হয়েছে খানিকটা শ্লথ গতিতে। শহরে যান বাহন চলাচল বৃদ্ধির ব্যাপারটি সম্ভবত নগরবাসী এবং পৌর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি এড়ানি। তাই নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে রাস্তা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিতে হয়েছে। আনিকা সাইন বোর্ড দেখে বললো, ‘মাতালে... একটা কি মাতালদের শহর?’ মাতালের ইতিহাস কিছুটা হলেও জানা ছিল। বললাম, ‘মাতালে মাতালদের নয় বিদ্রোহীদের শহর।’

এই শহর থেকেই ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন বীরাপুরান আপ্পু এবং গঙ্গালেগোডা বান্দা। স্বাধীনতা আন্দোলনের জাতীয় বীরদের স্মরণে এখানে নির্মিত হয়েছে একটি স্মারকস্তম্ভ। সারা শ্রীলঙ্কায় শুধুমাত্র এই শহরেরই ‘ঐতিহাসিকা মাতালে’ নামে রয়েছে একটি লিখিত ইতিহাস। এখানকার সমৃদ্ধ অতীতের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার তালিকায় রয়েছে বৌদ্ধ হিন্দু মুসলিম এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি প্রাচীন প্যাগোডা মন্দির মসজিদ এবং গির্জা। সেই সুদূর অতীতকাল থেকেই মাতালের সেক্যুলার চরিত্র এই শহরের মানুষদের বিদেশি শাসন শোষণের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ বিদ্রোহে উৎসাহিত করেছিল।

মাতালে থেকে বেরিয়ে একটানে চলে এসেছি পাহাড় এবং নদী ঘেরা ছোট্ট শহর আকুরানা। শহরে ঢোকার মুখেই দেখা হয়ে গেল একদল স্কুল ছাত্রীর সঙ্গে। প্রায় সাড়ে তিনটা বাজে, স্কুলগুলো বোধহয় ছুটি হয়ে গেছে। একটু বড় ক্লাসের ছাত্রীদের সবার মাথায় রুমাল বাধা। ক্যান্ডি থেকে দশ কিলোমিটার উত্তরে আকুরানা আসলে ক্যান্ডির উপশহর। এখানেও শহরের মাঝখান দিয়ে যাবার ফলে ধীরে চলতে হচ্ছিল। মধ্যযুগে স্পেন পর্তুগাল সিসিলি থেকে আসা মুসলিম অভিবাসীদের শহর এটি। শ্রীলঙ্কার এক সময়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত আলহাজ্জ্ব ড. এএসসি হামিদ আকুরানা নির্বাচনী এলাকা থেকে সংসদ সদস্য ছিলেন একটানা তেত্রিশ বছর। ইতিহাসের ছেঁড়া পাতাগুলো জোড়া দিয়ে আবিষ্কৃত হয়েছে কয়েক শতাব্দী আগের ‘মূর’দের সহায়তায় কোনো একটি যুদ্ধে জয়লাভের পর ক্যান্ডির মহারাজা কৃতজ্ঞতার নিদর্শন হিসাবে পাহাড় ও ঝর্নাধারা পরিবেষ্টিত এই ছোট্ট জনপদ মুসলিম অভিবাসীদের উপহার দিয়েছিলেন।

আকুরানার রাস্তাঘাটে সেই অতীত ঐতিহ্য এখনও ছড়িয়ে আছে বলে মনে হলো। পথের পাশের বাজার এবং বিপনী কেন্দ্রগুলোতে ঈদের প্রস্তুতি হিসাবে ধুম বেচাকেনা হচ্ছে। পথ চলতি মেয়েদের মাথায় ওড়না এবং কিশোর তরুণ ছেলেদের প্রায় সবার মাথায় টুপি। বয়সী মহিলাদের পরনে বোরকা থাকলেও কারো শ্রীমুখ দর্শনে কোনো বাধা নেই। চারিদিকে বেশ একটা উৎসবের আমেজ চোখে পড়ে। আমরা লাঞ্চের জন্যে শহরের শেষ প্রান্তে এসে যে রেস্টুরেন্টের দোতলায় উঠে গেলাম সেখানেও নিচ তলায় মহাসমারোহে তৈরি হচ্ছে ইফতার সামগ্রী। সুদৃশ্য বিভিন্ন খাবারের ছবি দিয়ে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে বিশাল ব্যানার। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ শহরে এখন এই অবেলায় লাঞ্চের ব্যবস্থা আছে কিনা সে ব্যাপারে আমার একটু সংশয় ছিল। অনূঢ়া খোঁজ নিয়ে জানালো ‘হারি হারি! গ্রাউন্ড ফ্লোর ফর ফাস্টিং পিপল, ফাস্ট ফ্লোর ফর লাঞ্চ।’

আমরা আটজন এক সঙ্গে একটা লম্বা টেবিলে বসেছিলাম। ‘আপরুচি খানা’ নীতি অনুসরণ মেনু দেখে করে সকলকেই ইচ্ছেমতো নিজের খাবার বেছে নিতে বলা হলো। এখানে ঐতিহ্যবাহী শ্রীলঙ্কান খাবারের ব্যবস্থা নেই বরং বেশ কিছু খাবারের নাম আমাদের বেশ পরিচিত। কিছুক্ষণ পরে দেখা গেল পরটা অমলেট, ভেজিটেবল ফ্রাইড রাইস, মাটন কারি উইথ প্লেন রাইস এবং এগ ফ্রাইড নুডুলসসহ আটজনের জন্যে আট রকমের খাবার হাজির। পোলাও বিরিয়ানি জাতীয় খাবার আমার কন্যার সব সময়েই একটু বেশি পছন্দ। একটা অপরিচিত নামের চিকেন বিরিয়ানি অর্ডার দিয়েছিল সে। পরিবেশিত প্লেটটা দেখতেও ছিল চমৎকার। কিন্তু এক চামচ তুলে মুলে মুখে দেবার পরে ‘ভয়ঙ্কর’ বলে প্লেটটা ঠেলে সরিয়ে দিলো। আমি একটু চেখে দেখতে চেষ্টা করলাম। চিকেন বিরিয়ানিতে কারিপাতার তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ। আমাদের বাঙালি রসনায় সত্যিই ভয়ঙ্কর!

চলবে...
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×